বাংলা ছবির এক সময়ের মিষ্টি নায়িকা। শুধু রুপালি পর্দায় ঝড় তুলতেন না ভক্তদের ঘুমও হারাম করতেন। চলচ্চিত্রে আসেন সুভাষ দত্তের হাত ধরে। প্রথম ছবি সুতরাং। তারপরও অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা।
কী চলচ্চিত্র কী ব্যক্তিগত জীবন। সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে সংসার বাঁধার পর। আগের ঘরের সন্তানকে নিয়ে কবরী আসেন বাবু সরোয়ারের ঘরে। আর এই পরিবারে ঘর বাঁধার সূত্র ধরেই কবরীর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু।
'৯৬ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে।
ওসমান পরিবারের আদি বাড়ি দাউদকান্দিতে। এই কারণেই দাউদকান্দিকে বেছে নেওয়া। কিন্তু না মনোনয়ন আসেনি। এরপর আর সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কবরীকে দেখা যায়নি। মাঝে তিনি ঝামেলায় ছিলেন চিত্ত চৌধুরীর ঘরের সন্তান অঞ্জন একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পর।
আইনের চোখে অপরাধী হলেও পুত্রকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন কবরী। বাবু সরোয়ারকে নিয়ে সামাল দেন অনেক ঝড়।
কবরীর ভাগ্য খুলে দেয় ওয়ান-ইলেভেন। মামলার কারণে শামীম ওসমান নির্বাচন করতে পারেন নাই। এর বাইরে ছিলেন আপদমস্তকে রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট নাজমা রহমান।
কিন্তু সংস্কারের অভিযোগে মনোনায়ন বঞ্চিত হন নাজমা রহমান। ওসমান পরিবারের পুত্রবধূ কবরী মনোনায়ন পান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি শামীম ওসমান, নাসিম ওসমানের চাচি। কিন্তু মনোনয়ন লাভের অল্প কয়েকদিন আগে বাবু সরোয়ারের সঙ্গে কবরীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানির আগেই এমপি হয়ে যান কবরী।
নারায়ণগঞ্জের মানুষ চট্টগ্রামের কবরীকে শ্বশুর বাড়ির সুবাদে ভোট দেয়।
কবরীকে ঘিরে যত আলোচনা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই। সন্ত্রাসী বাহিনী লালন পালন, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার থেকে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের একজন আইনজীবী বলেন, কবরী প্রথম দিন থেকেই নিজেকে গড মাদার ভাবতে থাকেন। তার চলফেরা, কার্যক্রমে ফিল্মি স্টাইল।
তার গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের বহর দেখা যায় মাঝে মধ্যে। এলজিইডি অফিসে উপস্থিত থেকে তিনি একাধিকবার ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। অন্য অফিসগুলো নিয়ন্ত্রণে তার ভাব ভারতের জয় ললীতার মতো। ভারতীয় হিন্দি ছবির এমপিদের চালচলনের সঙ্গে মিল রেখেই কবরী নারায়ণগঞ্জে তৎপর। চলনে-বলনে, আচরণে, কার্যক্রমে, কথায় তার ফিল্মি স্টাইল।
মিষ্টি মেয়ে এখন নারায়ণগঞ্জের লড়াকু এমপি। আর লড়াইটা নারায়ণগঞ্জের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায়। শুধু মুখে নয়, শক্তি প্রদর্শন ও মহড়ায় পিছিয়ে নেই তিনি। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ নেতা পলাশের সঙ্গে তার লোকজনের কয়েকদফা লড়াই নারায়ণগঞ্জবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। তার পিএসের বাড়াবাড়ি, অস্ত্রের মহড়ায় থানা পুলিশও বিরক্ত।
তারপরও থেমে নেই কবরীর যাত্রা।
তার কার্যক্রমের প্রতিবাদ প্রথম জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু কবরী কারও কথাই শুনতে নারাজ। তাই তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ আসে সাবেক শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে। ওসমান পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কবরীকে সংযত হওয়ার প্রথম অনুরোধ জানান, মহাজোটের এমপি নাসিম ওসমান।
এতে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন কবরী। তাকে উৎসাহ জোগান বিএনপির একটি অংশ। তারা এখন কবরীর আশ্রয়ে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করছে।
সর্বশেষ গত শনিবার আইনশৃক্সখলা কমিটির বৈঠকে শামীম ওসমানের সঙ্গে কবরীর কি হয়েছিল? জানা গেছে, কবরী হরতাল আহ্বানকারীদের সমর্থন দেন। শামীম ওসমান এর প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, হরতালকারীদের সমর্থনের আগে আপার মনোভাব জেনে নিন। তার সঙ্গে কথা বলুন। এতে ক্ষুব্ধ হন কবরী। এক পর্যায়ে মারমুখী কবরী বলেন, আপার সঙ্গে কথা বলতে হবে কেন? কিসের আপা? রাজনীতি করি জনগণের জন্য। তখন শামীম ওসমান বিএনপির দালাল বলেন কবরীকে।
জবাবে কবরী তাকে গালি দেন। হৈচৈ শুরু করেন। কবরীকে থামানোর চেষ্টা করেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। কিন্তু তার সঙ্গেও তিনি ভালো ব্যবহার করেননি। একপর্যায়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গেও তার বাকবিতণ্ডা হয়।
বাকবিতণ্ডা দেখে অনেকে বিস্মিত হন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।