good
পাহাড়ী জঙ্গিদের ঢাকাইয়া দালাল।
১৭ এপ্রিল পাহাডি় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা ও কুপিযে় তিন বাঙালিকে হত্যার ঘটনায় খাগডা়ছডি়র রামগড় উপজেলার বড়পিলাকসহ আশপাশের ১৫-২০টি গ্রামের বাঙালিরা আতঙ্ক আর উত্কণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। দিনের বেলায় নিজেদের জায়গাজমিতে বাঙালিরা থাকলেও রাতে বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। পাল্টা হামলার ভযে় রাতভর লাঠিসোটা নিযে় পাহারা দেয় নারী-পুরুষ। একই অবস্থা পাহাডি় গ্রামগুলোতেও।
সেনাবাহিনী ও র্যাবের টহল দল আতঙ্কিতদের গুজবে কান না দিযে় নির্ভযে় থাকার জন্য আশ্বস্ত করছে। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতাযে়নের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ মোতাযে়ন করা হযে়ছে। বড়পিলাকের সহিংস ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।
ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করে ২৫ জনের সাক্ষ্য নিযে়ছেন।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেযা়র কথা থাকলেও কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আরও ৩ কার্যদিবস সময় বাডি়যে়ছেন বলে তদন্ত কমিটির প্রধান নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত কমিটি বিকালে ঘটনাস্থল কচুবাউন্তি, তৈকর্মা স্কুলসহ বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছে।
এদিকে মানিকছডি়তে পাহাডি়দের বাডি়তে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল বিকালে মানিকছডি় থানা পুলিশ ফজলুর রহমান নামে একজনকে আটক করেছে।
১৭ এপ্রিল রামগড় উপজেলার বড়পিলাক কচুবাউন্তি এলাকায় সংঘটিত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, অনুপ্রবেশের ঘটনায় গুইমারা থানার এসআই মঞ্জুরুল আবছার বাদী হযে় দুই-আডা়ইশ’ অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে একটি মামলা দাযে়র করেছেন। গুইমারা থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
অপরদিকে মানিকছডি় উপজেলায় উপজাতিদের ঘর পোডা়নোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংজঅং মারমা বাদী হযে় ১৬ বাঙালির বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা দাযে়র করেন। এর মধ্যে সবাই বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হযে়ছে, বিএনপি নেতারা ঘটনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালযে় পরিস্থিতি নিযে় বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় ব্যস্ত থাকলেও ঘটনার পর আওযা়মী লীগ নেতারা এ ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তাদের আসামি করাচ্ছে পাহাডি় ক্ষতিগ্রস্তদের দিযে়।
গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত দল বড়পিলাক জুনিয়র হাইস্কুলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করে। এসময় কমিটির অন্য দু’সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোযা়র হোসেন সাইদী ও রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।
১৮ এপ্রিল থেকে তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করলেও গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে। এর আগে কমিটির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় মাইকিং ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বড়পিলাক জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন তদন্ত কমিটির কাছে প্রথম সাক্ষ্য দেন। তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে বাঙালিরা বড়পিলাক জুনিয়র হাইস্কুল মাঠে সাক্ষ্য প্রদান করেন। দিনশেষে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হযে়ছে বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন জানান, রাতের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে তদন্ত কাজ শেষ না হওযা়য় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সময় বাডা়নোর আবেদন করবেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, তিন কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করা হযে়ছে।
এদিকে ১৭ এপ্রিল রামগড় উপজেলার বড়পিলাক কচুবাউন্তি এলাকায় সংঘটিত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, অনুপ্রবেশের ঘটনায় গুইমারা থানার এসআই মঞ্জুরুল আবছার বাদী হযে় দুই-আডা়ইশ’ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দাযে়র করেছেন। এদের মধ্যে ৫ জনকে শনাক্ত করা হলেও তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হয়নি। গুইমারা থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
অপরদিকে মানিকছডি় উপজেলায় উপজাতিদের ঘর পোডা়নোকে কেন্দ্র করে কংজঅং মারমা বাদী হযে় ১৬ বাঙালির বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা দাযে়র করেন।
ঘটনার জের ধরে স্থানীয় গুইমারা বাজার বয়কট করার চেষ্টা করে উপজাতিরা। গতকাল সাপ্তাহিক বাজারের দিন থাকায় উপজাতিরা বাজারে না এসে পার্শ্ববর্তী রামসু নামক স্থানে অস্থাযী় বাজার বসানোর চেষ্টা চালায়। তবে নিরীহ উপজাতিরা তাতে সাডা় না দেযা়য় এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হযে় যায়। ৩২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি সিন্দুকছডি় জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান স্থানীয় উপজাতিদের বাজারে আসার ক্ষেত্রে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বস্ত করলে পাহাডি়রা বাজারে আসতে শুরু করে।
গুইমারার সাপ্তাহিক হাটের দিন লাখ লাখ টাকার হলুদ বিক্রি হলেও গতকাল বাজার খাঁ-খাঁ করছিল। ভযে় সমতলের ব্যাপারীরাও আসেননি। বাজারে পাহাডি়দের উপস্থিতিও ছিল কম। তিন দিন ধরে জালিযা়পাডা়-সিন্দুকছডি় সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। ফলে অনেককে বাধ্য হযে় ভাডা়য় চালিত মোটরসাইকেলে চলাচল করতে দেখা গেছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বড়পিলাক এলাকার স্কুল-মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। জালিযা়পাডা় প্রাথমিক বিদ্যালযে় গিযে় দেখা গেছে, স্কুলের ৪ পাহাডি় শিক্ষকই আসেননি। প্রাথম সামযি়ক পরীক্ষা হলেও উপজাতি ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি ছিল কম।
জিওসি কর্তৃক ঘোষিত নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে গতকাল প্রদান করা হযে়ছে। নিহতের পরিবারের হাতে এ টাকা তুলে দেন ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিযা়র জেনারেল মাহবুবুল আলম মোল্লা।
এছাডা় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাডি়-বাঙালি পরিবারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫ কেজি করে চাল, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি তেল বিতরণ করা হযে়ছে। তবে ঘটনার তিন দিন পরও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির চূডা়ন্ত তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. আনিস উল হক ভূঁইযা় জানান, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮ পরিবারের তালিকা তৈরি করেছে। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষযে় ব্যস্ত থাকায় চূডা়ন্ত তালিকা তৈরি করতে পারেননি। তালিকা তৈরির পর ত্রাণসামগ্রীসহ পুনর্বাসন করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।