বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
"এমনও তো হয় কোনোদিন/পৃথিবী বন্ধবহীন/তুমি যাও রেলব্রীজে এক/ধূসর সন্ধ্যায় নামে ছায়া/নদীটিও স্থিরকায়া/বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা। /ইস্টিশানে অতি ক্ষীণ আলো/তাও কে বেসেছে ভালো/এত প্রিয় এখন দ্যুলোক/ হে মানুষ, বিস্মৃত নিমেষে/তুমিও বলেছো হেসে/বেঁচে থাকা স্বপ্নভাঙা শোক!" সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন লাইনগুলো। কবিতার নাম 'এক এক উদাসীন'। সুনীলের সেই এক একদিনের উদাসীনতা আমাদের মাঝেও ভর করে। একেকটা উদাসীন দিনে বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় হঠাৎ।
মানুষ মাত্রই স্মৃতিকাতর। আপাত বন্ধবহীন পৃথিবীতে ধূসর সন্ধ্যায় যখন ছায়া নামে, তখন স্মৃতিকাতর মানুষটি খুলে বসে জাগতিক হিসাবের ডালি। কে ভালোবেসেছে তাকে এক জনমে, কে হয়েছে বিস্মৃত_ এই ভাবনাই হয়তো পেয়ে বসে তাকে। মানুষের বেঁচে থাকা মানেই সেখানে স্বপ্নভাঙা শোক থাকবে, না পাওয়ার বেদনা থাকবে। যাপিত জীবনে এত কিছুর মুখোমুখি হয়েই মানুষের এগিয়ে চলা।
এজন্যই বুঝি মানুষের মনস্তত্ত্ব এত বৈচিত্র্যময়।
ফিরে আসি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা' প্রসঙ্গে। সুনীল 'বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা'কে গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তার জীবনে নিজের সঙ্গে দেখা করার কিছু সুযোগ তিনি করে নিয়েছেন। লেখক নিজের সঙ্গে দেখার সুযোগ পান লেখালেখির মাধ্যমে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সুযোগটাও এমনই।
তবে সুনীলের এবারের লেখালেখি ভিন্ন মাধ্যমে, ভিন্ন পরিচয়ে। বাংলা ব্লগে প্রথমবারের মতো লেখালেখি শুরু করেছেন তিনি। সেই ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'একা এবং কয়েকজন' প্রকাশিত হয়েছিল। লেখালেখি শুরু করেছেন তারও আগে। এরপর পেরিয়ে গেছে অর্ধশতাব্দী সময়।
খ্যাতনামা সাহিত্যিক হিসেবে সুনীলের অবস্থান পাকাপোক্ত। সুনীল তার সাহিত্যিক পরিচয় নিয়েই ব্লগার। লক্ষণীয় হলো, সুনীল তার সাহিত্যিক প্রভাব ব্লগে দেখাতে চাননি। আর সব ব্লগারের মতোই তিনি লিখেছেন নিজের কথা, নিজের জীবনযাপনের কথা। ব্লগিংকে তিনি দেখেছেন 'বিজনে নিজের সঙ্গে নিজের দেখার মতো' করে।
এরই মধ্যে ব্লগে দিয়েছেন দুটি পোস্ট।
বাংলা ব্লগিংয়ের শুরু থেকে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা সূত্রে বলতে পারি তিন-চার বছর আগেও 'মূলধারার' লেখক-সাহিত্যিকরা ব্লগিংকে এতটা গুরুত্ব দেননি। সেই সময় অনেককে বলতে শুনেছি, ব্লগিং করে কেবল সময় নষ্ট হয়। এও অনেকে বলেছেন, যাদের অন্য কোথাও লেখার স্পেস নেই তারা লিখছেন ব্লগে। তবে এই সময়ের ব্লগের লেখালেখি দেখে মনে হয় সেই ধারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।
লেখালেখি আর মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্লগের প্রভাবকে এখন আর অস্বীকার করার জো নেই। ব্লগকে বলা হয়ে থাকে নতুনধারার মিডিয়া। প্রচলিত মিডিয়ার বাইরে ব্লগের আলাদা অবস্থান তৈরি হচ্ছে দিন দিন। সেই অবস্থানকে গুরুত্ব দিতেই হয়তো মূলধারার মিডিয়াগুলো ব্লগের জন্য আলাদা জায়গা রাখছে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় ব্লগ আগে থেকেই ছিল।
বাংলাদেশেও মূলধারার পত্রিকার ব্লগ সংস্কৃতি রয়েছে। সম্প্রতি ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাও শুরু করেছে তাদের নিজস্ব ব্লগ (http://my.anandabazar.com)। সেখানে কেবল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই নন, আরও ব্লগিং করছেন বাণী বসু, শ্রীজাত, নবনীতা দেব সেন, উল্লাস মলি্লক, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।
সাহিত্য জগতের প্রভাবশালী ও খ্যাতনামাদের ব্লগের জগতে পদার্পণ ব্লগিং সংস্কৃতির জন্য নতুন বার্তা দেয় বৈকি। সামনে যে ব্লগ বিকল্প মিডিয়া হিসেবে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে তা সহজেই বলে দেওয়া যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।