নিজস্ব প্রতিবেদক (কালের কণ্ঠ --১৯/০৪/২০১১
অবশেষে বহুপ্রতীক্ষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার 'বাংলাদেশ ফান্ড'-এর অনুমোদন দিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গতকাল সোমবার এসইসির ৩৮০তম কমিশন সভায় এ ফান্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমিশনের বৈঠক শেষে এসইসির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ফান্ড অনুমোদনের কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফান্ডের অনুমোদন শেয়ারবাজারে বিদ্যমান অস্থিরতা দূর করতে ভূমিকা রাখবে। সাইফুর রহমান জানান, পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপেন অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা অংশের এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার ট্রাস্ট ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা চুক্তি অনুমোদন করেছে কমিশন।
সাবরেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে এ চুক্তিনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে। এরপর এর সত্যায়িত সনদকপি এসইসিতে জমা দিতে হবে। এর পরই ফান্ডটি কার্যকর হবে। তিনি আরো জানান, এ ফান্ডের ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও ট্রাস্টি কাস্টডিয়ান হিসেবে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নিয়োগকেও এসইসি অনুমোদন দিয়েছে।
সাইফুর রহমান বলেন, এ ফান্ডের বাকি তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
সংগৃহীত টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। তিনি জানান, উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এ ফান্ডের ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ মুদ্রাবাজারে বিনিয়োগের অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু এসইসির মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধি অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিধান রয়েছে। কমিশন ৭৫ শতাংশই বিনিয়োগের শর্তে অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ফান্ড থেকে তিন হাজার ৭৫০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরো জানান, ফান্ডটির জন্য আরো কিছু আইনের ছাড় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিশন প্রচলিত আইনের মধ্যেই এটির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফান্ডের নিবন্ধন ফি ১০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক ফি পাঁচ কোটি টাকা, যার পুরোটাই ছাড় দেওয়ার আবেদন করেছে উদ্যোক্তারা। কমিশন এ আবেদন বিবেচনায় নেয়নি।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য নতুন করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির আগে অভিহিত মূল্যে ১০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ৫ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
এর আগে ২৯ মার্চ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে বাংলাদেশ ফান্ডের অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়। ফান্ডের মূল উদ্যোক্তা রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি এসইসির চেয়ারম্যানের কাছে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেয়।
শেয়ারবাজারে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৯ মার্চ ফান্ড গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফান্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা এবং প্রতি এক হাজার ইউনিটে এক মার্কেট লট ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ফান্ডটির উদ্যোক্তা অংশের অংশগ্রহণ চূড়ান্ত হয়েছে। মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আইসিবি ফান্ডের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫০০ কোটি টাকা দেবে।
সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি, জনতা ব্যাংক ২০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ১০০ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ১০০ কোটি এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন ১০০ কোটি টাকা দেবে। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ও জীবন বীমা করপোরেশন মিলে বাকি ৩০০ কোটি টাকা দেবে।
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো একটি যৌথ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়। কয়েক দফা আলোচনার পর গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ফান্ড নামে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ফান্ড গঠন নিয়ে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ফান্ড শেয়ারবাজারে চলমান অস্থিরতা দূর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাজারের তারল্য সংকট দূর করতে যথেষ্ট কাজে দেবে। তবে বাজার থেকে যে পরিমাণ টাকা বেরিয়ে গেছে, তা হয়তো ফিরে আসবে না। তবু এ ফান্ড বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থাহীনতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ফান্ড পাঁচ হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
তবু অনেক বড় ফান্ড এটা। যখন এ ফান্ডের টাকা দিয়ে শেয়ার কেনা শুরু হবে, তখন ভালো মৌল ভিত্তির শেয়ারগুলোর অবস্থা ভালো হবে। ফান্ড ম্যানেজারদেরও ভালো শেয়ার দেখে কেনা উচিত হবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, এটা বহু প্রতীক্ষিত ফান্ড। এর প্রভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
তবে ফান্ডটিকে কার্যকর করতে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা দরকার। সামান্য হলেও এ ফান্ড শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট দূর করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।