হাই, আমি ফাহাদ জ্যাকসন। কৌতুক সংগ্রহ করা আমার ব্যক্তিগত শখ। তবে তারচাইতেও বড় শখ সেই কৌতুককে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে ফেসবুকে প্রকাশ করা। আমার অনেক বন্ধুর মতে, আমি নাকি এই কাজটা অনেক ভালো পারি এবং তারা সেগুলো পড়ে অরিজিনাল কৌতুকের চাইতে কয়েকগুন মজা পায়! তাদের এই দাবি কতটুকু সত্যি আমি জানিনা। একবার ঠিক করলাম একটা সাধারণ কৌতুক বড় করে লিখবো।
লিখতে লিখতে যখন অনেক বড় হয়ে গেলো তখন ভাবলাম যে এই লেখাকে আরো অনেক বড় করবো। ফেসবুকে দুইটি খন্ড আকারে প্রকাশ করতে হবে। কল্পনার যত ঘোড়া ছিলো সব ছুটিয়ে দিলাম। মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখেই যাচ্ছি, লিখেই যাচ্ছি; যখন যা মাথায় আসছে সেটাই লেখার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি; শেষমেষ এতই বড় হয়ে গিয়েছিলো যে চারটি পার্টে শেষ করতে হয়েছিলো! সেই চারটি অংশ একত্র করে এবং কিছুটা সম্পাদনা করে ব্লগে প্রকাশ করলাম। পড়ার পর কেমন লাগলো সেটা কমেন্ট করে জানালে খুশি হবো।
উৎসর্গঃ সুকুমার রায়
(ঈশ্বর তাঁকে পৃথিবীতে বেশীদিন থাকার সুযোগ দেননি। এইজন্য ঈশ্বরের উপর আমার অনেক অভীমান!)
আমার বড়ভাই মামুন স্টোনকোল্ডের সাথে কামরুন নাহার স্বর্ণা নামের এক মেয়ের প্রেম ছিলো। যেই-সেই প্রেম না, একেবারে লাইলি-মজনু ফেল! তো তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে দুইজনের বাবারই নিরব মত ছিলো। বিশেষ করে মামুন ভাই ছিলো তার বাবার একমাত্র ছেলে, তাই তার বাবা ছেলের পছন্দ নিয়ে দ্বিমত করে নি। কিন্তু একবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে একটা সমস্যা বেঁধে যায়।
সমস্যাটা বাঁধিয়েছে মামুন ভাই নিজে, যদিও তার কোনো দোষ ছিলোনা। ঘটনাটা একটু সংক্ষেপে বলি। মামুন ভাইয়ের বন্ধু ছিলো নাজিম ভাই। নাজিম ভাই আবার 'ডাইস' খেলতে খুব পছন্দ করতো। এই কারণে তার নাম হয়েছিলো 'নাজিম প্লেয়িং ডাইস' (পরবর্তীতে 'নাজিম' নাম থেকে 'জিম' অংশটুকু হাওয়া হয়ে যায়।
এটার ব্যাখ্যা পরে দেবো)। নাজিম ভাই সারাদিন চিন্তা করতো যে ডাইস খেলায় কিভাবে উন্নতি করা যায়। একদিন মামুন ভাই নাজিম ভাইকে পরামর্শ দিলো, "দোস্ত, আমি এক পির রে চিনি। হ্যার নাম মদনা কানা। বেয়াফুক ট্যালেন্টেড পির।
তুই ডাইস খেলাতে উন্নতি লাভের জন্য তার কাছে পরামর্শ চাইবার পারস। " কথাটা মনে ধরলো নাজিম ভাইয়ের। একদিন সে গেলো মদনার কাছে। গিয়ে বললো, "আইচ্চা কানা বাবা, আন্নে কি কইবার পারেন ক্যামনে আঁই পাশা (ডাইস) খেলায় উন্নতি লভিতে পারি। " মদনা বললো, "হেঃ হেঃ হেঃ হেই সমাধান তোরে আমি ছাড়া আর কেউ দিবার পারবোনা।
আঁই হইলাম ঈশ্বরের খাস বান্দা। তুই কি জানস যে ঈশ্বর মহাবিশ্ব নিয়া পাশা খেলেন? একবার 'আলবার্ট আইনুদ্দীন' নামের কুন এক বেকুব কইছিলো যে ঈশ্বর নাকি মহাবিশ্ব নিয়া পাশা খেলেন না! হেই বেকুব তো আর জানতোনা যে ঈশ্বর যহন পাশা খেলেন তহন খেলার ফলাফল কী হইবো হেইডা নিয়া তার কোনো অনিশ্চয়তা থাহেনা। তিনি যেই ফলাফল চান সেডাই হয়!" মদনার কথা শুনে নাজিম ভাইয়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তিনি উৎসাহিত কণ্ঠে জানতে চাইলেন, "কানা বাবা, আঁই কি ঈশ্বরের ক্ষমতা লাভ করতে পারুম না?" মদনা কইলো, "অবশ্যই পারবি। সেজন্য তোরে কিছু কাজ করতে হইবো।
পত্থম কাজ হইলো কনডমের ভিতরে যে তেলতেলে তরল জাতীয় পদার্থ থাকে সেইডা কুনো এক ঘোর অমাবশ্যার রাতে মুখে মাখাইবি। মাখানোর পর দিঘিতে ডুব দিয়া স্নান করবি। স্নান কইরা কাপড় না পইরা দিঘি থিকা উইঠা আইবি এবং ল্যাংটা হইয়া ৭০ কদম হাঁটবি। তারপর পশ্চিম দিকে ঘুইরা বাম হাতে শিশ্ন ধইরা তিনবার উচ্চস্বরে "নারায়ে তাকবির" বইলা তাকবির দিবি। মাশাল্লাহ, যদি প্রত্যেকটা স্টেপ ঠিকমতো সমাধা করতে পারস তাহলেই কাজ হইবো।
তারপর থিকা পাশা খেলনের সময় তুই যেই ফলাফল চাইবি হেই ফলাফলই পাইবি। "
**************************************************
ডাইস খেলায় উন্নতি লাভের এরকম ফিরিস্তি শুনে নাজিম ভাইয়ের কপালে কিছুটা ভাঁজ পড়লো। সেটা অবশ্য ফ্যাক্টর না। ডাইস খেলায় ইচ্ছামতো ফলাফল পাওয়ার জন্য নাজিম ভাই ক্যান ডু এনিথিং! পঞ্জিকা খুলে নাজিম ভাই দেখলো যে চলতি মাসের ৩২ তারিখে অমাবশ্যা। অমাবশ্যার রাতের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নাজিম ভাই সেদিন থেকেই প্রস্তুতি নেবে বলে মনস্থির করলো।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো কনডম কিনতে গিয়ে। একেতে নাজিম ভাই অবিবাহিত তার উপর তাকে আশপাশের প্রায় সব দোকানদারই চেনে। এখন সে গিয়ে কিভাবে বেলুন চাবে, মানসম্মানের ব্যপার। ছোটোবেলা থেকেই নাজিম ভাইয়ের লজ্জা-শরম অন্যান্যদের চাইতে বেশী। শুধুমাত্র এই কারণেই তার সারকামসিজন (খাতনা) করতে গিয়ে তার বাবা-মাকে ব্যপক ধকল পোহাতে হয়েছিলো।
কারণ সারকামসিজন অনুষ্ঠানে অনেক আমন্ত্রিত অতিথি এসেছিলো। তাদের মধ্যে নাজিম ভাইয়ের আংকেলের ৬ বছর বয়সী কন্যা 'পালকি'ও ছিলো। হাজাম যখন বললো, "দেখিতো বাবা, বের করোতো তোমার নুনুটা..." তখন নাজিম ভাই চরমভাবে বেঁকে বসলো। পালকির সামনে সে কিছুতেই তার নুনু বের করবেনা! নাজিম ভাইয়ের মা তাকে অনেক বুঝ দিতে শুরু করলেন, "আহ হা! পালকি তো ছোট মেয়ে, সোনা। ও কিচ্ছু বুঝবেনা।
এখন লক্ষ্মী সোনার মতো তোমার লুঙ্গিটা খোলো দেখি আব্বু..." নাজিম ভাই বলে, "না মামণি। পালকি সব বোঝে। ঐ দেখো কেমন মুচকি মুচকি হাসতেছে!" অবস্থা বেগতিক দেখে পালকির আব্বু তাকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরে আসতে চাইলেন, কিন্তু পালকিও মহা নাছোড়বান্দা। নাজিম ভাইয়ের খাতনা দেয়া না দেখে সে যাবেনা! তারপর কিভাবে ঘটনার সুরাহা হয়েছিলো সেটা আমি বলবোনা। কারণ আমার জোক্সের প্রসঙ্গ অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে!
যাইহোক, নাজিম ভাইয়ের অতিরিক্ত লজ্জা শরমের কারণে সে ভেবে কুল পাচ্ছিলোনা যে কিভাবে কনডম কিনবে।
মনে মনে ভাবলো, "আহহারে, ছুডোবেলায় যহন বুঝতাম না তহন এই কনডম কিন্ন্যাই কত্ত ফুলাইয়া বেড়াইছি! তখন ইট্টুও শরম লাগেনাই... ফুউউউউউসসসসসসসস!" (পাঠক ভাইয়েরা টাসকি খাইয়েন না। এইটা পাদের শব্দ না, নাজিম ভাইয়ের দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ! ) তখন হঠাৎ করেই নাজিম ভাইয়ের মনে হলো, "আরে! কনডম যে আমারেই কিনন লাগবো এমুন তো কুনো কতা নাই। আমার দোস্ত মামুনরে দিয়া কিনাইতে পারি। " যেই ভাবা সেই কাজ। নাজিম ভাই মামুন ভাইয়ের নিকট সব কথা খুলে বললো।
মামুন ভাই বললো, "আরবে দোস্ত ইডা তো কুনো বিষয়ই না। তুই খাড়া, তোরে অহনই এক প্যাকেট কনডম আইনা দিতাছি। " এই বলে মামুন ভাই কাছের এক দোকানে গেলো। ঐ দোকানে তখন আরো কয়েকজন ক্রেতা ছিলো। কিন্তু মামুন ভাই এক্সট্রা ভাব মারতে গিয়ে ঐসব আমলেই নিলোনা।
ডাইরেক্ট দোকানদারকে বললো, "আমারে এক ডজন প্যান্থার ডটেড দেন দেহি। " তখন মামুন ভাইয়ের পাশ থেকে একজন বয়স্কমতন লোক বললো, "এত্ত কনডম নিয়া তুমি কী করবা?" মামুন ভাই এই প্রশ্ন শুনে একটু বিরক্ত হলো। লোকটির দিকে না তাকিয়েই বললো, "এইডা কী ধরণের প্রশ্ন চাচা মিঞা? আন্নে কি জানেন না এই কনডম কী করতে অয়? এখুন কুনো মাইয়া এই দুকানে আইসা যদি 'প্যাড' কিনবার চায় তাইলে কি আন্নে তারে জিগাইতেন যে ঐ প্যাড দিয়া হ্যায় কী করবো?!" এই বলে মামুন ভাই লোকটার দিকে চাইলো। আর যেই না খালি তার দিকে তাকিয়েছে সাথে সাথে মামুন ভাইয়ের মুখ সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো! কারণ ঐ বয়স্ক লোকটা ছিলেন মামুন ভাইয়ের প্রেমিকা স্বর্ণা আপুর আব্বা! আই মিন মামুন ভাইয়ের হবু শ্বশুর!! প্রথম ২০ সেকেন্ড কেউই কোনো কথা বললোনা। আস্তে আস্তে মামুন ভাই মুখ খুললো, "আররররররেএএএএএএ আব্বাজাআন যেএএ! কিরাম আছেন আব্বাআআ? আসসালাআআআমু আআআলাইকুউউউমম!" স্বর্ণা আপুর আব্বা বললেন, "শাআআআলাআআর ব্যাঅ্যাটাআ শাআআলাআআ!! আমি কি এর লাইগা তোর লিগা আঁর মাইয়ার বিয়া দিতে চাইছিলাম?! শাআলার ব্যাটা! এই ছিলো তোর মনে?! আমার মাইয়ারে বিয়ার আগেই 'কাম ফাইনাল' করবি? তারপর কাম ফাইনাল কইরা তোর সিম্ফুনি মুবাইলে ধারণ করা থিরিজিপি ভিডিও নেটে ছাড়বি??! খাড়া, আইজ খাইছি তোরে!!" এই বলে চাচা মিঞা ডাইনে-বাঁয়ে তাকাইতে লাগলেন।
কাছেই একজনের হাতে পুরাতন আমলের একটা লম্বা ডাঁটওয়ালা ছাতা ছিলো। চাচা মিঞা ছোঁ মেরে ঐ লোকটার হাত থেকে ছাতাটা কেড়ে নিলেন। তারপর বলা নাই কওয়া নাই মামুন ভাইয়ের পিঠের উপর ধপাধপ ছাতাবৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো!
**************************************************
হবু শ্বসুরের হাতে তুলোধুনো হওয়ার প্রথম ৫ সেকেন্ড মামুন ভাই তার চারপাশে ধুপ-ধাপ ঢাস-ঢুস শব্দ হওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝতে পারলোনা। যখন বুঝতে পারলো যে আশেপাশে উপস্থিত লোকের মাঝে তার মানসম্মানের বারোটা বেজে যাচ্ছে তখন আচমকা একটা টান দিয়ে হবু শ্বসুরের হাত থেকে ছাতাটা কেড়ে নিয়ে দিলো ঝেড়ে একখান দৌড়। এমনই সেই দৌড় যে স্বয়ং উসাইন বোল্টও সেই দৌড় দিয়েছে কিনা সন্দেহ! রাস্তার লোকেরা সব অবাক হয়ে দেখলো যে একজন লোক ছাতা হাতে নিয়ে ঊর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে, কিন্তু তাকে কেউ তাড়া করছেনা! তারা এর মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলোনা।
শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারলো সেই ব্যক্তি যার হাত থেকে ছাতা কেড়ে নিয়ে হবু শ্বসুর মশাই মামুন ভাইয়ের ইজ্জ্বতের বারোটা বাজিয়েছেন। তখন সেই ব্যক্তি "হায় হায়! হ্যা তো আঁর ছাতা লই ভাইগা গেলোগা!" বলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
মামুন ভাই সেইযে দৌড় লাগিয়েছে, হলের গেটের সামনে এসে তবে থামলো। কাজের বুয়া তাকে দেখে বললো, "কী ব্যপার বাইজান, কই গেছিলেন?" মামুন ভাই বললো, "কনডম, থুক্কু! তোর লিগা ছাতা কিনবার গিছিলাম। নে ধর।
অহন থিক্কা ছাতা মাথায় দিয়া হলে আইবি, যাতে কেউ তোর মুখ দেখবার না হারে। ইসলামে পরপুরুষের সামনে মুখ ঢাহা ফরয!" কাজের বুয়া ছাতাটা হাতে নিয়ে একবার জিজ্ঞেস করতে চাইলো যে এইরকম পুরাতন ভাঙা ঢ্যান্ডারাম ছাতা কোন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই প্রশ্ন না করে বললো, "আঁই তো দেখলাম যে আন্নে এই ভরদুপুরে উত্তর দিক থিকা দৌড়াইয়া আইতেছেন। কুত্তায় তাড়া দিছিলো নি?" মামুন ভাই বললো, "আরে নাহ! আঁই তো বেয়াম করতেছিলাম। দৌড়ান দেয়া হইলো একডা উৎকৃষ্ট বেয়াম।
অহন থিক্কা তুইও দিনে দুইবার আমার মতন দৌড়ান দিবি। তাইলে দিনকে দিন তোর বডি হইবো আরো স্লিম এবং সেক্সি!" এই বলে কাজের বুয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মামুন ভাই তার রুমে ঢুকে গেলো। সেখানে আগে থেকেই নাজিম ভাই বসে আছে কনডমের জন্য। মামুন ভাই যখন সব ঘটনা খুলে বললো তখন নাজিম ভাইয়েরও মাথায় হাত। কনডম না পাওয়ার জন্য বেচারা যতটা না দুঃখ পেয়েছে তার চাইতেও বেশী দুঃখ পেয়েছে নিজের জন্য প্রিয় বন্ধুকে এরকম হেনস্তা হতে দেখে।
তখনই সে প্রতিজ্ঞা করলো যে, "ধুর বাল! জীবনে আর কুনোদিন এই বালের ডাইস খেলুম না!" তারপর থেকে 'নাজিম প্লেইং ডাইস' হয়ে গেলো 'না প্লেয়িং ডাইস'!
মামুন ভাই কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, "আঁই অহন কী করি ক তো দোস্ত। আইজ শ্বসুর মশাই যেমনে অতগুলান মাইনষের সামনে আমার লুঙ্গি খুইলা নিছে আর থ্রেট দিছে, অহন আমি কেমনে স্বর্ণারে বিয়া করার কথা কই? স্বর্ণারে ছাড়া তো আঁই বাচুম না। আর অহন শ্বসুর মশাই জীবনে স্বর্ণার লগে আমার বিয়া দিবো বইলা মনে হয়না, বরং আমি স্বর্ণার ক্ষতি করতে পারি এই ভয়ে স্বর্ণারে অন্য কারও লগে বিয়া দিয়া দিলেই হইছে!" নাজিম ভাই বললো, "চিন্তা করিস না দোস্ত। আমি ব্যবস্থা করছি। স্বর্ণা তো তোর লাইগা সবকিছু করতে রাজি।
তুই এক কাজ কর; স্বর্ণারে মুবাইলে তোর সব সমস্যা খুইলা ক। তারপর স্বর্ণারে আইজকাইলের মধ্যেই গোপনে বিয়া কইরা ফ্যাল আর তারে তোর বাড়ীত লইয়া যা। তোর বাপেরে ম্যানেজ করানোর বুদ্ধি আমি শিখাইয়া দিতাছি কুনো অসুবিধা নাই। তোর শ্বসুর যহন দেখবো যে স্বর্ণাও তোর লগে সুখে আছে তহন আর মাইনা না নিয়া যাইবো কই?" এই বলে নাজিম ভাই মামুন ভাইয়ের কানে কানে সব বুদ্ধি শিখিয়ে দিলো। সব শুনে মামুন ভাই তো খুশিতে বাকবাক।
বললো, "দোস্ত। তো মাথায় এতো বুদ্ধি কোত্থাইকা আসে ক দেহি?! খুশিতে তো আমার নাচতে ইচ্ছা করছে! আয়, আমার বুকে আয়..." তখন মামুন ভাই আর নাজিম ভাই দুইজন দুইজনেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর মামুন ভাই বললো, "দোস্ত, এইভাবে থাকা মনে হয় ঠিক হবেনা। কেউ এভাবে দেখে ফেললে আমগোরে গে (gay) মনে করতে পারে!" নাজিম ভাই বললো, "হ, ঠিক কইছস। অসুবিধা নাই, বাসর রাইতে স্বর্ণার লগে কেমনে শুইয়া থাকবি তার একটা রিহার্সেল হইয়া গেলো! আচ্ছা দোস্ত, আমি অহন আসি, হ্যাঁ?" মামুন ভাই বললো, "ঠিক আছে দোস্ত, কাইল দেখা হইবো।
রাইতে মিসকল দিস। " "আচ্ছা দোস্ত, স্লামালিকুম। " "ওয়াআলাইকুম সালাম। "
**************************************************
গ্রামের রাস্তা দিয়ে একদল মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। মাঝখানে একজন লোক শেরওয়ানি আর মাথায় পাগড়ি পরে আছে, ঐটা হলো মামুন ভাই।
তার পাশে লাল শাড়ী পরা আর মাথায় ঘোমটা দেয়া একজন মেয়ে, ঐটা হলো স্বর্ণা আপু। আর চারপাশে বেশ কিছু মানুষ ফরম্যাল ড্রেস পরে আছে, তাদের হাতে বিভিন্ন ধরণের মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট শোভা পাচ্ছে; কারও হাতে ড্রাম, কারও হাতে বিউগল ইত্যাদি। তারা হলো ব্যান্ড পার্টি। আর দুইজন আছেন বিয়ের সাক্ষী, আশা করি বুঝতে পেরেছেন; না প্লেয়িং ডাইস ও মদনা কানা। ঘন্টা দুইয়েক আগে নাজিম ভাই কোর্টে তাদের বিয়ে দিয়েছে।
তারপর ছোটখাটো একটা ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে মামুন ভাইয়ের গ্রামের বাড়ীতে যাচ্ছে। সাধারণত ব্যান্ডপার্টিদের কিছু নির্দিষ্ট ধরাবাঁধা গান থাকে, সেগুলোই তারা বিয়েতে বাজায়। কিন্তু এবার ব্যান্ড পার্টি সম্পূর্ণ নতুন একটা গান বাজাচ্ছে যে গানের মাথা-মুন্ডু কোনো অর্থ হয়না। অবশ্য ব্যান্ড পার্টিকেও কোনো দোষ দেয়া যায়না; কারণ তারা যে গানটা বাজাচ্ছে সেইটা হলো বছর তিনেক আগে লেখা মামুন ভাইয়ের একটা কবিতা। এই কবিতা পড়েই স্বর্ণা আপু মামুন ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো।
তাই আজ মামুন ভাইয়ের ইচ্ছা বিয়েতে এটাই বাজানো হোক। নাজিম ভাই দক্ষ সুরকার, মামুন ভাইয়ের কবিতার একটা ভালো সুর করে ব্যান্ড পার্টিকে শিখিয়ে দিয়েছেন। কবিতাটা হলো,
"মিশিমাখা শিশিপাখা আকাশের কানে কানে
শিশিবোতল ছিপিঢাকা সরু সরু গানে গানে
আলাভোলা বাঁকা আলো আধো আলো কতদূরে
সরু মোটা সাদা কালো ছল ছল ছায়াসুরে"
স্বর্ণা আপুর ভাষ্যমতে এই কবিতাটার নাকি খুব গুঢ় একটা তাৎপর্য আছে। তবে সেই তাৎপর্যটা স্বয়ং মামুন ভাইও বোঝে কিনা সন্দেহ। যাইহোক, তারা একসময় মামুন ভাইয়ের বাড়ীতে পৌঁছে গেলো।
মামুন ভাইয়ের আব্বা বাড়ীতে ছিলেন না। স্থানীয় একজন জানালো যে উনি কিছুক্ষণের মাঝেই ফিরে আসবেন। কী আর করা? মামুন ভাই আর তার 'সাঙ্গপাঙ্গরা' ভাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আব্বার আগমনের অপেক্ষা করতে লাগলেন। এদিকে মামুন ভাই মনে মনে ভাবছেন, "আহ! আজ রাতে কী মজাই না হবে! কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আজকে কনডম আনতে খেয়াল ছিলোনা! অথচ আজকেই কনডমের আসল কাজ! ধ্যাৎ!" কথাটা মামুন ভাই স্বর্ণা আপুকে জানালো। স্বর্ণা আপু বললো, "এতে টেনশনের কী আছে? তোমার আব্বার কাছে থাকলে উনার কাছ থেকে নিও।
তাছাড়া আজকেই যে তোমাকে 'কাম ফাইনাল' করতে হবে কে বলেছে? আজকে আমরা সারারাত শুধু গল্প করবো। তবে তোমাকে এখন বেশী কথা বলা যাবেনা। ফাহাদ জ্যাকসন নামের এক টাউট পোলা আমাদের এই কাহিনী নিয়া জোক্স লিখতাছে। বেফাঁস কিছু বইলা ফালাইলে হ্যায় তিলকে তাল কইরা দিবো!" মামুন ভাই স্বর্ণা আপুর উপস্থিত বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। ফিসফিস করে বললো, "আই লাভ ইউ।
" স্বর্ণা আপু লাজুক স্বরে বললো, "আই লাভ ইউ টু। " মামুন ভাই এবার জোর দিয়ে বললো, "আই লাভ ইউ থ্রি!" বন্যা আপু আরও জোরে বললো, "আই লাভ ইউ ফোর!" এভাবে কতক্ষণ চলতো জানিনা, তবে ততক্ষণে মামুন ভাইয়ের আব্বা এসে হাজির। তিনি একসঙ্গে এতগুলো লোক দেখে ভড়কে গেলেন। কী বলবেন কিছু বুঝতে পারলেন না। মামুন ভাইয়েরাও কী বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা।
প্রায় দুই মিনিট দুই পক্ষই নিরব হয়ে রইলো। কিন্তু এই নিরবতা আর সহ্য হলোনা মদনার। সে চিৎকার দিয়ে বললো, "হক মাওলা!" তার চিৎকার শুনে সবাই সম্বিত ফিরে পেলো। মামুন ভাই স্বর্ণা আপুকে বললেন, "এইটা আমার আব্বা। সালাম করো।
" মামুন ভাইয়ের আব্বা বললেন, "আরে আরে! এসব কী হচ্ছে? তুমি কে?" স্বর্ণা আপু বললো, "আব্বা, আমি আপনার ছেলের নাচের শিক্ষিকা। ওকে নাচ শেখাই। " মামুন ভাই বললেন, "হ্যাঁ আব্বা। ও আমাকে এমন এমন সব নাচ শেখায় না, যার কোনো তুলনা হয়না। " নাজিম ভাই বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ! এই মামুন, স্বর্ণা তোরে গতকাল যে নাচটা শিখাইছিলো ঐডা তোর আব্বারে একটু দেহাইয়া দেতো।
নে, শুরু কর। ব্রেক ড্যান্স দিবি। ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান... লে পাগলু ডান্স ডান্স!" মামুন ভাই তখন ব্রেক ডান্স শুরু করলো। তার নাচ দেখে মামুন ভাইয়ের আব্বা ছাড়া বাঁকি সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলো। নাচ শেষ করার পর মামুন ভাইয়ের আব্বা বললেন, "ধুস! এটা কোনো ডান্স হলো? আমি যে ডান্স দিতে জানি সেটা দেখলে তো তোরা পাগল হয়ে যাবি।
এই ডান্স দিয়েই আমি তিরিশ বছর আগে তোর মাকে পাগল করেছিলাম। দাঁড়া, তোদের দেখাচ্ছি। " এই বলে তিনি লুঙ্গি ধড়ি মেরে নিলেন। তারপর "কোপা সামসু..." বলে এমন ডান্স শুরু করলেন যার কোনো তুলনা হয়না! ব্যান্ড পার্টির লোকজনও মামুন ভাইয়ের আব্বার সাথে ডান্স দিতে শুরু করলো। প্রায় দশ মিনিট ধরে চললো সেই ডান্স।
একসময় মামুন ভাইয়ের আব্বা থেমে গিয়ে বললেন। "দেখলি ডান্স কাকে বলে? তোর শিক্ষিকা এমন ডান্স শেখাতে পারবে?" স্বর্ণা আপু বললো, "অবশ্যই পারবো আব্বা। আমি তো জাস্ট ওকে ডান্স শেখানো শুরু করেছি। এখন থেকে আমি ওর সাথেই থাকবো। আজকে বা কালকে রাতে আমি ওকে শেখাবো পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত এবং পরিচিত ডান্স 'সেক্স ডান্স'! এই ডান্সের কেবলমাত্র একটি মুভমেন্ট আছে।
সেটা হলো সামনে পিছনে কোমর দোলানো! একটা 'সাপোর্ট' কে ধরে রেখে সামনে পিছনে একটানা কোমর দুলিয়েই যেতে হয়..." মামুন ভাইয়ের আব্বা এতক্ষণে বুঝতে পারলেন যে 'ডাল মে কুছ কালা হ্যায়'! তিনি মেঘগর্জন স্বরে বললেন, "মামুউউউউন!" মামুন ভাই বললো, "জি আব্বা..." মামুন ভাইয়ের আব্বা বললেন, "ঘটনা খুইলা ক। বাপের কাছে কিছু লুকাবিনা। এই মাইয়ারে আমার চেনা চেনা লাগছে। সম্ভবত তুই একদিন আমারে এর ছবি দেখাইছিলি। " মামুন ভাই দেখলো যে কথা আর লুকিয়ে লাভ নেই।
তাই সে এবার স্ট্রেইট বলে দিলো, "আব্বা, হ্যায় আছিলো মোর প্রিয়া। আইজ সকালে কইরা ফালাইছি বিয়া!" ঘটনার আকস্মিকতায় মামুন ভাইয়ের আব্বা আবার হতবাক হয়ে গেলেন। একবার শুধু বলতে পারলেন, "কী?! বিয়া কইরা ফালাইছোস?!" তারপর আবার দীর্ঘ নিরবতা। কেউই কোনো কথা বলতে পারছেনা। এই নিরবতা আবারও সহ্য করতে পারলোনা মদনা।
সে এবার "হক মাওলা" বলে এমন জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো যে আরেকটু হলে মামুন ভাইয়ের আব্বা উলটে পড়ে যাচ্ছিলেন আরকি! এইবার তিনি মুখ খুললেন, "এইডা তুই একটা কাম করলি বাবা? তুই বিয়া করবি ঠিক আছে, তয় বিয়া করার আগে একবার আমার অনুমতি লইবিনা? আমার কতো শখ ছিলো বিরাট ধুমধাম কইরা তোর বিয়া দিমু, গ্রামশুদ্ধ মানুষরে খাওয়ামু। অথচ তুই আমারে না জানাইয়াই বিয়া করলি। ছেলে হিসেবে একবার বাপরে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলিনা?" মামুন ভাই বললেন, "আসলে আব্বা আমি আপনারে জিগাইতাম। তয় আমার বয়স যখন দশ বছর তখন থাইকাই ঠিক করছিলাম যে আপনের উপর একটা প্রতিশোধ লমু। প্রতিশোধ নেওনের লাইগাই আমি আপনেরে জিগাইনাই!" ছেলের কথা শুনে তো মামুন ভাইয়ের আব্বার আক্কেলগুড়ুম! বলে কী ছেলে?! তিনি গর্জে উঠলেন, "এইসব কী কইতাছোস তুই?! প্রতিশোধ নিছোস মানে?! কিসের প্রতিশোধ নিছোস??!!" মামুন ভাই বললো, "ক্যান? আপনে যখন আমার আম্মাজানরে বিয়া করছিলেন তখন কি আমারে জিজ্ঞেস কইরা করছিলেন??!!!"
**************************************************
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।