I deem them mad because they think my days have a price...
প্রথমেই বলে রাখি আমি কোন চলচিত্রবোদ্ধা নই। মুভি দেখার চেষ্টা করি সাধারণ চোখ নিয়ে এবং বোঝার চেষ্টা করি নিজের মত করে। এরই মাঝে কিছু ছবি হয়ত দাগ কেটে যায় চিরদিনের জন্য,কিছু দেখে মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি নেমে আসে। অনেক সাহস করে আমার খুব খুব ভাল লাগা কিছু মুভির রিভিউ লিখার চেষ্টা করলাম। কেমন লাগবে জানিনা,তবে খারাপ হলে অবশ্যই জানাবেন।
পরবর্তীতে রিভিও লিখার দুঃসাহস করবনা
schindlers list(যে ছবিটা দেখে কান্না থামিয়ে রাখা পৃথিবীর কঠিনতম কাজের একটি):আমার দেখা স্পিল্বারগের সেরা মুভি। মুভিটা মুলত করা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে। মুভির প্রথমে যেটি দেখা যায় একজন নাজি ব্যাবসায়ি যিনি পোল্যান্ড এ আসেন নতুন করে ব্যাবসা শুরু করার জন্য যার একমাত্র উদ্দেশ্যই যুদ্ধের সুবিধা নিয়ে অর্থলাভ। প্রচণ্ড লোভী এই মানুষ টিই এই মুভির নায়ক অস্কার সিন্ডলার যার সাথে নাজি সেনাবাহিনীর উছু পর্যায়ের কিছু অফিসারের দহরম মহরম সম্পর্ক। এই সম্পর্কের খাতিরেই নাজি ক্যাম্পে পশু পাখির মত জীবন যাপন করা ইহুদী মানুষগুলোকে তিনি নিজের কারখানার শ্রমিক হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন।
কিন্তু মুভি যত আগাতে থাকে ততই আমরা দেখতে থাকি লোভী সিন্ডলার আস্তে আস্তে ইহুদিদের দুঃখ কষ্টের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলতে থাকে। ধীরে ধীরে অর্থ বিত্ত নারী লোভী সিন্ডলার বুজতে পারে যে সবকিছুর চেয়ে মূল্যবান মানুষ আর মানবতা এবং ক্যাম্পে থাকা মানুষ গুলোকে সে রক্ষা করতে চাই যে কোন মুল্যে। একটা সময় ইহুদীদেরকে holocaust হতে বাঁচানোর জন্য ইহুদিদের নামের একটি তালিকা তৈরি এবং তার সব সম্পত্তির বিনিময়ে সে এই তালিকার ইহুদিদের কিনে নেয়। এই তালিকাই মুলত schindlers list. তার পরেও একটা সময় সে উদ্ধারকৃত ইহুদিরদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অপরাধবোধে আর তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে “এই গাড়িটি আমি কেন রেখেছি?? এই গাড়িটি দিয়ে আরও ১০ টা মানুষ কে বাঁচানো যেত। “
এক কথায় অসাধারন একটা মুভি।
রাগ,লোভ,হিংসা,ভালবাসা,করুনা মানুষের জীবনের এই জটিল জিনিসগুলোকে খুব ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই মুভিতে। রাগ,হিংসা আর লোভ নামক রিপুগুলকে কিভাবে ভালবাসা আর মানবতা ছাপিয়ে যেতে পারে তাও দেখানো হয়েছে অসাধারনভাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদেরকে যে নিরমম বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তা এই মুভিতে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে মুভিটি দেখার সময় মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। এখনো একটি ডায়ালগ আমার কানে বাজে যেখানে একজন ইহুদী ক্যাম্পের নিষ্ঠুরতার বর্ণনা দেয়। আর শিন্ডলার লিস্ট এই টাইটেলের আমার কাছে একমাত্র অর্থ এটা যে ওটা হল জীবনের তালিকা,পৃথিবীর আলো হাওয়ায় কিছু মানুষকে আরও কিছুদিন থাকতে দেওয়ার তালিকা।
সবচেয়ে একটা জিনিস ভাল লেগেছে যে স্পিলবারগ মুভিটাতে অস্কার শিন্ডলার কে কখনই পারফেক্ট হিরো বানানর চেষ্টা করেন নি,বরং দোষ গুনে মিলিয়ে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখিয়েছেন।
শিন্ডলারস লিস্ট ডাউনলোড
I stand alone(মুভিটি দেখতে বারবারই ইলেকট্রিক শক খাবেন, খেতে আপনি বাধ্য): এটি একটি ফ্রেঞ্চ মুভি। মুভিটি দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দেখার পর মনে হচ্ছিল পরিচালক গাস্পার নো একজন কসাইয়ের মস্তিস্কে ঢুকেছিলেন,মনে হচ্ছিল মুভিটা দেখে নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধ আর সংস্কারের সংজ্ঞা নতুন করে দেওয়া উচিত,মনে হচ্ছিল হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা সঠিক আর ভুল ,ভাল আর মন্দের ধারনা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবা উচিৎ।
পুরো মুভিটা একজন কসাই কে নিয়ে।
মুভির শুরুতে দেখান হয় ছোটবেলা থেকেই হাজারো প্রতিকুল পরিবেশে বড় হওয়া এই কসাই জেলে যায় তার মেয়ের ধর্ষণকারীর পিছু নিতে গিয়ে। তারপর অনেকদিন পর সে যখন বের হয়ে আসে সে সিদ্ধান্ত নেয় তার মেয়েকে ত্যাগ করে জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করার। নতুন করে তার এক মহিলার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু মুভি আগানোর সাথে সাথে আমরা দেখতে থাকি যে আসলে এখানে ভালবাসা বলে কিছু থাকেনা এবং একটা সময় লোক টা অনেক টা বাধ্য হয়েই ওই গর্ভবতী মহিলাকে বেধড়ক মারধর করে পালিয়ে আসে। টাকা,চাকরি বিহীন একটি মানুষের রুঢ় বাস্তবতাগুলোর মাঝে টিকে থাকার সংগ্রামে সে প্রতিনিয়ত হারতে থাকে।
কিন্তু সে কখনই আশা ছাড়েনা,আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করতে চায়। সে তার পরিচিত বন্ধু আর প্রতিবেশীদের কাছে যায় একটু খানি সাহায্যের আশায়,কিন্তু বাস্তবতা তাকে আবার সপ্ন থেকে অনেক দূরে ছিটকে দেয়,কেউ তাকে এতটুকু সাহায্য দেয় না,এই দিকে ধীরে ধীরে তার জমানো পয়সা গুলো শেষ হয়ে আসতে থাকে। এরই মাঝে তার সাথে দেখা হয় তার মেয়ের এক পতিতালয়ে যেখানে মেয়ে পতিতা আর বাবা খদ্দের। এর পরে যা ঘটে তা সবার জন্য স্রেফ চমক। আর কাহিনী বলছিনা।
বাকি কাহিনীটা আপনাদের চোখ কপালে তুলে দেওয়ার জন্যই বাকি রাখলাম।
চমক আছে মুভির মেকিংএর ধরনেও। চরম একটা টুইসটিং মোমেন্টে এসে ডিরেক্টর আমাদের ৩০ সেকেন্ড চিন্তা করার সময় দেন যেখানে আমদের ঠিক করতে বলা হয় যে মুভিটা আমরা দেখতে চাই নাকি চাইনা??মুভিটা সম্পর্কে এক কথায় বলব মুভিটার পুরোটা সময় জুড়ে পরিচালক আমাদের চারপাশের বাস্তবতার হাজারো খানাখন্দের ভেতর দিয়ে আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে আমাদের নতুন করে ভাল মন্দের জাজমেন্ট করতে শিখতে হয়। পুরো মুভির শেষে গিয়ে একটি কথা খুব করে মেনে নিতে হয় যে ভাল মন্দের সংজ্ঞা কখনই সার্বজনীন নয়,সেটা হওয়া উচিৎও নয়,প্রত্যেক ব্যাক্তির কাছে ভাল মন্দের সংজ্ঞা আলাদা হওয়া উচিৎ। আমাদের সমাজগুলোর নীতি নৈতিকতার জেনারলাইজেশান করা হয়েছে শুধুমাত্র সমাজের স্বার্থেই,সেখানে ব্যাক্তি কোন ব্যাপার নয়।
ডাউনলোড
One flew over the cuckkos nest(মাসটারপিস অফ অল টাইম):সত্যিকার অর্থে একটি মাসটারপিস মুভি। আমার খুব খুব প্রিয় একটা মুভি। মুভির কাহিনির শুরু হয় মানসিকভাবে অসুস্থদের একটি প্রতিষ্ঠানে ম্যাকমারফি নামক এক নতুন রোগীর আগমন দিয়ে। অবশ্য তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার তেমন কোন লক্ষন দেখা যায় না। এখানে এসে অন্যান্য রোগীদের সাথে পরিচিত হয়ে সে এখানকার কঠোর নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পারে।
সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারে এই অসুস্থ মানুষগুলোর সুস্থতার জন্য ওষুধ,পিল আর হাসপাতালের কঠোর নিয়ম কানুনের চেয়ে বেশি দরকার একটুখানি স্বাধীনতা আর ভালোবাসা। কিন্তু হাসপাতালের কঠিন নিয়ম কানুনগুলো মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত ভাবতে শিখাচ্ছীল যে তারা পাগল,অসুস্থ, তারা স্বাভাবিক নয়। সত্যিকার অর্থে স্বাভাবিক জীবনযাপন আর স্বাভাবিক চিন্তাভাবনার অধিকার প্রতিনিয়ত হাসপাতাল করতিপক্ষ তাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছিল আর মানুষগুলো এই অসুস্থতার বৃত্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারছিলনা। ম্যাকমারফী এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলনা এবং সে হাসপাতাল করতিপক্ষের সাথে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করে দিলো। সবসময়ই সে স্বাভাবিকতার বৃত্তের বাইরে থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে এমন সব কাজ করতে থাকল যাতে অসুস্থ মানুষগুলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেকে একটুখানি স্বাভাবিক ভাবতে পারে,অন্য আট দশজনের মতো স্বাধীন ভাবতে পারে।
এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় হাসপাতাল করতিপক্ষের সাথে ম্যাকমারফীর বিরোধ চরমে ঊঠে। আমাদের দেশ অথবা আমাদের সমাজে যেরকম হয় যে একটা জায়গায় এসে আমাদের স্বাধীনতা,স্বকীয়তা আমাদের নিজেদের বানানো সিস্টেমের কাছে হার মানে। মুভিতেও তাই হয়। ম্যাকমারফীও একটা জায়গায় এসে হার মানে। আর এখানে এসেই ডিরেক্টর আমাদের সমাজের সব সিস্টেমের অসাড়তা প্রমাণ করেন আমাদের ভালোবাসা আর স্বাধীনতার বিপরীতে।
পুরো মুভি দেখার পর একটা কথায় মনে হয়েছে যে নীতিনৈতিকতা,মূল্যবোধ এবং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ঊঠা মানবসমাজের সিস্টেমগুলোর গুরুত্ব কখনো মানুষের ভালোবাসা, স্বাধীনতা কে ছাপিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়।
মুভিতে ম্যাকমারফীর ভূমিকায় জ্যাক নিকোলসনের কোন বিকল্প ছিলোনা। সোজা কথায় বললে আমার দেখা সেরা অভিনয়গুলোর একটি। আমি হলফ করে বলতে পারি মুভিটা দেখার পর ম্যাকমারফীর সাথে সাথে বিলি, মারটিনি এই চরিত্রগুলো কখনো ভুলতে পারবেন না।
Tropa de elite 2(ক্রাইম থ্রিলারের ভক্তদের জন্য সেরাগুলোর একটি,জমজমাট কাহিনী,অলিতেগলিতে সাসপেন্স):ব্রাজিলিয়ান ডিরেক্টর jose padilla এর মুভি।
এইটি একটি ক্রাইম থ্রিলার। এতক্ষন উপরের তিনটা মুভির কথা পইড়া পইড়া যাদের হাই উঠছে,ঘুম চোখের কিনারায় আইসা ঝিলিক মারতাচে তাদের জন্যই মারমার কাটকাট এই মুভির খবর।
এই মুভিতে এমন একটি শহরের গল্প বলা হয় যার পুরোটাই ড্রাগডিলারদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এই ডিলারদের মধ্যেই প্রচণ্ড গ্রুপিং রয়েছে অনেকটা বাঘে মহিষের মতই। তাদের এই প্রতিযোগিতা থেকে শহরের সবচেয়ে ভয়ংকর জেলখানাটিও মুক্ত নয়।
একবার ওই জেলখানার বন্দি ড্রাগডিলারদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পরলে অনেকটা এগরেসিভ মুডে তা নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ। এর ফলে মারা যায় অনেক টেরোরিস্ট। আর এই সফল অভিযানের জন্য অভিযানের একজনকে দেওয়া হয় প্রমোশন(হিরো) এবং খুব অদ্ভুতভাবেই একজন কে তার পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু পুরো অভিযানের যৌক্তিকতা আর বৈধতার ব্যাপারে বেকে বসে হিউম্যান রাইট অরগেনাইজেসান।
প্রশাসন এবং হিউম্যান রাইট এর বিরোধ যখন চরমে তখন ই পুরো পুলিশ প্রশাসনকে ভেঙ্গে সাজানোর দায়িত্ব পায় হিরো।
সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি লক্ষ্য করেন যে শহরের সব অপরাধগুলোতে পুলিশের লোকজন জড়িয়ে পড়ছে। ওখানে ভাল খারাপের সেট কোন রুল ছিলনা,রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই পুলিশ সবসময় ব্যাবহৃত হয়ে আসছিল। একটা সময় এসে দেখা যায় হিরোর এক বন্ধুকে পুলিশ মেরে ফেলে বিনাকারনে। আস্তে আস্তে পুলিশ নামক রক্ষক বাহিনীই শহরবাসীর ভক্ষক হয়ে যায়।
আর এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত পারলামেন্টএরিয়ান,প্রচণ্ড প্রতাপশালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হতে শুরু করে সাধারণ পুলিশ সবাই। কিন্তু একজন মানুষ ই এই সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনী। এক কথায় অসাধারন,কাহিনির প্রতি মোড়ে মোড়ে রয়েছে সাসপেন্স। এই মুভির ব্যাপারে যেটা বলব যে স্বভাবতই হলিউডের মুভির অ্যাকশন স্টাইল থেকে ব্রাজিলের অ্যাকশন অনেকটাই বাস্তবসম্মত এবং যৌক্তিক।
এই মুভির ক্ষেত্রেও একই ঘরানার অ্যাকশন দেখা যায়। চরম উপভোগ্য মুভিটা দেখতে বসলে সময় যে কিভাবে যায় তার হিসেব রাখা একটু মুশকিলই হয়ে পড়বে।
আর পুরো মুভির সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হল যে আসলে পৃথিবীতে একজন হিরোর বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই ভিলেনের প্রয়োজন। আর সময়ের প্রয়োজনে মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন করে।
ডাউনলোড
আর লিখতে পারছিনা,অনেকক্ষন ধরে টানা টাইপ করে যাচ্ছি।
যাই হোক সবাই ভাল থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।