আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশলীনা-১২ [ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী]

আকাশলীনা] মুক্ত প্রাণ, স্বপ্নের সোপান আকাশলীনা আষাঢ় ১৪১৮] জুন ২০১১] সংখ্যা ১২] বর্ষ ০১] ---------------------------------------------------------------------------- পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি] আকাশলীনা- মূলত এটি একটি ছোট পত্রিকা; প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে প্রকাশিত হয়। বলা যেতে পারে, সাদা-কালোয় প্রকাশিত এটি আমাদের রঙিন এক স্বপ্নের গল্প! এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন... পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; ফোন নম্বরসহ আপনিও ঠিকানা লিখে জানান। আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে। সকলকে ধন্যবাদ।

-সম্পাদক, আকাশলীনা ---------------------------------------------------------------------------- মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু- ---------------------------------------------------------------------------- সম্পাদকীয়] বৃষ্টি হোক না হোক- শ্রাবণ মানেই বর্ষার শুরু। আর বর্ষাকাল মানেই বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল... যে কারণে, প্রিয় পাঠক, আমরা খুব উচ্ছ্বস নিয়েই সবাইকে আহ্বান করছি- এসো, আজ আমাদের বৃষ্টি নিমন্ত্রণ! এ কথা সত্যি যে, বৃষ্টি নিয়ে প্রকৃতির ভেতর যে রোম্যান্টিকতা আছে; তা দেখে-ছুঁয়ে-অনুভব করে, মানুষের ভেতরও জন্ম নিয়েছে এ নিয়ে আরো বেশি উদ্বেলতা। কেবল কবি-সাহিত্যিক কেনো, বৃষ্টি দেখে পাগল হই আমি-আপিন যে কেউ। বৃষ্টির সে মুগ্ধতা, অপার বিস্ময়ে অবলোকন করি আপন অনুভূতি দিয়ে। মাতাল করা হিমহিম হাওয়া মনকে উচাটন করে দেয়।

স্বপ্নের ভেতর কতো রঙের প্রজাপতি যে ছড়িয়ে পড়ে এক নিমেষে! রঙ-বেরঙের অনুরাগ তখন বৃষ্টি-ছাঁটের সঙ্গে উড়ে যায়... গত সংখ্যার সম্পাদকীয়-তে বন্ধুদের বৃষ্টি নিয়ে লেখার কথা বলা হয়েছিলো। ধন্যবাদ সবাইকে এ আহ্বানে সাড়া দেবার জন্য। বেশ কিছু লেখা ছাপতে পারিনি আমরা; তাঁদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি। পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে অবশ্যই আপনাদের সুযোগ দেওয়া হবে বলে কথা দিচ্ছি। সকলকে বৃষ্টির ভেজা শুভেচ্ছা...[] ---------------------------------------------------------------------------- কবিতা] বৃষ্টির পাঠ জহিরুল ইসলাম নাদিম আজ ঘুম থেকে জেগেই দেখি, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে- একেবারে কুকুর-বেড়াল! ঢাকা ঢেকে গেছে জলে, কাদায়, সোঁদা গন্ধে! ধুলোর উত্তরীয় ধুয়ে ফেলে পাতারা সেজেছে তারুণ্যের দীপ্তিতে।

অভিযাত্রীর মতো সেজেগুজে পথে বেরুলাম। ওমা! এ পথ যে আমার অচেনা রাস্তা চুঁই চুঁই পানিতে সয়লাব, কারেন্টের তারে ভেজা কাক পথ-ঘাট পুরো জনমানব শূন্য, যেনো-বা রূপকথার রাজ্যে এসে পড়েছি! ভয়ংকর দর্শন কোনো দৈত্য, শহরের সবাইকে নিকেশ করে রাজকন্যাকে রেখেছে বন্দি করে- আমি আগুন্তুক রাজপুত্র আমার দায়িত্ব দৈত্যের প্রাণভোমরাকে হরণ করে রাজকন্যা উদ্ধার! গাড়ির শার্সিতে হীরের কুচির মতো বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে দৃষ্টির মগ্নতা নেমে এসেছে বেশ নিচে পিচ ঢালা রাস্তা, রিকশা-স্কুটার আর ইতঃস্তত পথযাত্রীকে মনে হচ্ছে অপার্থিব কিছু। কল্পনা আর বাস্তবের ব্যবধান ঘুচে গেলো? যে সূক্ষ্ম ফারাক তাদেরকে আলাদা রাখে, তা বেমালুম গায়েব। তখন তোমার কথাই মনে হলো। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে বার্তা পাঠালাম- কী করছো? লিখতে চেয়েছিলাম- তোমার কাছে বৃষ্টির পাঠ নিতে চাই... কিন্তু লেখার সাহস পাইনি! [] ---------------------------------------------------------------------------- গল্প] দখিন আকাশে বৃষ্টি অ্যাঞ্জেল অন্তরা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলো।

কেনো যেনো মনে হতো, পৃথিবীতে ওই একমাত্র মানুষ, যে আমাকে বুঝতে পারে। আর যেদিন এই উপলব্ধি হয়েছিলো, সেদিন থেকেই ওকে আপন করে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা দেরি হয়নি। অন্তরাও বুঝতে পেরেছিলো সেটা। তাই আমাকে বন্ধু করে নিতে সেও কোনো কার্পণ্য করেনি। কাছাকাছি বাসা হওয়ার সুবাদে, এরপর থেকে ঘনঘন আমাদের যাওয়া-আসা চলতে লাগলো।

ওর মাকে আমি ডাকতাম সোনাম্মা বলে। তিনিও খুব আদর করতেন আমাকে। অন্তরার আব্বু ভীষণ বদরাগী মানুষ। সবাই খুব সমঝে চলতো তাঁকে। তিনি কথাও বলতেন খুব কম।

উনার সাথে আমার হাতেগোনা কিছু কথা হয়েছে। তার বেশিরভাগই ছিলো, ‘কেমন আছো?’ আর ‘জ্বী, ভালো। আপনি?’ গোছের। অন্তরার ভাই আকাশ ছিলো আমাদের চাইতে তিন বছরের বড়ো। আকাশ ভাইয়া আমাকে দেখলেই মুচকি হাসি দিতেন।

তাঁর সাথেই মূলত প্রচুর আলাপ হতো ও বাড়িতে- কখনো অ্যাসাইনমেন্ট বোঝার ছুতোয়; কখনো আবার অন্তরার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ জানিয়ে। আসলে ধীরে ধীরে, কখন যেনো আকাশ ভাইয়ার প্রতিও আমি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। অবচেতনেই। বুঝতেও পারিনি তা একদমই। আর এটাই ছিলো অন্তরার সাথে আমার মনোমালিন্যের শুরু।

দিনটির কথা এখনো পরিষ্কার মনে আছে। বাইরে বৃষ্টি ছিলো; এ জন্য কলেজে যেতে পারিনি। কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলাম। মা বেশ কয়েকবার ডেকে গেছেন। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছিলো না।

আমাদের পাশেই একটা টিনশেড বাসা ছিলো। সে বাসার চালে বৃষ্টি পড়ার ঝমঝম শব্দ কেমন ঘোর লাগিয়ে দিতো। নিবিড় হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম, কৌটায় করে সে শব্দ আটকিয়ে রাখলে কেমন হবে? শেষবার মা না এসে পাঠালেন রিমিকে। রিমি আমার ছোটো বোন। ও এসেই কাঁথা ধরে টানাটানি শুরু করলো।

বিরক্ত হয়ে ওকে যেই না ধমক দিবো, ওমনি হন্তদন্ত হয়ে ঘরে অন্তরা এসে ঢুকলো। বাইরের মেঘলা আকাশের চেয়েও ওর চেহারা ছিলো থমথমে। দেখেই বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। ইশারায় রিমিকে বাইরে যেতে বলে আমি বিছানায় উঠে বসলাম। রিমি না বুঝে, অন্তরার হাত ধরে আমার নামে নালিশ শুরু করে দিলো, ‘কেনো আমি অতো বেলা অব্দি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি?’ অন্তরা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

একটা কথাও বললো না রিমির সাথে। চোয়াল আরো শক্ত হলো শুধু। তাতে আমার আশংকা আরো গাঢ় হয়। রিমিও এবার বুঝতে পারে। দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে আস্তে করে চলে যায় ও।

অন্তরাকে বসতে বললাম। কাঁথাটা সরিয়ে বিছানার এক পাশে জায়গা করে দিই। কিন্তু ও বসে না। দাঁড়িয়েই থাকে। অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙার জন্য জিজ্ঞেস করি, ‘কী হয়েছে রে?’ এবার বেচারি ফুঁসে ওঠে।

একনাগাড়ে কিছুক্ষণ কি সব বলে, কিছুই বুঝতে পারি না। শুধু কয়েকবার আমার আর আকাশ ভাইয়ার নাম নিয়েছে, সেটা বুঝি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর অন্তরা একটু শান্ত হয়। হাতের ব্যাগ থেকে কয়েকটা পৃষ্ঠা বের করে ছুড়ে দেয় আমার দিকে। তারপর যেভাবে ঝড়ের বেগে এসেছিলো, সেভাবেই চলে যায় আবার।

আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকি। ঘটনা বোঝার চেষ্টা করি। এরপর বিছানার উপর থেকে কাগজগুলো তুলে নিয়ে দেখি, ডায়েরির কিছু ছেঁড়া পাতা। আকাশ ভাইয়ার হাতের লেখা চিনতে সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে হয়তো মিনিট দশেক লাগে পুরোটা পড়তে।

পড়ছিলাম আর আমার চারপাশ যেনো কাঁপছিলো। হঠাৎ করেই খুব ঠাণ্ডা অনুভূতি লাগে। গলার কাছে মনে হয় যেনো কিছু আটকে আছে। চোখে অন্ধকার দেখি। মনে হয় যেনো দেয়ালগুলো ধীরে ধীরে চেপে আসছে এদিকে।

আমি বন্দি পাখির মতো আর্তনাদ করে ওঠি। হয়তো চিৎকার করেছিলাম। ঠিক মনে নেই। শুধু মনে আছে রিমি ছুটে এসেছিলো। এসে আমাকে আঁকড়ে ধরেছে।

জানতে চাইছিলো কী হয়েছে? আমি বাকশক্তি হারিয়ে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। ওর একটা কথাও আমার কানে ঢোকে না। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যায় চারপাশ। ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাও যেনো থমকে দাঁড়িয়ে যায়! অথচ বাইরে তখনো অবিরাম বৃষ্টি ঝরছিলো... [] > ---------------------------------------------------------------------------- কবিতা] বৃষ্টি মেঘে যুবা বন্দনা এখানে বড্ডো বৃষ্টি আজ মনের কোণেও যেনো এক টুকরো মেঘের ভেলা অঝোরে ঝরবে যখন-তখন। তোমার আকাশও কি মেঘে ধরা? আমি তো দেখি না; মনের সেই বৃষ্টিতে তুমিও কি ভেজো পাগলের মতো? সেবার বৃষ্টিতে যখন আমাদের শহর ডুবে গেলো পুরো শহরে যেনো তুমি আর আমি আর একটা ছোট্টো রিকশা।

পর্দার আড়ালে তোমার হাত আমার হাতকে ধরা শক্ত মুঠোয় দ্বিধা জড়ানো সেদিনের সেই অনভ্যস্ত ঠোঁট উষ্ণতা খুঁজে নেয়নি আমার ঠোঁটে। সেই থেকে বড়ো তৃষ্ণার্ত আমার এ দুটি ঠোঁট। [] ---------------------------------------------------------------------------- কবিতা] বর্ষায় তোমাকে মো. জামসেদুর রহমান সজীব বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে আজ ঘুম আসে না তোমায় নিয়ে গাথা স্মৃতি জমাট বাঁধে না মেঘের ডাকে সাড়া দিতে ভাল্লাগে না ভিজতে গিয়েও কি মনে আজ ভিজতে পারি না, এখনো তোমাকে মনে পড়ে, সজল বর্ষার ক্ষণে। বৃষ্টিভেজা উঠোন পানে ছুটতে তুমি তোমার পেছন ছাতা হাতে ছুটতাম আমি বৃষ্টিতে তুমি মিশে যেতে, থাকতো ঠোঁটে হাসি দুজনার বুকে ছিলো আনন্দ রাশিরাশি, কিন্তু তুমি আজ কেবলই স্মৃতি, আমার ভালোবাসা। বৃষ্টি শেষে রংধনু দেখতে ছুটতে খোলাকাশে অপেক্ষায় থাকতে কখন আবার বৃষ্টি আসে দূর গগনে দেখতে পাখি, উড়তো তোমার মন বোঝোনি তুমি, এ সকলই হৃদয়ের আয়োজন আমি আজ একা থাকবো, যেভাবে তুমি থাকো।

[] > চরনারায়ণপুর, রাজবাড়ী। ---------------------------------------------------------------------------- গল্প] অনিতার একদিন বিষণ্ন বাউণ্ডুলে তাড়াহুড়ো করে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই ঠোঁট পুড়ে গেলো অনিতার। মেজাজ এমনিতেই খারাপ; এবার আরো খারাপ হয়ে যায়। মেজাজের দোষ দিয়ে অবশ্য লাভও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে অনিতা, আজ ছিলো ওর তৃতীয় সেমিস্টারের শেষ দিন।

আগেই ঠিক করা ছিলো, আজ ক্লাস শেষে তিনটার ট্রেনে বাড়ি যাবে। ছুটির দিনগুলিতে, হলে থেকে থেকে পড়াশোনা করে নষ্ট করার কোন মানে হয় না! ট্রেনের টিকেট-ও তাই আগেই কাটা। ক্লাসগুলো ভালোই মজা করে কাটছিলো, সবার মাঝেই ছুটির আগাম ফূর্তি। শেষ ক্লাসে এসে শুধুশুধুই ঝাড়ি খেতে হলো, তা-ও আবার অনিতার সবচেয়ে প্রিয় স্যারের কাছে। কারণ, অনিতার পাশের সিটের মেয়েটা ওর কাছে কিছু একটা বারবার জানতে চাচ্ছিলো।

হায় রে বিচার! ক্লাস শেষে হলে ফিরে এসেছে ও। ফ্রেশ হয়ে আর দেরি করেনি, ব্যাগ গুছিয়েই বেরিয়ে পড়লো অনিতা। দেখলো নিমেষেই শরতের আকাশ মেঘে মেঘে অন্ধকার। শাহবাগ পর্যন্ত আসতেই বৃষ্টিতে একেবারে কুকুর-বিড়াল অবস্থা। কেমন যে লাগে! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো একটা সিএনজি-ও নেই।

দুপুর দুটা বাজে, অথচ রাস্তা এমন পুরো খালি! অসময়ের বৃষ্টিতে মনে হয় রোজকার জ্যামও ভেসে গেছে! অনেক বলে-কয়ে একটা রিকশায় শেষ পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন পৌঁছেছে। তবে ততোক্ষণে একদম ভেজা কাক। পৌনে তিনটা বাজে। গা একটু গরম করতে চা নেওয়া। আর তাতেই... উফ! এখনো জ্বলছে ঠোঁটটা! চারদিকে ভিড় আর ভিড়।

কোনো মতে গা বাঁচিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। হঠাৎ পিঠে একটা হাত। ‘মা, একটা কথা শুনবে?’ বিরক্তিতে ভ্রুঁ কুঁচকে ফিরে চায় অনিতা। একজন বৃদ্ধ, বেশ ভদ্র চেহারা। সাথে এক বৃদ্ধা, ওনার স্ত্রী হতে পারে।

‘মা, আমরা কুমিল্লায় যাবো; নাতিটা খুব অসুস্থ, ক্যান্সার। ডাক্তার বলেছে খুব বেশিদিন নাকি বাকি নেই। আমার মেয়ে কাল ফোন করে বললো- ও নাকি বারবার আমাদের দেখতে চাইছে। তাই, হঠাৎ করে এই যাওয়া। টিকেট কেটেছি, অথচ সিট নেই।

আমি দাঁড়িয়েই যেতে পারবো, কিন্তু ওর আবার হার্টের অসুখ...’ পাশের বৃদ্ধার দিকে মুখ কাচুমাচু করে চায় বৃদ্ধ। তারপর আবার বলেন, ‘তুমি আমার নাতনির বয়সী হবে, একটু দেখবে কিছু করা যায় কি না?’ বৃদ্ধের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে অনিতা। ঠিক তখনই আবার স্টেশনের মাইকে শোনা যায়- ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি ট্রেন ইঞ্জিন সল্পতার কারণে এক ঘণ্টা দেরিতে বিকেল চারটায় ছেড়ে যাবে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চেয়ে আছেন এখনো। হঠাৎ করে অনিতার নিজের নানা-নানুর কথা মনে পড়ে যায়।

এবার আর ইতস্তত করে না, নিজের টিকিটটা বের করে বৃদ্ধর হাতে ধরিয়ে দেয়। এতোক্ষণে হাসি ফুটে ওঠে পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধার মুখে। অনিতার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার ভালো করুন। বেঁচে থাকো, মা...’ মৃদু হেসে রেলস্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে আসে অনিতা। বাস স্টেশনে গিয়ে কুমিল্লার বাসে উঠে বসে ও।

মেজাজ খারাপের রেশটা কেটে যাওয়ায় বেশ ভালোলাগছে এখন। রাস্তায় বাসের চাকা পাংচার হয়ে অনেকটা সময় নষ্ট হলো, বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। হালকা গোসল সেরে টিভির সামনে বসতেই মা চা দিয়ে যান। আহ! মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে অনিতার। মায়ের কাছে থাকার এই আনন্দ- যা লাগবে, না চাইতেই পাওয়া যাবে।

চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরতে ঘুরতেই চোখ পড়ে টিভি স্ক্রিনের নিচের দিকে লাল বর্ডারে চলমান ব্রেকিং নিউজে- আখাউড়া স্টেশনের অদূরে, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলির সাথে, মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে শতাধিক আহত-নিহত। রেল যোগাযোগ ব্যাহত। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শোক প্রকাশ। উদ্ধারকার্য অব্যাহত, তদন্ত কমিটি গঠন... টিভি স্ক্রিনটা কেমন যেনো ঝাপসা হয়ে আসে চোখের সামনে। কানে ভেসে আসছে কমলাপুর স্টেশনে বৃদ্ধার কথাগুলো- “আল্লাহ তোমার ভালো করুন।

বেঁচে থাকো, মা...” হাতে ধরা চায়ের কাপে আর চুমুক দেওয়া হয় না। মাকে দেখতে পাচ্ছি জানালাটা বন্ধ করছেন। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বুঝি আবার... [] > ---------------------------------------------------------------------------- কবিতা] ঝুম বৃষ্টি চাই ঝুম বৃষ্টি দরকার! মিনমিনে-ফ্যাতফ্যাতে-ইলশেগুঁড়ি না, কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করে না যে বৃষ্টি, সে রকমটাই চাই! এর কম কিছু না বরং পারলে আরো বেশি, একটা ব্যক্তিগত কালবৈশেখীও চাই, তছনছ করা চাই একটা তুমুল ধ্বংসযজ্ঞ! একটু না হয় বেহিসেবী হই, গাছের সব কয়টা আম না হয় নাই-বা পাকলো। হাতের পাঁচটা আঙুল সমান কি হয় কখনো? না হয় একটু উশৃংখল আমি, একটু ক্ষ্যাপাটে, কা-জ্ঞানেরও না হয় একটু বেশিই অভাব রইলো আমার, তাতে কি মানুষ হওয়া আটকায়? আসুক, তীব্রতর বেগে, ঘাত-প্রতিঘাতে নিশ্চিহ্ন হোক জমে থাকা জঞ্জাল; আসুক, ক্ষীণকায় তরঙ্গিনী কাঁপুক মাতাল উচ্ছ্বাসে... এমন একটা বৃষ্টি আসে না কেনো? [] > নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ---------------------------------------------------------------------------- কবিতা] বৃষ্টি রায় তুহিন দাস বৃষ্টি রায়, ভালো আছো? আগের মতোই আছো? আমি তো তেমনই যেমন বয়স কুড়ি, হাতের মধ্যে রঙিন মানুষ ধরি। বৃষ্টি রায়, ভালো আছো? আগের মতোই আছো? সন্ধ্যা হলেই ওঠো বাড়ির ছাদে? আমি তো কালবিষাদে সিঁড়ি বেয়ে চলেই যাবো চাঁদে।

বৃষ্টি রায়, বৃষ্টি রায়, তোমার সূর্য ওঠা দিন ভালোবেসে চুমু খাও রাগ-বিরাগে যতি-চিহ্নহীন। বৃষ্টি রায়, টিপ-বোতামের গন্ধে ভাসো? মিষ্টি দাঁতে সাঁঝবাতির মতো হাসো? বৃষ্টি রায়, এক যুগ পরে, তোমার মুখ কুড়িয়ে মৃত্যুর মতো আমার ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। পথের শেষে তোমায় দেখি, বৃষ্টি রায় অনেকদিনের বেদনায়, আমি এবার অমলকান্তি হতে চাই, রোদ্দুর হতে চাই; আমার আগেই পৌঁছে গেছো রঙ-মোহনায় বৃষ্টি রায়! বৃষ্টি রায়! আমি অমলকান্তি হচ্ছি, আমি অমলকান্তি হবো। আমি ভালোবাসা হচ্ছি, আমি ভালোবাসা হবো। [] ---------------------------------------------------------------------------- বন্ধুর কাছে মনের কথা] আমার বৃষ্টিবেলা ছোটোবেলায় বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে হতো।

যখন বৃষ্টি হতো, তখন আমি হা করে বৃষ্টি পড়ার দিকে চেয়ে থাকতাম। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটার সাথে আমার অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হতো। আমি যেনো হারিয়ে যেতাম নিজের মধ্যেই অজানা কোথাও... দুঃখজনক যে, আমাকে শুধু তাকিয়েই থাকতে হতো, বৃষ্টিতে ভেজার কোনো অনুমতি আমার ছিলো না। বৃষ্টি হলে মেঘ আর বন্যাকে দেখতাম এক দৌড়ে খোলা উঠোনটায় চলে যেতে। ওরা দুজন হুটোপুটি খেতো, হাসতো ইচ্ছেমতো, নাচানাচিও করতো... আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের আনন্দ দেখতাম।

বৃষ্টির দিনগুলিতে আমার আব্বা আমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতেন। আমি জানালা দিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখতাম, আব্বা আমার এ রকম আনমনা ভাব কাটাতে, আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পটা শোনাতেন তখন... কিন্তু সে সময়, আমার প্রিয় গল্পটাও আমাকে বাইরে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত রাখতে পারতো না। আব্বা মাঝে মাঝে হাল ছেড়ে দিয়ে, আমাকে বারান্দায় নিয়ে হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁতে দিতেন। আমি ওতেই খুব অন্যরকম আনন্দিত হতাম... একবার ঈদে দাদুবাড়ি গিয়েছি। হঠাৎ একদিন তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো।

বিদ্যুৎ চমকালো কয়েকবার; মেঘ, বন্যা-সহ আমার ফুফাতো ভাই-বোনেরা বাইরে চলে গেলো বৃষ্টিতে ভিজতে। আর আমি আব্বার সাথে দাদুর ঘরে বসে রইলাম। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওদের সাথে যাই। আব্বা গল্প বলা শুরু করলেন, আমার গল্প শোনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। আমি চিৎকার করে থামিয়ে দিলাম, ‘না! আমি কোনো গল্প শুনতে চাই না!’ বাড়ির বাইরে যাওয়ার তিনটা দরোজা।

আমি যে ঘরটায় বসেছিলাম ওই ঘরের সাথেও একটা দরজা আছে। আব্বা উঠে গিয়ে ভালো করে ছিটকিনিটা আটকিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেলেন। আমি বসে রইলাম একা... যতো জোরে বৃষ্টি হতে লাগলো, ততোই যেনো আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। নাহ, আমি আজ ভিজবোই... একটা চেয়ারে উঠে শক্ত ছিটকিনিটা খুলে ফেললাম। বৃষ্টি পড়ার দিকে তাকাই।

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা আমাকে যেনো অপার আনন্দে ডাকছে! সেন্ডেলটা খুলে ছুড়ে দিলাম এক কোণায়। আস্তে আস্তে নেমে পড়লাম ঘরের বাহিরে; খোলা আকাশের নিচে... বৃষ্টির একটা ফোঁটা, আমার মাথা-ঘাড় হয়ে শিড়দাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গেলো। এক অদ্ভুত শিহরণ... আমার ঠোঁট তিরতির করে কেঁপে ওঠে। দাঁতের সাথে দাঁত ঠোকর লাগলো। হ্যাঁ, আমি ভিজছি... আমার লাল টুকটুকে জামাটাও ভিজে গেছে... আমি হাঁটছি... হাসছি... ঘুরছি... বৃষ্টিকে আমি স্পর্শ করছি... আমি কাঁপছিও... সামনে ছিলো বিশাল মাঠ।

ওখান থেকে আমার ভাই-বোনদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম। আমি ধীরে ধীরে ওদের কাছে পৌঁছে যাই। ওরা আমাকে দেখে হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মেঘ কাছে এসে বললো, ‘তুই যা, তোর জন্য আমরা কেউ মার খেতে পারবো না। ’ আমি যাচ্ছিলাম না; নদী এসে ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘হয় তুই যাবি, নয়তো আমরা।

’ ওদেরকে বললাম, ‘আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো। ’ কিন্তু এতেও ওরা কেউ রাজি হলো না। আমি ঘুরে দাঁড়াই। আমি হয়তো কাঁদছি; বৃষ্টির পানি আমার মুখটা বার বার ধুয়ে দিচ্ছিলো। আমি আনমনে হাঁটতে লাগি।

কোথায় যাবো? আমি তাও জানি না! এলোমেলোভাবে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে ডানদিকের একটা সরু গলিতে চলে এসেছি। ওখানে দেখি একটা টিনের বাড়ি। ভাঙ্গা টিনের একটা জায়গা দিয়ে একসাথে অনেক বৃষ্টির পানি গড়াচ্ছে... আমি ওটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিমেষেই সব ভুলে গেলাম! আমি আনন্দে লাফাতে থাকি।

মাটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে গেলাম; আবার উঠলাম। চিৎকার করি। বৃষ্টির সাথে কথা বলতে থাকি অনর্গল... ওই ছোট্টো জায়গাটা যেনো, এক মুহূর্তের জন্য আমার স্বর্গ হয়ে গেলো। আমি প্রচ- কাঁপছি। কিন্তু সেটা আমাকে বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

আমি ভিজলাম ইচ্ছেমতো। এক সময় খুব ক্লান্তি অনুভব করি। চোখ বন্ধ হয়ে এলো। হয়তো পড়েও যাচ্ছি... তবে এখন আর আমার কোনো দুঃখ নেই। একদমই মনে নেই যে আমি বিকালঙ্গ।

পঙ্গুত্বের জন্য, নিজের ভাই-বোনেরাও আমাকে খেলায় নিতে চায়নি। ওসব আমি ভুলে যাই। আজ আমি খুশি, আমি সুখী... [] > নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ---------------------------------------------------------------------------- আকাশলীনা আষাঢ় ১৪১৮] জুন ২০১১] সংখ্যা ১২] বর্ষ ০১] কৃতজ্ঞতা] হিমেল অনার্য সম্পাদক] নোমান ভূঁইয়া শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয়] সৈয়দা সুধন্যা প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠাসজ্জা] রঙছুট বিশেষ সহযোগিতায়] শফিক হাসান, মহিবুল হাসান কাউসার সাবরিনা আহমেদ সার্বিক ব্যবস্থাপক] সাইফুল আমিন যোগাযোগ] +88 018 18 731377 [সাইফুল আমিন] মূল্য] ১০ টাকা [স্বপ্নের কোনো মূল্য হয় না। তবু যাঁরা এই স্বপ্ন কিনতে চান, তাঁদের জন্য এই নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ] সম্পাদক ও প্রকাশক নোমান ভূঁইয়া কর্তৃক সার্কুলার রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত; এবং হাতিরপুল, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৫ থেকে মুদ্রিত একটি জয়ী প্রকাশনা ============================================== ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।