ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব ভারতের ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এবার প্রচারণায় নেমেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ‘ডাক্তার জাকির নায়েক সম্পর্কে জরুরি কথা’ শিরোনামে দীর্ঘ নয় পৃষ্ঠার একটি লেখা তিনি ফটোকপি করে ইফা কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণ করেছেন ও ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। গর্হিত ভাষায় লেখা প্রবìেধ বিশ্বের এ ঈর্ষণীয় ধর্মতাত্ত্বিক ডা. জাকির নায়েককে ‘পথভ্রষ্ট’, ‘ফিতনা সৃষ্টিকারী’ ‘ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী’সহ নানা নেতিবাচক বিশেষণে অভিহিত করা হয়েছে। প্রবìেধ ডা. জাকির নায়েকের লেকচার শোনা ও তার বইপুস্তক পড়তেও নিষেধ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আগারগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায় এ প্রবìধ বিতরণ করেন ডিজি।
নারীর অধিকারবিষয়ক এ কর্মশালায় ফাউন্ডেশনের সব উপপরিচালক এবং মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের মাস্টার ট্রেইনার ছাড়াও আরো কিছু কর্মকর্তা যোগ দেন। ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে প্রবìধটি লেখানো হয়েছে মুফতি খেতাবধারী একজনকে দিয়ে। ইফার ওয়ার্কশপে উপস্খিত যাদের মধ্যে এ প্রবìধটি বিতরণ করা হয়েছে তাদের কয়েকজন নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন প্রবìধটি বিতরণের সময় ডিজি জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বলেন, তিনি কোনো আলেম নন। মাদরাসায় পড়াশোনা করেননি। তার মতবাদ ইসলামের ক্ষতি করছে।
তিনি ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী। ইসলামিক টিভিসহ আরো যারা জাকির নায়েকের লেকচার প্রচার করে তা বìধ করতে হবে।
ইফা সূত্র জানিয়েছে, ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে প্রচারণা কার্যক্রম বিষয়ে সম্প্রতি বায়তুল মোকাররমে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ডিজি তার একান্ত অনুগত কয়েকজনকে নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেন। এক শ্রেণীর আলেম দিয়ে ড. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন ডিজি।
ইফা সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ড. জাকির নায়েকের লেকচার প্রচার করে যেসব টিভি তা বìধ করারও পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
ইফা ডিজি’র বিলি করা ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে লিখিত প্রবìেধ প্রচণ্ড ঈর্ষাকাতরতা ফুটে উঠেছে। যেমন ডা. জাকির নায়েককে আক্রমণ করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি মাদরাসায় পড়াশোনা করেননি। কোনো বিশিষ্ট আলেমের সান্নিধ্যে থেকে ইসলাম বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেননি। তিনি কোনো সনদপ্রাপ্ত আলেম নন। আরবি ভাষায় তার কোনো দক্ষতা নেই।
তিনি শুধু মুখস্ত রেফারেন্স ব্যবহার করেন। আসলে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার কোনো পারদর্শিতা নেই। তিনি মাজহাববিরোধী। তার বেশভুষা ইসলামি নয়। তাকে দেখলে কোনো দ্বীনদার বোঝা যায় না।
আলেমদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্খা রয়েছে তিনি তা ধ্বংস করতে চান। ইসলামের পোশাক আশাকের প্রতি তিনি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। হারামকে হালাল বলে ফতোয়া দিচ্ছেন।
তাদের দাবি, যেহেতু ড. জাকির নায়েক কোনো মাদরাসায় পড়েননি তাই কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে ইসলামের আলোকে সমাধান দেয়া ও দর্শক শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার কোনো অধিকার তার নেই। এ কাজ কেবল মাদরাসা পড়ুয়া ও আরবি ভাষায় দক্ষরাই করতে পারেন।
জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা ও বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরীর কাছে জানতে চাওয়া হয় ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে আপনার অভিমত কী। তিনি বলেন, ডা. জাকির নায়েক বর্তমান বিশ্বে ধর্মতত্ত্বে সবচেয়ে সেরা পণ্ডিত। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বা তার সমকক্ষ আছে এখন পর্যন্ত এমন কাউকে দেখা যায়নি। তিনি ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য, সত্যতা ও বিশ্বজনীনতা এমন সুন্দর অখণ্ডনীয় যুক্তিতর্ক সহকারে উপস্খাপন করেন, যা সবাই মানতে এবং উপলব্ধি করতে বাধ্য। বর্তমানে যখন ইসলামকে নানাভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে একে একটি সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী ধর্ম হিসেবে উপস্খাপন করা হচ্ছে এবং কথায় কথায় গালি দেয়া হচ্ছে।
তখন ডা. জাকির নায়েকের এ সাবলীল, যৌক্তিক ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ উপস্খাপনায় মুসলমানদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। নি:সন্দেহে তার এ কাজ ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বিরাট খেদমত হচ্ছে। তার জন্য আমাদের সবার দোয়া করা উচিত।
কামাল উদ্দিন জাফরী বলেন, অনেকে ডা. জাকির নায়েকের ব্যাপারে হিংসা এবং ঈর্ষা পোষণ করতে শুরু করেছে। ডা. জাকির নায়েকের কিছু ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক।
যেহেতু তিনি আরবি ভাষার পণ্ডিত নন, তাই রেফারেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু ভুল তো হতেই পারে। তা ছাড়া তিনি স্বাধীনচেতা হওয়ায় সরাসরি কুরআন হাদিস থেকে রেফারেন্স ব্যবহার করেন। কিন্তু দুশমনরা সেগুলো নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে।
সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরীকে ইফা ডিজি’র প্রচারণার বিষয়ে অবগত করা হলে তিনি বলেন, যারা ডা. জাকির নায়েককে পথভ্রষ্ট বলছেন, নি:সন্দেহে তারাই পথভ্রষ্ট।
দেশের খ্যাতিমান ইসলামিক স্কলার, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের কাছে জানতে চাওয়া হয় ডা. জাকির নায়েক সম্পর্কে আপনার অভিমত কী।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, আমি তাকে ইসলামের একজন প্রচারক বলে জানি। আমার মতে তিনি ভালো মানুষ। তার ওস্তাদ আহমদ দিদাত আমার ভালো বìধু ছিলেন। তার সাথে আমার মক্কা মুয়াজ্জামায় বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। জাকির নায়েক তখন খুব অল্প বয়সের ছিলেন।
ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ইফা ডিজি’র প্রচারণা বিষয়ে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, ভালো মানুষের পেছনে সব সময় এ জাতীয় কুচক্রী থাকে। তাদের দাবি ভ্রান্ত।
শুধু মাদরাসা পড়ুয়ারাই ইসলামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে আর অন্যরা পারবে না। এ দাবির কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না জানতে চাইলে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, তা মোটেই ঠিক নয়। জ্ঞান অর্জন সবার জন্য উন্মুক্ত।
আপনাদের মতামত প্রকাশ করুন।
সূত্র: Click this link
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।