একটি পৃথিবী ৭০০ কোটি মানুষ, তবুও আমি একা রুমানা তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরই স্বামী হাসান সাইদ তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা নেন। সে অনুযায়ী রুমানার ওপর হামলা চালান সাইদ।
রিমান্ডে থাকা হাসান সাইদ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) এ তথ্য দিয়েছেন। তৃতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার তাঁকে আবার আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ডিবির কর্মকর্তারা ল্যাবএইড বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মনজুরের কাছ থেকে তাঁর ওপর স্বামীর নির্যাতনের ঘটনার আগের ও পরের কথা শুনেছেন।
এ ছাড়া রুমানার বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা মনজুর হোসেনের কাছ থেকে তাঁরা ঘটনার বিষয়ে জেনেছেন। এসব বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তাদের জেরার মুখে সাইদ রুমানার ওপর নির্যাতন করার সব দায় স্বীকার করেন।
সাইদ ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি রুমানাকে সন্দেহ করতেন এবং নিজে হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। গত ২১ মে তিনি রুমানাকে রড দিয়ে বেধড়ক পেটান। ওই দিন রুমানা তাঁকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
এরপর তিনি রুমানার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং হত্যার পরিকল্পনা নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ৫ জুন রুমানার ওপর হামলা চালানোর সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগান। ওই দিন রুমানার মা গ্রামের বাড়িতে ও তাঁর বাবা কর্মস্থলে ছিলেন। এ সুযোগে রুমানার ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন, দুই চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেন, শরীরের একাধিক স্থানে কামড়ে দেন।
একপর্যায়ে বাড়ির গৃহকর্মীরা বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রুমানাকে রক্ষা করেন।
মামলার আরেক তদারকি কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার এস মেহেদী হাসান বলেন, সাইদ স্বীকার করেছেন, বিয়ের আগে অনেক তথ্য তিনি রুমানাকে বাড়িয়ে বলেছিলেন; কিছু গোপনও করেছিলেন।
মানববন্ধন ও বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি: রুমানা মনজুরকে নির্যাতনকারী তাঁর স্বামী সাইদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা মানববন্ধন করেছেন। রোকেয়া হলের সামনে এক ঘণ্টা ধরে চলা এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলের ছাত্রীরা অংশ নেন।
একই দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে কর্মজীবী নারী ও বঙ্গবন্ধু মহিলা পরিষদ।
যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়, রুমানার ওপর তাঁর স্বামী হাসান সাইদের বর্বর ও পৈশাচিক নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
নারীপক্ষ থেকে পাঠানো পৃথক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, একটি মহল রুমানার ওপর আক্রমণকে বৈধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ও রুমানার বিভিন্ন সম্পর্ক নিয়ে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। তাঁরা রুমানার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
রুমানার ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মাগুরা জেলা সমিতি। বিকেল পাঁচটায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এ কর্মসূচি হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।