আমার ব্লগে স্বাগতম কাদামাটিতে মাখামাখি বাজারে গিয়ে মাছ-সবজি বিক্রেতার সাথে দরাদরি করে বাজার করার দিন আর নেই। এখন আমাদের বাংলাদেশের ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে ইউরোপ-আমেরিকার মত গড়ে উঠেছে বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। স্টোরগুলোতে ক্রেতা তার পছন্দমত দ্রব্য শপিং কার্টে নিয়ে আসছে, ক্যাশিয়ার প্রত্যেকটি দ্রব্যের বারকোড স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে মূল্য নিয়ে নিচ্ছে। শতভাগ আধুনিকায়ন। কিন্ত আরো একটু এগিয়ে চিন্তা করলে কেমন হয়? পুরোপুরি কম্পিউটারাইজড।
যেমন ধরুন, পুরো স্টোরটি হবে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের আওতাধীন। আপনার পকেটে থাকবে স্টোর কর্তৃক সরবরাহকৃত একটি স্মার্ট কার্ড। স্মার্ট কার্ডকে সহজে বোঝার জন্য আমি উদাহরণ দিতে পারি ক্রেডিট/ডেবিট/এটিএম কার্ড বা আপনার মোবাইলে ব্যবহৃত সিম কার্ড। এখানে অনেকগুলি স্টোর মিলে গ্রুপভিত্তিক স্মার্টকার্ডও সরবরাহ করতে পারে, এতে করে প্রত্যেক স্টোরের জন্য আলাদা আলাদা কার্ড বহন করার ঝামেলাটা থাকবে না। ক্রেতা স্টোরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই একটি সেন্সর তার কার্ডটি পড়ে ফেলবে।
প্রশ্ন জাগতে পারে সেন্সর কার্ডটি কিভাবে পড়বে কারণ পড়ার জন্য কার্ডটি কোন স্ক্যানার বা অপটিক্যাল রিডারের কাছে আনতে হবে। এটা একটা গ্রহণযোগ্য প্রযুক্তি কিন্ত আমার চিন্তাটি আরেকটু এডভান্সড। স্মার্ট কার্ডে আরএফআইডি ট্যাগ (RFID tag) লাগানো থাকতে পারে। RFID (Radio Frequency Identification) ট্যাগ হল একটা বুদ্ধিমান বার্ কোড, যা তারবিহীন প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আরএফআইডি ট্যাগের একটি সহজ উদাহরণ হল কীফব্ (Key Fob). কীফব্ ব্যবহারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে গাড়ীর চাবিতে।
অনেক আগে থেকেই গাড়ীর চাবিতে ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে আসছে যার মাধ্যমে দূর থেকেই গাড়ীর দরজা খোলা বা বন্ধ করা, গাড়ী স্টার্ট দেওয়া, গাড়ীর পেছনের ট্র্যাংক খোলা যায়। আরএসএ (RSA) সিকিউরিটি ব্যবস্থাসম্পন্ন সিকিউরিটি টোকেন (একটা ছোট সিকিউরিটি ডিভাইস) ও একধরনের কীফব্ । এই সিকিউরিটি ব্যাপারটি প্রাযুক্তিক জটিলতার জন্য আজ বাদ থাক।
অতএব ক্রেতা স্টোরে প্রবেশের সাথে সাথেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তার স্মার্ট কার্ডটি পড়ে নিবে এবং ক্রেতাকে স্টোরের নেটওয়ার্ক সিস্টেম আইডেন্টিফাই করে ফেলবে । এখানে উল্লেখ্য যে, স্মার্ট কার্ড ইস্যু করার সময়েই স্মার্ট কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা স্টোর ক্রেতার পরিচয় (আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যবহৃত ভোটার আইডি বা পাসপোর্ট) এবং তার ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ডাটাবেসে সংরক্ষণ করে রাখবে।
তারপর প্রতিটি পণ্যে বার্ কোড থাকার পরিবর্তে থাকবে বুদ্ধিবৃত্তিক আরএফআইডি ট্যাগ। শপিং কার্টটিও হবে অটোমেটেড । কার্টে একটি ইলেক্ট্রনিক রিডার সংযুক্ত থাকবে যা নাকি পণ্যের আরএফআইডি ট্যাগ পড়তে পারে এবং কার্টটি স্টোরের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ক্রেতা যখনি তার পছন্দের পণ্যটি শপিং কার্টে নিবে, সাথে সাথে ক্রেতার ডাটাবেসে ঐ পণ্যটি ঐদিনের বাজার তালিকায় তালিকাবদ্ধ হয়ে যাবে। আবার ক্রেতা যখন কোন পণ্য নেবার পর সিদ্ধান্ত নিবে যে, আজ সেটা সে নিবে না, শপিং কার্ট থেকে বের করার সাথে সাথে তার আজকের বাজার তালিকা থেকে বাদ হয়ে যাবে।
এবার বাজার শেষ হলে তাকে নির্দিষ্ট গেট (Exit) দিয়ে বের হতে হবে। যখনি ক্রেতা বাজার শেষে নির্দিষ্ট গেট দিয়ে বের হবে, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তার স্মার্টকার্ডটি পড়ে নিবে এবং মুহূর্তে নেটওয়ার্কের কম্পিউটার তার আজকের বাজারের তালিকা তৈরি করে ফেলবে এবং ডাটাবেসে সংরক্ষিত তার ক্রেডিট/ডেবিট/এটিএম কার্ডটি চার্জ করে ফেলবে। চাইলে এক্সিট গেটে স্থাপিত অটোমেটেড কাউন্টার ক্রেতাকে একটি ছাপানো রসিদ দিতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে কম্পিউটারাইজড শপিং স্টোরে পণ্য নেবার পর ক্রেতাকে কাউন্টারে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হলো না এবং স্টোরকেও অতিরিক্ত ক্যাশিয়ার নিয়োগ করতে হল না। ছিনতাইকারীও টাকা ছিনতাই করতে পারবে না।
আমি এখানে একটি ধারণা দেবার চেষ্টা করলাম। ব্যাপারটি সহজ নয় কিন্ত বর্তমান প্রযুক্তিতে এটা স্থাপন করা সম্ভব।
সঞ্চয় রহমান
ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।