আজ আমার জন্মদিন, জন্মদিন সাধারণত শুভই হয়ে থাকে, কিন্তু আমার জন্মদিন তা নয়; অশুভ না হলেও অন্তঃত শুভ নয় কারন আজ আমাদের ভীতিজাগানিয়া বোর্ড ভাইভা। আমার রোল নম্বর একেবারে শেষের দিকে, এজন্য আমার ডাক পড়ে শেষের দিকেই। ১ম সেমিস্টারে যখন ভাইভা বোর্ডে ঢুকলাম,তখন ঠিক ১০/১২ সেকেন্ড আগে কারেন্ট চলে গেল,পন্ডিতেরা ক্লান্ত হয়ে ছিলেন,তার উপর কারেন্টবিহীন গরম অন্ধকার ঘরে তেষ্টানো দায়, সুতরাং নিজের নাম আর জেলার নাম ছাড়া আর কিছুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলাম না। আমি তখন মহা খুশি। কিন্তু পরবর্তি ভাইভাগুলোর কোনটাতেও কারেন্ট যায় নাই সুতরাং যা ঘটেছে তা হুবহু উত্থাপন করলে অনেকেই ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টের তালিকা থেকে আমাকে বহিষ্কার করবে, সুতরাং সংক্ষেপে স্মৃতি ঝালাই করি-
৩য় সেমি-ভাইভার জন্য সু পায়ে দেয়া যে ফরজে আইন তা তখনো হৃদয়ঙ্গম হয় নাই ;চটি পায়েই গিয়েছি।
খানিক বাদে একজন স্যার এসে পা চেক করে দেখলেন আমি অনুপযুক্ত,শ্রাব্যতার পাল্লার সর্বোচ্চ মানের কাছাকাছি কম্পাংকে বললেন “এখানে কি বেড়াতে এসেছ, শ্বশুর বাড়ী? বেরো, শিগগীর বেরো,সু পায়ে দিয়ে এসো। ” আমি গুরুর আদেশ পালনে মনযোগ দিলাম,অনেকেই আমার সঙ্গী হল, সুতরাং লজ্জাটাও সবার মধ্যে ভাগ হয়ে গেল।
৪র্থ সেমিঃ ভাইভাতে ঢুকেছি ৪ জন, আমি বাদে সবাই টেবিলে ফাইল ও হাত রেখে বসে রইল(আগে একবার এই ভুল করে আমি ঝাড়ি খেয়েছিলাম)। স্যার অগ্নিমূর্তী হয়ে বললেন, “বেয়াদবেরা দাঁড়াও”, ৩ জন দাঁড়িয়ে গেল। এবার শপথবাক্য পাঠ আরম্ভ হল,বলো-“আমি বোর্ড ভাইভা দিতে আসিয়া (কোরাস ধ্বনিতে সবাই তা পাঠ করল),জিন্দেগিতে আর …(কোরাস)..টেবিলের উপর..(কোরাস)..ফাইল রাখিবনা..(কোরাস)..রাখিলে তা গুরুতর অন্যায় বলিয়া বিবেচিত হইবে..(কোরাস)…।
স্যারের সাধুভাষা আর বিচিত্র শব্দের ব্যবহারের পরেও আমি হাসি চেপে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
৫ম সেমি-দুইজন মিলে গ্রুপ,স্যার SFD-BMD আঁকতে দিলেন, দুজনেই অদ্ভুত দুইখানা চিত্র অংকন করলাম। নতুন চিত্রযূগলে স্যার বিস্ময়াবিভূত হয়ে বললেন, সাবাস! দুটাই বাঘের বাচ্চা!আমরা মাথা আর উঁচু রাখতে পারলাম না।
অন্য একজন স্যার আমার সামনে পেপারওয়েট দিয়ে বললেন, “এটার টপ ভিউ আঁক”
আমি মাথাটা উপরে স্থাপন করে যা দেখলাম তাই আঁকালাম। স্যার বললেন, এইগুলা কোত্থেকে আসে ..এই ছেলে যাও সিভিল ডিপার্টমেন্টে গিয়ে এর front view,side view আর top view আঁকো।
আমি বললাম, “স্যার top view কেমনে আঁকাবো?’ স্যার উত্তর দিলেন-সামনে একটা আমার গাছ আছে, গাছে উঠে আঁকাও। আমি গাছে উঠতে পারিনা, সুতরাং সে যাত্রায় পিছলে পার হয়েছি।
সতীর্থ একজনকে ৩০০ বার রিপিট দিয়ে স্যার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- রিপিট কেন দিলাম আমাকে তার কারণ জিজ্ঞাসা কর। এতোদিন স্যার প্রশ্ন ধরেছেন, এবার ছাত্রের সুযোগ হয়েছে। সুতরাং বিপুল উৎসাহে শিষ্য গুরুকে বলল, আমাকে রিপিট কেন দেয়া হল? স্যার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, এই তুমি কি আমাকে শোকজ করছ, নরম ভাষায় কথা বলতে পারনা ??? ছাত্রের জবান আর খুললনা।
৬ষ্ঠ সেমিঃ বরাবরের মত সবার শেষে ঢুকলাম, স্যার সিজিপিএ জিজ্ঞাসা করলেন। স্যারেরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন আমাদের সবার সিজি প্রায় সমান(২.৬), প্রথম দিকে তাঁরা ভাইভাই নিতে চাইলেন না, পরে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ধরলেন, তোমার নাম কি ? এস এস সি ও এইচ এস সি তে জিপিএ কত ? বাড়ী কোথায়, বাড়ীতে যাতায়াত কর কিভাবে, বাসে না ট্রেনে ? ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাইভা দিয়ে যখন বাহির হলাম তখন মনের ভেতর হতে শব্দ হল, হুররে সব পেরেছি, আজ সব পেরেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।