আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চর্যাপদ (১-১৫) [সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজের পাঠোদ্ধারসহ]

এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই...

চর্যা-১ [রাগ পটমন্জরী] লুই পাদানাম কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চীএ পইঠো কাল॥ ধ্রু॥ দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিমাণ। লুই ভণই গুরু পুচ্ছিঅ জাণ॥ ধ্রু॥ সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই। সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই॥ ধ্রু॥ এড়ি এউ ছান্দক বান্ধ করণক পাটের আস। সুনুপাখ ভিতি লেহু রে পাস॥ ধ্রু॥ ভণই লুই আম্‌হে ঝানে দিঠা।

ধমণ চমণ বেণি পিণ্ডি বইঠা॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: শরীরের গাছে পাঁচখানি ডাল– চঞ্চল মনে ঢুকে পড়ে কাল। দৃঢ় ক’রে মন মহাসুখ পাও, কী-উপায়ে পাবে গুরুকে শুধাও। যে সবসময় তপস্যা করে দুঃখে ও সুখে সেও তো মরে। ফেলে দাও পারিপাট্যের ভার, পাখা ভর করো শূন্যতার– লুই বলে, ক’রে অনেক ধ্যান দেখেছি, লভেছি দিব্যজ্ঞান। চর্যা-২ [রাগ গবড়া] কুক্কুরী পাদানাম দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই।

রুখের তেন্তলি কুম্ভীরে খাঅ॥ আঙ্গন ঘরপণ সুন ভো বিআতী। কানেট চোরে নিল অধরাতী॥ ধ্রু॥ সসুরা নিদ গেল বহুড়ী জাগঅ। কানেট চোরে নিল কা গই [ন] মাগঅ॥ ধ্রু॥ দিবসই বহুড়ী কাড়ই ডরে ভাঅ। রাতি ভইলে কামরু জাঅ॥ ধ্রু॥ অইসন চর্য্যা কুক্কুরীপাএঁ গাইড়। কোড়ি মঝেঁ একু হিঅহি সমাইড়॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: কাছিম দুইয়ে উপচে পড়ে ভাঁড়, গাছের তেঁতুল কুমিরের খাবার, ভেদ নাই আর ঘরে-আঙিনাতে, কানেট চোরে নিল অর্ধরাতে– শ্বশুর ঘুমে, বধূ একা জাগে, কানের কানেট কার কাছে সে মাগে? দিনে বধূ কাকের ডরে কাঁপে, রাতদুপুরে সে-ই ছোটে কামরূপে! কুক্কুরীপার চর্যা এমনই যে কোটির মাঝে একজন তা বোঝে।

চর্যা-৩ [রাগ গবড়া] বিরূ পাদানাম এক সে শুণ্ডিনি দুই ঘরে সান্ধঅ। চীঅণ বাকলঅ বারুণী বান্ধঅ॥ ধ্রু॥ সহজে থির করি বারুণী সান্ধ। জেঁ অজরামর হোই দিঢ় কান্ধ॥ ধ্রু॥ দশমি দুআরত চিহ্ন দেখিআ। আইল গরাহক অপণে বহিআ॥ ধ্রু॥ চউশটি ঘড়িয়ে দেল পসারা। পইঠেল গরাহক নাহি নিসারা॥ ধ্রু॥ এক সে ঘড়লী সরুই নাল।

ভণন্তি বিরুআ থির করি চাল॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: এক সে শুঁড়িনি, ঢোকে দুইখানি ঘরে, চিকন বাকলে মদ্য ধারণ করে। সহজে এ-মদ চোলাই করো রে, তবে অজর অমর দৃঢ়স্কন্ধ হবে। দশমীর দ্বারে ছদ্ম আমন্ত্রণ দেখে, খদ্দের সেদিকে ধাবিত হ’ন– পসরা সাজানো চৌষট্টি ঘড়ার, খদ্দের ঢুকে বা’র হয় না রে আর। একটাই ঘড়া, অতি-সরু মুখ তায়– বিরু বলে, ঢালো ধীরে ধীরে ঘড়াটায়। চর্যা-৪ [রাগ অরু] গুণ্ডরী পাদানাম তিয়ড্ডা চাপী জোইনি দে অঙ্কবালী।

কমলকুলিশ ঘাণ্টি করহুঁ বিআলী॥ ধ্রু॥ জোইনি তঁই বিনু খনহিঁ ন জীবমি। তো মুহ চুম্বী কমলরস পীবমি॥ ধ্রু॥ খেপহুঁ জোইনি লেপ ন জাঅ। মণিকুলে বহিআ ওড়িআণে সমাঅ॥ ধ্রু॥ সাসু ঘরেঁ ঘালি কোঞ্চা তাল। চান্দসুজবেণি পখা ফাল॥ ধ্রু॥ ভণই গুণ্ডরী অম্‌হে কুন্দুরে বীরা। নরঅ নারী মাঝেঁ উভিল চীরা॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: জঘনের চাপে, যোগিনী, আলিঙ্গন দে! দিন কেটে যাক পদ্ম-বজ্র-বন্ধে।

মুখ-ভরা তোর কমলের রস, চুমুর চুমুকে খাব। একমুহূর্ত না যদি থাকিস তাহলেই ম’রে যাব। খেপে গেছি আমি, যোগিনী আমার, মেয়ে, ঊর্ধ্বলোকেই করেছি যাত্রা মণিমূল বেয়ে বেয়ে– শাশুড়ির ঘরে তালাচাবি হ’ল আঁটা চাঁদ-সূর্যের দু’পাখা পড়ল কাটা। গুণ্ডরী বলে, আমি সুরতের হেতু নর-নারী-মাঝে ওড়ালাম কামকেতু। চর্যা-৫ [রাগ গুর্জরী] চাটিল পাদানাম ভবণই গহণ গম্ভীর বেগেঁ বাহী।

দুআন্তে চিখিল মাঝে ন থাহী॥ ধ্রু॥ দামার্থে চাটিল সাঙ্কম গঢ়ই। পার্গামি লোঅ নিভর তরই॥ ধ্রু॥ ফাড্ডিঅ মোহতরু পাটি জোড়িঅ। অদঅ দিঢ় টাঙ্গী নিবাণে কোরিঅ॥ ধ্রু॥ সাঙ্কমত চড়িলে দাহিণ বাম মা হোহী। নিয়ড়ি বোহি দূর মা জাহী॥ ধ্রু॥ জই তুম্‌হে লোঅ হে হোইব পারগামী। পুচ্ছতু চাটিল অনুত্তরসামী॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: ভবনদী বয় বেগে গহিন গভীর, মাঝগাঙে ঠাঁই নাই, পঙ্কিল দু’তীর– চাটিল ধর্মের জন্য সাঁকো গড়ে তায়, পারগামী লোক তাতে পার হ’য়ে যায়।

অদ্বয়-কুঠারে চিরে মোহতরু, তার তক্তা জুড়ে নির্বাণের সাঁকো হ’ল দাঁড়। চেয়ো না ডাইনে বাঁয়ে এ-সাঁকোয় চ’ড়ে, দূরে নয়, বোধি আছে নিকটেই ওরে। কীভাবে ওপারে যাবে, যারা যেতে চাও, অনুত্তর স্বামী গুরু চাটিলে শুধাও। চর্যা-৬ [রাগ পটমন্জরী] ভুসুকু পাদানাম কাহেরে ঘিণি মেলি অচ্ছহু কীস। বেটিল হাক পড়অ চৌদীস॥ ধ্রু॥ অপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী।

খনহ ন ছাড়অ ভুসুকু অহেরি॥ ধ্রু॥ তিন ন চ্ছুপই হরিণা পিবই ন পানী। হরিণা হরিণীর নিলঅ ন জানী॥ ধ্রু॥ হরিণী বোলঅ সুণ হরিণা তো। এ বণ চ্ছাড়ী হোহু ভান্তো॥ ধ্রু॥ তরংগতে হরিণার খুর ন দীসঅ। ভুসুকু ভণই মূঢ়হিঅহি ন পইসই॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: কারে করি গ্রহণ আমি, কারেই ছেড়ে দেই? হাঁক পড়েছে আমায় ঘিরে আমার চৌদিকেই। হরিণ নিজের শত্রু হ’ল মাংস-হেতু তারই, ক্ষণকালের জন্য তারে ছাড়ে না শিকারী।

দুঃখী হরিণ খায় না সে ঘাস, পান করে না পানি, জানে না যে কোথায় আছে তার হরিণী রানি। হরিণী কয়, হরিণ, আমার একটা কথা মান্ তো, চিরদিনের জন্য এ-বন ছেড়ে যা তুই, ভ্রান্ত! ছুটন্ত সেই হরিণের আর যায় না দেখা খুর– ভুসুকুর এই তত্ত্ব মূঢ়ের বুঝতে অনেক দূর। চর্যা-৭ [রাগ পটমন্জুরী] কানু পাদানাম আলিএ কালিএ বাট রুন্ধেলা। তা দেখি কাহ্নু বিমন ভইলা॥ ধ্রু॥ কাহ্নু কহিঁ গই করিব নিবাস। জো মনগোঅর সো উআস॥ ধ্রু॥ তে তিনি তে তিনি তিনি হো ভিন্না।

ভণই কাহ্নু ভব পরিচ্ছিন্না॥ ধ্রু॥ জে জে আইলা তে তে গেলা। অবণাগবণে কাহ্নু কাহ্নু বিমন ভইলা॥ ধ্রু॥ হেরি সে কাহ্নি নিঅড়ি জিনউর বট্টই। ভণই কাহ্নু মো হিঅহি ন পইসই॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: আলিতে কালিতে পথ আটকায়, তাই দেখে কানু বিমনাঃ, হায়! কানু বলে, কই করব রে বাস? যারা মন জানে তারা উদাস। তিন জন তারা, তারা যে ভিন্ন, কানু বলে, তারা ভবচ্ছিন্ন। এই আসে তারা, এই হয় হাওয়া বিমনাঃ কানু এ’ আসা ও যাওয়ায়।

নিকটেই জিনপুর: কীভাবে মোহান্ধ কানু সেখানে পালাবে? চর্যা-৮ [রাগ দেবক্রী] কম্বলাম্বর পাদানাম সোনে ভরিতী করুণা নাবী। রূপা থোই নাহিক ঠাবী॥ ধ্রু॥ বাহতু কামলি গঅণ উবেঁসে। গেলী জাম বহু উই কইসেঁ॥ ধ্রু॥ খুণ্টি উপাড়ী মেলিলি কাচ্ছি। বাহতু কামলি সদ্‌গুরু পুচ্ছি॥ ধ্রু॥ মাঙ্গত চড়্‌হিলে চউদিস চাহঅ। কেড়ুআল নাহি কেঁ কি বাহবকে পারঅ॥ ধ্রু॥ বাম দাহিণ চাপী মিলি মিলি মাঙ্গা।

বাটত মিলিল মহাসুহসাঙ্গা॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: করুণা-নৌকা পূর্ণ সোনায়, রুপা রাখবার জায়গা কোথায়? যাও রে, কামলি, আকাশের দেশে– জন্ম গেলে কি আর ফিরবে সে? খুঁটি উপড়িয়ে, কাছি খুলে শেষে, বাও রে, কামলি, গুরু-উপদেশে। গলুইতে চ’ড়ে চৌদিকে চাও, হাল তো নাই, কে বাইবে এ-নাও? বাঁয়ে আর ডানে চেপে চেপে গেলে ঠিক পথ পেয়ে মহাসুখ মেলে। চর্যা-৯ [রাগ পটমঞ্জরী] কানু পাদানাম এবংকার দৃঢ় বাখোড় মোড্ডিউ। বিবিহ বিআপক বান্ধণ তোড়িউ॥ ধ্রু॥ কাহ্নু বিলসঅ আসবমাতা। সহজনিলীবন পইসি নিবিতা॥ ধ্রু॥ জিম জিম করিণা করিণিরেঁ রিসঅ।

তিম তিম তথতামঅগল বরিসঅ॥ ধ্রু॥ ছড়গই সঅল সহাবে সূধ। ভাবাভাব বলাগ ন[া]ছুধ॥ ধ্রু॥ দশবলরঅণ হরিঅ দশদিসেঁ। [অ]বিদ্যাকরিকুঁ দম অকিলেসেঁ॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: উপ্‌ড়ে কালের শক্ত খুঁটি বিবিধ ব্যাপক বাঁধন টুটে সহজ-নলিনীকুঞ্জে ঢুকে মাতাল কানাই তৃপ্ত, সুখে। হাতির যে-প্রেম হাতিনির তরে তথতা সে-মদ বর্ষণ করে, ষড়্গতি স্বস্বভাবে শুদ্ধ, ভাবাভাবে কিছু নয় বিরুদ্ধ– দশ দিকে রেখে দশ রতন বিদ্যা-করীকে করি দমন। চর্যা-১০ [রাগ দেশাখ] কানু পাদানাম নগরবাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।

ছোই ছোই জাহ সো বাহ্মনাড়িয়া॥ ধ্রু॥ আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মা সাঙ্গ। নিঘিন কাহ্ন কাপালি জোই লাংগ॥ ধ্রু॥ এক সো পদুমা চৌষঠ্‌ঠী পাখুড়ী। তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বী বাপুড়ী॥ ধ্রু॥ হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে। আইসসি জাসি ডোম্বি কাহরি নাবেঁ॥ ধ্রু॥ তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবরনা চাংগেড়া। তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়পেড়া॥ ধ্রু॥ তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী।

তোহোর অন্তরে মোএ ঘেণিলি হাড়ের মালী॥ ধ্রু॥ সরবর ভাঞ্জিঅ ডোম্বী খাঅ মোলাণ। মারমি ডোম্বি লেমি পরাণ॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: লো ডোমনি, তোর নগর-বাইরে ঘর, নেড়া বামুন আমায় স্পর্শ কর্‌! আ লো ডোমনি, তোরে আমি সাঙ্গা করব ঠিক, জাত বাছে না কানু, সে যে নগ্ন কাপালিক। একখানি সে পদ্ম, তাতে চৌষট্টিটা পাপড়ি, তার উপরে ডোমনি নাচে, কী নৃত্য তার, বাপ রে! ডোমনি, তোরে প্রশ্ন করি, সত্যি ক’রে বল্, কার নায়ে তুই এপার-ওপার করিস চলাচল? আমার কাছে বিক্রি করিস চাঙাড়ি আর তাঁত, নটের পেটরা, তোর জন্যেই, দিই না তাতে হাত। তোর জন্যেই, হ্যাঁ লো ডোমনি, তোর জন্যেই যে এই কাপালিক হাড়ের মালা গলায় পরেছে। পুকুর খুঁড়ে মৃণাল-সুধা করিস ডোমনি পান– ডোমনি, তোরে মারব আমি, নেব রে তোর প্রাণ! চর্যা-১১ [রাগ পটমঞ্জরী] কানুপাদানাম নাড়িশক্তি দিঢ় ধরিঅ খট্টে।

অনহা ডমরু বাজই বীরনাদে॥ কাহ্ন কপালী যোগী পইঠ অচারে। দেহনঅরী বিহরই একাকারে॥ ধ্রু॥ আলি কালি ঘণ্টা নেউর চরণে। রবি শশী কুণ্ডল কিউ আভরণে॥ ধ্রু॥ রাগ দেষ মোহ লাইঅ ছার। পরম মোখ লবএ মুত্তাহার॥ ধ্রু॥ মারিঅ শাসু নণন্দ ঘরে শালী। মাঅ মারিআ কাহ্ন ভইল কবালী॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: দৃঢ়করে ধরা নাড়ির তরু বাজে অনাহত বীর-ডমরু কানু যোগাচার সাধন করে, একাকার ঘোরে দেহ-নগরে।

আলি-কালি পায়ে নূপুর ক’রে সূর্য-চাঁদের মাকড়ি প’রে ষড়্‌রিপু ক’রে ভস্মসার পরে সে মোক্ষমুক্তাহার। মেরে সে শাশুড়ি ননদ শালি এবং মায়াকে, কানু কাপালিক। চর্যা-১২ [রাগ ভৈরবী] কানু পাদানাম করুণা পিহাড়ি খেলহুঁ নঅবল। সদ্‌গুরুবোহেঁ জিতেল ভববল॥ ধ্রু॥ ফীটউ দুআ মাদেসি রে ঠাকুর। উআরিউএসেঁ কাহ্ন ণিঅড় জিনউর॥ ধ্রু॥ পহিলেঁ তোড়িআ বড়িআ মারিউ।

গঅবরেঁ তোড়িআ পাঞ্চজনা ঘালিউ॥ ধ্রু॥ মতিএঁ ঠাকুরক পরিনিবিতা। অবশ করিআ ভববল জিতা॥ ধ্রু॥ ভণই কাহ্নু আহ্মে ভাল দান দেহুঁ। চউষঠ্‌ঠি কোঠা গুণিয়া লেহুঁ॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: খেলতে ব’সে দাবা করুণা-পিঁড়ায় জিতেছি ভববল গুরুর কৃপায়: রাজাকে আটকাই দুইমুখা চালে, সামনে জিনপুর তাই তো কপালে। প্রথমে গজ চেলে বড়েগুলি, আর পাঁচটি আরও ঘুঁটি খেয়ে ফেলি তার, মন্ত্রী দিয়ে শেষে রাজাকেই খাই, কিস্তিমাত ক’রে ভববল পাই– ভালোই দান চালি, কানু বলে এই, চৌষট্টিটা ছঁক গুনে গুনে নেই। চর্যা-১৩ [রাগ কামোদ] কানু পাদানাম তিশরণ ণাবী কিঅ অঠকুমারী।

নিঅ দেহ করুণাশূণমে হেরী॥ ধ্রু॥ তরিত্তা ভবজলধি জিম করি মাঅ সুইনা। মঝ বেণী তরঙ্গম মুনিআ॥ ধ্রু॥ পঞ্চ তথাগত কিঅ কেড়ুআল। বাহঅ কাঅ কাহ্নি ল মাআজাল॥ ধ্রু॥ গন্ধ পরস রস জইসোঁ তইসোঁ। নিংদ বিহুনে সুইনা জইসো॥ ধ্রু॥ চিঅকণ্ণহার সুণতমাঙ্গে। চলিল কাহ্ন মহাসুহসাঙ্গে॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: ত্রিশরণ-নায়ে, আট কামরায় এ-দেহ ভাসিয়ে দেখি আমারই আপন দেহে মিলে যায় শূন্য-করুণা, এ কী! স্বপ্ন ও মায়া জেনে এ-জীবন, ভবনদী তরলাম, মাঝগাঙে এক ঢেউয়ের মতন অনুভব করলাম।

পাঁচ তথাগতে দাঁড় ক’রে দেহ-নায়ে কানু পার্থিব মায়াজাল ত’রে যায়। গন্ধ রস ও স্পর্শ থাকুক নিদ্রাবিহীন স্বপ্নের মতো, শূন্যে, মনেরে মাঝি ক’রে, সুখ– সঙ্গমে কানু হ’ল নির্গত। চর্যা-১৪ ডোমনি পাদানাম গঙ্গা জউনা মাঝেঁরে বহই নাঈ। তহিঁ বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলে পার করেই॥ ধ্রু॥ বাহতু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা। সদ্‌গুরুপাঅপসাএ জাইব পুণু জিণউরা॥ ধ্রু॥ পাঞ্চ কেড়ুআল পড়ন্তে মাঙ্গে পিঠত কাচ্ছী বান্ধী।

গঅণদুখোঁলে সিঞ্চহু পাণী ন পইসই সান্ধি॥ ধ্রু॥ চন্দ সূজ্জ দুই চকা সিঠি সংহার পুলিন্দা। বাম দাহিণ দুই মাগ ন চেবই বাহতু ছন্দা॥ ধ্রু॥ কবড়ী ন লেই বোড়ী ন লেই সুচ্ছড়ে পার করই। জো রথে চড়িলা বাহবা ণ জা[ন]ই কুলেঁ কুল বুড়ই॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: পারাপারের নৌকা চলে গঙ্গা-যমুনায়, মাতঙ্গিনী, যোগীকে পার করে সে-খেয়ায়। সাঁঝ ঘনাল, বাও রে, ডোমনি, জোরসে চালাও না’, গুরুর কৃপায় জিনপুরে ফের রাখব আমার পা। পাঁচটি বৈঠা পাছ-গলুইয়ে, পিঁড়ায় বাঁধা দড়ি, আকাশ-সেঁউতি দিয়ে নৌকা সেচো পড়িমরি।

সূর্য-চাঁদের লাটাই-দু’টি গোটায় এবং খোলে, ডাইনে বাঁয়ে পথ নাই রে, যাও বরাবর চ’লে! পয়সাকড়ি নেয় না ডোমনি, স্বেচ্ছায় পার করে; বাইতে যে-জন জানে না, সে ঘুরে ঘুরে মরে। চর্যা-১৫ [রাগ রামক্রী] শান্তি পাদানাম সঅসম্বেঅণসরুঅবিআরেঁ অলক্‌খ লক্‌খণ ন জাই। জে জে উজূবাটে গেলা অনাবাটা ভইলা সোই॥ ধ্রু॥ কুলেঁ কুল মা হোই রে মূঢ়া উজূবাট সংসারা। বাল ভিণ একু বাকু ণ্ ভূলহ রাজ পথ কন্ধারা॥ ধ্রু॥ মায়ামোহসমুদা রে অন্ত ন বুঝসি থাহা। অগে নাব ন ভেলা দীসঅ ভন্তি ন পুচ্ছসি নাহা॥ ধ্রু॥ সুনা পান্তর উহ ন দীসই ভান্তি ন বাসসি জান্তে।

এষা অটমহাসিদ্ধি সিঝই উজূবাট জাঅন্তে॥ ধ্রু॥ বাম দাহিণ দোবাটা চ্ছাড়ী শান্তি বুলথেউ সংকেলিউ। ঘাট ন গুমা খড় তড়ি ণ হোই আখি বুজিঅ বাট জাইউ॥ ধ্রু॥ অনুবাদ: স্বয়ং-সংবেদন-স্বরূপ বিচারে অলখ হয় না লক্ষণ; সোজা পথে গেল যে-যে, আর হয় না রে তাদের প্রত্যাবর্তন! কূলে-কূলে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ো না, মূঢ়, সোজা পথ এই সংসার– ভুল পথে তিলার্ধ না যেন রে ঘুরো, কানাত-মোড়ানো রাজ-দ্বার। মোহের মায়ার এই মহাসিন্ধুর না-বুঝিস কূল আর থৈ, নাও নাই, ভেলা নাই, দেখ যত দূর, নাথে না শুধাও, পাবে কই। শূন্য এ পাথারের পরিসীমা নেই, তথাপি রেখো না মনে দ্বিধা– অষ্টসিদ্ধিলাভ হবে এখানেই হামেশা চলিস যদি সিধা। শান্তি বলেন, বৃথা মরিস না খুঁজে, তাকাস নে বামে দক্ষিণে; সোজা পথে অবিরত চল্ চোখ বুজে, সহজিয়া পথ নে রে চিনে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।