ব্লগে আসার বা থাকার কোন কারন খুজে পাই না,তবু পুরনো টানে বার বার আসি সামুতে
আমার মনে হয় না সাতাশি লক্ষ টাকার জন্য কেউ দশ বছর জেলে থাকতে চাইবে,ধীরে ধীরে বললেন তারেক আজিজ।
-মনে তো আমারও হয় না,কিন্তু এই লোক বলতে চায়,সে তা পারবে। লোকটির দিকে তাকাল নাজমুল,সে আমার সাথে বাজি ধরবে।
-কেন?
-কারন,সাতাশি লক্ষ টাকা,প্রথম মুখ খুলল লোকটি।
-আপনি বাজির শর্ত জানেন?জানেন কি করতে হবে?
-যে কোন শর্তে রাজি।
লোকটি জবাব দিলো।
-তবে,শুনুন। আপনাকে একটানা কোন জেলে নয়,আমার কোন একটি বাড়ির নিচতলায় একটা বদ্ধ ঘরে থাকতে হবে। সূর্যের আলো দেখতে পাবেন না। খাবার,বইপত্র,গান বাজনার ব্যবস্থা করা হবে।
-পারব,লোকটি বলল।
পরদিন উকিলের উপস্থিতিতে সবকিছু ঠিক হল। লোকটি নাজমুলের ঘরের নিচ তালাতে বন্দি থাকবেন। আজ দিশ তারিখ। আজ থেকে দিন গোনা শুরু হল।
নাজমুল চল্লিশে পা দিয়েছেন বার বছর আগে। বর্তমানে প্রথম সারির একজন ব্যবসায়ী,এরকম বাজি ধরা তাকেই মানায়। তার ধারনা,আম ছালা সবই তার থাকবে। এই অর্থহীন বাজিতে তার কোন ব্যবসায়িক লাভ নাই,তবু........................
প্রথম দুই বছর কেটে গেল অদ্ভুত ভাবে। লোকটি কোন বই চাইত না,নাজমুল প্রতিশ্রুতি মতো মাসের শুরুতে একমাস পড়ার মতো বই দিয়েছেন।
গার্ডের মাধ্যমে জানতে পারলেন একটি বই ও সে উল্টিয়ে দেখে নি।
তৃতীয় বছর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে লাগল। দু বছরের জমান বই নিয়ে সে বসলো এবং দেড় বছরে শেষ করল সব। নাজমুলের বিশ্বাস,লোকটি সংযম ভাঙবেই।
লোকটির বন্দি জীবনের ষষ্ঠ বছর অতিবাহিত হল।
চার বছর সে সুধু বই নিয়ে ছিল। ইংরেজি,ফারসি সাহিত্যের খবর ও রাখে। নাজমুল কথামত সব সরবরাহ করেছে। গল্প,নাটক,উপন্যাস,কবিতা;প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য সর্বত্র পদচারনা ঘটল বাজিকরের। কদিন পরেই সাত বছর পূর্ণ হবে।
ঘুমের পরিমান মারাত্মক হারে কমিয়ে দিয়েছে লোকটি।
অষ্টম বছরে বাজিকর বেহালা চেয়ে বসলো। স্বরগ্রাম নিয়ে দিন রাত পার করে দিল। যদিও রাত দিন সব তার কাছে সমান। নাজমুল মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখেন কতটা সত্যি।
কিন্তু মিথ্যা কিছু খুজে পান না। আট বছরে অনেক কিছুই পালতিয়েছে। নাজমুলের আর্থিক রম্রমা অবস্থা আর নেই।
নবম বছরে পা দিবে লোকটির স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন। বেহালার সুর থেমে গেছে,কিছুদিন আগে গার্ডের মুখে শুনেছেন।
গার্ড ও বছর বছর পাল্টাতে থাকে। বাজি ত ধরেছে পাগল লোকটা,গার্ড ত নয়। এদিকে নাজমুলের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ এর দিকে । ব্যবসার প্রতি ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখ দেখেন। কি লাভ এই অর্থহীন বাজি জিতে?মনে হয় নাজমুলের।
দশ বছর পূর্ণ হতে ১৭ দিন বাকি। গার্ডকে তিনি আগেই বিদায় করে দিয়েছেন। এবার লোকটিকেও। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। যদি ভালয় ভালয় তাড়ানো যায় তাহলে ভালো,নাইলে একেবারে...............আর্থিক দুর্দশার সময় অতিরিক্ত এসব ঝামেলা বইতে চান না।
বন্ধ দরজার দিকে এগলেন নাজমুল। ওকে মেরে ফেলতে হবে,বন্দুক শক্ত করে ধরলেন নাজমুল........................
কিছুক্ষন পর। লোকটির বন্দি কক্ষে দাড়িয়ে নাজমুল সাদাত। নিঃসঙ্গ। হাতে হলুদ বরনের বিবরন কাগজ।
চিঠি হতে পারে।
“প্রিয় নাজমুল সাদাত,শুভেচ্ছা। গত নয় মাসে দেখা পাই নি। কথা বলার সুযোগ তো কখনই না। দশ বছরের উপলব্ধি চিঠিতে বলছি।
কারাগারে থেকেও আমি কিন্তু পৃথিবী চষে বেড়িয়েছি। বই পড়তে কখনও সমুদ্র,কখনও মেরুতে,কখনও মরুতে। বিশ্বের সাহিত্যকর্মের সান্নিধ্য পেয়েছি এভাবেই। বই পড়ে অর্জন করেছি সেই দুর্লভ শক্তি যা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা দেয়। সব কিছুর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তাই সবই যখন পাওয়া গেল,তখন আমি-ই স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে এই বাজির শর্ত ভঙ্গ করলাম। আমি চলে গেলাম”
লেখকের সাক্ষরবিহীন বিবর্ণ চিঠি হাতে নাজমুল কিছুক্ষন ভাবলেন,আসলেই কি বাজিটি তিনি-ই জিতেছেন!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।