CONNECTION FAILED
ছেলেবেলার লেখা কোথা থেকে যে শুরু করি? যেদিন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম সেদিন নাকি যেদিন আমার চোখে স্কুলের স্বপ্ন ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো সেদিন থেকে?
বাসা পর্ব
আমার মনে আছে আমরা যখন প্রথম ঢাকায় আসলাম তখন উত্তরার একটা বাসায় উঠেছিলাম। ওটা যে কি ছিলো মানে কার বাড়ি ছিলো কেন উঠেছিলাম কিছু মনে নাই। খালি মনে আছে বাড়িটা অনেক বড় ছিলো আর সামনে বেশ বড় উঠান ছিলো। আমি ওই উঠানে বেশ কয়েকদিন ইচ্ছেমতো খেলেছি। কি খেলেছি মনে নাই শুধু চোখ বুজলে দেখতে পাই আমি ছুটে বেড়াচ্ছি।
অবশ্য আমার ছেলেবেলা নিয়ে যা লিখবো তার সবই চোখ বুজলে যা দেখতে পাবো তাই লিখবো। বেশী কিছু মনে রাখার অভ্যাস আমার কখনই ছিলো না। আর ফেলে আসা দিনতো আমি কখনই মনে রাখি না। খামোখা এত কিছু মনে রেখে মাথা বোঝাই কর্তে ভালো লাগে না। যে জিনিস বই খুললেই পাওয়া যায় বা হাতের কাছেই পাওয়া যায় সেটা মনে রাখি না আমি।
ধুরো লেখা ঘুরে যাইতেসে।
উত্তরার বাসায় আমরা বেশিদিন ছিলাম না। সম্ভবত সপ্তাহখানেকের ভেতরই আব্বু রামপুরায় টিভি ভবনের ঠিক অপর পাড়ে একটা গলিতে বাসা নিয়েছিলো। বাসাটা ছিলো টিনের চাল দেয়া এক রুমের একটা বাসা। তবে এই বাসার কথা আমার বিশেষ ভাবে মনে আছে এই জন্য যে বাসাটার বাথরুমে অনেক বেশী তেলাপোকা ছিলো আর আমি আম্মু ছাড়া একদিনও ওই বাথরুমে যেতে পারতাম না।
কি যে অবস্থা ছিলো!
দুই কি তিনমাস পর আমরা চলে এলাম পুরান ঢাকায়। এলাকাটার নাম কোম্পানিগঞ্জ। টিকাটুলি থেকে দয়াগঞ্জ যাবার পথে ডানপাশে পরে। পুরান ঢাকার এই এক বাসাতেই আমার কেটে গেছে ১৬টি বছর। বয়স যখন ১৮ হয় তখন আমরা এই বাসা আর এলাকা দুটাই ছেড়েছিলাম।
বাসা ছাড়ার সময় খুবেকটা কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন এই লেখাটা লেখার সময় সব স্মৃতিগুলো সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো চোখে ভেসে উঠতেসে। দেখা যাক কতটুকু কি মনে আসে!
প্রাইমারী স্কুল পর্ব
যখন রামপুরার বাসায় ছিলাম তখন স্কুল নিয়ে আমার আম্মু আমাকে নানা গল্প শুনাতো। স্কুলে পড়ার স্বপ্নটা আম্মুই বুজে দিয়েছিলো। স্কুলে গেলে স্যার ম্যাডামরা পড়ায়, আমার মতো আরো অনেকগুলো ছোট ছোট বাবু স্কুলে পড়ে।
আমি অবাক হয়ে ভাবতাম এটা কি করে সম্ভব? এক আমাকে পড়াতেই আম্মুর সারাদিন কেটে যায় স্কুলে আমার মতো এতগুলো বাবুকে কিভাবে পড়াবে স্যার ম্যাডামরা!
নানা জল্পনা কল্পনা নিয়ে অবশেষে একদিন সকালে আব্বু আম্মু দুজনেই আমাকে নিয়ে গেলো ওয়ারীর একটা প্রাইমারী স্কুলে, নাম "মৈত্রী শিশু উদ্যান। " স্কুলের হেডস্যারের প্রশ্ন উত্তর পর্বগুলোর কিছু আমার মনে আছে!
- তোমার নাম কি?
- স্যার, আব্বুর নামের সাথে আমার নাম মিল আছে। আব্বুর নাম একার দিয়ে আর আমার নাম আকার দিয়ে শুরু, আমার নাম রাজিউর রহমান আব্বুর নাম রেজাউর রহমান!
স্যার কি ভাবছিলেন সেইটা আর মনে নাই তবে আরেক্টা প্রশ্নের উত্তর দিসিলাম এইভাবে
- বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়?
- আমরা এখন যেখানে আছি!
- আমরা এখন কোথায় আছি?
- আমরা তো রাজধানীতেই আছি!
- সেটার নাম কি?
- ঢাকা।
যাহোক আমি স্কুলে ভর্তি হলাম। প্রাইমারী স্কুলের তেমন কোন স্মৃতি মনে পরতেসে না।
মনে আছে ওই স্কুলে খুব ভালো আলু-ডিম চপ পাওয়া যেত। কিন্তু দামটা বেশিই ছিলো। প্রতিদিনই আম্মু ওটা টিফিনে খাওয়ানোর চেষ্টা করতো আমাকে। একবার যখন রাতে ঘুমের ঘোরে শুনলাম আম্মু বলতেসে, "ঘরে কোন টাকা নাই, কালকে বাবুর স্কুলে যাবো আসবো কিভাবে আর টিফিনইবা দেবো কিভাবে?" ঐদিনের পর থেকে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই আলু চপ খেতামনা। যখন নার্সারী থেকে ক্লাস ওয়ানে সেকেন্ড হয়ে উঠেছিলাম আব্বু আম্মু যে কি খুশি হয়েছিলো! এমনিতে আব্বু আমাকে সবসময়ই বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাতো কিন্তু সেবার যেনো আরো অনেক ভালোবাসায় জড়িয়ে ছিলো সে আমাকে সারারাত!
আমার প্রাইমারী স্কুল কেটেছে ক্লাস টু পর্যন্ত।
টু থেকে যখন ফার্স্ট হয়ে থ্রিতে উঠলাম তখন হাইস্কুলে পা দিলাম। সায়দাবাদের কাছাকাছি একটা স্কুল আছে (জায়গার নাম ভুলে গেছি) নাম "মিতালি বিদ্যাপীঠ" ওখানে পড়েছি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। ফাইভ থেকে যখন সিক্সে উঠলাম তখন বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দেয়া শেষে চান্স পেলাম "মতিঝিল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ" এ। বলে রাখা ভালো মিতালি স্কুল যখন ছেড়েছি তখন আমি থার্ড হয়েছিলাম। প্লেস পাওয়া স্টুডেন্ট বলে স্কুল কতৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়নি।
এদিকে মডেল স্কুলেও ভর্তি হবার ডেট এসে পর্তেসে। আম্মু কিভাবে কিভাবে জানি অন্য একটা সরকারী স্কুলের ছাড়পত্র জোগার করেছিলো!
আরো একটা ঘটনা বাদ গেসে। আমি ক্লাস টুতে একবার কিসের জানি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাইসিলাম। বৃত্তি পরীক্ষার দিন একটা প্রশ্নের উত্তর দেয়া প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে এই সময় স্যার এসে খাতা কেড়ে নিসিলো পরীক্ষার সময় শেষ বলে। আর আমি সারা ক্লাস কাঁপায়া কান্না কাটি কর্তে কর্তে হল থেকে বের হইসিলাম।
কিভাবে যে থামাইসিলো আমাকে আল্লা মালুম!
আর কিছু মনে পর্তেসে না। যারা ভাবতেসেন আমিতো বেশ ভালো আর শান্ত ছেলে তাদের বলি আসলে আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত প্রকৃতঅর্থেই খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে ছিলাম। সব সময় পড়াশুনা আর আব্বু আম্মুর তলে থাকতাম।
আমার আসল বাঁদরামী শুরু হৈসে মডেল স্কুলে আসার পর থেকেই! দিন দুনিয়ার হেন কোন বাঁদরামী নাই যা আমি করি নাই মডেল স্কুলে থাকতে!
সেই গল্প পরের পর্বে হবে না হয়। আপাতত স্মৃতির ঝুলি হাতড়িয়ে এখন আমি ক্লান্ত আর মাথা হ্যাঙ।
ভোর হয়ে গেছে। ঘুম দেয়া দর্কার।
শুভ রাত সবাইকে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।