মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
১৯৭৩-এর ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পদকপ্রাপ্তদের নাম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। চারটি খেতাব মিলিয়ে মোট ৬৭৬ জনকে পদক দেয়া হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনী থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫২০, আর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ১৫৬ জন। বিসত্মারিত পরিসংখ্যানে এই বৈষম্য আরো প্রকট হয়ে ওঠে।
সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ পদক দেয়া হয় সাত জনকে। এই পদকটি শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্যই সংরক্ষিত থেকে যায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরউত্তম’ দেয়া হয় ৬৮ জনকে, এতে সশস্ত্র বাহিনীর ৬৬ এবং বেসামরিক দুই। তৃতীয় খেতাব ‘বীরবিক্রম’ ১৭৫টির মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১৪২, বেসামরিক ৩৩। চতুর্থ এবং সর্বশেষ ‘বীরপ্রতীক’ ৪২৬টি পদকের মধ্যে ৩০৫টি সশস্ত্র বাহিনী, বাকি ১২১টি দেয়া হয় বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের।
লক্ষণীয় যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পদকে দুই জন নারী, একজন বিহারী, একজন বিদেশি ও মাত্র পাঁচ জন হিন্দু রয়েছেন। দেড় হাজার শহীদের অধিকারী হলেও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাউকে এই খেতাব দেয়া যায়নি। রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনে বিবিধ ব্যর্থতার কারণে সমাজতাত্ত্বিকেরা আমাদের গোড়ায় একটি অভিযোগ করেন, একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু জনগণের মুক্তি আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের পদকে ব্যুরোক্র্যাসি ও সাধারণ জনগণের এই বৈষম্যের মধ্যে কি তারই কোনো ইঙ্গিত রয়েছে!
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষশক্তি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও বিকৃতিরোধ তাদের দায়িত্ব, কিন্তু জরুরি হলো ইতিহাসের পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের পরিসরের মধ্যে অনেক বিদগ্ধ ও বুঝদার ব্যক্তি আছেন। তারা নিশ্চয় বুঝতে পারেন, ঔপনিবেশিক ইতিহাস-কাঠামোর ফেরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কী কী ক্ষয়, ক্ষরণ ও চেতনার বিপথগমন ঘটেছে। সেই বিপথ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা জরুরী নয় কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।