আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংসদ সচিবালয়ে ১১৭ কর্মচারীর অনিশ্চিত জীবন

সংসদ সচিবালয়ে চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় অনিশ্চিত জীবন কাটছে ১১৭ কর্মচারীর। এ অনিশ্চিয়তা থেকে মুক্তি পেতে চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন নিয়ে দৌড়-ঝাঁপও নেহায়েত কম হয়নি তাদের। পক্ষে আছে আদালতের নির্দেশনাও। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। সময় এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনিশ্চয়তা আরো বাড়ছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পাওয়া ১১৭ জন দৈনিক ভিত্তিক সাংবাৎসরিক (মাস্টাররোল) কর্মচারী বর্তমানে কর্মরত আছেন। এদের কারোরই চাকরি স্থায়ী হয়নি। চিফ হুইপ, সংসদ উপনেতা, স্পিকার, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি কোনো। এদের মধ্যে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া চাকুরেও রয়েছেন। স্থায়ী কর্মচারীদের মতো একই কাজ করলেও মাস্টার রোলের এসব কর্মচারী কোনো উৎসব ভাতা পান না।

ওভারটাইম ভাতা পেলেও অধিবেশন চলাকালে ৪০ টাকা হারে খাবার বিলও পান না তারা। এভাবেই চাকরি জীবন শেষ হলে সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাবেন না তারা। তাই হতাশা বাড়ছে দিন দিন। এদের মধ্যে ১৪ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১৬ জন অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, ৩ জন অভ্যর্থনাকারী, ৭৮ জন এমএলএসএস এবং ৬ জন কামরা পরিচারক ও ঝাড়ু রয়েছেন। নাখাল পাড়ার সংসদ সদস্য ভবনের ঝাড়ুদার সখিনা ১৯৮৯ সালের ২ এপ্রিল নিয়োগ পান।

ওই একই সময়ে নিয়োগ পান মো. আবুল কালাম। এছাড়া ১৯৯১ সালে ৭ জন, ’৯২ সালে ২ জন, ’৯৫ সালে ২ জন, ’৯৬ সালে ১২ জন, ’৯৭ সালে ১১ জন, ’৯৮ সালে ৪ জন ও ২০০১ সালে ৪ জন নিয়োগ পান। আরো অনেকেই নিয়োগ পান ২০১০ সালে। বর্তমানে এরা সবাই স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্পিকার চাইলেই পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দেওয়ার পর এসব কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করতে পারেন।

’ ’৯৬ সালে নিয়োগ পাওয়া এক কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে অবস্থার মধ্যে আমরা আছি একমাত্র স্পিকারই পারেন সেখান থেকে রক্ষা করতে। ’ কিন্তু স্থায়ী পদে চাকরির বিজ্ঞপ্তি করে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়েও স্পিকারের দপ্তর থেকে মানব সম্পদ শাখায় এখনো কোনো নির্দেশনা যায়নি। সেক্ষেত্রে এসব কর্মচারী কবে নাগাদ স্থায়ী নিয়োগ পাবেন তা এখনো অনিশ্চিত। আর এ অনিশ্চয়তার জন্য অনেকাংশেই পূর্ববর্তী সংসদের স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে দায়ী করছেন তারা। সংসদ সচিবালয় সূত্রমতে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কয়েকবার স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও এসব মাস্টার রোলের কর্মচারীর অনেকেই নিয়োগ পাননি।

সে সময় এসব কর্মচারী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটের পক্ষে ড. কামাল হোসেন ছিলেন তাদের আইনজীবী। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব কর্মচারীর মানবিক কারণে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু তৎকালীন স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিষয়টি এড়িয়ে তার নিজ জেলা পঞ্চগড়সহ অন্যান্য জেলা থেকে নিয়োগ দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এসব কর্মচারী স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, সকল হুইপসহ সংসদ সচিবের কাছেও আবেদন করেন।

পরে তারা গত মে মাসে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর কাছেও এব্যাপারে আবেদন করেন। তাদের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসের ১৬ তারিখে স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের কাছে একটি আধা সরকারি (ডিও লেটার) চিঠি দেন সংসদ উপনেতা। সর্বশেষ চলতি মাসের ৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেন তারা। ওই আবেদন পত্রে সংসদ কমিশনের আগামী সভায় এসব মাস্টার রোল কর্মচারীর জন্য বয়স ও জেলা কোটা শিথিল করে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, জেলা কোটা শিথিল করা না হলে এদের চাকরি স্থায়ী করার সুযোগ নেই।

এমনকি অনেকে আবেদন করার সুযোগও পাবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেলা কোটা শিথিল করলে আমাদের নিয়োগে কোনো অসুবিধা নেই। ’ ’৯৬ সালে নিয়োগ পাওয়া আরেক কর্মচারী বলেন, ‘এত দিন ধরে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি করছি। চাকরি স্থায়ী না হলে মেয়াদ শেষে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবো না। ’ প্রসঙ্গত, সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের সময় নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম হয়।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ওই সময় জেলা কোটায় নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় বর্তমান স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট এই কোটা শিথিল করতে চাচ্ছেন না। এদিকে সংসদ সচিবালয়ের নিয়োগ বিধি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে বলেও অপর একটি সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এই বিধি পরিবর্তনের জন্য কয়েক দফা সময় বাড়ানো হলেও এখনো তেমন অগ্রগতি হয়নি। সৌজন্যে: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।