আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফতোয়াবিরোধী অপপ্রচার : ফতোয়া শব্দের অবমাননা বন্ধ করুন



ফতোয়া দ্বীন ও শরীয়তের মুখপত্র এবং ফতোয়া দ্বীনী ইলমের বিস্তার ও দ্বীনের বিধান প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই তা ছিল এবং যতদিন দ্বীন ও শরীয়ত থাকবে ততদিন ফতোয়াও থাকবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং ফতোয়ার অবমাননা দ্বীন ও শরীয়তের অবমাননা এবং ফতোয়ার বিরোধিতা দ্বীন ও শরীয়তেরই বিরোধিতা। কোনো ঈমানদারের পক্ষে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে এমন কাজে লিপ্ত হওয়া কখনো সম্ভব নয়। সম্প্রতি ফতোয়া নতুন করে আলোচনায় এসেছে একটি বিশেষ মহলের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারের শিকার হয়ে।

তাই ঈমানের হেফাযতের জন্যই এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। ফতোয়া কুরআন-সুন্নাহর শব্দ এবং দ্বীন ও শরীয়তের পরিভাষা। এর অর্থ এতই সুস্পষ্ট যে, এখানে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। আলকামূসুল মুহীত, লিসানুল আরব প্রভৃতি বিখ্যাত অভিধান-গ্রন্থে এবং আলমিসবাহুল মুনীর প্রভৃতি কিতাবে ফতোয়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-‘আলফাতওয়া মা আফতা বিহীল ফকীহ। ’ অর্থাৎ কারো প্রশ্নের জবাবে ফিকহ ও ফতোয়ায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি শরীয়তের যে বিধান বর্ণনা করেন তা-ই ফতোয়া।

সুতরাং ফতোয়া দেওয়ার অধিকার তাঁদেরই রয়েছে, যারা ফিকহ ও ফতোয়ায় বিশেষজ্ঞ। বিশেষজ্ঞতাই এখানে মানদন্ড, সরকারি নিয়োগ বা অন্য কিছু নয়। তেমনি ফতোয়া হচ্ছে বিধান বর্ণনা, বিধান প্রয়োগ নয়। সুতরাং ‘আইনী ব্যক্তির আইনী রায় দ্বারা ফতোয়াকে সংজ্ঞায়িত করা যেমন এই শব্দের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা তেমনি গ্রাম্য সালিশের রায় ও তার প্রয়োগকে ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করাও এই শব্দের চূড়ান্ত অপপ্রয়োগ। ফতোয়া যেহেতু শরীয়তের বিধান বর্ণনা তাই তা ইকামতে দ্বীন তথা দ্বীনের অনুসরণ ও জীবনের সকল অঙ্গনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়।

আর এ কারণেই তা ধর্মবিদ্বেষীদের আক্রমণ ও বিষোদগারের লক্ষ্যবস্ত্ত। ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহকে আক্রমণ করা নিরাপদ নয় বলে এরা কপটতার আশ্রয় নেয় এবং অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত করতে চায়। দ্বীন ও ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারণা নতুন কিছু নয়। তেমনি দ্বীনের প্রতিক ও পরিভাষার অবমাননাও ধর্ম-বিদ্বেষীদের পুরানো প্রবণতা। সর্বযুগের ইসলাম-বিদ্বেষী চক্র এই ‘জাতীয় পরিচয়’ বহন করে এসেছে।

মুসলিম দেশগুলির বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ ইসলামের নীতি ও ব্যবস্থা থেকে আলাদা হয়ে গেলেও ব্যক্তিগতভাবে অধিকাংশ মুসলিম ইসলামী বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করেন। ঈমান-আকীদা থেকে শুরু করে ইবাদত-বন্দেগী, বিয়েশাদি, লেনদেন ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁরা আলিমদের নিকট মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেন। ‘জাতীয়’ শিক্ষা-ব্যবস্থায় দ্বীনী ইলম সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হওয়ার পরও এই জিজ্ঞাসা ও জবাবের সূত্রে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে দ্বীনী ইলমের কিছু চর্চা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আর এ কারণেই তা ধর্মদ্রোহী চক্রের মাথাব্যাথার কারণ। তাই একদিকে তারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত অন্যদিকে ব্যাপক অপপ্রয়োগের মাধ্যমে ফতোয়াকে নারী-নির্যাতনের একটি উপায় হিসেবে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট।

এমনকি কোনো কোনো বেদ্বীন তো সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও নারী-নির্যাতনের সাথে ‘ফতোয়া’ শব্দটি উল্লেখ করে থাকে! (নাউযুবিল্লাহ) খুব ভালোভাবে শুনে নেওয়া উচিত, এটি এমন ভয়াবহ অপরাধ, যার কারণে এই ভূখন্ডে নেমে আসতে পারে মহাবিপর্যয়। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন ও হেফাযত করুন। প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব, শরীয়তের এই পরিভাষাটির মর্যাদা-রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করা এবং ব্যাপক গণসচেতনতার মাধ্যমে ধর্মবিদ্বেষী চক্রের মুখোশ উন্মোচন করা। এক্ষেত্রে সম্মানিত খতীব ছাহেবান ও বিজ্ঞ ওয়ায়েজীনে কেরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত ঈমানদার ভাইরাও তাঁদের ঈমানের দাবি পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন।

আমাদের প্রথম কর্তব্য, যুক্তির ভাষায় বিষয়টি সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরা এবং ফতোয়া বিরোধী তৎপরতা ও ফতোয়া শব্দের অপপ্রয়োগ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। আমরা যদি ইখলাস ও ইতকানের সাথে এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম হই তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নুসরত নাযিল হবে এবং আল্লাহর কালিমা বুলন্দ হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।