আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপেলের গল্প

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
এক বনে ছিল একটা বুনো আপেল গাছ। দেখতে দেখতে সবুজ আপেলগুলো বড় হতে থাকল আর তাদের গালে টুক টুকে লাল রং ধরল। বনে এত সুন্দর ফল আর হয় না। আপেলদেরও গর্ব আর ধরে না। ওরা কুল,করমচা, বাতাবী লেবুর চেয়ে রূপবতী আর মনটাও রসটইটুম্বুর।

আপেলের মৌ মৌ গন্ধে পিপড়েরা ছুটে আসল। গাছের তলায় এবড়ো থেবড়ো একটা পাথরের টুকরোতে দাঁড়িয়ে একটা খরগোস জীভ চাটলো। আপেলরা জানতো তাদের রূপে সবাই মাতাল হবে। চামচিকা ঝুলছে ডালে, ছুটে এসেছে শুয়ো পোকা আর নানান জাতের পাখি। গাছ তলায় আধমরা পাথরটার দিকে চাইতেই আপেলের মায়া হয়, আহহারে, এই পৃথিবীতে এরা না পেল আপেলের মতো অপূর্ব রূপ, না পেল লক্ষীপেঁচার মতো কিছু বুদ্ধি।

জিহ্বা থাকলে পিপড়ের মতো রস আস্বাদন করত, বাদুড় থাকলে উড়ে যেত গাছে গাছে। রাঙা আপেল এ কথাটা ছোট বোনদের বলল। মা গাছটা কথোপকথন শুনে ফেলল। বলল, শোন, গর্ব করিস না। মনে রাখিস পৃথিবীতে সবাই এসেছে যার যার কাজে।

রূপটা সব না, সারাক্ষণ থাকবেও না। বরং আজকের সুখটুকু কে উপভোগ করে কালকের জন্য প্রস্তুত হ। আপেলগুলো ঠিক বুঝতে পারে নি। বলল, আমাদের ভয় দেখাচ্ছ মা? কীসের ভয়? গাছটা ওদের মন খারাপ হয়ে যাবে এজন্য কিছু বলল না। ঘটনা ঘটল এক কমলা রঙের বিকেলে।

লাল ঝুটি মোরগটা পথ ভুলে হন্ত দন্ত হয়ে বনে ঢুকে পড়েছে। আপেলগুলো জিজ্ঞেস করল কাকে খুঁজছে সে। মোরগ বলল গতকাল থেকে তার পরিবার মানে মুরগী আর মুরগীর বাচ্চাকে পাওয়া যাচ্ছে না। নবান্নের মাসে বিয়ের ধূম পড়ে। পালকিতে বউ এসেছে ওই পাড়ায় ।

গন্যমান্য অতিথি এসেছে ভীন গ্রাম থেকে। হয়তো মুরগীকে খেয়ে ফেলেছে তারা। মোরগ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, লোকালয়ে মানুষ বাড়ছে। আমারও বেশি দিন বাকি নেই। সবচেয়ে ছোট আপেলটা মোরগকে প্রশ্ন করল, মানুষ এমনি এমনি খাবে তোমাদের? হ্যা।

এমনি, ঝুটি নাড়িয়ে মোরগ সায় দিল। ঠিক এমনি না। মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে, বিশ্বের অনেক উপকার করে তাদের বুদ্ধি দিয়ে। আমরা আমাদের জীবন ত্যাগ করে মানুষদের শক্তি দেই। যদিও আমাদেরকে তারা ভুলেই যায়।

মোরগ চলে গেল। ছোট আপেলেরা মোরগের কথায় ভয় পেয়ে যায়। সে গাছটাকে সে বলল, মা, মানুষ কি আপেল খায়? গাছটা এই বয়সে সত্যটা বলতে চায় নি। সে বুঝে গেল লুকিয়ে লাভ নেই। তাই শাখা নাড়ল, হ্যা।

****** এক সপ্তা পরের ঘটনা। এক বুড়ো ব্যবসায়ী ঘোড়ায় চড়ে অন্যগ্রামে যাচ্ছিল। সে গ্রামে গ্রামে কাগজ বিক্রি করে। বনের পাশ দিয়ে যাবার সময় ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামল দেখে সে ঘোড়াটাকে দাড় করিয়ে আপেল গাছের নিচে নেমে দাঁড়াল। বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে, থামার নাম নেই।

পাকা আপেলের গন্ধ বুড়োটার নাকে এল। খিদে পেল তার। সে হাত বাড়াতেই আপেল ঠেকল । রাঙা আপেলটা কিছু বোঝার আগেই দেখতে পেল পাঁচটি খসখসে আঙুল তাকে ধরে আছে। কিন্তু লোকটা তাকে খাবে কি করে? তার তো গাল চিমসানো, ফোকলা দাঁতে জোর নেই।

আপেলের ভাবতে ভাবতে দেখল বুড়োটা কাগজের থলে থেকে কিছু একটা বের করে আনছে। একটা আনকোরা ইস্পাতের ছুরি, গলার কাছে দাঁতালো ঘাট । আলোর ঝলসানিতে আপেলটার চোখ ঝলসে গেল। ছুরি দাঁত কেলিয়ে বলল, শোনো, আমি আজ তোমাদের কাটবো। কাগজ কেটে কেটে ক্লান্ত ছিলাম তো, সুন্দর আপেল কাটবো জেনে খুব খুশি লাগছে।

ভয়ে দমবন্ধ হল রাঙা আপেলের। আধবোঁজা চোখে সে দেখল ছুরিটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে। এসব নিয়ে মন ভার করার কিছু নেই - সে মনে মনে বলল। তার মা আগেই এসব বলেছিল সবাইকে আত্মত্যাগ করতে হয়। বুড়োটা তখন ছুরিটা নামিয়ে গাছ থেকে আরেকটা আপেলটা তুলে আনল।

সেটা তার মেজো বোন। মেজ আপেল, রাঙাকে বিষন্ন গলায় বলল, আপু, আমরা কখনোই ভাবিনি কেউ আমাদের কেটে টুকরো করে খেয়ে ফেলবে। ফলের জীবন এত অল্পদিনের! আর দেখ ছুরিটার কত মজা। সহজে পঁচে যাবে না, কখনোই তাদের কেউ খাবে না। তারা শুধু চকচকে রূপালি ঝিলিক দিয়ে ফুর্তি করে বেড়াবে, ইচ্ছেমত ফল কাটবে, কাগজ কাটবে।

কিছু ক্ষণ আগের গর্বগুলো তুচ্ছ মনে হতে লাগল তাদের। বৃষ্টি থেমে গেছে। বুড়োটা অনেক ঘষেও কাগজের ছুরিতে আপেল কাটতে পারল না। ছুরিটা এতই ভোঁতা যে আপেলের পুরু চামড়ায় আটকে গেল। বুড়োর চোখে পড়ল নিচে একটা শক্ত ঝামা পাথর।

সে ঝট করে নুয়ে সেই পাথরে ছুরিটাকে শান দেয়া শুরু করল। উপরে ঝুলন্ত আপেল গুলে দেখল বহুদিন ধরে পড়ে থাকা মরা পাথর, সে জেগে উঠেছে। আছড়ে পড়ছে ছুরির গলায়। পাথরের বিছানায় পড়ে বালু মাখা ছুরিটা চিৎকার করছে। আগুনের ফুলকি বের হয়ে আসছে।

পাথরটাও যেন বহুদিনে খিদে মেটাতে ছুরির ইস্পাত খেয়ে তাকে ধারালো করছে। হয়তো প্রতিহিংসাতেই আপেলগুলো খুব খুশি হল। জোড়া পাতায় হাত তালি দিল। আর আপেল গাছটা ফের বলল, প্রত্যেকেই যারা যার কাজের জন্য এসেছে । গর্বিত বা হীনমন্য হওয়ার কিছু নেই।

-- ড্রাফট ১.০ / অনুবাদ নয়, উপকথা নয়। সরল গল্প
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।