রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১.
প্রতিদিন খবরের কাগজ বা অনলাইন পত্রিকা খুললেই এ ধরণের খবর এখন ডাল-ভাতের মতো হয়ে গেছে :
বরিশাল, জুলাই ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ধারণ করা একটি ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর আত্মহত্যায় মানসিক যন্ত্রণার ইতি টেনেছেন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের এক ছাত্রী।
তরুণীর পরিবার এজন্য নজরুল ইসলাম নামে তার এক সহপাঠিকে দায়ী করছে। তবে পুলিশ বলছে, ভিডিওচিত্রটি কে ধারণ করেছে- তা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আওয়ামী লীগ সরকার আর কিছু না করতে পারলেও এর আমলে এই ডিজিটাল ধর্ষণে ভালোই বাম্পার ফলন হচ্ছে! বিপুল ভোটে জয়ী এই আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিয়েছিলো বিশ্বাস করে। আর এখন তারা দেশের জনগণের প্রতি, জনগণের চাহিদার প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছে না।
আবারো জেগে উঠছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, সবকিছুতে সরকার সরকারের দোষ খোঁজা কেন?
দেশ কে চালায়? আপনি, আমি না সরকার?
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কার হুকুমে চলে? আপনার আমার না সরকারের?
চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে ব্যবস্থা নিতে পারে কে? যে ক্ষমতাবান সেই (সরকার ও মন্ত্রীবর্গ)
প্রস্তাবনা শেষ করে মূল লেখায় আসি।
২.
অশ্লীল ভিডিওচিত্র ধারণ মূলত একই সাথে চারটা অপরাধের সূচনা করে, চারটা অপরাধ একই সাথে সংঘটিত হয় :
১. জোরপূর্বক যৌনমিলন/ধর্ষণ
২.সম্মতিতে অথবা বিনা সম্মতিতে সেই দৃশ্যের ভিডিওচিত্র ধারণ (কাজটা অসম্মতিতেই করা হয় বেশি)
৩.এরপর সেটা ইন্টারনেট, সিডি বা ব্লুটুথের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া (মানহানি ও ধৃষ্টতার পরিচায়ক)
৪.ফলশ্রুতিতে মেয়েটির (ভিকটিমের) আত্মহত্যা (আত্মহত্যায় প্ররোচনামূলক অপরাধ)।
এখন, প্রশ্ন হলো, কেন এই ধরণের বিকৃত রুচির হয়ে পড়েছে যুবসমাজ?
উত্তর খুবই সহজ, ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের কারণে। যখন ইন্টারনেট ছিলো না তখন ভিসিআর-এ মানুষ অশ্লীল ছবি (এক্স রেটেড পর্নো ছবি) দেখতো।
ধীরে ধীরে সিডি এরপর ডিভিডিতে থ্রি-এক্স এর প্রচার ও প্রসার বাড়তে থাকে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় সেটার অপব্যবহারই হচ্ছে বেশি। পৃথিবীতে সম্ভবত বাংলাদেশেই যন্ত্রের অপব্যবহার সবচাইতে বেশি হয়। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ "মোবাইল ফোন"। মোবাইল ফোনে এই দেশে মেয়েদের যতটা বিরক্ত করা হয় সেটা বোধহয় অন্যান্য দেশে করা হয় না এতটা!
আজ থেকে ৮-৯ বছর আগের কথা বলি।
তখন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাড়া-মহল্লায় পর্নো সিডির ব্যাপক তোলপাড়। ভিসিডির দোকানগুলোতে দশ টাকা পনেরো টাকায় থ্রি এক্স এর সিডি পাওয়া যায়। ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি খুব একটা ছিলো না কারো। ক্লাস সিক্স-সেভেনের বাচ্চারা পর্যন্ত আসক্ত হয়ে পড়লো পর্নো-ছবিতে। এই যে এর একটা সাইড এফেক্ট, একধরণের বিকৃত রুচির মানসিকতা নিয়ে বড় হতে শুরু করলো যে ছেলেটা সদ্য কৈশোরে পদার্পণ করেছে।
আজ বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা পশ্চিমা বিশ্বকেও হার মানায়। পশ্চিমাদের আলাদা পর্নো ইন্ডাস্ট্রি আছে। কিন্তু আমাদের নিষ্পাপ বোনদের কেন এর জন্য প্রাণ হারাতে হচ্ছে?
সেক্স সাধারণ জিনিস হয়তো বা। কিন্তু সেক্স করে সেটা ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া এসব চূড়ান্ত অপরাধ। বাংলাদেশে সাইবার আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায়, পুলিশ যথেষ্ট দক্ষ না হওয়ায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
Dhaka, Mar 19 (bdnews24.com) – A young man has been jailed for uploading vulgar photos of a girl on a social networking site.
Accused Shakil Ahmed, 23, created a Facebook account in the name of the girl and uploaded the photos.
Executive magistrate A H M Anwar Pasha told bdnews24.com that a Rapid Action Battalion team arrested Shakil from the city's Uttara area around 3pm on Saturday following a complaint from the girl.
He was sentenced to one-and-a-half months in prison after his confession that he uploaded the photos, the magistrate said.
Pasha said the RAB team recovered two videos of Shakil's private times with two other girls from his computer.
The magistrate said he also admitted that he threatened the girl that he would upload more photos if she did not follow his orders.
"Shakil uploaded four photos of the girl," Pasha added.
bdnews24.com/kt/ost/nir/2230h
ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল তৈরী করেছিলো শাকিল আহমেদ নামের অপরাধী। তাই রেপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ান তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।
কিন্তু এইসব ভিডিওচিত্র বন্ধ করতে হলে সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো :
১. পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া। কিছু পর্নো ওয়েবসাইটে সহজেই ভিডিও আপলোড করা যায়। এসবের আইপি ব্লক করে দেয়া।
২.অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন ব্লক করতে হবে পর্নো সাইট? পর্নো সাইটের কল্যাণেই এই বিকৃতি মানুষের অন্তরে। আবার এটাও মনে হতে পারে, বন্ধ করে লাভ কি? যা হবার হয়ে গেছে? আমি বলবো, এসব চালু রেখেই বা লাভ কী? একটা প্রজন্ম অন্তত সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বড় হোক।
৩.সেক্স এডুকেশন চালু করা যেতে পারে। অসুস্থ যৌনশিক্ষার চেয়ে পাঠ্যবইয়ের সুস্থ যৌনশিক্ষা অধিক কার্যকর।
৪.মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহারটা বাবা-মা শেখাতে পারেন।
৫.ভালো-খারাপ সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে পারেন শিক্ষক। শিক্ষা কার্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে আলাদা ক্লাস করানো যেতে পারে। বিদেশে যেটাকে বলা হয় "এথিকস সেমিনার"।
৬.বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের যথোপযুক্ত সেক্স এডুকেশন ও শারীরিক পরিবর্তনের কারণগুলো ব্যাখা করা যেতে পারে। আর এটাও সত্য, বাবা-মা'র চাইতে পরম শিক্ষক আর নেই।
সর্বোপরি এই ভয়াবহ ব্যধি নির্মূল করতে হবে সমাজ থেকে। এর বংশবিস্তার রোধ অতীব জরুরী। নইলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে বেড়াতে হবে অশ্লীলতার বোঝা! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।