খুঁজে ফিরি আমার আমিকে
একটা প্রবাদ আছে,
"যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা"
মৃন্ময়ীর বেলায় আমার মনোভাবও ঠিক তাই, ওর সবকিছুই চরম অপছন্দের, তাকালে গায়ে জ্বালা ধরে, ইচ্ছে করে চোখ গেলে দেই, হাসলে কানে ভীষণ বাজে, কথা বললে খোদারে ডাকি, আমারে বয়রা বানালে না কেনও??
এমনতর অপছন্দের পিছনে যে বিশেষ কোনও কারন আছে তা কিন্তু না, তবুও ও আমার জন্ম- জন্মান্তরের শত্রু, আর শত্রুর সাথেই আমার বেড়ে উঠা,
একই মহল্লায় পাশাপাশি বাড়ি ছিল আমাদের,দুজনেই সমবয়সী, আর কাকতালীয় ভাবে আমাদের কারোই আর কোন ভাই-বোন ছিল না, আমি ওকে ঠিক যতখানি অপছন্দ করতাম, ঠিক ততটাই আদর ওকে দিতেন আমার মা আর তার সাথে মিল রেখেই বোধহয় অ্যান্টির ( মৃন্ময়ীর মা) ও আমার জন্য ছিল বেজায় টান,
সারাদিন ভরই আমাদের রেষারেষি লেগে থাকত, কেমন সেটা??
বর্ষার দিনে, আমাদের বাসার সামনের রাস্তাটা বেশ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেত, একদিন আমি বৃষ্টির মধ্যে ওই রাস্তায় চলতে গিয়ে বড়সড় আছাড় খেলাম, উঠে দেখি মৃন্ময়ী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে, সে ছিল আমার চাইতে কম করে হলেও ১০হাত দূরে, আমি উঠেই বললাম, এই তুই আমাকে ধাক্কা দিলি ক্যান??
ওমা আমি কখন ধাক্কা দিলাম?? তুই নিজেই তো পড়ে গেলি,
ফের মিথ্যা কথা, দাঁড়া অ্যান্টিকে বলছি,
সোজা চলে গেলাম অ্যান্টির কাছে, গিয়ে সুন্দর বানিয়ে বানিয়ে বলে এলাম, আমি সাবধানে হাঁটছিলাম আর ও বলা নেই কওয়া নেই আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল, এখন এই নোংরা কাপড়ে আমি প্রাইভেটে যাবো কীভাবে?? যদিও সেদিন কোন প্রাইভেট ছিল না, তবু মামলা জোরদার করতে হবে,
ব্যাস আর যায় কোথায়, সাথে সাথেই তলব করা হোল মৃন্ময়ীকে, ওর কোন জবানবন্দী না নিয়েই বেদম মার, আর আমার খুশি দেখে কে।
অন্যায়ভাবে মার খেয়ে ও রাতে খাওয়া বন্ধ করে দিল, শেষে আমার মা জোর করে খাওয়ালেন। আমাকেও দিলেন কয় ঘা, শুধু শুধু মেয়েটাকে মার খাওয়ালি কেনও??
এমন দা- কুমড়ো সম্পর্ক নিয়েই আমরা বড় হচ্ছিলাম, দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হলাম, ও থাকল আমাদের মফস্বলের কলেজে, আর আমি চলে গেলাম শহরে, জায়গা হোল মেসে, মাসে ২/১ বার আসা হয় বাড়ি, কোন মাসে একেবারেই না,
বাড়ি আসলেই আগে অ্যান্টির সাথে দেখা করা চাই, উনিও আমাকে দেখলে মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পান, ঠিকমত খাচ্ছি কিনা, শরীরের যত্ন নেই না কেনও, অনুযোগ করে আমি নাকি শুকিয়ে গেছি, কিন্তু মৃন্ময়ী আগের মত আমার সামনে আসে না, আমি বুঝতে পারি ও লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখে, ওর এই পরিবর্তনের মানে আমি বুঝতে পারি না,
একবার মেসের বুয়া গেল ছুটিতে, বাধ্য হয়ে বাড়ি গেলাম, মৃন্ময়ী আমাদের বাসায়ই ছিল, আমার মা ওর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেলেন, আমাকে দেখেই মা বললেন,
কিরে তুই, কখন আসলি??
আর বইলো না, মেসের বুয়া নেই, ছুটিতে গেছে, মা ভাত আছে?? দুপুরে খাই নাই,
নাহ, আমরা তো মাত্র খেয়ে উঠলাম, তুইা ফ্রেশ হয়ে নে ততোক্ষণে আমি রান্না করে আনি,
মা উঠে চলে গেলেন, অনেকদিন পর মৃন্ময়ী আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে,
কেমন আছিস??
আমার উত্তর বরাবরের মতই তাচ্ছিল্য মেশানো, দেখতেই তো পাচ্ছিস, আবার জিজ্ঞেস করিস কেনও?
আর কিছু বলল না ও, চলে গেল,
ফ্রেশ হতে হতে মা রান্না করে নিয়ে এল, এর মধ্যে দেখি ও আবার এশেছে, একটা বাটি হাতে,
মা বললেন কি রে??
কই মাছের ভর্তা,
তুই করেছিস??
হুম,
কই মাছের ভর্তাআমার খুব পছন্দের জিনিস,মা আমার পাতে তুলে দিতে গেলেন, নে,আমি তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে উঠলাম,
খবরদার, এইসব দিও না আমাকে, আমি খাবো না।
কেনও??? তোর না অনেক প্রিয়?? একটু খেয়ে দেখ কেমন হোল?বেচারি কষ্ট করে বানাল,
লাগবে না আমার, ওর হাতের জিনিস আমি খাবো না, তুমি ফেলে দাও, না হয় বলো ফেরত নিয়ে যেতে, ওর টা ওই খাক,
আমার কোথায় বেশ কষ্ট পেলো বুঝলাম,একরকম কাঁদতে কাঁদতেই দৌড়ে চলে গেল,
কি যে ভালো লাগে তোর মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে, আশা করে তোর জন্য বানিয়ে আনলো, আর তুই কিনা?? মা রাগে গরগর করতে থাকলেন,
এই প্রথম আমারও একটু যেন মায়া লাগলো, একবার মনে হোল, সরি বলে আসি, যদিও পরে বলা হোল না।
এইচ এস সি পাশের পর, বাবা বলেলন, আমাকে দেশের বাইরে পাঠাবেন, স্টুডেন্ট ভিসা, আমার এক কাকা ছিলেন লন্ডনে, উনার সহযোগিতায় ভিসাও হয়ে গেল, আমার চলে যাওয়ার দিন, সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম, কিন্তু মৃন্ময়ীকে চোখে পড়লো না, আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি বললেন, ওর রুমে আছে, মেয়েটা গত কয়দিন থেকে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছে, সারাক্ষন কান্নাকাটি করে,
আমি গেলাম ওর কাছ থেকে বিদায় নিতে, রুমে গিয়ে দেখি, জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ডাকলাম, কিরে কি হইছে তোর??
আমার ডাক শুনে চমকে উঠল, কই কিছু নাতো, কখন যাচ্ছিস??
স্পষ্ট দেখলাম ও চোখ মুছলো,
এইতো এখনি, তোর সাথে দেখা করতে আসলাম,
ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবি, সাবধানে থাকবি, গিয়ে ফোন দিস প্লীজ, কথা গুলো বলতে বলতে ও হঠাৎ, কেমন যেন হয়ে গেল,
আমার খুব কষ্ট হবে রে তোকে ছেড়ে থাকতে, এমনভাবে তাকালও মনে হোল, খুব চাইছে আমি ওর মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেই ওকে,
নাহ আমি কিছুই বললাম না, শুধু আসি বলেই চলে এলাম,
লন্ডনে পৌঁছানোর পর, বাসায় ফোন দিলাম, আম্মু- আব্বু- অ্যান্টি সবার সাথে কথা হোল, আম্মু বললেন, মৃন্ময়ী আছে, কথা বল,
আমি বললাম এখন না, পরে, এই বলে রেখে দিলাম।
লন্ডনে বেশ ব্যস্ত সময় যাচ্ছিল, ক্লাস আর সাথে একটা পার্ট টাইম জব,বাসায় নিয়মিত যোগাযোগ হতো না, ২/৩ মাসে একবার ফোন দিতাম, আর ওর সাথে তো একেবারেই না।
এরিমধ্যে পরিচয় হোল, জেনিফার এর সাথে, বাবা জার্মানির, মা ব্রিটিশ, ও নিজেও ব্রিটিশ পাসপোর্ট-ধারী , সুন্দরী আর স্মার্ট, আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম, ছুটির দিনটা ওর সাথেই কাটাতাম, আস্তে আস্তে বেশ ঘনিষ্ঠও হয়ে গেলাম,
জেনিফারকে বিয়ে,ব্রিটিশ পাসপোর্ট, আয়েশি জীবনযাপন আমি মোটামুটি ওর স্বপ্নেই বিভোর।
একদিন একটা এস এম এস আসলো, খুব সকালে, নাম্বারটা কেমন পরিচিত মনে হোল, ঠিক মনে করতে পারছিলাম না, লিখা ছিল, প্লীজ কল মি,
ঘণ্টা দুয়েক পরে বাইরে গিয়ে ফোন দিলাম,
কে?
মৃন্ময়ী।
ওহ কেমন আছিস রে??
হুম, ভালোই, তুই??
আমি জোশ আছি, তারপর আর কি খবর বল?? বাড়ির সবাই ভালো??
হ্যাঁ, তুই তো কারো খবরই রাখিস না, আমাকে তো কখনো এক মিনিট ফোন করে জিজ্ঞেসও করলি না কেমন আছি,
আসলে ভীষণ ব্যস্ত থাকি, সময় হয়ে উঠে না, আর তোর নাম্বারটাও সেভ ছিল না,
হুম, তা থাকবে কেনও? আমার নাম্বার যে ভীষণ লম্বা, তোর কন্টাক্ট লিস্টে জায়গা হইনি নিশ্চয়,
তোর যেমন কথা, তারপর এমনি এমনি ফোন দিতে বললি, না কি কোনও বিশেষ কাজে?
নাহ, তোর সাথে কথা আছে, কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতেছি না,
হাহহাহা, কীভাবে বলবি মানে?? বাংলাতে বল,
না মানে, আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছেন আব্বু-আম্মু,
তাই নাকি, দারুণ তো, মিলছে নাকি ২/১ টা?
আচ্ছা তুই কি কিছুই বুঝিস না??
বুঝবো না কেনও, সবই বুঝি, কয়দিন পরে তোর বিয়ে, শ্বশুর বাড়ি চলে যাবি ,সংসার করবি, ৪/৫ টা বাচ্চা ফুটবে তোর, এইতো নাকি?
ধুর, আচ্ছা তুই রাতে একটু ফোন দিস, অ্যান্টি কথা বলবেন তোর সাথে,
আম্মু?? আচ্ছা দিবো নে সময় করে,
ওকে রাখি,
ফোন কেটে দিল মৃন্ময়ী, রাতে আম্মুকে কল দেয়া হোল না, আমি চলে গেলাম জেনিফারের সাথে লং-ড্রাইভে। ফোন দিলাম পরদিন দুপুরে,
হ্যালো আম্মু, কেমন আছো?
হ্যাঁ বাবা ভালো, তুই কেমন আছিস??
এইতো খারাপ না, আব্বু কেমন আছেন? উনার ব্যবসা কেমন চলছে?
আলহামদুলিল্লাহ্, ভালোই,
আচ্ছা তুমি নাকি আমাকে ফোন দিতে বলছ, কোন সমস্যা?
মৃন্ময়ী তোকে কিছু বলে নাই?
হুম, বলছিল তো, ওর বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে এই,
আর কিছু??
নাহ তো,
ওহ, আসলে সত্যি বলতে আমি চাচ্ছিলাম ওকে আমার ঘরের বউ করে রাখতে,
মানে?
মানে, তোর সাথে ওর বিয়ে, তোর বাবারও তেমনি ইচ্ছা,
আচ্ছা আম্মু তোমাদের মাথায় এইসব উদ্ভট চিন্তা আসে কীভাবে??
উদ্ভট মানে?? ও কোন দিক থেকে তোর অযোগ্য নাকি?? আমার সামনেই তো বড় হোল মেয়েটা,
উফফ, যোগ্যতার প্রশ্ন না মা, আমার পক্ষে সম্ভব না, তাছাড়া আমি এখন বিয়ে নিয়ে ভাবছি না,
এখন শুধু কথা পাকা হয়ে থাকলো, পরে তুই সময় বুঝে দেশে আসলে বাকি কাজ,
আহা আম্মু, শুধু- শুধু মেজাজ খারাপ করবা না, আমি না বলছি না, আর কি??
তুই বলেলেই হোল?? আমাদের ইচ্ছার কোন মূল্য নেই তোর কাছে?তাছাড়া আমি এক প্রকার কথা দিয়েছে তোর অ্যান্টিকে, আর তুই নিজেই জানিস, তোর বাবার ব্যবসা যখন প্রায় শেষের পথে তখন ওর বাবা হেল্প না করলে আজকে আমরা কোথায় থাকতাম,
তো কি হইছে?? এখন আমি উনার মেয়েকে বিয়ে করে ঋণ শোধ করবো?আজব চিন্তা-ভাবনা তোমাদের।
আমাদের চিন্তা ঠিকই আছে তুই ঠিক নেই,
হুম, আমার ভাল লাগছে না, রাখি,
ফেন কেটে দিলাম, ধুর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, কোথায় আমি ভাবছি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে, উনারা ঋণ পরিশোধে ব্যস্ত।
বেশ কিছুদিন আর বাড়ি ফোন দেয়া হোল না, একদিন আবারও মৃন্ময়ীর নাম্বার থেকে একটা এসএমএস আসলো,
কেমন আছিস??
আমার কালকে বিয়ে,
তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, আমাদের একটা ছোট সংসার হবে, অনেক সুখের, তুই আমাকে সারাদিন জ্বালাবি, আর আমি তোকে অনেক অনেক ভালবাসবো, স্বপ্ন গুলি এখনো ঠিকই আছে, তবে সেই স্বপ্নে আর আমি থাকবো না, তোর পছন্দের কেউ সেই জায়গাটা নিয়ে নেবে,
ভালো থাকিস, অনেক ভালো
এক মুহূর্তের জন্য কেমন কেমন জানি লাগলো, পরক্ষনেই সামলে নিলাম, আম্মুকে ফোন দিলাম,
হ্যালো আম্মু, কেমন আছো?
ভালোই, তুই?
হ্যাঁ, আমিও ভালো, আচ্ছা মৃন্ময়ীর নাকি কালকে বিয়ে? ছেলে কি করে? কোথায় বিয়ে হচ্ছে?
ঢাকাতে, ছেলেদের গার্মেন্টস ব্যবসা আছে
ওহ, তাহলে তো অনেক পয়সাওলা,ছাগলটার কপাল ভালোই। আচ্ছা আমি রাখি পরে কথা হবে,
এবার ফোন দিলাম মৃন্ময়ীকে,
কিরে ভালোই তো দান মারছিস, বিরাট ব্যবসায়ীর ছেলে, গাড়ি-বাড়ি, অনেক সুখে থাকবি দেখিস।
তুই কি এইসব বলার জন্যই ফোন দিছিস,
না আসলে তোর এসএমএস টা পরে খারাপ লাগছে, দেখ মানুষের লাইফে এমন কত্তজন আসবে যাবে, ভুলে যা, সামনে তোর সুখের দিন, বিশাল বাড়ি, দামি গাড়িতে চড়বি, আর কি চাই জীবনে,
হুম সেটাই, আমার ভালো লাগছে না তোর কথা শুনতে, আমি রাখছি।
রেখে দিল ও, আমিও ব্যস্ত হয়ে গেলাম অন্য কাজে, ক্লাস, জব আর জেনিফার, এভাবেই দিন কাটছিল,
একদিন জেনিফার বিকেলবেলা এক ছেলেকে নিয়ে আমার বাসায় হাজির,
আরে তুমি, হঠাৎ আমার বাসায়??
সারপ্রাজ দিতে,
তাই নাকি? কি সারপ্রাইজ?
এই হচ্ছে বব, আমরা ছোটবেলায় একসাথে ছিলাম, মাঝে ও ফ্রান্সে ছিল, কালকেই লন্ডন ব্যাক করলো,
ওহ তাই নাকি? আমি ববের সাথে কুশল বিনিময় করলাম,
তা এই তোমার সারপ্রাইজ??
আরে নাহ, আসল খবর তো এখনো বলি নাই,
কি সেটা?
আমি আর বব বিয়ে করতেছি, নেক্সট উইকএন্ডে,
মাথাটা কেমন জানি করছে, মনে হচ্ছে ঘুরে পড়ে যাবো, কি করবো বুঝতেছি না, ববের হাত ধরে বললাম অভিনন্দন,
আচ্ছা জেনিফার আমার একটু কাজ আছে, বেরুবো,
হ্যাঁ ওকে, আমরাও শপিঙে যাচ্ছিলাম ,পরে দেখা হবে,
ওরা বেরিয়ে গেলো হাত ধরাধরি করে, আমি তাকিয়ে রইলাম, কেনও জানি বার বার মৃন্ময়ীর কথা মনে পড়ছিল।
রাতে জেনিফারকে ফোন দিলাম,
তুমি এমন করলে কেনও আমার সাথে?
মানে, কি করলাম আমি?
আমার সাথে সম্পর্ক করে ববকে বিয়ে করছ?
আরে কিসের সম্পর্ক? ওইটা তো ছিল টাইম পাস, তুমি একা ছিলা, আমিও, আমারা পরস্পরের একাকীত্ব দূর করছি মাত্র, ববের সাথে আমার সম্পর্ক অনেকদিনের, তোমার জন্য আমি ওকে অস্বীকার করবো?? পাগল নাকি?
আর কিছু বলতে পারলাম না, বলার কিছু নেইও, আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল, বড্ড দেরি করে ফেললাম।
জেনিফারের বিয়ে হয়ে গেল, আর আমি হয়ে গেলাম মানসিকভাবে অসুস্থ, কাজে জেতাম না, ক্লাসে না, রাতভর মদ গিলতাম, শুকিয়ে যাচ্ছিলাম দিন-দিন, আমার এমন অবস্থা দেখে বন্ধু - বান্ধবরা একরকম জোর করেই আমাকে দেশে পাঠালো।
আব্বু- আম্মু এয়ারপোর্টে আসলেন, আম্মু আমাকে জড়িয়ে সেকি কান্না,
একি হাল হইছে তোর বাবা?? বাবা আম্মুকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, আর আমার মাথায় তখন শুধুই মৃন্ময়ী, আর কিচ্ছু নেই।
বাসায় গিয়ে ঘুম দিলাম লম্বা, ঘুম থেকে উঠে গেলাম অ্যান্টির সাথে দেখা করতে,
অ্যান্টির দিকে তাকাতে পারছিলাম না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
কেমন আছিস বাবা?
কিছু বললাম না, চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অনবরত,
কেমন শুকিয়ে গেছিস, খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিকমতো না?
অ্যান্টি মৃন্ময়ী কেমন আছে?
গিয়ে দেখে আসিস,
অ্যান্টির বাসা থেকে চলে আসলাম, আম্মুর কাছে শুনলাম,ও খুব একটা ভালো নেই, জামাই প্রায়ই মারধোর করে,
ওর নাম্বারটা দিতে পারো? আমি ওর বাসায় যাবো।
আম্মুর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে তখনি ওকে ফোন দিলাম।
মৃন্ময়ী??
তুমি!!!!!!!! কবে আসছ দেশে?
আজকেই,আচ্ছা আমি তোর বাসায় আসতে চাই ঠিকানা বল, এসে কথা হবে।
ওর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে পরদিন ওর বাসায় গেলাম।
আলিশান বাড়ি, দারোয়ানকে আগেই বলা ছিল, নাম বলতেই সোজা ঘরে নিয়ে গেল, আমি সামনের ঘরে বসে রইলাম।
একটু পর ও আসলো, একটা নীল শাড়ি পরা, মুখটা কেমন শুকনো, ঝরা পাতার মত, মনে হোল ওর সব সজীবতা কেউ একজন নিঃশেষ করে নিয়েছে, চোখের নিচে কালি পড়া, এই সেই প্রাণ চঞ্চল, উচ্ছল মৃন্ময়ী??
কেমন আছো?
এই প্রথম ও আমাকে তুমি করে বলল,
জানি না ঠিক, তুই কেমন?
আমার তো ভালোই থাকার কথা, তুমি তো বলেই দিয়েছিলে, আমি সুখে থাকবো। দেখছ তো আমার সুখ, বাড়ি-গাড়ি,অর্থ, কোন কিছুরই অভাব নেই আমার, তাও সারাক্ষণই আমি এতো শূন্যতায় ভুগি কেনও বলতে পারো? এইটুক বলেতে বলতেই ও কেঁদে ফেলল।
আমি আর ওর সামনে দাঁড়াতে পারলাম না, ওকে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়লাম, রাস্তাটা কেমন ঝাপসা-ঝাপসা লাগছে, স্মৃতি বার বার আমাকে ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাচ্ছে, মৃন্ময়ী আর আমি, সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি, লন্ডন, জেনিফার, উফফফ আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি,
কানে বাজছে আবুল হাসানের সেই প্রিয় কবিতা,
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরও কিছু কম!
একটু জলের খনি,
তার দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল,
একটি পুরুষ,তাকে বলুক রমণী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।