আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখা হবে আবার, এই সামহয়্যারইন, এই মায়াবীবৃক্ষের তলায়

কেবল সমুদ্র পারে শুষে নিতে সব, যা কিছু বিপ্রতীপ, ভেসে আসে নিদারুণ কষ্টের নীলজলে..

সামহয়্যারে লেখা হচ্ছেনা অনেকদিন। অনেকদিন ধরেই সামুর প্রিয় ব্লগারদের সাথেও কোন যোগাযোগ নেই ! এতো দীর্ঘকাল সামুর সাথে সম্পর্ক ছেদ হয়ে থাকলে কেমন একটা অস্বস্তিতে ভুগি। অশান্তিতে ডুবে থাকি। মনে হয় বহুদিন আমি উণ্মুক্ত আকাশ দেখিনি। পাখীদের উড়ে চলা, রৌদ্রের ঝিকিমিকি, মেঘেদের মোহন উৎসব- দেখা হচ্ছেনা কিছুই।

ব্লগারদের হৃদয় ছোঁয়া পোস্ট, উচ্ছাস উত্তাপমাখা কথামালায় দিনে দুবার চোখ বোলাতে না পারলে তীব্র হতাশা আর অভিমানে চোখও যেন অন্ধ হয়ে যায়। পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য্য সামহয়্যারের প্রিয় শব্দমালার কাছে কতো দ্রুত ম্লান হয়ে যায় ! গভীর রাত্রিতে বৃষ্টির ঘনঘটায় ঘুম ভেঙে গেলে চুপি চুপি ভাবি, আচ্ছা সবারই কি এমন হয় ? সবাই কী সামহয়্যারকে এভাবেই ভালবাসে ! আসলে দিনগুলো তেমন ভালো যাচ্ছেনা । অনেক আদরের একমাত্র কন্যা আর কন্যার মা দুজনেই একমাস ধরে চিকেন পক্স রোগে ভুগলো। বাসায় এ ধরনের অসুখ হলে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। হয়েছিলোও তাই।

নানাভাবেই আমার তখন বিপর্যস্ত অবস্থা। অথচ কিছু করার নেই। ১০ বছরের মেয়েটা এই অসুখে এতোটাই ভয় পেয়েছে যে, সে আমাকে তার দিকে তাকাতেও দেয়নি। আমি একটু মনযোগ দিয়ে তার পক্সের গুটি গুলো কেমন হচ্ছে তা দেখতে গেলে ভয়ে চীৎকার দিয়ে উঠতো, আর বলতে শুরু করতো- "আব্বু তুমি এগুলো দেখো না, এগুলো দেখোনা...." । অবুঝ মেয়ের হয়তো ধারণা এগুলো দেখলে তার আব্বু ভয় পাবে, তার অমন প্রিয় আদরের মেয়ের মুখের উপর এইসব জল-ভর্তি গুটির বীভৎসতা হয়তো তার আব্বু সহ্য করতে পারবেনা ! হায়রে অবুঝ মেয়ে আমার ! জানেনা, একজন পিতার বুকে তার কন্যার জন্য কী বিশাল মমতা জমা থাকে।

সেখানে বসন্ত রোগ-ই কী, আর কুষ্ঠ রোগ-ই বা কী ! কোনটাই মমতা থেকে একবিন্দুও সরাতে পারেনা। .... রোগ-এর কথাতো বললাম। এবার বাসার অন্য আরেক সমস্যার কথা বলি। সে সমস্যা ওয়াসার পানি নিয়ে। দীর্ঘ তিনমাস যাবত সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ওয়াসার পানিতে ড্রেনের পানির মতো কালো ময়লা আসছে।

ড্রেনের পানির মতো গন্ধে ওয়াসার এ পানি দিয়ে মুখে কুলিও করা যায়না। দিনে রাতে প্রতিদিন পানি কিনতে হচ্ছে। এমনকি গোসলের পানিও। এ এলাকায় এসব নিয়ে কেন জানি কারো কোন মাথাব্যথা নেই। বাড়ীওয়ালা বললো - ‌'কেন, প্রথম-আলো পড়েন নাই ? ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার স্বয়ং স্বীকার করেছেন, পানির লেভেল নীচে নেমে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে তারা পানি পরিশোধন করা ছাড়াই সরাসরি 'নদীর পানি' মেইন সরবরাহ-লাইনে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

' আমি শুনে অবাক হয়েছি। ওয়াসার ইঞ্জিনিয়াররা আজকাল সত্যি কথা যতো কঠিন-ই হোক বলতে দ্বিধা করছেন না। ধীরে ধীরে এমন হয়ে যাচ্ছে সব। সবাই সবকিছু মেনে নিচ্ছে। একসময় আমরা আমাদের ব্যর্থতার কথাগুলো সরাসরি বলতে লজ্জা পেতাম।

যতোটা পারা যায়, ঢেকে রাখতে চাইতাম। এখন আর রাখ ঢাক এর বালাই নেই। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের নাগরিক হয়ে আপনি মেইন সরবরাহ লাইনে কেন পরিশোধিত পানি চাইবেন ? ড্রেনের গন্ধমাখা পানি যে তারা দিতে পারছে - সেটাই তো অনেক ! কয়েকদিন পরে হয়তো তা-ও দিতে পারবে না। পানি, গ্যাস, বিদ্যুত- আস্তে আস্তে সবধরনের ইউটিলিটি সার্ভিসেরই হয়তো একই অবস্থা হবে ! তবে ইউটিলিটি সার্ভিসের রমরমা অফিসগুলোর অবস্থা হয়তো ঠিক সেই আগের মতোই থেকে যাবে। আগের মতোই ফকিরাপুলের পানির ট্যাঙ্ক সংলগ্ন ওয়াসা অফিসে গেলে আপনি হয়তো একটু হকচকিয়েই যাবেন- এটা অফিস না অন্য কিছু ? এই অফিসের লোকজন সব বসার সিট ছেড়ে কোথায় গিয়ে ঘুরে বেড়ায়? নীচের উঠোনে, সিড়ির কোণায়, রাস্তার ফুটপাতের পাশে দাড়িয়ে ডিফল্টার গ্রাহকদের সাথে তাদের কী কথা চলতে থাকে ফিসফাসে? কাল রাতে (১২ মে, ২০১১) একুশে টিভিতে 'একুশের চোখ' অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম।

হায়, সেখানেও এবারের প্রসঙ্গ 'ওয়াসা'। খুব সাহসিকতার সাথে একুশের সাংবাদিক তুলে ধরলেন তার ক্যামেরাবন্দী সচল প্রামাণ্য এক ভয়াবহ প্রতিবেদন - কীভাবে ওয়াসার একজন 'সাধারণ কর্মচারী' তার সামান্য চাকুরীকে পুঁজি করে অবিশ্বাস্য সব সম্পদ আর সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন ! স্বভাবতইঃ এ প্রতিবেদন দেখে শিউরে উঠতে হয়। অবাক হতে হয় ! স্তব্ধ হতে হয় ! হয়তোবা শেষমেশ ভুলেও যেতেও হয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নাগরিক অস্বস্তিকর বিষয়গুলো আমরা ধীরে ধীরে ভুলে যেতে শিখেছি। আমরা খুব দ্রুত সমস্যাগুলো মেনে নিয়ে ভুলে যাই।

কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলা আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের কাজ নয়। এসব নিয়ে কথা বলবে নগর গবেষকেরা, বুদ্ধিজীবিরা। আমাদের জন্য বরং গান, কবিতা আর বিনোদনের চর্চাই শ্রেয়তর। আমাদের জন্য সকাল বিকাল রাত্রিতে সনির 'সিআইডি'র নেশায় বুঁদ হয়ে যাবার সুযোগ প্রস্তুত আছে ! আমাদের জন্য স্টার প্লাসে ডুবে আর সব ভাবনা মাথা থেকে মাইনাস করে দেবার সুযোগ আছে। আমরা কেন মাথা ঘামাবো দেশ ও জাতির এইসব সমস্যা টমস্যা নিয়ে? তার চেয়ে বরং ফিরে যাই আগের প্রসঙ্গে।

যা দিয়ে শুরু করেছিলাম। যে অনুভবের কথা বলতে শুরু করেছিলাম গোড়াতেই। হ্যাঁ, বলছিলাম সামহয়্যারের কথা। সামহয়্যারের প্রিয় ব্লগারদের সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন থাকার কথা। সামহয়্যারে দীর্ঘকাল লিখতে না পারার কথা।

নিয়মিত লেখার জন্য সময় দিতে না পারলেও সামহয়্যার পড়ার জন্য ঢুকে পড়ি মাঝে মাঝেই। সামহয়্যারের শক্তিশালী নানা পোস্ট আমাকে অভিভূত করে। আমি জানি, আমাদের এই প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্রটিতেও নানা সময়ে নানাভাবে নানারকমের ক্যাচাল লেগে থাকে। নানা বিষয়ের উপর দীর্ঘ বাক-বিতন্ডাও চলে অনেকদিন। কেউ কেউ অভিমানে চলে যায়।

লেখা বন্ধ করে দেয় হঠাৎ ক্ষোভ মিশ্রিত অনুযোগে। এতোকিছুর পরেও সামহয়্যার আমাদের সেই দীর্ঘকাল একসাথে পথচলার সামহয়্যার। সামহয়্যার সেই 'প্রাপ্তি' নামের মেয়েটিকে বাঁচানোর সামহয়্যার। সামহয়্যার সেই 'শ্বাশত'-র পাশে দাঁড়ানোর সামহয়্যার। এতোকাল পরেও সামহয়্যারের বিশ্বব্যাপী আকাশজুড়ে অঝর ধারায় ভালবাসার বৃষ্টি নামতে দেখি, যখন রুখসানা তাজীন তার কান্না জাগানো শক্তিশালী লেখায় তুলে ধরেন একজন শিক্ষক সাব্বিরের জীবনের চরম সংকট আর অসহায়ত্বের কথা।

সামহয়্যার-এর আকাশ জুড়ে যখন বারবার এভাবেই মানবতার ডাকে ব্লগারদের অসাধারণ ভালবাসার বৃষ্টি নামতে থাকে, তখন আমি আবার বাঙালীদের এই তুলনাহীণ মিলনক্ষেত্রটির প্রেমে অভিভূত হয়ে যাই। আমার সারাক্ষণ মনে হতে থাকে, ফিরে যাই! ফিরে যে যেতেই হবে এ মহান সৌন্দর্য্যের অপরূপ মিলনমেলায়..... ! আমার সারাক্ষণ মনে হতে থাকে, আমাদের মধ্যে কে সেরা ব্লগার, কে সবচেয়ে ভালো লেখেন, সেসব নিয়ে পুরস্কার অর্জনের দ্বন্দ্বে আমাদের বিভক্তির আর কোন প্রয়োজন নেই। কিছু না পেয়েই আমরা দীর্ঘকাল এক হয়ে থাকতে পারি সামহয়্যারের এই আশ্চর্য্য মায়াবৃক্ষের তলায়। কিছু না পেয়েই আমরা ডুবে থাকতে পারি এই 'সবকিছু পেয়ে যাওয়ার অপরূপ অদ্ভূত এক প্রশান্তির ছায়ায়' ! ভালো থাকো প্রিয় সামহয়্যারইন, ভালো থাকো প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা। দেখা হবে আবার, প্রিয় এই সামহয়্যারের ছায়াতেই।

প্রিয় এই মায়াবীবৃক্ষের তলায়। আবারো কোনদিন! আবারো কোন এক মনোরম স্নিগ্ধ বিকেলে ! ............................................................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.