পোলট্রি একটি অতি প্রয়োজনীয় শিল্প । সারা বিশ্বের সব দেশের জন্যই এটি গুরুত্বপূর্ণ । বর্ধিত জনগোষ্ঠির আমিষের চাহিদা পূরণে বৈজ্ঞানিক উপায়ে অধিক হারে মুরগী হাঁস উৎপাদনের বিকল্প নেই । বাংলাদেশের জন্য এটি আরো বেশি প্রজোয্য । এর ছোট ভূখন্ডে গাদা গাদি লোক বাস করে ।
এত বেশি সংখ্যক মানুষের চাহিদা পূ্রণে আধুনিক পদ্ধতিতে পোলট্রি ফার্ম পত্তন ও বিস্তার সময়ের জোরালো দাবী । এটি শুরুও হয়েছে । সন্দেহ নেই এটি এদেশের একটি সম্ভাবনাময় ও বিকাশমান শিল্প । গত দুই দশক ধরে এর বার্ষিক প্রায় ২০% প্রবৃদ্ধি ঘটছে । নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ফার্ম পরিচালনা করেও বাজারে স্বল্প মূল্যে মুরগী ও ডিম সরবরাহ করছে দেশীয় পোলট্রি ফার্মাররা ।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের বার্ষিক ৫৬ কেজি মাংস ও ৩৬৫ টি ডিম গ্রহন করা প্রয়োজন । কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রতি বছরে ১১.২৭ কেজি মাংস ও ৩০ টি ডিম গ্রহন করে থাকে । দেখা যাচ্ছে এটি প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম । ফলে মানুষ জন পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে । বাংলাদেশের অসংখ্য ভাগ মানুষ প্রোটিন, আয়োডিন সহ নানারকম পুষ্টি স্বল্পতায় ভুগে থাকে ।
পোলট্রি ফার্ম কম মূল্যে মুরগী ও ডিম সরবরাহ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । মাছ ও গবাদী পশু উৎপাদনে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে । অপরপক্ষে পোলট্রির মাংস ও ডিম উৎপাদন অনেক সহজ ও কম সময় সাপেক্ষ । বাংলাদেশ একটি ঘণ বসতীপূর্ণ দেশ । এর চাষযোগ্য জমির পরিমান ক্রমহ্রাসমান ।
এর পরিমান প্রতি বছর শতকরা এক ভাগ করে কমে যাচ্ছে । এমতাবস্থায় ভূমি ব্যবহারের নতুন কৌশল উদ্ভাবন প্রয়োজন । এক্ষেত্রে পোলট্রি শিল্প বিকাশ কম ভূমির অধিক ফলদায়ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে । এর মাধ্যমে ভূমি ব্যবহার থেকে বর্ধিত সুবিধা হাসিল করা যেতে পারে । অধিকন্তু পোলট্রি থেকে বায়ো গ্যাস ও জৈব সার তৈরী করা সম্ভব ।
যা দেশের জ্বালানীর চাহিদা পূরনে ভূমিকা রাখতে পারে । বিকাশমান এই শিল্পটিতে নব্বই এর দশকে বিনিয়োগের পরিমান ছিল ১৫০০ কোটি টাকা । যা বর্তমানে ১৫০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে । শুধু তাই না এতে ৬০ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ধীরে ধীরে অগ্রসরমান ।
জনপ্রতি আয় অতীতের তুলনায় বেশ বেড়েছে । মাংস ও ডিমের চাহিদা এরই সাথে বাড়ছে । সাম্প্রতিক কালে দুধের চাহিদা ৬% ও ডিমের চাহিদা প্রায় ৫% বেড়েছে । আশির দশকে বিদেশী উন্নত জাতের মুরগী ও এর ডিম গ্রহনে মানুষের মাঝে যে মনস্তাত্বিক বাধা ছিল তা অনেকাংশে দূর হয়েছে । বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে ফার্মের ডিম ও ব্রয়লার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে ।
তাই পোলট্রি শিল্পের বিকাশে আরো গতি সঞ্চার প্রয়োজন । উল্লেখ্য এটি সহজ ও এতে প্রাথমিক পূঁজির প্রয়োজন কম । বৃহৎ উদ্যোগের পাশাপাশি গ্রামীন জনগন ছোট আকারেও এটি করতে পারে । তবে পোলট্রি ফার্ম পরিচালনায় খামারীরা বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে, যা দূর করা দরকার । নিকট অতীতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার কারনে সৃষ্ট মড়কে এই খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল ।
যা ছিল সংশ্লিষ্ট খামারীদের জন্য এক বিশাল ধাক্কা । এতে তারা কোন জায়গা থেকেই আর্থিক বা কোনরূপ সহযোগিতা পায়নি । এরূপ চলতে থাকলে উদ্যোগী খামারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে । যা কখনো কাম্য নয় ।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশ ও অপরাপর পাঁচটি দেশে H5N1 ভাইরাসের সংক্রমন রয়েছে ।
যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন না করা ও সময়োপযোগী ভ্যাকসিনেশনের অভাবে এই শিল্পটি যথেষ্ট হুমকীর মুখে রয়েছে । এছাড়া আরো বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে যা পোলট্রি শিল্প বিকাশের অন্তরায় । এসব প্রাণীর খাবার প্রস্তুতের জন্য কিছু উপাদান বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয় । এর উপর আরোপিত ট্যাক্সের পরিমান কমানোর দাবী রয়েছে খামারীদের । খামার গুলোতে সহজ বিদ্যূৎ সংযোগ প্রদান প্রয়োজন ।
পোলট্রি খামারীদের জন্য সুবিধাজনক হ্রাসকৃত ট্যারিফ নির্ধারন করা যেতে পারে । সরকারীভাবে বা যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খামারী ও খামারে কর্মরত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে । স্বল্প মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ভ্যাক্সিনেশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে । বাংলাদেশের অন্যান্ন কৃষি পণ্যের মত এই ক্ষেত্রেও উৎপাদনকারী ও গ্রাহকের মাঝে মধ্যস্বত্তভোগীরা অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে থাকে । এই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মনিটরিং চালু করা ও মূল্য নির্ধারন করে দেয়া যেতে পারে ।
উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজীকরনের পাশা পাশি বাজারজাত করনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল শ্রেণীর সুবিধা প্রাপ্তিতে সাম্য বজায় থাকা জরুরী । খামারীরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন । স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋনের ব্যবস্থা থাকা দরকার । এসব শিল্পের জন্য বীমার ব্যাবস্থা চালু করতে হবে । এ বিষয়ে সরকারী বীমা সংস্থাকেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করা দরকার ।
লেয়ার ও ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৩০% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে । নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এটি অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক ।
পোলট্রি শিল্পের সঠিক ও কাংখিত বিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগালে খরচ কমে আসবে ও মান মম্মত মাংস ও ডিম উৎপাদন সহজ হবে । এই লক্ষ্যে পোলট্রি শিল্পে উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগানোয় উবুদ্ধ করনের জন্য প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আমদানী ও রপ্তানীর মাঝে যথেষ্ট ভারসাম্যহীনতা বিদ্যমান রয়েছে ।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে রপ্তানী আয় বৃদ্ধির জন্য সরকারও সচেষ্ট । এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী ও সহজ খাত হতে পারে পোলট্রি শিল্প । যদি এই খাতে যথেষ্ট সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয় তবে এ থেকে দেশীয় আমিষের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে । দেশের অদক্ষ কর্মহীন বিশাল জনগোষ্ঠির একাংশকে সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দেয়া যেতে পারে । যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে যথেষ্ট গতিশীলতা আনবে ।
উৎপাদনমুখী ও সহজ এ শিল্পটি বিকাশের সকল সুযোগ এদেশে বিদ্যমান । মুরগী ও ডিমের চাহিদাও দেশ ও বিদেশে যথেষ্ট । ফলে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য এটি একটি সহজ সুযোগ । এ সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।