কবিতায়, বার কয়েক কায়দা করে ধুসর শব্দটা ব্যবহার করলেই নাকি উত্তর আধুনিক কবিতা হয়ে যায়। তবে,কিছু বেরসিক ,হতচ্ছাড়া বেয়াড়া,আরো কয়েক ডিগ্রি বাড়া। তাঁরা বলেন- যে কোন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়'র দু পাশ থেকে লম্বালম্বি করে দু সেন্টিমিটার করে ফেলে দিয়ে বাকি অংশটুকু কে নাকি উত্তর আধুনিক কবিতা বলে চালিয়ে দেয়া সম্ভব। তাঁদের কথা শিল্প হবে ঝকঝকে পরিস্কার। এ কারণেই তাঁদের আপত্তি-উত্তরাধুনিকদের প্রকাশ কেমন যেনো গোলমেলে,বক্তব্য সুস্পষ্ট না।
কাঁচঘেরা শপিং মলের দরজার গায়ে লেখা,"ধাক্কা দিন" এর ধাক্কা আর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার ধাক্কা -ধাক্কা কোনটা জোড়ে কোনটা আস্তে বাক্য দেখে বোঝা যায়না, বুঝে নিতে হয় অবস্হান ভেদে।
আমরা যারা মানুষ থেকে মেধা ধার কর্জ (সহজ কথা চুরি চামারি করে )করে লেখালেখির কাজ চালাই অর্থাৎ পাঠকরা যাদের অপসাহিত্যিক হিশেবে চেনেন-আমাদের কাছে আধুনিক, উত্তরাধুনিক ডাল বরাবর।
পৃথিবী যখন আধুনিক যুগ থেকে উত্তরাধুনিক যুগে প্রবেশ করলো,সাহিত্যে বিষয়টা টের না পেলেও টের পেয়েছি মশারি টানানোর বেলায়। উত্তরাধুনিক যুগে বেডস্ট্যান্ডের চল্ গেছে চলে। এমন ভাব, এ বাসায় মশার কারবার নেই,কামড়ানোর প্রশ্নই আসে না।
রাত হলে ঘুমানোর প্রস্তুতিকালে লাখ ডলারের প্রশ্ন- মাশারির চার কান কোথায় কোথায় আটকানো যায়। অতএব দেয়ালে পেরেক ঠোকা। কপাল খারাপ বাড়িওলার- ড্রিল মেশিনের দৃপ্ত চুমুর কল্যাণে বাড়িওলার হৃদয় বিদীর্ণ করে দেয়ালের কোনায় কোনায় পেরেক ঠাশা। ভাড়াটিয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেয়ালে পেরেকের ফুটোর সংখ্যা বাড়তেই থাকে-সবাই তো আর এক পজিসনে বিছানা পাতেন না।
সবাই বলে, বাড়ীর ইনটেরিয়র পরিবর্তন করলে বাড়ীর পরিবেশ ভালো থাকে।
বিপত্তি টা ঘটে তখুনি। অতো রাতে বিছানার নতুন অবস্হানে মশারি টানানোর জন্য পেরেক ঠুকবে কে?অতএব খোঁজো সুতলী । পুরা ঘর তন্নতন্ন করে বিঘৎ খানেক সুতলি পাবেন না। আবার ধরেন আপনি শখের বসে বাগান করেন,বাগান বেড়া দেবার সময় অনুধাবণ করলেন আপনার হাত পাঁচেক সুতলি দরকার। দোকানী অতো কম সুতো বিকোয় না।
দরকার না থাকলেও বেশি পরিমাণ সুতলি নিতে হবে। কি আর করা!যখন যা দরকার তা পাওয়া যাবেনা ,অদরকারে ঐ পণ্যতে সয়লাপ।
যুগটাই এরকম-কোন বিষয়ে যার কথা বলার কথা উনি বাদে বাকি সবাই কথা বলছেন। সারাদিন কথা বলছি অথচ দরকারের সময় আশ্চর্য রকম বাকসংযম!একজন ভালো বক্তা জানেন তার কখন থামতে হবে।
হাসিবের সেজো মামা -মবু মামা হতে পারে উত্তরাধুনিক যুগের একটা উদাহরণ।
আসুন,বায়োডাটা হিশেবে নয়, মবু মামার সাথে পরিচয় হই উনার কাজ কারবারে। সময়টা ১৯৯৪। বারো বছর পর বেলজিয়াম থেকে দেশে যখন বেড়াতে আসেন,বাংলাদেশ ততদিনে আধুনিকের তকমা ছেড়ে উত্তরাধুনিকের পালক পরেছে। ঢাকা বদলে গেছে আমূল ভাবে ,তুমুল রকমে। এ ঢাকা কে মামা চিনতে পারেছেন না।
বন্ধুদের নির্দেশনা মেনে পথ চিনে তবেই আড্ডা থেকে বাসায় ফিরতে হতো। বাড়ি ফেরা নিয়ে কাহাতক আর বন্ধু দের জ্বালাতন করা যায়!এ ভেবে মামা কিনলেন ঢাকার ম্যাপ। এর পরদিন মামা বাসায় ফিরলেন রাত দুইটায়। নানুর ততক্ষনে ছেলের টেনশনে খাশী মানত করা শেষ। শাহবাগ থেকে ফকিরেরপুল আসতে এতো সময় লাগার কারণ -মামা নাকি ম্যাপের লেজেন্ড গুলো মেনে বাসায় আসতে চেয়েছিলেন!আর ওনার দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে কখনই ভূগোল পাঠ্য ছিলনা।
এতো গেলো যা করার দরকার নাই তা করার ফল। এর উল্টো উদাহরণ ও আছে!
এবারের নায়কও মবু মামা।
মামা গিয়েছেন এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে বন্ধ্বুর অফিসে। ঐ অফিসে অবস্হানের কোন এক সময়ে মামার ফ্রেস রূমে যাবার প্রয়োজন। দূর্ভাগ্যক্রমে টয়লেটের লক্ টা ছিলো নষ্ট।
বেখেয়ালে মামা যেইনা দরজা খুলেছেন, দেখেন কমোডে একজন বসা। আচমকা দরজা খোলায় লোকটার প্রতিক্রিয়া
দেখার জন্য মামা আর দরজা খুলেই রেখেছেন(বলে রাখা ভালো,এক কালে মামার দুষ্টুমি ফকিরারপুলে মামার জুনিয়রদের পাঠ্য ছিলো। এখনও দুষ্টুমির সুযোগ হাতছাড়া করেন না)
হতবাক হয়ে লোকটার চোখ ঠিকরে পড়ছে তবুও লোকটা ভদ্রতা করে গলা খাকারি দিচ্ছে,"ওহক ওহক হমমমমম"
মামা অপেক্ষা করছেন লোকটা কখন গালি দেন।
তখনো লোকটা খাকারি দিয়েই যাচ্ছে,"ওহ্ম এ হের্ম এঃ হ্রম ওহক ওহক হমমম"
আমাদের দেশে সধারণ এটিকেট বাথরূমে নিজের অবস্হান জানানোর জন্য গলা খাকারি দেয়া-লোকটা যে এ লৌকিকতার একনিষ্ঠ ভক্ত, মামা তখনো বুঝতে পারেন নি।
লোকটার বলা উচিৎ ছিলো-ঐ ব্যটা বাইর হ ?!না !
তা না করে গলা খাকারি!,"এহেক এহেক ঘররররর হমম "
অবশেষে মামা হার মানলেন বাক সংযমের কাছে
কে যেনো বলেছিলেন সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন?নিরবতাই হিরন্ময়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।