আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিতা'রা দু বোন এক ভাই...

সব শেষ হয়ে যাবার পরও, কিছু স্বপ্ন বেঁচে থাকে- সব সময় ২০০৯ এর ডিসেম্বর মাস । আমি হঠাত্‍ সিদ্ধান্ত নিলাম টিভি রিপোর্টিং এর শর্ট কোর্স করবো । পরিবারে সিদ্ধান্তটি জানাবার পর পরই পূর্ণ সমর্থন পেয়ে যাই । যোগাযোগ করি একটি স্বপ্ন বিলাসী প্রতিষ্ঠানের সাথে । ৬০০০ টাকায় ভর্তি হয়ে যাই ঐ প্রতিষ্ঠানে ।

ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই শুরু হয় ক্লাস । প্রতিষ্ঠানটির গা ছাড়া ভাবের কারণে প্রথম ক্লাসের খবর পাইনি । দ্বিতীয় ক্লাসটা হয় আমার জন্য প্রথম ক্লাস । শুক্র শনি দু দিন ক্লাস । আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বৃহঃস্পতিবার চলে যেতাম ঢাকায় ।

সেখানে মিরপুরে দুলাভাইয়ের কাছে থেকে দু দিন ক্লাস শেষে শনিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরতাম । ঐ প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা সিটি শপিং মল শাখায় ছিলো আমাদের ক্লাস অথবা ট্রেনিং যাই বলি না কেনো । দ্বিতীয় ক্লাসে যে দিন গেলাম ঐ দিনই মনে হলো আমার চেয়ে এখানে যারা বসে আছেন তাদের আগে একটা চাকরি হওয়া উচিত । তাদের কেউ কেউ কয়েক ছেলে মেয়ের বেকার বাবা । কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ধার দেনা করে ।

কারো শেষ সম্বলটি জমা দিয়ে এই কোর্স করতে এসেছেন । আমার প্রথম ক্লাসে পেলাম আরটিভি'র অপ্রয়োজনী কথা বলা এক ভদ্রলোককে । তিনি তার কাজের তুলনায় এই অল্প সময়ের জীবনে এওয়ার্ডই পেয়েছেন বেশি ! নিজের গুণ কীর্তণ করে প্রথম ক্লাস কাবার করে দিলেন । ঢাকা থেকে ঐ দিন রাতেই চলে এলাম । পরের সপ্তাহে আবার গেলাম ।

ঐ ক্লাসে প্রথম দেখলাম অনিতাকে । ঠান্ডা, শীতল একটা চেহারা ওর । কণ্ঠটা খুব কমন তবে মিষ্টি । ফর্সা ভাবলেশহীন চেহারাটা দেখে কোন কিছুই আঁচ করা যায় না । এবারের ক্লাসটা নিলেন ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এনটিভি'র একজন নিউজ প্রেজেন্টার ।

তাঁর ক্লাস ভালো লাগলো । মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনলাম তাঁর কথা । তবে মাঝে মাঝে মনোযোগের ব্যঘাত ঘটিয়েছে অনিতা । হঠাত্‍ হঠাত্‍ ওর উদ্ভট প্রশ্নে আমরা সবাই হেসে উঠেছি । এভাবে চলছিলো আমাদের টিভি রিপোর্টার হবার আয়োজন ।

একদিন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের পাশে দাঁড়িয়ে শশা খাচ্ছিলাম । হঠাত্‍ দেখলাম অনিতা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসছে । আমার কাছে আসতেই ওকে শশা খেতে অনুরোধ করলাম । ও শুনলো আমার কথা । ওর সঙ্গে আরেকটি শশা খেলাম আমি ।

তারপর এক সঙ্গে গেলাম ক্লাসে । সেখানে আমাদের জন্য একটি নোটিশ অপেক্ষা করছিলো । আজ ক্লাস এক ঘন্টা লেট । আমি আর অনিতা শপিং মলের লেবেল ৫ এ হাঁটতে থাকলাম । থেমে থেমে একে অন্যকে প্রশ্ন করলাম এটা ওটা ।

ও অবশ্য প্রশ্ন করার চেয়ে উত্তর দিতে সাচ্ছন্দবোধ করে বেশি ! আমি ওকে প্রশ্ন করলাম কাউকে ভালোবাসো ? ও হ্যা সূচক মাথা নেড়ে প্রতিউত্তরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো- কম্বল আছে তোমার ? আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম হ্যা আছে । কেনো ? ও বলতে লাগলো- কম্বলে ঘুমাতে খুব আরাম ? তাই না ? প্রতি শীতে ইচ্ছে থাকে কম্বল কেনার পরে আর হয়ে উঠে না । আমি কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না । হঠাত্‍ বলে ফেল্লাম তোমার বাবা কী করেন ? ও উত্তর 'নেই'। তোমরা থাকো কোথায় ? অনিতা এক গাল হেসে বললো- আমি ঢাকায় ।

ছোট বোনটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকে ওখানেই । মা ছোট ভাইটিকে নিয়ে বাপের বাড়ি কোলকাতায় থাকেন । তোমার বাবার বাড়ি কোথায় ? বরিশালে । বাবা মারা যাবার পর চাচারা আমাদের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন । আবার হেসে বললো- ওই সব জমি জমা দখলমুক্ত করতে আমি 'ল'তে অনার্স করছি ।

এখন তোমার খরচ চালাও কীভাবে ? টিউশনি । জানো- প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে অনেক সময় বেশিক্ষণ সময় নিয়ে পড়াই, ইচ্ছে করে লাঞ্চের সময় পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাই । যাতে কর বাসার আন্টি খাবারের জন্য সাধে । আমিও খেতে বসে পরি । মাস শেষে অনেক সময় পড়াতে গিয়ে আন্টিদের বলি- আজ কিন্তু খেয়ে যাবো ।

লক্ষ্য করলাম এসব কথা বলার সময় একবারের জন্যও অনিতার মুখের হাসি থামেনি ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।