অবশেষে ওয়ান ইলেভেন আসি আসি করছে। আমি বলি বাবা এসে যাও। এবার আসলে শুধু মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে এসোনা। ফাঁসির দাবী নিয়ে আসো। মামলা-মামলি বাদ দিয়ে নতুন কাঠামোতে আস।
তোমার আগমন অপেক্ষায় আমরা দিন গুনছি। কারন তোমার থেকে এখনো তারা শিক্ষা নিতে পারেনি।
বাঙ্গালীর /বাংলাদেশীর ব্যাপারে প্রচলিত সেই কৌতুকটি সত্য। (মরুভুমিতে দুই পিপাসার্ত বাঙ্গালী পানির খোজ করছে। তাদের খুব পানি প্রয়োজন।
অনেক খোজাখুজির পর তারা এক পাত্র পানি জোগাড় করলো। কে আগে পান করবে , তা নিয়ে বাধলো বিপত্তি। যার পানির পাত্র সে আগে পান করতে চাইলো। যে পানি সংগ্রহ করেছে ,তার দাবী সে আগে পান করবে। ফলাফল যাই হওয়ার তাই হলো।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পানি পড়ে গেল মাটিতে। তপ্ত বালু শুষে নিল। এক দৈত্য বালুর মাঝ থেকে জেগে উঠলো। বললো , কি চাই মালিক। তাদের একজন দৈত্যের কাছে একটি বাড়ী ও কিছু নগদ টাকা চাইলো।
অপরজন দৈত্যের কাছে দুটি বাড়ী এবং প্রথমজন থেকেও বেশী টাকা চাইলো। তাদের তর্কাতর্কিতে দৈত্য বিরক্ত হয়ে বললো - তোমাদের প্রথমজন যা চাইবে দ্বিতীয়জন তার দ্বিগুন পাবে। এবার প্রথমজন বললো- আমার এক চোখ অন্ধ করে দাও এবং একটি পা লেংড়া করে দাও। ফলাফল স্বরূপ দ্বিতীয়জন তার দ্বিগুন পেল। পাঠক অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন দ্বিতীয়জনের কি অবস্থা।
) আমাদের বাঙ্গালীদের এই মহান আত্মত্যাগ নিজের একচোখ অন্ধ ও এক পা লেংড়া হলেও যদি অপরের দুটোই চলে যায় তাহলেই আমি খুশী । আমি নিজে যেহেতু খেতে পারবো না অন্যকে অবশ্যই খেতে দিবোনা, এটাই আমাদের মানসিকতা। ওয়ান ইলেভেন এক জলন্ত উদাহরন।
সাম্প্রতিক সময়ে তত্তাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি এবং আদালতের সমঝোতার রায়ে
( তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার তিন মাস আগেই এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে সরকার। রায় না দিতেই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধনের এ ঘটনায় সরকার ও উচ্চ আদালতের মধ্যে পারস্পরিক যোগসাজশের সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নতুন বিধানের প্রতিফলন ঘটেছে গত ১০ মে বিদায়ী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চের রায়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে সরকার আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে তা আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞরা। সুত্রঃ আমারদেশ) নির্বাচিত সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া আরেক নতুন ওয়ান ইলেভেনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলছে। আমরা অবশ্য ওয়ান ইলেভেনে খুবই খুশী। কারন আমরা জম্মাবধি আমাদের পারিবারিক গনতন্ত্রের লেবাসধারীদের শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
কারন আমরা ইচ্ছা করলেই পাঁচ বছরের আগে আমাদের মতামত জানাতে পারিনা। পাঁচ বছর পর পর আমাদের রায় নিয়েই সরকারগুলো জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
আসলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে। সব শিয়ালের এক রা স্টাইলে নির্বাচনের কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কোনো যুক্তি নেই। পৃথিবীর কোন দেশে এ সরকারের অস্তিত্ব নেই।
তার সাথে অনেক আওয়ামী নেতানেত্রী তত্তাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললো। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত, প্রভৃতি থেকে অভিযোগ করা হলো যে, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের অপচেষ্টা করছে। নেতা-মন্ত্রীদের কথাবার্তায় আভাস পাওয়া যাচ্ছিল যে, আগামী নির্বাচনটি বর্তমান সরকারই তার নিজের অধীনে করতে ইচ্ছুক। তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করলে আওয়ামীলীগ তোপের মুখে পড়বে এবং বিরোধিতার সম্মুখীন হবে এ বাস্তবতা থেকেই তারা আদালতকে ব্যবহার করলো।
সুতরাং বিরোধী দলের সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত করার জন্যে উপাদানের অভাব রইল না।
দুই তিনটি মামলায় অতি দ্রুত আদালতের রায়, (আমিনীর হরতাল না হলে হয়তো খায়রুল হক কোরআনের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে যেত)এবং তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের জন্যে সরকারের উৎসাহ দেখে বিরোধী দল শুধু নয় জনগণের সচেতন অংশ বুঝতে পারে যে, সরকার কোনো একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়। আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় থাকে তখনই তারা তত্তাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কারন তারা ভয়ে থাকে জনবিরোধী অবস্থানের কারনে আগামী নির্বাচনে তারা জিততে পারবেনা।
অতীতে খালেদা জিয়া সরকারের সময় শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনা সরকারের সময় খালেদা জিয়া এমন কোনো বিপদে পড়েননি যা তাদের রাজনৈতিক জীবনকে বিপন্ন করে দিতে পারে। উভয়ের বিরুদ্ধেই হয়রানিমূলক মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে।
আমাদের দেশে মামলা মোকদ্দমার খেলা অনেক পুরাতন। কেউ ১৬ টি মামলা প্রত্যাহার করে ফ্রেশ প্রধানমন্ত্রী , আবার কেউ পাচ মামলা প্রত্যাহরের অপেক্ষায়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে মামলা সংস্কৃতি নতুন নয়। এটা একটি রাজনৈতিক অলংকার। কিন্তু তা এমন কোনো পর্যায়ে যায়নি যে তাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়।
তারা কেউই জেল খাটেননি প্রতিপক্ষের শাসনকালে। কিন্তু একটি সংঘাতিক ধাক্কা খেলেন দুজনই সেনাসমর্থিত সরকারের সময়। ঐ সময় তারা শেষ হয়ে যেতে পারতেন। শেষ হওয়া মানে রাজনৈতিক জীবনের শেষ। অনেক বছর জেলেও কাটাতে পারতেন অথবা নির্বাসনে।
মিয়ানমারে সুচি’র পক্ষে সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক শক্তি যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল এই দুই নেত্রীর পক্ষে কেউ দাঁড়াত না। তারা যখন অন্তরীণ হলেন তখন বিদেশি প্রভুরা তাদের মুক্তির জন্যে কিছুই করেনি।
আর একটি জিনিস লক্ষ্য করার মতো। তা হলো যেদিন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো তারা দুটি বড় দলের শীর্ষ নেতা, জনপ্রিয় নেতা কিন্তু তাদের জন্যে কোনো মানুষ রাজপথে নেমে আসেনি। গ্রেপ্তারের শক্ত কোনো প্রতিবাদ হয়নি তাদের দলের নেতাকর্মীদের ভেতর থেকে।
বরং দুই দলেরই বড় বড় নেতা ঐ অবৈধ সরকারের সঙ্গে আপস করে নিজেরা বিপদমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। সুতরাং দুই নেত্রীরই উপলব্ধি করা উচিত গণতান্ত্রিক অবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদেরই লাভ। শেখ হাসিনার জন্য খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার জন্য শেখ হাসিনাই ভালো। ভালো মানে মন্দের ভালো। কিন্তু উটকো কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে শুধু যে জনগণের বিপদ তাই নয়, তাদেরও বিপদ।
সুতরাং সেই বিপদ এড়াতে তাদের উচিত ন্যূনতম সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করা। (সাপ্তাহিক)
তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করার মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ মনে করেছিল এটা বিএনপির জন্য একটা ফাঁদ। হয় খাইরুল হককে মানতে হবে, না হলে এ ব্যবস্থা বাতিল। কিন্তু সরকার নিজেই এখন নিজের ফাঁদে আটকা পড়েছে।
আমরা জানিনা সরকার কোনদিকে যাচ্ছে।
সরকার একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কার ইশারায় নিচ্ছে? ইস্যুবিহীন বিরোধীদলের হাতে কেন সরকার এই ইস্যু তুলে দিল? সরকারের এমনিতেই হাহাকার অবস্থা। তার উপর তারা কেন উটকো এ ঝামেলা নিল? কে সরকারকে মিসগাইড করলো? কারা সরকারকে ভেতর থেকে পরামর্শ দিয়ে সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে? কারা এটি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করছে এটিই জাতির সচেতন মহলের প্রশ্ন। সরকারের ভিতরে ,সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য আরেক ছায়া সরকার কাজ করছে কিনা, গনতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই তা সরকারকে বের করতে হবে।
সরকার যদি তার নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কাজ করতো, দ্রব্যমুল্য কিছুটা হলেও কমাত, বেকার যুবকদের ঘোষিত চাকরির ব্যবস্থা করতো, ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করতো,তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যেত সরকার তার মেয়াদ সফলতার সাথেই পূর্ণ করবে। আমরা এখনো সরকারের সফলতার স্বপ্ন দেখি।
নতুন কোন উদ্দিনকেই আমরা সহজে বরন করে নিতে রাজী নই।
আবদুল কাদের সুঘ্রাণ
লন্ডন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।