আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুনিয়ার জীবনে নামাযের উপকারিতা

_________অসৎ লোকের কর্মকান্ডে সমাজ ধ্বংস হয় না, ___________সমাজ ধ্বংস হয় ভালো মানুষের নিস্ক্রিয়তা।

 দুনিয়ার জীবনে নামাযের উপকারিতা عن حذيفة قال كان رسول الله صلم اذا جزبه امر فرغ الي الصلواة- ‘‘হযরত হোজায়ফা রা. বলেনঃ রাসূলুল্লাহর সা. সামনে যখনই কোন কঠিন কাজ উপস্থিত হত, তখন তিনি কাল বিলম্ব না করে নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। নামায-আল্লাহ তা’য়ালার একটি বড় নিয়ামত ও রহমত। কাজেই যে কোন বিপদাপদ বালা মুসিবতের সময় নামাযের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা করা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। আর অসহায় বান্দা যখন সাহায্যের জন্যে মহান শক্তিমান পরম দয়ালু আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়, তখন তার কোন অভাব বা দুঃখ কষ্টই থাকতে পারেনা।

নবী করীম সা. এর পূর্ববর্তী পয়গাম্বরগণ ও কোনরূপ অভাব অনটন বা বিপদ আপদ উপস্থিত হলে নামাযের প্রতি মনোযোগী হতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, নবী করীম সা. এর পরিবারে কখনও অভাব অনটন দেখা দিলে, তিনি পরিবারের সকলকে নামায পড়ার আদেশ দিতেন। আর এ আয়াত পাঠ করতেন ঃ وامراهلك بالصلواة وا صطبر عليها- ‘‘হে নবী! আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দিন এবং এ ব্যাপারে যতœবান থাকুন। ” হুজুর সা. এর সাহাবীগণ ও তাঁদের জীবনে হুজুর সা. এর পদাংক অনুসরণ করে বিপদাপদের সময় নামাযে মশগুল হতেন।  নামাযে দুনিয়ার জীবনে উপকার লাভের কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ ১. হযরত হাসান বছরী রহ. এর ঘটনা ঃ প্রখ্যাত তাবেয়ী’ অলিয়ে কামেল হযরত হাসান বছরী রহ. একবার হজ্জের উদ্দেশ্যে কা’বার পথে রওয়ানা হলেন।

তার সংগী সাথীগণ পথিমধ্যে তৃঞ্চার্ত হলেন। পানির আশায় তথায় একটি কুপের কাছে সকলে গমন করলেন। কিন্তু তাদের নিকট কোন বালতি ও রশি না থাকায় তারা পানি তুলতে সক্ষম হলেন না। পানির পিপাসায় কাতর দেখে হযরত হাসান রহ. বললেনঃ আমি যখন নামাযে মশগুল হব, তখন তোমরা তৃপ্তি সহকারে পানি পান করিও। সত্যিই তিনি নামাযে মাশগুল হওয়ার সাথে সাথে পানি কূপের উপর পর্যন্ত উঠে আসল।

সকলেই তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি পানি পান করার পরও ভবিষ্যতের জন্য একটি পাত্রে পানি ভরে রাখল, তখনই পানি কুপের নিম্নদেশে চলে গেল। হযরত হাসান রহ. এ ঘটনা জানার পর বললেনঃ একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করার যে ঈমান, তা তোমাদের নেই বলেই এরূপ হয়েছে। ২. জগৎ বিখ্যাত তাপসী হযরত রাবেয়া বছরীর রহ. এর ঘটনা ঃ হযরত রাবেয়া বছরী রহ. একবার হজ্ব করার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর পথে রওয়ানা করেন। তিনি তাঁর মাল আসবাব একটি রুগ্ন ও দুর্বল গাঁধার পিঠে বোঝাই করে অগ্রসর হতে লাগলেন।

কিন্তু পথিমধ্যে হঠাৎ তার গাঁধাটি মারা যায়। এই দুঃসময়ে তাঁর কাফেলার সহ-যাত্রীরা তাঁর মাল-আসবাব বহন করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হলেন না। তিনি তাদেরকে বললেন: কাফেলার সাথীরা! আমিতো আপনাদের কারো আশ্রয়ে হজ্জ্ব করতে আসিনি, এসেছি একমাত্র রাব্বুল আলামীনের আশ্রয়ে। আপনারা চলে যান।

আমি আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করলাম। তখন তারা হযরত রাবেয়াকে কোনক্রমে সম্মত না করাতে পেরে তাঁকে ঐ স্থানে রেখে পরবর্তী মঞ্জিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল। একাকিনি হযরত রাবেয়া তখন আসমানের দিকে মুখ তুলে পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করতে লাগলেনঃ ‘‘হে আমার পরোয়ার দেগার! আমি উপায়হীন আমি দরিদ্র, আমি অধম। প্রথমত তুমি আমাকে তোমার ঘর কা’বার প্রতি ডাক দিয়েছ; তারপর আমার গাঁধাটিকে মেরে ফেলেছ। ফলে এই বিজন মরুভূমিতে এখন একা।

এখন তোমার ঘর দেখার ব্যবস্থা তুমিই করে দাও। ’’ রাবেয়া’র মুনাজাত শেষ হতে না হতেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর গাঁধাটি পুনরায় জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তখন হযরত রাবেয়া আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তাঁর যাবতীয় মাল-আসবাব গাঁধার পিঠে উঠিয়ে মক্কা শরীফের দিকে রওয়ানা হলেন। ৩. নামাযী কুলি ও এক দস্যুর ঘটনা ঃ কুফা নগরীতে একজন জনপ্রিয় বিশ্বাসী কুলি ছিল। বিশ্বস্ততার কারণে ব্যবসায়ীরা তাকে পণ্যদ্রব্য ও টাকা পয়সা সহকারে কখনো কখনো বিদেশে প্রেরণ করত।

একবার বিদেশের পথে জনৈক ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। লোকটি কুলির নিকট তার গন্তব্যস্থান জেনে বলল, আমিও সেখানে যাব। আচ্ছা ভাই, আমি একটি স্বর্ণমুদ্রা দিব, বিনিময়ে তুমি আমাকে তোমার সাথে খচ্চরের পিঠে সওয়ার করে নিতে পার কি? কুলি এতে সম্মত হলেন এবং লোকটি খচ্চরের পিঠে বসে পড়ল। অতঃপর পথ চলতে চলতে তারা এমন একস্থানে পৌছল, সে স্থান হতে রাস্তাটি দুইভাগ হয়ে দুই দিকে চলে গিয়েছে। এখন কোন্ পথে যাবে তা জিজ্ঞাসা করায় কুলি প্রধান রাস্তাটির কথা বলল।

কিন্তু লোকটি এতে সম্মত না হয়ে বলল, ‘প্রধান রাস্তার চেয়ে এই সরু রাস্তাটিই ভাল হবে। ইহা যেমন সোজা, তেমনি আমার কাছে পরিচিত, আমি বহুবারই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছি, সুতরাং ভয়ের কোন কারণ নেই। কুলি সরল মনে সম্মত হয়ে তার কাছে অপরিচিত ঐ সরুপথ ধরে অগ্রসর হতে লাগল। কিন্তু কিছুদূর চলার পর দেখা গেল, উক্ত রাস্তাটি এক ভয়ংকর নির্জন ও গভীর জঙ্গলে গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে, আর সেখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়ে আছে কতগুলি মৃত লোকের লাশ। কুলি কিছু বলার পূর্বেই লোকটি দ্রুত খচ্চরের পিঠ হতে নেমে পড়ল এবং মূহূর্তের মধ্যে কোমড় হতে একখানা ছোরা বের করে কুলিকে হত্যা করতে অগ্রসর হল।

কুলি তখন দিশাহারা হয়ে তাকে মিনতি করে বললঃ তুমি আমার এই খচ্চর ও মাল জিনিস সবই নিয়ে যাও তবুও আমাকে প্রাণে মেরোনা। কিন্তু পাষন্ড লোকটি তার মিনতি শুনল না; এবং কসম করে বলল, প্রথমে তোমাকে হত্যা করব এরপর এই মাল জিনিসে হাত লাগাব। তখন সে আরয করল, ‘‘ভাই আমাকে যখন মেরেই ফেলবে, তখন আমাকে শেষ বারের মত মাত্র দুই রাকাআ’ত নামায পড়তে দাও’’ সে এতে রাজী হল। এরপর কুলি নামায আরম্ভ করল বটে কিন্তু সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর তার অন্য কোন সুরা বা আয়াত স্মরণ হচ্ছিল না। কিছু বিলম্ব হতে দেখে পাষন্ড লোকটি তার সামনে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি নামায শেষ করার জন্য তাগীদ দিচ্ছিল।

এহেন চরম সংকটময় মুহূর্তে তার মুখ হতে এই আয়াত উচ্চারিত হলঃ امن يجيب المضطر اذا دعاه و يكشف السوء ‘‘কে সেই সত্তা? নিরুপায় বিপন্ন ব্যক্তি যখন তাঁর নিকট কাতরকণ্ঠে ফরিয়াদ করে, তখন তার ফরিয়াদ শ্রবণ করে এবং বিপদ দূর করে দেয়’’। বিপদগ্রস্ত কুলি যখন আবেগের সাথে ক্রন্দন করতে করতে আয়াতটি পাঠ করছিল, তখন সেখানে হঠাৎ একজন লৌহ শিরস্ত্রাণধারী আরোহী হাজির হল এবং তৎক্ষণাৎ একটি বল্লম দ্বারা পাষন্ড লোকটিকে মেরে ফেলল। এই নিহত পাষন্ড লোকটির লাশ যে স্থানে লুটিয়ে পড়ল, সে স্থান হতে আগুনের লেলিহান শিখা বের হতে লাগল। এ আশ্চর্য ব্যাপার দেখে নামাযরত কুলি সিজদায় পড়ে পরম করুণাময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। অতঃপর নামায শেষ করে সেই নবাগত আরোহীর নিকট দৌঁড়ে গেল এবং তাঁর পরিচয় জানতে চাইল, ভাই আপনি কে? নবাগত আরোহী উত্তর দিল, ‘‘আমি امن يجيب المضطر.... আয়াতের গোলাম’’।

এখন তুমি বিপদমুক্ত। যেখানে ইচ্ছা তুমি যেতে পার। এই বলে সে চলে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।