উঁকি দাও ফুল!
আমাদের ছেলেবেলায় যারা গল্পটল্প লেখার চেষ্টা করত, দুই মজুমদার ছিল তাদের দিকপাল। কবিতাওয়ালাদের ছিল আরেক মজুমদার। এনাদের শিখণ্ডী করে বাংলাভাষা নিয়া নানান "নিরীক্ষা"র হেস্তনেস্ত করা লিটলম্যাগ মনে হয় মাসে দুইটা বের হৈত।
স্রোতে ভাসা সবার মত আমিও কিছুদিন মজুমদারদের চ্যালাগিরি করলাম, কিন্তু স্বীকার করি বাকি দুই জনের সাথে ততটা জুত হয় নাই, শেষ পর্যন্ত কেবল অমিয়ভূষণ মজুমদার একটা দীর্ঘছাপ রাখছিলেন।
কালকে ২২ এপ্রিল।
আজকে হঠাত অমিয়ভূষণ মজুমদারের একটা গল্প মনে পড়ল। সেইটা আপনাদের বলাটাই ধান্ধা। কিন্তু আর সব জোয়ারের মতই তারুণ্যও ফেনা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রাখে না, এই সাদামাঠা গল্পটা নিয়াও স্মৃতির ফেনাই কেবল আছে। খুব সম্ভাবনা আছে গল্পটার নাম ভুল বলতেছি, আর কাহিনীতে অতিরঞ্জন কিংবা নিজকল্পনার অনুপ্রবেশ একরকম নিশ্চিত।
কাহিনীটা আর কিছুই না।
যদি গল্পটার নাম মৃন্ময়ী অপেরা হয় তো সেইটার মালিক মৃন্ময়ী খুব সম্ভব স্বামীর সূত্রে এই যাত্রা দলের মালিক হৈছিলেন। উহু, তাইলে অপেরার নাম মৃন্ময়ী অপেরা কেন হবে? কিঙবা হয়তো অপেরার নাম মৃন্ময়ী, মহিলার নাম আরেকটা কিছু ছিল। যা হোক, আপাতত মৃন্ময়ী দিয়েই কাজ চালানো যাক।
মৃন্ময়ী অপেরায় কাজ করে এক অভিনেতা, যার অভিনয়ের তুলনা নাই। সমস্যা একটাই, খর্বকায় আর টাক মাথার কারণে সে কখনো নায়কের ভূমিকা পায় না।
রাজার সেনাপতি কিংবা রাজপুত্রের বন্ধু কিংবা ভিলেন এই সব চরিত্রই তার কপালে জোটে। মৃন্ময়ী থিয়েটারের একটা বড় সম্পদ সে, মৃন্ময়ীকেও ভালবাসে এই দাড়িওয়ালা টেকো খর্বদেহ লোকটা। এই রকম ক্যারেক্টার তৈরি করতে অমিয়ভূষণ ছিলেন ওস্তাদ বিশেষ। তার আরেকটা গল্প ছিল সার্কাসে ভাল্লক সাজা বামন, তার প্রবল কামনা দড়াবাজ মেয়েটার জন্য। দর্শকরা দেখে দড়িতে ঝুলে বিপদজনক কায়দায় সে পাশ ঘেষে যায় মেয়েটার, পাঠক বোঝে একটু ছোঁয়ার কি প্রবল আকুতি তার।
এইসব অসম্ভব প্রেম আর কামনা নিয়া খেলতে পছন্দ করতেন অমিয়।
এমন সময় আসল একটা যাত্রা, নাম বিপ্লবী লেনিন! ভাবো তো কি ঘটল? আমাদের টেকো, দাড়িওয়ালা আর বেটে অভিনেতা জীবনে প্রথম একটা পালা পেলো যার নাযক সে ছাড়া আর কেউ না। চতুর্দিকে হাততালি, জয়জয়কার, তার অভিনয় জীবনের তুঙ্গ সময় বুঝি এল। প্রতিটা পালায় যে বিপ্লবী অভিনয় সে করল, জ্যান্ত লেনিন বুঝি ততটা পারতেন না। মৃন্ময়ী কি গলবে না এইবার, কপাট কি খুলবে না আজও?
তো এই সময় আসল একটা ছেলে।
৭০ দশকের পশ্চিমবঙ্গ। অস্থির, বুনো, রক্তাক্ত। যে ছেলেটা আসলো, সে বেশভূষায় গ্রামীণ, কথাবার্তেও তাই। তারপরো সবাই বুঝে গেল সে এখানকার কেউ না। কিছুই বলা নাই গল্পে, কে সে, তার সাথে মৃন্ময়ীর পরিচয় কিভাবে, কেন এইখানে লুকিয়ে আছে।
মৃন্ময়ীও এই সব নিয়া কিছুই বলে না। কিন্ত কেন যেন অভিনেতার সন্দেহ হয় মৃন্ময়ীর সাথে তার প্রেম আছে।
তারপর তেমন কিছু না। অভিনেতার একদিন পালা শেষে কাছের শহরে গিয়ে ভরপেট দেশি মদ গিলল। ফেরার পথে দেখা দারোগার সাথে।
দারোগা তারে দেখে কুশল শুধালে সে ফিসফাস করে জানাল, একটা ছেলে এসেছে। মৃন্ময়ী আগলে রাখে। একটু দেইখেন তো।
৭০ দশকের পশ্চিমবঙ্গে দারোগার জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট ইঙ্গিত, সে বুঝে নিয়ে দ্রুত রওয়ানা হলো। আর আমাদের অভিনেতা, এইবার পথের কাঁটা তুলে নিয়েছে, মৃন্ময়ীকে পাক বা না পাক।
হঠাত, মাতলামির ঘোরে তার মনে পড়ল, আমি না লেনিনের ভূমিকায় অভিনয় করি,আমি করে সে ছেলেটাকে ধরিয়ে দিলাম!
এই সাদামাঠা গল্পটা। স্মৃতির ভুলভালের জন্য আবারো ক্ষমা চেয়ে নিই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।