যে কোন কোম্পানিই তার বাইরের তথা দেশ বা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে। এগুলা কে বলা হয় অই কোম্পানির উপর বাহ্যিক পরিবেশগত প্রভাব । কম্পানির শেয়ার দাম এর উপর বাহ্যিক পরিবেশগত প্রভাব বিরাট ভুমিকা রাখে । মৌলিক বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটার প্রতি আপনার অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
আজ এ বিষয়েই আমি আলোকপাত করছি ।
ত বাহ্যিক পরিবেশগত প্রভাব কোন কম্পানির উপর কিভাবে প্রভাব রাখে?আসুন দেখে নেই।
কোন কোম্পানির উপর বাহ্যিক পরিবেশগত প্রভাব কে ৪ ভাগে ভাগ করা যায় । যথা - ১)অর্থনৈতিক প্রভাব । ২) সামাজিক প্রভাব । ৩)রাজনৈতিক প্রভাব ।
৪) প্রযুক্তিগত প্রভাব ।
সামাজিক প্রভাব
সামাজিক চাহিদার কথাটি আপনার মাথায় রাখতে হবে । ধরুন আপনি ডেস্কটপ কম্পিউটার বানায় এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলেন কারণ তখন ডেস্কটপের ফাটা ফাটি চাহিদা! ২-৩ বছর পর সবার ঝোঁক গেল ল্যাপটপে আর আপনার কোম্পানি ডেস্কটপেই বসে রইল! তাহলে কি হবে বলেন ত দেখি?!!!!!!
তাই বিনিয়োগ করার সময় খেয়াল করতে হবে আজ চাহিদা আছে ঠিক কিন্তু ২-৪ বছর পর সেটা বজায় থাকবে কিনা?
অর্থনৈতিক প্রভাবঃ-
এর ভিতর রয়েছে-১) অই কোম্পানির পণ্য এর চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে না কমবে ? যদি চাহিদা বাড়ে তাহলে বিক্রি বেশি লাভও বেশি আর লাভ হতে থাকলে এর শেয়ার দাম ও বেশি হবে কম্পানি লাভ ও বেশি দেবে । কমলে বিপরিত তাই ঘটবে। বুঝার সুবিধার জন্য A.C.I লিমিটেড এর লাভের হার এর দিকে আলোকপাত করা যাক ।
২০০০সালে ৩৫%
২০০১ সালে ৩৭.৫০%
২০০২ সালে ৩৭.৫০%
২০০৩ সালে ৪০%
২০০৪সালে৪২%
২০০৫সালে ৪৫%
২০০৬ সালে ৬০%
২০০৭সালে ৮৫%
২০০৮ সালে ১০০% ,২০%বোনাস শেয়ার
২০০৯ সালে ১০৫%
২০১০ সালে ১২০%
এবার বিক্রয় হারটা খেয়াল করুনঃ- (মিলিয়ন টাকায় দেখানো হল)
২০০৫ সালে ৩০৮৯
২০০৬সালে ৩৫১৬
২০০৭ সালে ৪৯১৭
২০০৮ সালে ৭৩৬৫
২০০৯ সালে ৭২২৮
২০১০ সালে ৭৯১৫
একই সাথে শেয়ার এর দাম টা ও দেখি-
২০০৫ সালে ৬৯ টাকা প্রতি শেয়ার
২০০৬ সালে ৭০ টাকা
২০০৭ সালে ১৮১ টাকা
২০০৮ সালে ৫২১ টাকা
২০০৯ সালে ৪৪৭ টাকা
২০১০ সালে ৩৭২
বর্তমানে ২৬৪ টাকা ( তথ্যসুত্র:-এ সি আই ওয়েবসাইট)
তাহলে দেখা যাচ্ছে বিক্রির হার এর সাথে লাভ ও বেড়েছে।
তবে বিক্রি বাড়লেই যে সবক্ষেত্রে লাভ বেশি হবে এমন কন কথা নাই। দেখা গেল বিক্রি ভালই হল কিন্তু প্রশাসনিক ও অন্যান্য খরচ আর ও বেশি বেড়ে গেল সেক্ষেত্রে নীট লাভ কম হবে ।
২) স্রমিকের মজুরির হার কেমন ? মজুরি সস্তা হলে পণ্যের খরচ কম হবে লাভ ও বেশি হবে।
৩) ঋণ সুদের হারঃ এটাও বিরাট একটা নিয়ামক ভুমিকা পালন করে ।
সুদের হার যত কম হবে কোম্পানির জন্য তত বেশি সুবিধা হবে ।
৪) ট্যাক্সঃ- কম্পানি কে যত ট্যাক্স কম দিতে হবে তত লাভের পরিমান বাড়বে । কম্পানি ট্যাক্স এর ক্ষেত্রে কোন সুবিধা পাচ্ছে কিনা এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে ।
৫) মুদ্রাস্ফিতিঃ এ বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে । যদি কম্পানির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফিতি বাড়লে কম্পানি লাভবান হবে ।
কম্পানির আমদানি ও রপ্তানি ও মুদ্রাস্ফিতি দ্বারা প্রভাবিত হয় ।
৬) জনগণের আর্থিক সামর্থ্যঃ- কম্পানির পণ্য কেনার মত পর্যাপ্ত টাকা জনগনের থাকবে বা বাড়বে কিনা এটাও মাথায় রাখতে হবে । যেমন গার্মেন্টস এ মেয়েদের অংশগ্রহন বাড়ার সাথে সাথে মেয়েদের প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির পরিমান ও বেড়েছে । চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেক ছোটো ছোটো প্রসাধন কারখানাও গড়ে ঊঠেছে । আবার মোবাইল সেটের দাম কমার সাথে সাথে বিক্রির পরিমাণ ও বেড়েছে ।
৭) কোম্পানির কাঁচামালের প্রাপ্যতাঃ- কোম্পানির কাচামালের প্রাপ্যতা সহজলভ্য কিনা বা ভবিষ্যতে কন অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারন কাচামালের প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটলে তা শেয়ার দামের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । যেমন লাফারজ সুরমা সিমেন্ট এর কাচামাল চুনাপাথর রপ্তানিতে ভারতীয় হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তাদের উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছিল । ফলে শেয়ার এর দাম ও পড়ে গিয়েছিল । ( ২০০৮ সালেই এ শেয়ার এর দাম ছিল প্রায় ৬০০ টাকা আর বর্তমান দাম ৩৯২- ৩৯৩ টাকার মত) ।
আজ এ পর্যন্তই। পরের পর্বে বাকি বিষয় আলোচনা করার ইচ্ছে রইল ।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে যা করবেন (নতুনদের জন্য) পর্ব - ১
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে যা করবেন (নতুনদের জন্য )পর্ব- ২
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে যা করবেন (নতুনদের জন্য )পর্ব- ৩
বিশ্বের ২য় সেরা ধনী ওয়ারেন বাফেট ও পিটার লিন্স এর শেয়ারে বিনিয়োগ পদ্ধতি - আপনিও জেনে নিন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।