জাহাঙ্গীরের দুই ছেলেমেয়ে । আমার চেয়েও দুঃসহ অবস্থা আমার বন্ধুটির। নোঙর আর অনি দুই বছরের ছোট বড়। ওর দুটো এক বছরের ছোট একটি আর একটির। কি করুন অবস্থা !তার মধ্যেই আমাদের দাওয়াত করল।
শ্রাবণ একদম চাচ্ছিল না যেতে। ভাবীর অনেক কষ্ট হবে। এত ছোট দুই সম্পদ যাদের সংসারে তাদেরতো নিজেদের খাবারই ঘুছানো কষ্টকর তার মধ্যে মেহমানদারী!ভয়ংকর এবং ভয়ানক দুই-ই। বন্ধু বেচারাকে যত বুঝাই সে বুঝতে নারাজ। কোন উপায় নেই সন্ধার পর বাঙলোয় এসে হাজির তার বড় বংশধর ধনকে নিয়ে।
এখনো আদো....আদো.. কথা বলে । মিষ্টি চেহারায় সারাক্ষন দুস্টুমি খেলা করে।
ছোট মেয়েটি সারাক্ষন হাসে। ওর হাসিটা এখনো চোখে লগে আছে। ব---ড় একটা দুতলা বাড়ি অনেকখানি জায়গা নিয়ে ।
কাঠের সিড়ি ভেঙে উপরের বেডরুমে ঢুকতে হয়। বেশ পুরুনো বাড়িটি। সামনে বড় একটি সব্জি বাগান। দেয়ালের ঐপাশে ঝাঁউয়ের সাড়ি। আর যে জিনিসটি সবচেয়ে মজার সেটি হল তারপরেই কুল-কিনারা বিহীন সমুদ্রটি।
রাত দশটায় বাঙলোয় ফিরে এলাম।
একটু পিছনের দিনগুলিতে ফিরে যাই। অনেক বছর আগে তা প্রায় ৮ বছর হবে । আমার এই বন্ধুটির সাথে ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পন্ন করেছিলাম। ধীরস্থির ,শান্ত প্রকৃতির ছিল।
খুব বেশী কথা হতো না।
যাই হোক আমি লোক প্রশাষনে যোগ দেয়ায় মাহবুব [সদ্য ট্রেনিং সমাপ্ত করা ছাত্র অফিসারটি]নামক এক প্রকৌশলী তার মাধ্যমে ওর সন্ধান আর ফোন নম্বরটি মিলে। মাহবুবও একই ডিপার্টমেন্টে চাকুরী করে। আমাদের সাথে ওদের যাবার কথা ছিল কিন্তু ওর সহধর্মিনীর মেডিকেলে পরীক্ষা থাকায় শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। যাইহোক এত বছর পর দুজনের দেখা।
আমি খুব বেশী আশা করিনি ওর কাছ থেকে। কিন্তু যে আন্তরিকতার ছুঁয়া পেলাম তা কখনো ভুলার নয়। সেই সাথে ভালো মানুষ ও বটে। অনেক সময় অনেক ভালো মানুষরা কাঠকোঠ্ঠা হয় কিনতু জাহাঙ্গীরের মধ্যে দুটোই আছে। ভালো এবং আন্তরিক একসংগে দুটো বিদ্যমান ।
এমন মানুষ এখনকার আধুনিক যুগে পাওয়া দুষ্কর।
পরদিন জাহিদ আর জেরিন ভাবি আসলেন। তখন আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম । হোটেলটা সাগরের পাশেই। রান্না বিশেষ একটা সুবিধার নয়।
কোন রকমে গলাধকরন করা আর কি । বাচ্চারা হেঁটে হেঁটে পরিশ্রান্ত হওয়ায় কষ্ট এরাবার জন্যই ঐ হোটেলে যাওয়া । জাহিদ এবং ভাবী দুজনের সাথেই প্রথম পরিচয়। সাদা ধবধবে গাঁয়ের রং ভাবীর। প্রথম দেখাতে অসহযোগী এবং অহংকারী ধরনের মনে হল আমাদের দুজনেরই।
কিন্তু অল্পক্ষনের মধ্যেই আমাদের ধারনা পাল্টে গেল। অনি ,নোঙরও ওদের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলল । অনিকে এখনও দেখা হলে জাহিদ পাখি বলে ডাকে। তিনটার দিকে রওনা দেয়া হল ইনানী বীচের উদ্দেশ্যে সাথে হিমছড়ি বীচেও যাওয়া হবে।
অ....সাধারন এক যাত্রা ।
সাগর ঘেষেই রাস্তা । কয়েক মাইল এভাবে যাওয়া হল। কি যে সুন্দর লাগছিল লিখে প্রকাশ করার নয়। একপাশে সাঁড়ি বাঁধা পাহড়দল। অন্যদিকে ঢেউদের গর্জন।
মাঝে চলছে জীপখানা। পাহাড় আর সমুদ্রের কি গভীর সখ্যতা চলছে বছর পেরিয়ে বছর ধরে। চোখের ভাল লাগা গুলি ভাষায় বোঝানু যায়না হুবুহু। হিমছড়ি বিচকে রেখে গাড়ী ছুটে চলল ইনানীর ঊদ্দশ্যে। চোখের মুগ্ধতা লিখনি দ্বারা সবটুকু মেলে ধরা যায় না।
অনেক বড় বীচটি । মাঝখানটায় একটি নালার মতন। কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে ,তা পেরিয়ে সাগরের কাছে পৌঁছলাম সবাই। বড় বড় পাথরের প্রবাল এই বীচের অন্যরকম এক সৌন্দর্যের মাত্রা এনেছে। ওরা সবাই ছবি তোলল প্রবাল গুলির উপর বসে।
শ্রাবণ জামা ওড়না সুন্দর করে গুছিয়ে প্রবালের উপর বসল যাতে ভিঁজে না যায়। কিন্তু সাগরের ঢেউ বলে কথা!ভিজে একাকার হয়ে গেল সবাই । সমুদ্রে তখন ভাটা চলছিল। ঢেউয়ের টান প্রচণ্ড।
শ্রাবণ ছবি তোলার সময় চুল খোলে দিয়েছে ।
ওর ভাষায় সমুদ্রে আসলে খোলা চুলে পানিতে নামতে হয়। নীল অথবা সাদা ড্রেস পড়তে হয়। তবেই নাকি সাগরের পাশে কাউকে মানায়।
দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধে লেগে যাচ্ছে। ড্রাইবার ইসলামের ইচ্ছে এই সময় ফিরে যাওয়া উচিৎ।
আসার রাস্তাটি সন্ধের পর নিরাপদ হীন। পাহাড়ের আশেপাশে লুকিয়ে থাকা বিশেষ ধরনের লোকেরা মানুষকে নানাভাবে বিপদে ফেলে । শুধু মালপত্রই নিয়ে যায় না ,সাথে মহিলা থাকলে তাদের ধরেও নিয়ে যায়। তাই বীচের সকল সৌন্দর্যের ইস্তফা দিয়ে রওনা হলাম ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।