আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পূর্নিমার রাতে আশি জনের জন্য বার-বি-কিউ !!!

আশি জনের জন্য বার-বি-কিউ !!! এত বড় রিস্ক নেয়াটা কি ঠিক ? আগে তো এত বড় আয়োজন করেনি ভ্রমণ বাংলাদেশ । তাই একটা ভয় কাজ করছিল । সাথে কয়েকজনের ভয় জাগানিয়া কথা বার্তা । যাক হোক " ইতিবাচক চিন্তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনে " --এই ধারনা কে সঙ্গী করে নিলাম একটা রিক্স । থাকার জায়গার সমস্যা ছিল সবচাইতে বেশি ।

সাভারে করার কথা ছিল বার বি কিউ এর আয়োজন । ইভেন্ট দেয়ার পর থেকে এক এক করে যখন বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো । তখন জায়গাটা ছোট হ্ওয়াতে বাতিল করতে হলো সাভারের প্লান । জায়গা সংকট, বিপদে পড়লাম ! আল্লাহর রহমতে আফতাব ভাই আর এনায়েত ভাই এগিয়ে এল । জায়গাটা দেখবো, বলতেই রাজি হলেন এনায়েত ভাই ।

একদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় কল দিয়ে বললেন চল । লালবাগ মোড়-এ- শহীদ মাজারে জড় হলাম আমি , শহীদ ভাই এনায়েত ভাই আর আফতাব ভাই । তাদের মেঘনার তৈরি সাইকেল দেখে আমি তো মুগ্ধ । তাদের চমৎকার সাইকেলের সাথে আমার ভালবাসার সাইকেলটা কেমন যেন লাগছিল । সাইকেলে প্যাডেল ঘুরালাম ।

রওনা হলাম জিপিও জিরো পয়েন্ট থেকে ঠিক পনের কিমি দূরে রাজাবাড়ির বাঘাশুর গ্রামের উদ্দেশ্যে । চকবাজার দিয়ে সোয়ারীঘাট এরপর নদী পার হয়ে বাঘাসুরের পথে । প্রথমেই আমরা গেলাম মাঠা, মাখন আর ছানার দোকানে । খেলাম সব রকম আইটেম । খাওয়া শেষ করে আবার পথ চলা শুরু ।

এবার দেখা পেলাম চিতই পিঠার । খাওয়ার লোভ সামলাতে পারল না কেউ । নিলাম অনেক পিঠা আর ডাল খাব এনায়েত ভাইয়ের বাসায় বসে । মাঠ আর গ্রামের আকাঁবাঁকা পথে কিছু গাছ আছে । চমৎকার জায়গা ।

চলার পথটি ছিল সবুজ আর সবুজে ঘেরা । একটা সমস্যা ছিল কোথা্ও নদী বা পানির দেখা পাই নি । নদী মাতৃক বাংলাদেশ কথাটি কে যে বলেছিল তাকে বকা দিতে ইচ্ছা করছিল । কাঁচা পাকা পথ পেরিয়ে এলাম এনায়েত ভাইয়ের বাসায় । মনটা ভাল হয়ে গেল ঠিক কিন্তু যখন মনে পড়ল ৫০ জনের জন্য মাত্র একটি টয়লেট তখন আতঁকে উঠা ছাড়া করার কিছু ছিল না ।

ডাব খেলাম । পিঠা আর ডাল খেয়ে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে । দুইদিন কেটে গেল । আরো অনুরোধ আসতে লাগলো । মনটাকে মানাতে পারছিলাম না ।

না বলতে কষ্ট হলেও বলতে বাধ্য হলাম না বললাম প্রায় ৫০ জনকে । যাদের না বলতে পারিনি তাদের সংখ্যা দেখলাম ৮০ জন । এবার কি করা যায় ? জানতে চাইলাম আমাদের দলনেতা টুটু ভাইয়ের কাছে । তিনি বললেন চল দেখে আসি জায়গাটা । আবার গেলাম কেরানীগঞ্জে ।

যাবার পথে দুইবার বাঁচলাম একসিডেন্টের হাত থেকে । দুইবারই রিকসার জন্য দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল । জায়গাটা টুটু ভাইয়ের পছন্দ হলেও টয়লেটের সমস্যার কথা বললেন । কি করা যায় ভাবতে ভাবতে চলে এলাম ঢাকাতে । ছবি দেখুন ---- Click This Link বা --- http://www.facebook.com/VromonBangladeshpage আর --- https://www.facebook.com/vromonbangladesh এবার পালা বার-বি-কিউ রাতে সফল আয়োজনের ।

আমাদের প্রতিটি ট্যুরে থাকে আমাদের বাবুচি টুলু । যদি মূল কাজটি হলো আমাদের দলনেতা টুটু ভাইয়ের । তার নির্দেশেই সব কাজ করে টুলু । টুলু আমাদের পেলে তার রাতদিন ভুলে যায় । ১৭ তারিখপূর্নিমা হলেও আমরা রওনা দিলাম ১৬ তারিখ সকালে ।

কারন ছুটির দিনে সারারাত আর সারাদিন মজা করবো শান্ত সবুজ গ্রামে । আমি, মুজাক্কির আর টুলু মিলে রওনা দিলাম সকালে । মুজাক্কির ছিল সবাইকে গাইড করার জন্য । তাই তাকে ঢাকায় পাঠালাম যেন সবাইকে নিয়ে আসতে পারে । টুলু আর আমি মিলে গেলাম মুরগীর দোকানে ।

আগে অর্ডার দেয়া মুরগী মাপলাম আর কাটার নিয়ম দেখিয়ে দিলাম । মুরগী কাটার ফাঁকে গেলাম ডেকরেটরে আর পরটার দোকানে । আমাদের কিচেন সেট দিয়ে এত বড় আয়োজন করা সম্ভব না । মালামাল অর্ডার দিয়ে দুপুরের খাবার সারলাম রাজাবাড়ির একটি টং হোটেলে । স্বাদহীন গরুর গোশত ।

মুরগী কাটা শেষ হলে গেলাম আমাদের আস্তানায় । আয়োজন করলাম ৮৫ জনের বার-বি-কিউ । মুরগী কেচলো নিজাম উদ্দিন মিজান ভাই, সাইফুল সুমন, আনোয়ার পারভেজ মিলে । কিচেন সেট নিয়ে আসলো আবুবকর । এসেই গেল বাজারে লাকড়ি ( কাঠ রান্নার জন্য ) আনতে ।

আসার সময় নিয়ে এল আম, গুড় আর মরিচ । কাঁচা আমের ভর্তা বানাবে বলে আনা হলো । একে একে আসতে লাগলো সবাই । মিসেস (হবু ত্রিভুজ, রাবু, ত্রিভুজের বোনমিলে কাটলো সালাদের উপকরন । ) মসল্লা মিলাতে যেয়ে হাত জ্বলে যেতে লাগলো ।

উহ কি জ্বালারে । চিনির পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে রাখলাম । চুলা ঠিক করলাম । বাসা থাকা এনায়েত ভাইয়ের আত্নীয়দের সহযোগীতায় সবকিছু সহজেই হয়ে গেল । বার-বি-কিউ তৈরির সময় দেখা গেল গ্রামের মানুষরা হাজির গান শোনার অপেক্ষায় ।

তাদের ভুল ভাঙ্গতে কিছুটা সময় লাগলো । সবাই এসে গেল । এবার পরিচয় পর্ব বিভিন্ন পেশার মানুষজনের সমাবেশ । মজাই লাগলো । মাঝেমাঝে মনে আশংকা দেখা দিচ্ছিল টয়লেটের ।

কিন্তু কিভাবে যেন সব কিছু ঠিক মত চলছিল । আমাদের বিভিন্ন ট্যুরে যাওয়া কয়েকজন বন্ধু যাদের সবার সাথে দেখা হয় না । তাদের পেয়েতো কয়েকজন মহা খুশি । সুমন আর জান্নাত মিলে টুটু ভাই আর টুলুকে সহযোগীতা করতে লাগলো বার-বি-কিউতে । খাবার প্রস্তুত ।

সবার ডাক এল । একে একে লাইন ধরে সবাই খাবার খেল । আমি , মুজাক্কির , ফেরদৌস ভাই মিলে তাবু সেট করলাম । নাহিদ , রাবু সহ আরো কয়েকজন দেখলো তা । এরপর আড্ডার পালা ।

নাহিদ গিটার নিয়ে গিয়েছিল সে ধরলো গান । সবাই তার সঙ্গে সুর মেলালো মনে হয় । সারা রাত আড্ডা চললো । চাঁদ মামা আমাদের ভালবাসার আলো দিতে দিতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লো । প্রচন্ড গরম ছিল সারারাত ।

বাতাস নিয়েছিল ছুটি । খেতের মাঝে ছবি তুলছিল তারেক , মুন্না, ফেরদৌস, পাশা সহ আরো কেকে যেন । আমার ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে বাধ্য হলাম । সারাদিনের ক্লান্তি কিন্তু ঘুমাতে পারলাম না বেশি সময় । মাথায় চিন্তা সকালের নাস্তার ।

ডালের সাথে মুরগীর গিলা-কলিজি- শশা আর চা । নাস্তা শেষে সবাইকে ছুটি দিলাম নদীতে বেড়ানোর জন্য । কেউ কেউ বিদায়ও নিল অফিস আছে বলে । নদী দেখে আসার আগেই সব তাবু গুছিয়ে নিলাম সুমন , মুজাক্কির আর আমি মিলে । রান্নায় ব্যস্ত টুলু আর তাকে বকা দিয়ে কাজ করাতে করাতে ক্লান্ত টুটু ভাইকে দেখলাম ঘুমাতে গেল ।

প্লেট ধোয়াতে ব্যস্ত কুয়াশা আর মুজাক্কির । প্রিন্স, অসীম আর তাদের আরেক সঙ্গী বিদায় নিল । খুব খারাপ লাগলো তাদের বিদায়ে । আমের ভর্তা বানালো খুকু আপা । যদিও তিনি চলে যেতে চেয়েছিল ।

সেভেনআপ খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তাকে রেখে দিলাম । সবাই আসার আগের কয়েকজনের জন্য গুড়ের শরবতও বানিয়েছিল খুকু আপা । খাবার তৈরি হতে হতেই দেখি সবাই চলে এসেছে । সেই সাথে ঘন কালো মেঘ সবুজ গ্রামটিকে করেছে আরো সবুজ । খাবারের প্লেট যখন সবার হাতে তখনই নামলো বৃষ্টি ।

রানা আর খুকু আপা ছাড়া সবাই খাচ্ছে । পোলাউয়ের চালের ভাত, ডাল, গরুর গোস্ত, সালাদ, সব্জী । অসাধারন রান্না ছিল । খাবার শেষে এবার ফেরার পালা । আবেগঘন বিদায় দিলাম সবাইকে ।

ডেকোরেটরের বিল দিতে আর ট্যাক্সি আনতে গেলাম বাজারে । সবকিছু মিটমাট করে আমি আর আবুবকর ফিরে এলাম বাসায় । টুলু, মুজাক্কির আর আবুবকর মিলে হেলিকপ্টারে (হুড ছাড়া টু ষ্টোক বেবি ট্যাক্সি ) উঠলো । আর জায়গা না পেয়ে আমি আসলাম আবদুল্লাহপুরে আরেকটি গাড়িতে । এরপর বাবুবাজার নেমে রিক্সায় বাসা ।

মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালাম আমাদেরকে একটি আনন্দময়, নিরাপদ দিন দেবার জন্য । এই ট্যুরের জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা টুটু ভাই, আবুবকর সিদ্দিক,মুজাক্কির , মিজান ভাই, এনায়েত ভাই, আফতাব ভাই, হাবিব ভাই, টুলু (আমাদের বাবুর্চি- যে শুধু টাকার বিনিময়ে না ভালবাসার বিনিময়ে আমাদের জন্য কাজ করে । ), রুমন ভাই (বাঘাসুর), শাহরিয়ার ভাই ও তার বন্ধুরা , ফেরদৌস ভাই ও তার কলিগ, সহ সবাইকে । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।