নিরপেক্ষ আমি
আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন। স্থাপত্যের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘মাস্টার পিস’—বিশ্বের সেরা কয়েকটি স্থাপত্যের একটি। এটি আমদের গর্ব। আমাদের অহংকার ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। আর এই বিশ্বসেরা স্থাপত্য যাঁর হাত ধরে সৃষ্টি, তিনি হলেন বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুইস আই কান বা লুই আই কান।
লুই কানের জন্ম ১৯০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাশিয়ার এস্তোনিয়ায়।
১৯২৪ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লুই কান স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কাজ করেন জন মলিটর, জর্জ হুই, অস্কার স্টনোরোভর মতো তৎকালীন নামকরা স্থপতিদের সঙ্গে। প্রথম দিকে লুই কান আন্তর্জাতিক মানের কাজ করলেও তাঁর নিজস্ব কোনো স্টাইল ছিল না।
বয়স ৫০ পেরোনোর পর তিনি শুরু করেন সম্পূর্ণ নিজের ধরনের কাজ। জন্ম দেন একের পর এক নামকরা স্থাপত্য, যার শেষের দিকের নিদর্শন আমাদের সংসদ ভবন। যে স্থাপত্য লুই কানকে স্থান দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বাংলাদেশের তো বটেই, বিশ্বেরও।
জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে।
এটিকে তখন পূর্ব পাকিস্তানের সংসদ ভবন হিসেবে ভাবা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর তা পরিণত হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনে। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হয় এর নির্মাণকাজ। একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম ও শেষ অধিবেশনে হয় এর উদ্বোধন। লুই কান এই বিশ্বসেরা স্থাপত্যের স্থপতি হলেও সর্বপ্রথম এই জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি স্থপতি মাজহারুল ইসলাম।
বড় মাপের মানুষের মনও যে বড় হয়, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম তা আবারও প্রমাণ করেছেন। তিনি ছিলেন লুই কানের প্রিয় ছাত্রদের একজন। তিনিই লুই কানকে এ দেশে এনেছিলেন এবং সংসদ ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। তাঁর প্রিয় শিক্ষকই পারবেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করতে—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের মতো একটি বিশ্বসেরা স্থাপত্য।
সংসদ ভবনের পুরো কমপ্লেক্সের নকশাটিই লুই কানের করা।
কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝখানে স্থাপিত মূল ভবনটি। এ ছাড়া কমপ্লেক্সজুড়ে আছে লন, লেক ও এমপি হোস্টেল। কমপ্লেক্সটির চারপাশ দিয়ে গেছে চারটি প্রধান সড়ক। মূল ভবনটি তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত—প্রধান প্লাজা, দক্ষিণ প্লাজা ও রাষ্ট্রীয় প্লাজা। লেকটি যাতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে, সেই দিকটি বিবেচনা করেছেন লুই কান।
এটি লুই কানের এমনি এক সৃষ্টি, যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। এটি আধুনিক ও কালোতীর্ণ। লুই কান তাঁর এই অমর সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করেছেন বিস্ময়করভাবে। তিনি এই ভবনে বৃত্ত, অর্ধবৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজের কাঠামোগুলো দিয়ে একটি নতুন স্বাধীনতার আদর্শের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি পেরেছেনও।
তাঁর হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে একটি স্বাধীন দেশের নতুন দিনের আশার আলোকরেখা।
১৯৭৪ সালে পেনসিলভানিয়ার এক রেলস্টেশনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান লুই কান। তিনি বেঁচে নেই ঠিকই, কিন্তু তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন থাকবে জাতীয় সংসদ ভবন। আর সংসদ ভবন ধারণ করে রাখবে তার স্থপতির নাম।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
সুত্র: প্রথম আলো। | তারিখ: ২৯-০৯-২০১০।
অনেক তথ্য জানুন এখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।