জীবন বদলায়, রূপকথা বদলায় না......
হুমম...তারা দুজন। তাদের দুজনের আগমনের কাহিনী তো আগেই বলেছি। আজ তাদের দুজনের সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু হাসি-কান্না, কিছু ভালো-মন্দ মুহুর্তের কথা বলি।
তারা দুজন...আমার সব আদর আর শাসনের একমাত্র প্রয়োগক্ষেত্র...আমার ছোট্ট দুটি ভাই।
প্রথম যেদিন ওদের দেখতে গিয়েছিলাম, সেদিন হসপিটালে প্রচুর আত্মীয়স্বজন এসেছিল ওদের দেখতে।
আমি ছোট্ট একটা মানুষ এতো মানুষের ভীড়ে দেখতেই পারছিলাম না। তখন নানু আমাকে ডেকে নিয়ে বললো, “দেখো, আল্লাহ তোমাকে সুন্দর দুইটা ভাই দিয়েছে। “ সেদিন আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ছোট্ট নিষ্পাপ দুটো মুখের দিকে।
ঘরের সবাই ওদের কোলে করে নিয়ে হাঁটতো, শুধু আমাকে দিতো না। আমি কোলে নিতে চাইলেই খাটের একদম মাঝখানে বসিয়ে তারপর কোলে নিতে দিতো।
প্রচুর মন খারাপ হত তখন। আমার ভাইদেরকে আমি ছাড়া সবাই কোলে নিত। আর আমি তখন রাজ্যের অভিমান নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকতাম। কখনো এক মুহুর্তের জন্যও যদি সুযোগ পেতাম দৌড়ে গিয়ে কোলে নিতাম।
ওরা একটু বড় হওয়ার পর থেকে ওদের ঘুমের দায়িত্ব পড়লো আমার ঘাড়ে।
কারণ আমি ঘুম না পাড়ালে ওরা ঘুমাতো না। বেবী সাইকেলের পিছে বসিয়ে ওদের কত যে ঘুম পাড়িয়েছি। ছোট্ট ছোট্ট হাতদুটো দিয়ে ওরা শক্ত করে আমাকে ধরে রাখতো। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো ঠিক নেই। তারপর একজনকে খাটে শুইয়ে আরেকজনকে ঘুম পাড়াতাম।
ওদের বয়স তখন ২/৩। একদিন আমরা তিনজন মিলে রান্না-বান্না খেলছিলাম। তো সকাল হয়েছে আমি ঘুম থেকে উঠে ওদেরকে বললাম, “যাও তোমরা মুখ-হাত ধুয়ে এসো। আমি নাস্তা দিই। “ ওয়াশরুম বানানো হল টেবিলকে।
তো একজন গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে আসলো। এবার আরেকজনের পালা। সে গিয়ে সত্যি সত্যিই ফ্রেশ হয়ে আসলো। আমার তো দেখে পুরো আক্কেলগুডুম। প্রচন্ড চেচামেচি শুরু করলাম আর আমার ভাইটা কেঁদে দিল।
চেচামেচি শুনে আম্মু ছুটে এসে দেখে যে আমার ভাইটা কাঁদছে আর আমি ওকে ঝাড়তেছি। আম্মু জিজ্ঞেস করলো কি করেছে। তখন ও কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আপুনি আমাকে বলছে হাত-মুখ ধুয়ে বাথরুম করে আসতে। এখন আমি বাথরুম করছি দেখে আমাকে বকতেছে। “
নিহানের এক্সিডেন্টের কথাটা ভাবলে এখনো আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
তখন ওর ছ’বছর হবে। আব্বুর অফিস থেকে আমরা সবাই পিকনিকে গিয়েছিলাম। সবাই যে যার মত ঘুরছে, গল্প করছে। আমি আমার একটা বিশাল গ্রুপ নিয়ে তখন গল্পে মশগুল। হঠাৎ শুনি কে যেন চিৎকার করে আমাকে ডাকছে আর বলছে নিহানের জানি কি হয়েছে।
আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি নিহান পুরো রক্তাক্ত হয়ে আছে। দোলনার সাথে বাড়ি খেয়ে চোখের কোনা কেটে গেছে। নিহানকে গিয়ে ধরলাম। ও আমাকে ধরে অনবরত কেঁদে যাচ্ছিল। আমি যে কাউকে ডাকবো সেই ভাষাটাও যেন হারিয়ে ফেলেছিল্লাম।
আম্মু দেখে সেন্সলেস হয়ে গেল। কি যে একটা মুহুর্ত ছিল সেটা বলে বুঝানো যাবে না। সেদিন ওর চোখে ৩টা স্টিচ পড়েছিল। আর পিকনিকের কথা নাই বা বললাম। বাইরের মানুষজন আগে ওদের চিনতোনা।
আর স্টিচটার কারনে নিহান মার্কড হয়ে গেল।
সে বছর ওদেরকে বাসার পাশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হল। তারা দুইভাইই মহাখুশি। বেশকিছুদিন পর আমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, “স্কুলে তোমাদের কয়টা বন্ধু হল?” তো অরা দুজনই নাম বলছিল। হঠাৎ নিশান নিহানকে বললো
নিশান : এই তুই মিতুর কথা বলিস নাই।
নিহান : ও আমার বন্ধু না। (খুব রাগ হয়ে)
আমি : কেন? কি হয়েছে?
নিহান : ও শুধু আমাকে আদর করে।
ক্লাস ওয়ানে ওদেরকে ভালো স্কুলে ভর্তি করানো হবে। সুতরাং ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা। আম্মু বাসাতেই তেমন প্রিপারেশন নিচ্ছিল।
যেদিন ভর্তি পরীক্ষা হল, সেদিন বাসায় ফিরে
আম্মু : সব পারছো?
নিশান : গণিত পারি নাই।
আম্মু : কেন? কঠিন হয়েছে?
নিশান : আমার মনে হয়েছিল আমি পারি। কিন্তু করি নাই।
আম্মু : পারলে কর নাই কেন?
নিশান : অংকের সাথে মিল ছিল গণিতের। কিন্তু তুমি তো আমাদের অংক করাইছো, গণিততো করাও নাই।
এই হল তারা দুজন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।