I often see flowers from a passing car That are gone before I can tell what they are Haven gives its glimpses only to those Not in position to look too close… একটুকরো শৈশব(View this link ) পোস্ট করার পর অনেকেই বাকি ছড়াগুলো পড়তে চেয়েছিলেন। আমি কথাও দিয়েছিলাম অনেককে- বাকি গুলোও পোস্ট দেব। সময়ের অভাবে দেয়া হয়ে ওঠেনি এতদিন। সেদিন ব্লগে ঘুরতে ঘুরতে আমার এক প্রিয় সহব্লগারের শোকেসে একটুকরো শৈশব দেখে মনে হল- নাহ! পরের টুকরো আসলেই পোস্ট করা দরকার। পোস্ট লম্বা হয় হোক, আমি আজকে অনেক অনেক ছড়া শেয়ার করব।
১.
কাজের ছেলে
যোগীন্দ্রনাথ সরকার
দাদখানি চাল, মুসুড়ির ডাল, চিনি পাতা দই,
দুটা পাকা বেল,সরিষার তেল,ডিম ভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি,মনে মনে বলি,পাছে হয় ভুল,
ভুল যদি হয়,মা তবে নিশ্চয় ছিঁড়ে দেবে চুল।
দাদখানি চাল, মুসুড়ির ডাল, চিনি পাতা দই,
দুটা পাকা বেল,সরিষার তেল,ডিম ভরা কৈ।
বাহবা বাহবা- ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে কে হারে কে জেতে, কে না হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুড়ির ডাল, চিনি পাতা দই,
ডিম ভরা বেল, দুটা পাকা তেল,সরিষার কৈ।
ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে ঘোষেদের ননী।
আমি যদি পাই তাহলে উড়াই আকাশে এখনি।
দাদখানি তেল, ডিম ভরা বেল, দুটা পাকা দই,
সরিষার চাল, চিনিপাতা ডাল, মুসুড়ির কৈ।
এসেছি দোকানে- কিনি এইখানে, যতকিছু পাই,
মা যা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই।
দাদখানি বেল, মুসুড়ির তেল, সরিষার কৈ,
চিনিপাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দই।
পাছে হয় ভুল, ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয় ছিঁড়ে দেবে চুল। ।
২.
মুখের ইতিহাস
সুকুমার রায়
লজ্জাতে মুখ লাল হয়ে যায়
ভয় পেলে হয় চুন,
ঘেন্নাতে মুখ বিকার হওয়া
একটা বিশেষ গুন,
শান্ত মুখে স্নেহের ছবি
কঠিন যে হয় রাগে,
অভিমানে গোমড়া যে মুখ
হাঁড়ির মতন লাগে।
আনন্দে মুখ হয় যে উজল
ব্যথায় ভীষণ কালো,
হিংস্র মুখে আগুন ছোটে
দেখতে সে নয় ভালো।
শৈশবে মুখ ফুলের মতো
বড় হলে চাঁদ-
বৃদ্ধ লোকের মুখটা যেন
শাসন করার ফাঁদ।
এই মুখেতে আমরা করি
কথার কত চাষ,
বলতে গেলে শেষ হবে না
মুখের ইতিহাস!!
৩.
হিংসুটেদের গান
সুকুমার রায়
আমরা ভালো, লক্ষ্মী সবাই তোমরা ভারি বিশ্রী!
তোমরা খাবে নিমের পাঁচন, আমরা খাব মিশ্রী।
আমরা পাবো খেলনা পুতুল, আমরা পাবো চমচম
তোমরা সেসব পাচ্ছ না কেউ, পেলেও পাবে কমকম।
আমরা শোব খাট পালঙে, মায়ের কাছে ঘেস্টে
তোমরা শোবে অন্ধকারে, একলা ভয়ে ভেস্তে!
আমরা যাব জামতারাতে, চড়বো কেমন ট্রেইনে
চেঁচাও যদি সঙ্গে নে যা, বলব কলা এইনে!
আমরা ফিরি বুক ফুলিয়ে রঙিন জুতোয় মচমচ!
তোমরা হাঁদা, নংরা ছি ছি হ্যালা নাকে ফচফচ!
আমরা পরি রেশমি জরি, আমরা পরি গয়না।
তোমরা সেসব পাও না বলে তাও তোমাদের সয়না!
আমরা হব লাত মেজাজি, তোমরা হবে কিপটে
চাইবে যদি কিসসু তখন ধরব গলা চিপটে।
৪.
মশা-সরল দে
এত সাহস, চলল মশা
বাঘের পিঠে চাপতে,
হালুম হুলুম ডাকলে যে বাঘ
আমরা থাকি কাঁপতে।
বাঘের পিঠে চেপেই মশা
হুল ফুটালো আস্তে
তারপরে কি?উড়ল মশা
হাসতে-হাসতে হাসতে।
মশা মশা ছোট্ট মশা
এইটুকু একফোঁটা
খুকুর ঠোঁটে কামড়েছিল
ফুলেও ছিল ঠোঁটটা।
মশার বেজায় বুকের পাটা
ভয় করে না কাউকে
কামড়ে দিলো ভীম পালোয়ান
সম্ভুচরন সাউকে।
৫.
অ বিল্লি
গৌরি ধর্মপাল
অ বিল্লি বিল্লি
উঠে কোথায় চললি?
কাঁটা রেখেছি পাতে
দুধ মেখেছি ভাতে
খেয়ে গিয়ে শো-না
কে করেছে মানা?
আয়না কাছে লক্ষ্মী
খাবি মাছের চোখ কি?
বাবু হয়ে বোস না
আস্তে কাঁটা চোষ না
এত কিসের তাড়া?
আছে কি তোর পড়া?
ও কি রে এঁটো মুখেই চললি?
অ বিল্লি, বিল্লি!
৬.
সহজ উপায়
রূপক চট্টরাজ
মা বললেন কানটি মুলে,
‘পাজি হতচ্ছাড়া-
লেখাপড়া শিকেয় তুলে
কেবল আড্ডা মারা!
নির্ঘাত তুই ফেল করবি
গোল্লা পাবি আরও
একই ক্লাসে থাকলে বুঝি
বুদ্ধি খোলে কারও?’
“কান ছাড়ো মা, বলছি শোন
এক্ষুনি সব খুলে-
পড়লে কিছুই রয় না মনে
মুখস্ত যাই ভুলে।
তার চেয়ে মা মনে রাখার
দাও না সহজ মন্ত্র
কিংবা মাথায় দাও বসিয়ে
কম্পিউটার যন্ত্র!”
৭.
পরামর্শ
আবদার রশিদ
হ্যাঁরে!
এই নাকি তোর ঘর?
বেড়ার ভেতর হাজার ফুটো
নেইকো চালে খড়!
কেন?
দোষ কি পাকা ঘরে?
না হয় কতা এয়ার কুলার
লাগিয়ে নিলি পরে!
হ্যাঁরে!
এই নাকি তোর খাওয়া?
দেখছি কেবল হাঁড়িকুড়ি
ভাঙ্গা মাটির তাওয়া!
কেন?
ফ্রিজ রাখলেই হয়!
এর ভেতরে মাছ মাংস
বেশতো তাজা রয়!
হ্যাঁরে!
পোশাক কি তোর এই?
ছেঁড়া একটা লুঙ্গি পরিস
গায়ে জামাও নেই!
কেন?
স্যুট টাও তো পোশাক!
তেমনি ক’সেট বানিয়ে নিয়ে
ওয়াড্রবেতে রাখ।
৮.
খাইছে
- লুতফর রহমান রিটন
খাইছে রে ভাই খাইছে
খাইছে রে ভাই খাইছে
লেপ্তি লাটিম ঘুড্ডি লাটাই
খুইজ্যা দাদায় পাইছে
খাইছে রে ভাই খাইছে
চোখ অহনে হইছে ঘোলা
আইজকা পিঠে ধুনবো তুলা
পরীক্ষার আর কদিন বাকি?
সেই হিসাবও চাইছে
খাইছে রে ভাই খাইছে
খাইছে রে ভাই খাইছে
৯.
সাইকেলে বিপদ
সুনির্মল বসু
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং! সবে সরে যাও না,
চড়িতেছি সাইকেলে, দেখিতে কি পাও না!
ঘাড়ে যদি পড়ি বাপু, প্রান হবে অন্ত;
পথ মাঝে রবে পরে ছিড়েকুটে দন্ত।
বলিয়া গেছেন তাই মহাকবি মাইকেল
“যেওনা যেওনা সেথা যেথা চলে সাইকেল। ”
তাই আমি বলিতেছি তোমাদের পষ্ট-
মিছে কেন চাপা পড়ে পাবে খালি কষ্ট?
ভালো যদি চাও বাপু, ধীরে যাও সরিয়া,
কী লাভ হইবে বল অকালেতে মরিয়া?
সকলেই দিবে দোষ প্রতিদিন আমারে-
গালি দিবে চাষা-ডোম-মুচি-তেলি-কামারে।
এত আমি বলিতেছি- ওরে পাজি রাস্কেল –
ঘাড়ে যদি পড়ি তবে হবে বুঝি আক্কেল?
রঘুনাথ একদিন না সরার ফলেতে
পড়েছিল একেবারে সাইকেলের তলেতে।
সতেরই বৈশাখ-(রবিবার দিন সে)
চাপা পড়ে মরেছিল বুড়ো এক মিনসে।
তাই আমি বলিতেছি পালা না রে এখনি
বাঙালি হয়েছ বাপু পলায়ন শেখনি??
১০.
অকম্মা(অনুবাদ,সংগৃহীত)
শুনেছ তো?
চিঠি নিয়ে ঘুরছে পিয়ন পাড়াতে
কে জানে চিঠি আছে বা কার বরাতে!
দলা মোচড়া খাম
আর তাতে লেখা আছে
দিতে হবে অকম্মার হাতে!
একতলাতে দিলো পিয়ন টোকা
দেখে ও মা! নিজের হাতে খেতে জানে না খোকা।
গল্প বলে খাওয়াতে হয় বুলিওন
“নাও অকম্মার চিঠি”-বললে পিয়ন
চমকে খোকা নিজেই নিলে চামচ
বললে মা-
“নেই এখানে তেমন অকম্মা। ”
উপরে থাকে আন্দ্রেউস্কা
উপরে পিয়ন এলো
ঘরটা জুড়ে খেলনা তার ছড়ানো এলোমেলো
কাচুমাচু আন্দ্রেউস্কা
শুনেই ঠিকানা
“না না কাকু আমি অকম্মা না
আমি কাকু এই বাড়িটা বানানো শেষ করে
গুছিয়ে সব তুলে রাখব
রইবে নাকো পড়ে। ”
গেল পিয়ন পাশের ফ্ল্যাটে
তখন সবে ঘুমটি ভেঙ্গে উঠেছে খোকন
দিদি তাকে মোজা পরাচ্ছে বাহারে
খোকন মনি এলিয়ে আছে চেয়ারে
বলল পিয়ন, “এই পেয়েছি খেই
শ্রী অকম্মা থাকেন তবে
হয়ত এখানেই। ”
শুনেই খোকন হয়ে উঠল সোজা
বলে উঠল পরতে পরতে মোজা
“এই দেখুন না, বলেন এসব কী যে
পোশাক আমি পরিই নিজে নিজে।
”
অন্য এক ফ্ল্যাটে পিয়ন
গেল তারপরে
দেখে রান্নাঘরে ধোয়া হয়েছে
ডিশ- প্লেট এখন
মা-মেয়েতে মুছে রাখছে একগাদা বাসন।
নেমেই এলো পিয়ন
আরে আরে
একটু হলেই পড়ত গিয়ে
বরীয়ারের ঘাড়ে।
তিন বছুরে ছোট্ট ছেলে
জল দিচ্ছে গাছে
নাহ! এখানে নেই অকম্মা
কে জানে কোথায় আছে!
জিড়িয়ে পিয়ন ফের চলল
অকম্মার খোঁজে
পাবে কি তাকে
এতই সহজে!
ঠিকানা খুঁজে ঘুরছে চিঠি
তামাম দুনিয়ায়
দেব কি বলে
কি আছে চিঠিটায়?
খামের মধ্যে লেখা আছে
একি??
ছি! অকম্মা! কী লজ্জার কথা
বল দেখি!
আর তোমাদের কাছে আমার বায়না
চিঠি যেন ঠিকানা তার কোথাও খুঁজে পায় না।
১১.
নামকরণ
অন্নদা শংকর রায়
খাটবে না খুঁটবে না
পড়বে না শুনবে না
লিখবে না শিখবে না কিচ্ছু
এ ছেলেটা বিচ্ছু।
কাঁদবেই কাটবেই
খুঁত খুঁত করবেই
কিছুতেই হবে না কো তুষ্ট
এ মেয়েটা দুষ্টু।
চকলেট লেমনেড
সন্দেস কাটলেট
সব কিছু চাই তার আজই
এ ছেলেটা পাজি।
চুষছে তো চুসছেই
মুখে পুরে পুষছেই
চানাচুর চাটনি কি মিশ্রী
এ মেয়েটা বিশ্রী।
খেতে দিলে ছড়ায়
ফেলে রেখে পালায়
বোঝে নাক বাপ মার দুক্ষু
এ ছেলেটা মুখ্যু।
দেখে যদি গয়না
ধরে শুধু বায়না
বলে আমি এমনটি পাইনি
এ মেয়েটা ডাইনি।
বাপ যত কিনছে
ছেলে তত ছিঁড়ছে
জামা জুতো ধুতি আর চাদর
এ ছেলেটা বাঁদর।
মিষ্টি মিষ্টি হাসে
চুপি চুপি কাছে আসে
নাকে মুখে দিয়ে দেয় নস্যি
এ মেয়েটা দস্যি।
১২.ছুটি!
সুকুমার রায়
ছুটি! ছুটি! ছুটি!
মনের খুশি রয় না মনে হেসেই লুটোপুটি।
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া, অঙ্ক কাটাকুটি
দেখব না আর পণ্ডিতের ওই রক্ত আঁখি দুটি
আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি
আয়রে সবাই হল্লা করে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুইদিন নয়, দুই দুই মাস ছুটি!!!
১৩.
মামার বাড়ি
জসিম উদ্দিন
আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
মামার বাড়ি পদ্ম পুকুর
গলায় গলায় জল
এপার হতে ওপার গিয়ে
নাচে ঢেউয়ের দল।
দিনে সেথা ঘুমিয়ে থাকে
লাল শালুকের ফুল
রাতের বেলা চাঁদের সনে
হেসে না পায় কূল।
আম কাঁঠালের বনের ধারে
মামাবাড়ির ঘর
আকাশ হতে জোছনা কুসুম
ঝরে মাথার পর।
রাতের বেলা জোনাক জ্বলে
বাঁশ বাগানের ছায়
শিমুল গাছের শাখায় বসে
ভোরের পাখি গায়।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের শাখায় উঠি
রঙিন করি মুখ।
কাঁদি ভরা খেজুর গাছে
পাকা খেজুর দোলে
ছেলে মেয়ে আয় ছুটে যাই
মামার দেশে চলে।
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। হাত ব্যথা করছে। অনেক্ষন ধরেই ল্যাপটপ নিয়ে গুটুর গুটুর করছি বলে আম্মু চিল্লাচ্ছে। আজকে এই পর্যন্ত থাক। বাকি গুলো অন্য একদিন হবে।
পুনশ্চ, বানান ভুলের জন্য কোন অবস্থাতেই পোস্ট দাতা দায়ী নহে(অভ্র দায়ী) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।