আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রজারা বসে আছে, এই দুই রাজপুত্রের লড়াই দেখবার জন্য

ব্রিটিশ রয়্যাল বেবী আসবে। এই নিয়ে পত্র পত্রিকা এবং মিডিয়া সুযোগ পেলেই রিপোর্ট করছে। খুব একটা দোষ তাঁদের দেয়া যায় না। কারণ অনেকেই আছেন এই খবর জানবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। ছেলে হচ্ছে না মেয়ে এই নিয়েও অনেকে উৎকণ্ঠিত।

দেখতে কেমন হবে, চুল সোনালি না কালো হবে, এসব নিয়েও অনেক রিপোর্ট হচ্ছে। কিছু উত্তেজনা হয়তো আছে, কিছু তৈরি করা হচ্ছে। আর সব কিছুর পেছনে বোধহয় কাজ করছে ‘উপনিবেশবাদী মানসিকতা’—অনেকটা ‘আমাদের রাজা খবর কি?’ তাঁরা করছে করুক আমরা কেন? আমাদের তো নিজেদেরই আছে। আমরা বোধ হয় নিজেদের রাজা রানী রাজপুত্র নিয়ে ভাবতে শুরু করতে পারি। আমাদের অবশ্য একজনে সীমাবদ্ধ না।

অনেক কয়জন আছেন। কিছু রাজাও এখনও বেঁচে আছেন। দুইজন রানী তো আছেনই। কিছু রাজা মোড়ে যেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুত্রকে রাজা বানিয়ে দিয়ে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে এরা খবরের শিরোনাম না হলেও নির্বাচনের বছরে এদের কদর বেড়ে যায়।

খবরে আসেন, শিরোনামে আসেন, বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠেন। একজন রাজপুত্র কিছুদিন আগে দেশে এসেছেন। স্বস্ত্রিক এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচন হচ্ছে উদ্দেশ্য। তিনি আসলে রাজনীতিতে কতটা আগ্রহী বোঝা যাচ্ছে না।

দলীয় কার্যক্রমে খুব বেহসি অংশ নেন না। এবার নেবেন কি না, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না খুব ভালো বোঝা যাচ্ছে না। পিতার এলাকা থেকে দাঁড়াতে পারেন, এমন একটা রটনা আছে। তবে নির্বাচনে প্রচারণা করবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন। কতটা ভোট টানতে পারেন তাঁর একটা পরীক্ষা যেমন হবে, ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতিতে আসবেন কি না, সে ব্যাপারেও একটা সিদ্ধান্ত বোধহয় পয়ায়া যাবে।

তবে রাজপুত্র হিসেবে অনেকেই তাঁকে মেনে নিয়েছে এবং সে অনুযায়ী চাতুকারিতাও শুরু করে দিয়েছে। শুধু দেখার বিষয় কবে তাঁর রাজ অভিষেক হয়। দ্বিতীয়জন আসি আসি করছেন। আসলেই যেহেতু শ্রীঘরে যেতে হবে, তাই পর্দার পেছনে চলছে দর কষাকষি। আপোষ রফা হলে শুভাগমন হবে।

পোস্টার আর ব্যানারে তখন দেশ ভরে যাবে। রাজপুত্র ভক্তি দেখাতে তখন নেতারা মুখে ফেনা তুলবেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তাঁরা পুরস্কারও পাবেন। অনেকে বলতে শুরু করেছেন, তিনি ভাবী প্রধান মন্ত্রী (আসলে হবে রাজা) হতে যাচ্ছেন। তিনি যেহেতু আগে একবার নির্বাচনে দলের আয়োজন দেখাশোনার দ্বায়িত্ব ছিলেন, বলা যায় এবারও তিনি সেই দ্বায়িত্ব নেবেন।

তবে আগেরবার তিনি সরাসরি রাজত্ব করেন নি, এবার হয়তো করবেন। দেশের সব প্রজা অধীর আগ্রয়ে অপেক্ষা করে আছে, কেউ নিজ দলের প্রয়োজনে, কেউ আসলে কি হয়, সেই মজা দেখবার জন্য। আগ্রহটা হয়তো ব্রিটিশ দের চেয়েও বেশী। আরও ছোট খাট কিছু রাজা আর রাজপুত্র আছে। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপ রাজা উত্তরাধিকার তৈরি করতে অনেক চেষ্টাই করেছিলেন।

পারেন নি। দলটির শেষপর্যন্ত কি হবে বোঝা যাচ্ছে না। ভাই রাজা হবেন না স্ত্রী রানী হবে? কিংবা রাজ্য আদৌ থাকবে কি না? একসময়ের উজির নাজির রা অন্য রাজ্যে যাওয়ার জন্য দেন দরবার করছেন, এমন শোনা যাচ্ছে। এই নির্বাচনে তিনি তুরুপের তাশ হতে পারেন বলে অনেকের ধারণা। তাঁর প্রজাদের তিনি কি হুকুম দিবেন বোঝা যাচ্ছে না।

ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তিনি মত পাল্টাতে পারেন। প্রজাদের তাই প্রতিদিন খবর শুনতে হচ্ছে। বাম ঘরানায় তেমন কোন রাজপুত্র নেই। দারুণ বেহাল সেই রাজ্যে কারোরই রাজপুত্র হওয়ার শখ নেই। যেহেতু নিজ পায় দাঁড়িয়ে কোনোদিনই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই রাজারাও চান না পুত্র কন্যারা এই রাজ্যের ভার নিক।

একে তো রাজত্ব বেজায় ছোট, তাঁর ওপর প্রায় প্রতিদিনই একেজন বিদ্রোহ করে নতুন রাজত্ব তৈরি করেন। প্রজারা বেজায় সমস্যায় আছে। কি কারণে নতুন রাজত্ব তৈরি হোল তা প্রায়ই বুঝতে পারা যায় না, কিন্তু তাঁদের ঠিক করতে হয় কোন রাজ্যের বাসিন্দা হবে। বিরক্ত হয়ে অনেকেই তাই অন্য রাজ্যে চলে যায়। ক্ষুদ্র আরেকটি দলের রাজা মাআ যাওয়ায় খুব কম বয়সেই আরেকজন রাজপুত্রের রাজ অভিষেক হয়ে গেছে।

রীতিমত নির্বাচন জিতে সংসদে কথা বার্তা বলতে শুরুও করে দিয়েছেন। ‘টক শো’ তে প্রায়ই ডাক পরে। প্রাক্তন আরেক রাষ্ট্রপতিও নতুন রাজত্ব তৈরি করতে যেয়ে খুব সাফল্য দেখাতে পারেন নি। তবে পুত্রের রাজ অভিষেক করিয়েছেন। নিজের দলে উচ্চ পদ দিয়েছেন।

এখন মুখ রক্ষার একটা ফর্মুলার খোঁজে আছেন। কিভাবে পূর্বের রাজ্যে ফেরত যাওয়া যায়। উজির নাজির আর হয়তো হওয়া হবে না, নিদেন পক্ষে প্রজা হিসেবে যদি থাকা যায়। আমরা কোনদিন গণতান্ত্রিক হব কি না জানি না। সম্ভাবনা বেজায় ক্ষীণ।

দুইটি বড় দলে কিছুদিনের জন্য রাজার আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন না। সেই সময়ে দল গুলোর বেশ করুন দশা হয়েছিল। উজির নাজিররা সবাই নিজেদের দল খুলতেই বেশী আগ্রহী হয়ে গিয়েছিল। বছর পাঁচেক আগেও দুই দলের কিছু উজির নাজিরের শখ হয়েছিল, রানীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার। বেচারাদের অবস্থা এখন দেখার মত।

আগের রাজার সঙ্গে তাঁর কেমন সম্পর্ক ছিল, প্রায়ই এমন সব স্মৃতি রোমন্থন করে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই ধারণা করছেন, সামনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে দুই রাজপুত্রের লড়াই। একজন রাজপুত্র হয়তো একটু বেশী সময় পাবেন প্রজাদের কাছে থাকবার। অন্যজন অপেক্ষা করে আছেন, কখন রাজত্বে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব আসেন। তখন তিনি আসবেন।

এবং তাঁর নেতৃত্বেই লড়াই হবে। ফলাফল কি হবে তাঁর চেয়েও বেশী আগ্রহ নিয়ে প্রজারা বসে আছে, এই দুই রাজপুত্রের লড়াই দেখবার জন্য। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।