My scars remind me that the past is real, I tear my heart open just to feel........
১৯৯২ সাল, আমি তখন ক্লাশ থ্রীতে পড়ি। বসনিয়ায় যুদ্ধ চলছে আর আমি প্ল্যান করছি একটা ফাইটার প্লেন চুরি করে উড়ে যাব বসনিয়ায় যুদ্ধ করতে । বোমার জায়গায় নেব জর্দার কৌটা (তখনকার দিনে হরতালের সময় জর্দার কৌটাতেই বেশিরভাগ লোক আহত/নিহত হত দেখে এই ডিসিশন নিয়েছিলাম, আর একটা ভাল গুলতি নেব ভেবেছিলাম )! সেটা চিন্তা করতে গিয়েই আজকের মুভিটার রিভিউ লিখতে বসলাম
সেকেন্ড ওয়াল্ড ওয়ারের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় গণহত্যা/যুদ্ধাপরাধ কোথায় হয়েছিল জানেন? ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সালে, বসনিয়া হার্জেগোভেনিয়ায়। যুদ্ধের কারণ ছিল অনেক, ছিল অনেকগুলো পক্ষ, কিন্তু ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছিল কিন্তু বসনিয়ারই। সব সংঘাতের শুরু যুগোস্লাভিয়া ভাঙার পর থেকেই শুরু, সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপরই আঘাত বেশি হয়েছিল সার্ব, ক্রোয়েটদের সাইড থেকে।
বলকানের কসাই স্লোবাদান মিলোসেভিককে ইতিহাস কোনদিনই ক্ষমা করবে না, অন্তত ঐ তিন বছরে মারা যাওয়া ১,১০,০০০ আত্মার অভিশাপ তো থাকবেই। ৯৫-এ যুদ্ধবিরতি হয় কিন্তু যুদ্ধের রেশ রয়ে যায় আরো বেশ কিছু বছর। ন্যাটোকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ঐ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।
১৯৯৫ সালের ক্রিসমাসের সময়কার ঘটনা। ন্যাটোর বিশাল বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন আড্রিয়াটিক সাগরে অবস্হান করছে।
যুদ্ধ শেষ, অবশিষ্ট ন্যাটো সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। পাশেই বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিশাল ডি-মিলিটারাইজড জোন ডিক্লায়ার করা, সেই সাথে নো-ফ্লাইং জোনও বটে। ইউএসএস কার্ল ভিনসন-এ কর্মরত ফ্লাইট নেভিগেটর লেফটেনান্ট ক্রিস ব্রুনেট অসম্ভব বিরক্ত এই সীমাহীন সমু্দ্রে অবস্হানে। রুটিন হয়ে গেছে ফলস এলার্ম, ফাইটার নিয়ে ওড়ার আগমুহূর্তে নোটিশ আসে, ওড়ার দরকার নেই। সহকারী পাইলট লেফটেনান্ট স্টেকহাউজ অতটা বিরক্ত নন, বরং অধীর আগ্রহে ওয়েট করছেন দেশে ফেরার।
ব্রুনেট ক্রিসমাসের আগের দিন রেগেমেগে কমান্ডিং অফিসার এডমিরাল লেসলি রিগার্টের কাছে রিজাইন লেটার দিয়ে বসেন।
কপালের কি ফের! ক্রিসমাসের দিন রুটিন প্যাট্রোলে ওড়ার অনুমতি দেয়া হয় ব্রুনেট আর স্টেকহাউজকে। মনের আনন্দে দুজন এফ-১৬ ফাইটার নিয়ে পাখা মেললেন বসনিয়ার পূর্বাঞলে। এবং অধিক আগ্রহ দেখাতে গিয়েই ডেকে আনলেন বিপদ।
প্লেনে নতুন টাইপের লেন্সসহ ক্যামেরা এবং অনেক বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডডিস্ক বসানো ছিল।
ব্রুনেটের আগ্রহেই দুজন প্লেন নিয়ে ঢুকে পড়েন ডিমিলিটারাইজড জোনে, নিজেরা টেরও পাননি কখন প্লেনের ক্যামেরায় উঠে গেছে সার্বদের পাপের ছবি....বিশাল বধ্যভূমির ছবি, ডিমিলিটারাইজড জোনে ব্যাপক মিলিটারি এক্টিভিটি....ইত্যাদি। স্হানীয় বসনিয়ান সার্ব আর্মি কমান্ডার জেনারেল লোকার চাননি তাদের গোপন এক্টিভিটি কেউ দেখে ফেলুক....কেউ জেনে ফেলুক স্হানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নতুন করে শুরু হওয়া জেনোসাইডের চিন্হ কেউ পেয়ে যাক। নিজের ডানহাতকে নির্দেশ দেন প্লেনে মিসাইল হামলা চালাতে, এবং একপর্যায়ে ভূপাতিত হয় এফ-১৬! প্লেন ক্র্যাশ করার পর জেনারেল লোকার নিজের টিম পাঠিয়ে দেন পাইলট/নেভিগেটের কাউকে জীবিত না রাখার জন্য, হত্যা করা হয় লেফটেনান্ট স্টেকহাউজকে- কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান নেভিগেটর ব্রুনেট। পালিয়ে যান প্লেন থেকে, একমাত্র সম্বল বেসিক কিট- নেভিগেটর ম্যাপ, একটা রেডিও, সামান্য খানিকটা পানি আর একটা এম-৯ পিস্তল। এবং শুরু হয় প্রতিকূল পরিবেশে বারবার শত্রুর হাতে ধরা পড়ার হুমকি নিয়ে বেঁচে থাকা।
রেডিওতে পাওয়া নির্দেশমত চলতে গিয়ে ব্রুনেট রওয়ানা হন রঁদেভু পয়েন্টের দিকে। ইউএসআর্মি তাকে ট্র্যাক করতে থাকে স্যাটেলাইটে এবং একপর্যায়ে ধরা পড়ে যান প্রায় সার্বদের হাতে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য বধ্যভূমিতে পঁচাগলা লাশের নিচে লুকিয়ে পড়েন।
চলার পথে একপর্যায়ে পান এক বসনিয়ান যোদ্ধাকে বন্ধু হিসেবে, সাথে সাথে হামলার শিকার হন সার্বদের, একটা শহরকে প্রায় গুড়ো করে ফেলে সার্বরা ব্রুনেটের খোঁজে। ব্রুনেট বুদ্ধি করে এক সার্ব সৈন্যের পোশাক পরে সে যাত্রা বেঁচে যান কিন্তু হারাতে হয় রেডিওটা।
ওদিকে সৃষ্টি হয় কনফিউশন, সার্বরা টিভিতে প্রচার করে যে ব্রুনেটের লাশ পাওয়া গেছে। এই খবর শুনে ব্রুনেটেকে উদ্ধার করতে আসা কমান্ডো টিম ফেরৎ চলে যায়। ব্রুনেটের বাঁচার উপায় থাকে হাতে একটাই- যেকোন উপায়ে ইজেক্ট হওয়া পাইলটের সিটের কাছে পৌছাতে হবে পাঠাতে হবে সিগনাল আর উদ্ধার করতে হবে প্লেনের হার্ডডিস্কটা। রওয়ানা হন ব্রুনেট এক বিপজ্জনক মাইনফিল্ডের মধ্য দিয়ে......
বাকিটা আর বলব না! আমেরিকানদের যুদ্ধের ছবিগুলো জঘন্য লাগে-যেকোন উপায়ে ইউএস আর্মিকে পৃথিবী সবচেয়ে বেস্ট এবং দয়ার সাগর দেখানোর একটা কমন ট্রেন্ডের জন্য, এই একটাই জোস লেগেছিল আমার। প্লেনকে মিসাইলের ধাওয়া করার দৃশ্য, ক্র্যাশ করার পর ব্রুনেটের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, গণহত্যার প্রমাণ...সবমিলিয়ে অসাধারণ একটা ছবি।
২০০১ সালে বানানো এই ছবিটি আসলে একটা সত্য ঘটনার অবলম্বনে বানানো, ১৯৯৫ সালে ঐ অঞ্চলে এফ-১৬ ফ্যালকন নিয়ে গুলি খেয়ে ভূপাতিত হয়েছিল ইউএস এয়ারফোর্সের ক্যাপ্টেন স্কট ও'গ্রাডি! ৬দিন পালিয়ে থাকেন অনেক কষ্টে সারভাইভ করেন রেসকিউ টীম তাঁকে উদ্ধার করার আগে। স্কট অবশ্য মুভিটির নামে একটা ল-স্যুট জারি করেন, বিনা অনুমতিতে মুভিটি বানানো হয়েছে বলে। পরে সেটার সুরাহা হয়।
লেফটেনান্ট ব্রুনেটের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন ওয়েন উইলসন। অত উঁচু ফেম কখনো পাননি, কিন্তু নিজের চরিত্র যেকোন মুভিতেই চমৎকার ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
আর এটার তো কথাই নেই। মোট ৯২মিলিয়ন ডলার ব্যাবসা করেছিল মুভিটা। সিক্যুয়াল বের হয়েছিল পরে, কিন্তু এটাই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে।
মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিংক
স্টেজভ্যু ডাউনলোড লিংক
পরিশিষ্ট: লিখতে চেয়েছিলাম একটা ফানপোস্ট কিন্তু কেন জানি এই মুভিটার কথাই মনে পড়ল। লাইফের ফার্স্ট মুভি রিভিউ লিখলাম; কি ঘোড়ার ডিম লিখেছি নিজেই বুঝতে পারছিনা।
যাই হোক, আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে মুভিটা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।