http://www.sometimeinblog.com/ বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব বাংক এর বর্তমান সম্পর্ককে সাপে-নেউলে সম্পর্ক বলা যায়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়া সরকার লুটে নিতে চাচ্ছে ৪১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সুত্রঃ All Bangla Newspaper
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ৫২০ কোটি ডলার উঠিয়ে নেবে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে প্রাথমিকভাবে এই মতৈক্যে পৌঁছেছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সামি ভেলু গতকাল শুক্রবার রূপসী বাংলা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে তাঁদের সর্বশেষ অবস্থান এবং সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নর্লিন বিনতে ওথমান উপস্থিত ছিলেন।
তবে, শেষ পর্যন্ত কার অর্থে পদ্মা সেতু হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর সরকার নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করার কথা বলেছে। আবার মালয়েশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সেতু বিভাগ।
চূড়ান্ত কোনো চুক্তি এখনো হয়নি। তবে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে আগ্রহী নন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তাবের বিস্তারিত জানাল মালয়েশিয়া।
সামি ভেলু গতকাল জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশের সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা একমত হয়ে একটি কার্যবিবরণীতে সই করেন। কার্যবিবরণী অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুটি উপাদান মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ করবে মালয়েশিয়া।
এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। টোল আদায় করে ২৬ বছরে বিনিয়োগের সুদ-আসলসহ ৫২০ কোটি ডলার বা ৪১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা তারা উঠিয়ে নেবে।
কার্যবিবরণী অনুযায়ী, মালয়েশিয়া তিন বছরে মূল সেতু নির্মাণ করে দেবে। নদীশাসনের কাজ এর মধ্যে শেষ হবে না। তবে মূল সেতু হওয়ার পর নদীশাসন সম্পন্ন না হলেও এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
২৬ বছর পর এই সেতু বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সেতু বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া মূলত মূল সেতু নির্মাণে ১৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। সেতু নির্মিত হওয়ার পর টোল আদায় শুরু হলে সেই টাকায় নদীশাসনের কাজ করা হবে। সে ক্ষেত্রে তার বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে।
সেতু প্রকল্পটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে মূল সেতু, নদীশাসন, দুই প্রান্তে দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও সার্ভিস এলাকা (নির্মাণ অবকাঠামো) নির্মাণ।
বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে মূল সেতু ও নদীশাসনে সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১০ কোটি মার্কিন ডলার। আর সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এলাকা নির্মাণ, জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসনসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরা হয় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থ ব্যয় করার কথা ছিল বাংলাদেশের।
দাতাদের অর্থে হলে: পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৬১ কোটি ডলার, জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার ৪১ কোটি এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঋণের জন্য বাংলাদেশকে সার্ভিস চার্জ দিতে হতো দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। প্রথম ১০ বছর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হতো না (গ্রেস পিরিয়ড)। নিয়ম হচ্ছে, ১১ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময়ে মোট নেওয়া ঋণের ২ শতাংশ হারে পরিশোধ করতে হয়, পরবর্তী ২০ বছরে দিতে হতো ৪ শতাংশ হারে। এই হিসাবে ১১ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময়ে প্রতিবছর পরিশোধ করতে হতো তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এর মধ্যে মূল ঋণ দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং সার্ভিস চার্জ ৯০ লাখ ডলার। পরবর্তী বছরগুলোতে দিতে হতো পাঁচ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে মূল ঋণ চার কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং সার্ভিস চার্জ ৯০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে মোট সার্ভিস চার্জ দিতে হতো দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার।
জাইকার ঋণের সুদ আরও কম।
৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য এই ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ০১ শতাংশ। তাদের বেলায়ও প্রথম ১০ বছর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হতো না। এডিবির ঋণের সুদও গড়ে দেড় শতাংশের বেশি নয়। আইডিবির সুদ ৩ থেকে ৪ শতাংশ। তবে জাইকার গ্রেস পিরিয়ড আট এবং আইডিবির পাঁচ বছর।
মালয়েশিয়ার প্রস্তাব: কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২৬ বছরে সেতু থেকে আয় ধরা হয়েছে ৮৩০ কোটি ডলার। এই আয় থেকে ৯১ কোটি ডলার ব্যয় হবে বিভিন্ন কর ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ। বাকি ৭৩৯ কোটি ডলারের ৩০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ৭০ শতাংশ পাবে মালয়েশিয়া। অর্থাৎ মালয়েশিয়া পাচ্ছে ৫২০ কোটি এবং বাংলাদেশের ২১৯ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ অর্থ পাওয়া শুরু করবে নির্মাণ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পর।
প্রথম পাঁচ বছর টোলের পুরোটাই চলে যাবে মালয়েশিয়ার ভাগে। মালয়েশিয়া ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সে দেশের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হবে প্রথম পাঁচ বছরে।
আবার আয়ের যে প্রাথমিক হিসাব করা হয়েছে, সেই পরিমাণ আয় না হলে বাংলাদেশ সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে তা পূরণ করবে। টোলের হার নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ সরকার।
কীভাবে হবে প্রকল্প: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সামি ভেলু জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সে দেশের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মহাসচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রথমে একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবে, যারা অর্থায়ন জোগাড় করবে। ইতিমধ্যে মার্কমোর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কমোর সেতু নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করবে। প্রাথমিকভাবে চীনের চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) নাম প্রস্তাব করেছে মালয়েশিয়া।
এই দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হবে মালয়েশিয়ার আইনে এবং সেখানে বাংলাদেশের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। তবে দুই দেশের পক্ষে কারিগরি কমিটি থাকবে। বাংলাদেশ চাইলে নির্মাণকাজ তদারকির জন্য নিজের অর্থে পরামর্শক নিয়োগ দিতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলন: গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সামি ভেলু বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেই তাঁরা এই প্রকল্পে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি জানান, তাঁদের পক্ষ থেকে সব ধরনের তথ্য, প্রস্তাব ও দলিলাদি বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সেতু বিভাগের সঙ্গে বেশ কিছু শর্তে একমত্যের মাধ্যমে বৈঠকের কার্যবিবরণী সই হয়েছে। এর মানে, দর-কষাকষি চূড়ান্ত। এখন বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবটি নিয়ে ততটা আগ্রহী নন। এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে সামি ভেলু বলেন, ‘আমরা মনে হয় অর্থমন্ত্রীকে খুশি করতে পারিনি।
তবে তিনি এ বিষয়ে ‘এ’ ‘বি’ও জানেন না। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি, আলোচনা করেছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করিনি। ’
মালয়েশিয়ার দূত জানান, পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দেন।
গত বছরের ১০ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর পরই গত ২১ ফেব্রুয়ারি কার্যবিবরণী সই হয়।
সামি ভেলু দাবি করেন, মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বলে যেসব খবর বেরিয়েছে, সেগুলো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্য একটা কোম্পানি সম্পর্কে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করেছে। তাদের প্রস্তাব মালয়েশিয়ার সরকারের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।