আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর উদ্ভব, ভূমিকম্প, ডাইনোসরের বিলুপ্তি এবং মানবসভ্যতা

মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে .. .. ধারণা করা হয়, ইন্দাস নদীর গতিপথের পরিবর্তন, পাশাপাশি স্বরস্বতি বা ঘাগর-হাকরা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়াই মহেঞ্জোদারোর মহামৃত্যুর কারণ ছিলো। ৩০ হাজার মানুষের মহেঞ্জোদারো ধ্বংস হয়েছিলো। সম্ভবত পয়ঃপ্রণালী নিস্কাষণে ব্যাঘাত ঘটেছিল। আমরা যেভাবে নদীনালাকে মেরে ফেলছি, প্রকৃতিকে দুষিত করে ফেলছি তাতে সচেতন না হলে আমরাও টিকে থাকতে পারবো না। এই জন্যই বিজ্ঞান জানা প্রয়োজন।

ডায়নোসররা টিকে ছিল ২৪ কোটি বছর, তারপরও তারা টিকে থাকতে পারে নি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে। মানবজাতির উদ্ভব মাত্র ২৪ লাখ বছর। কিন্তু যে গাছপালা কেটে বন জঙ্গল সাফ করেছে তাতে মানুষ নিজেকে গণবিলুপ্তির মুখে দাঁড় করিয়েছে। এর মূল কারণ বিজ্ঞান সচেতনতার অভাব। বিজ্ঞান সচেতনতার অভাবেই প্রকৃতিকে জয় করতে চেয়েছি।

কিন্তু আমরাও যে প্রকৃতি বা তার অংশ, তাকে জয় করা যায় না। মিলেমিশে থাকতে হয় তা বুঝতে শিখিনি। “পৃথিবীর উদ্ভব, ভূমিকম্প এবং ডাইনোসরের বিলুপ্তি” শিরোনামে বক্তৃতায় বিজ্ঞান বক্তা আসিফ এ কথাগুলোই ১৬ জুলাই, ২০১১ তারিখে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। পরিসংখ্যন ও যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন ঢাকা পৃথিবীর দুটি শহরের একটি যা শুধু মারাত্মক ভুমিকম্পের ঝুঁকিতেই নয়, ভয়াবহ দুষণ ও ভূমিধ্বসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এ শহরে ইতিমধ্যে যে পরিমাণ ভবন থাকা প্রয়োজন তার চেয়ে ছয়গুণ বেশি আছে।

তিনি রোমের উদাহরণ টেনে বলেন সেখানে একেকটা এলাকা পাঁচ-ছয় তলা ভবনের শহরে পরিণত হয়েছিলো। আর রাস্তাগুলো এতটাই সংকীর্ণ ছিলো যে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারতো না। গরিবরা চিলেকোঠায়, মাটির তলায় ঘরে ঠেসাঠেসি করে বাস করতো। এসব ঘরের ভিত ভালো ছিলো না। ফলে প্রায়ই ভেঙ্গে পড়তো।

আর আগুন লেগে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতো রোম। ফলে ভূমিধ্বসে আর আগুনে ক্ষয়ে যেতে থাকে রোমের সর্বশক্তি। এভাবেই ক্ষয়ে যাচ্ছে ঢাকা। সমপ্রতি তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়া আশপাশের ৪টি ভবন, দুটি পাঁচতলাসহ ১২টি ভবনে ফাটল দেখা দেওয়া, তারই জানান দিচ্ছে। এরকম ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে: বেগুনবাড়ি ৭ তলা ধসে ২৫ জনের মৃত্যু, শানি-নগরের ২২ তলা কনকর্ড ভবনে ফাটল, অগ্নিদগ্ধ স্পেক্ট্রাম এবং নিমলীতে অগ্নিকান্ডে ১১৯ জন মৃত্যু।

এ ঘটনাগুলোই বলে দিচ্ছে মৃত্যু আমাদের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছে। যদি বিকেন্দ্রীকরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে ঢাকা মহামৃত্যুর নগরীতে পরিণত হবে। আসিফ বলেন ২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির ফলে বাংলাদেশের নদী-নালা জলাশয়গুলোত যে প্রভাব দেখা দিয়েছিল তাতে আমরা আবার বুঝতে পারি পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তের গভীর সংযোগ আছে। সবাই নিজেকে রক্ষায়, নিজের দেশকে রক্ষায় ব্যস্ত। ১৯৭৬ সালের থেকে পর পর কয়েকটি ভূমকিম্পে সুস্পষ্টতই বোঝা গিয়েছিল হিমালয় নড়ে উঠেছে।

তা স্থিতিশীল অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত এর থেকে উপমহাদশেরে কোনো দেশই ঝুঁকির থেকে মুক্ত হবে না। অতএব আমাদের শহর নগর বন্দরগুলো সেভাবে গড়ে তোলা উচিত ছিল। কিন্তু তা আমরা পারিনি। আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী বিজ্ঞান সম্বন্ধে সচেতন না হওয়ায় কোনো পদক্ষেপই নেয় না। বিজ্ঞান সম্পর্কে না জানার কারণেই আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে।

ঢাকা শহরের পরিবেশও বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি জাপান বা হাইতির মত বড় ধরনের বিপর্যয় কমও ঘটবে বলে মনে হয় তাহলেও সতর্ক হতে হবে। এটাই বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা। শুধু অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নয়, জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এবং আরও গভীর মূল্যবোধ ও অর্থ অনুসন্ধানের ক্ষেত্র আমাদের জানতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যনরে ৪টি বড় ধরনের ভূতাত্ত্বিক চ্যুতির অবস্থান এবং সেই চ্যুতি থেকে ঢাকা মাত্র ২৫ থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।

বর্তমানে ঢাকায় যেভাবে দ্রুত অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হচ্ছে এর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, ভূমিকম্প ও সুনামির বিষয়ে জনগণের অসচেতনতা এবং সরকারের কার্যকর ভূমিকার অভাব ভয়বহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২৪ কোটি বছর একটানা রাজত্ব করেছিল এ পৃথিবীতে ডাইনোসরেরা। কিন্তু আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে মাত্র ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি ধুমকেতুর পতনে (১০ আলোকবর্ষ দূরের সুপারনোভার কারণে সংঘঠিত মহাজাগতিক বিপর্যয়ে) বিশ্বের প্রায় আশি ভাগ প্রাণীসহ এই ডাইনোসরেরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অজস্র ধুলিকণা আকাশকে ঢেকে ফেলার কারণে পৃথিবী সূর্যের উত্তাপ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। নেমে এসেছিল পৃথিবীতে কোটি বছরের নিউক্লিয়ার শীত।

এ ধরনের বিপর্যয় এখনো যেকোন সময় ঘটতে পারে। আমাদের টিকে থাকা নির্ভর করছে এই ধরনের ধুমকেতু ও উল্কাপিন্ডের পতন ও নানা ধরনের ভূ-তাত্ত্বিক বির্পযয় রোধে আমাদের জ্ঞানের বিকাশ ও তার প্রযুক্তিগত প্রয়োগের অগ্রগতির উপর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.