নাজমুল ইসলাম মকবুল
পেশাজীবীদের সভায় তথ্য প্রকাশ : ফারাক্কা বাঁধে সরাসরি ক্ষতি এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা : ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত কোনো ভারতীয় গাড়ি বাংলাদেশের মাটিতে চলতে দেয়া হবে না : মাহমুদুর রহমান
ফারাক্কা বাঁধের কারণে ৩৬ বছরে বাংলাদেশের ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবেশের ক্ষতি ধরলে পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ এর ছয়গুণ হবে। ’ ‘ফারাক্কা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য প্রকাশ করে বিশিষ্টজনরা অবিলম্বে ভারতের কাছে এ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর এজন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ এবং ফারাক্কা বাঁধের ক্ষতির বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর পদেক্ষপ নিতে পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ বুঝি না। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ১৬ কোটি মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় স্বার্থে তার দল কোনোদিন আপস করবে না। দলের এই অঙ্গীকারের কথা তিনি জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। এ দাবি বাস্তবায়ন করতে তিনি সারাদেশে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শাহ মো. ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সদরুল আমীন, সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ,ফ,ম ইউসুফ হায়দার, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ, কলামিস্ট এরশাদ মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জামাল উদ্দিন। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক সচিব প্রকৌশলী আ.ন.হ. আখতার হোসেন। সভা পরিচালনা করেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে পানির ন্যায্য হিস্যা সম্পর্কে ভারতকে বোঝানো হবে। নিজেদের সম্মানজনক অবস্থান ঠিক রেখে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই আমরা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি নতজানু দুর্বল সরকার। তারা কোনোদিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শগত অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আওয়ামী লীগ অনেক ক্ষেত্রে নতজানু নীতি গ্রহণ করে। তারা সব দিয়ে দেয়। আর আমরা কিছু দিতে গেলে কি পেলাম সে হিসাব করি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি বলেই এ সরকার এভাবে নতজানু। এত সংখ্যাগড়িষ্ঠতা সত্ত্বেও তারা দুর্বল।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রায় শেষ। কিন্তু সরকার কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। যে সরকার দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে অক্ষম, সে সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
তিনি বলেন, নদী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানেই দেশের মানুষের ক্ষতি। নদী বাংলাদেশের জনগণের মা।
নদী শুকিয়ে গেলে এদেশের মানুষও শুকিয়ে যায়, বাঁচতে পারে না।
প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা মওলানা ভাসানী ও জিয়াউর রহমান তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর এজন্য তারা এই মরণ ফাঁদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। এই বাঁধের ফলে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হলেও পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েকগুণ বেশি।
ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার সাধারণ নিয়মে এ পরিমাণ দাঁড়াবে ৬শ’ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা শুকিয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে তিনি পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন জনগণকে সচেতন করে তাদের মাধ্যমেই এ দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করি।
প্রকৌশলী আ.ন.হ. আখতার হোসেন বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে জীববৈচিত্র্য, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতিপূরণ আদায়সহ নতুন করে ক্ষতি ঠেকাতে না পারলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
RE: AMAR DESH
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।