'আমি অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) প্রসিকিউসন। ধর্ষণের বিষয় নিয়ে বেশি জল ঘোলা করিস না। কাওসার আমার বন্ধু। তাই থানায় গিয়ে কোনো লাভ হবে না। এর চেয়ে ভালো ওকে বিয়ে করে ফেল।
' ধর্ষণের শিকার স্বপ্না (ছদ্ম নাম) নামের এক তরুণীকে এভাবেই এডিসির নামে হুমকি দিয়েছেন প্রসিকিউসনের এক স্টাফ। ওই স্টাফের নাম বিধান চন্দ্র রায়। অভিযুক্ত ওই কাওসার হলেন ভাঙারি ব্যবসায়ী। তবে নিজেকে পরিচয় দেন কবিরাজ ও পীর হিসেবে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী বংশাল থানায় মামলা করতে গিয়ে এখন উল্টো হয়রানির শিকার হয়ে জীবন ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বপ্নার ভাষ্যমতে, শুধু ধর্ষণই নয়, জীবনটাই এখন তার শঙ্কায়। ন্যায়বিচারের আশায় তিনি গিয়েছিলেন বংশাল থানায়। মামলা না নিয়ে পুলিশ উল্টো জোর করে ওই কাওসারের সঙ্গে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জমিরউদ্দিন, উপ-পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল তায়েবি, ভণ্ড কবিরাজ কাওছার, তার মা রাবেয়া খাতুন, বাবা ছিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী বিধানচন্দ্র রায় এবং কাজি মাওলানা নাছিরউদ্দিনকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় জিডি করলে আরও ক্ষেপে যায় পুলিশ ও প্রতারকরা। জিডির পর প্রতারক চক্র বংশাল থানায় প্রতারণা মামলা দিয়ে উল্টো তাকে জেলে পাঠায়।
এক মাস ২৫ দিন কারাভোগের পর তিনি ছাড়া পান। গতকাল তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে নির্যাতনের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করেন।
তবে বংশাল থানার ওসি জমিরউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি তার কাছে মামলার তদবির করতে এসেছিল। তদবির না রাখায় পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বপ্না জানান, পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতে তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। এসএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করেন। তবে পারিবারিক টানাপড়েনে অল্প বয়সেই তাকে বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। আড়াই বছরের একটি সন্তানও তার রয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রথম স্বামীর নির্যাতনের কারণে তিনি বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
তবে জীবিকার তাগিদে গত বছর একটি কুরিয়ার সার্ভিসে তিনি চাকরি নেন। ওই সময় তিনি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এক আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন। একপর্যায়ে কাওসার ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকান থেকে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নিজেকে কবিরাজ দাবি করে তার সব সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলেন। ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর কাওছার তাকে ফোন করে জানায়, তার বাসায় স্বামী বাবুল এসেছে। বাবুল ভালো হয়ে গেছে।
এসব কথায় বিশ্বাস করে স্বপ্না ২১/২ রজনীগন্ধা লেন মিটফোর্ড এলাকার বাসায় যায়। সেখানে কাওসার তাকে টানা তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। তিন দিন পর পালিয়ে এসে স্বপ্না বংশাল থানায় মামলা করতে যান। শুনে ওসি জমিরউদ্দিন এবং এসআই আবদুল্লাহ আল তায়েবি কাওসারকে ডেকে এনে বিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। বিয়ে পড়ান ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি মাওলানা নাসিরুদ্দিন।
স্বপ্না আরও অভিযোগ করেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি এসআই তায়েবি তাকে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলে গুলিস্তানের একটি হোটেলে নিয়ে তার গলার চেইন এবং মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেন। পরে গত ১ মার্চ তায়েবি স্বপ্নাকে কোর্টে মামলার নোটিশ দেওয়ার কথা বলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তবে রাজি না হওয়ায় ওইদিনই তাকে প্রতারণা মামলায় জেলে দেন। জামিনে বের হওয়ার পর গত ২৮ এপ্রিল ওসির নির্দেশ মতো তিনি কাগজপত্র নিয়ে থানায় যান। সব কাগজপত্র ওসি তার কাছে নিয়ে সবকিছু চেপে যেতে বলেন।
বাড়াবাড়ি করলে উল্টো মাদক এবং অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। স্বপ্না পুলিশ সদর দফতরে বংশাল থানার ওসি ও এসআই তায়েবির বিরুদ্ধে অভিযোগ (স্মারক নম্বর-১৪৩৬-২৬-০৫-১১) দায়ের করেন। বর্তমানে এ বিষয়ে তদন্ত করছেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার রাজীব আল মাসুদ।
স্বপ্নার বাড়ি মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায়। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, তাকে প্রতারণা করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রজীবনে সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সে এখন জীবন নিয়েই শঙ্কায়। এর বিচার চাই।
সত্যিকারের বিচার চাই। ওদের মতো লোভী মানুষগুলোর জন্য সমাজটা আজ ধংশের মুখে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।