চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা গাড়ী রাস্তার যে জায়গায়টায় নষ্ট হল তার আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গায় বাড়িঘরের কোন চিন্হ নেই। দুপাশে খালবিল আর ফসলের মাঠ। সন্ধা পেরিয়ে অন্ধকার জমাট বাধতে শুরু করেছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।
পাশে শাহানা অবিচল চেহারা নিয়ে বসে আছে।
উদ্দ্যেগের কোন চিন্হ নেই চোখেমুখে।
"এখন কি করবে?" জাহিদ শুধায় শাহানাকে।
শাহানা নড়েচড়ে বসে। মোবাইল বের করে রিং করে স্বামী সোহেলকে। পারিপার্শিক অবস্থার কথা জানিয়ে মোবাইল তুলে দেয় জাহিদের হাতে।
"তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আয়, উদ্ধার কর আমাদের। " জাহিদ তাড়া দেয় সোহেলকে।
"জায়গাটা খুব নিরাপদ মনে হচ্ছে না আমার। "
"আমার বৌ তোর কাছ থেকে নিরাপদ থাকলেই হল" ঠাট্টাচ্ছলে বলে সোহেল।
"তোর সুন্দরী বৌ আমায় পাত্তাই দিচ্ছে না"
আর দুএকটা কথা বলে জাহিদ লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল ফেরত দেয় শাহানাকে।
বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত খেতে এসে আরেক বন্ধু সোহেলের স্ত্রী শাহানার সাথে পরিচয় জাহিদের। তবে শাহানার সাথে জাহিদের পরিচয় আরো অনেক বছর আগে, সোহেলের সাথে পরিচয়েরও অনেক আগে। শাহানার সাথে জাহিদের বেশ কয়বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবারে অসম্মতিতে এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি।
এসব কিছুই সোহেলের কাছে লুকিয়ে রেখেছে জাহিদ।
শাহানা স্বামী সোহেলের কাছে জাহিদের গাড়িতে করে ঢাকায় ফেরার অনুমতি চাইলে সহজেই এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায় সোহেল। এমনিতেই শাহানা দেখতে খুবই সুন্দর। তাই স্ত্রীর প্রতি সোহেলের আস্থা আর বিস্বাসে অবাক হয় জাহিদ। এক সময়ের প্রেমিকার সাথে একাকী কয়টা ঘন্টা কাটাতে পারবে বলে মনে মেনে খুশীও হয় সে।
তারপর এই বিপত্তি।
বৃষ্টির ছাট বেড়েছে কিছুটা।
"তারপর তোমার সংসার ধর্ম পালন কেমন হচ্ছে শাহানা" গাঢ় স্বরে শুধায় জাহিদ।
"ভাল" ছোট্ট করে উত্তর দেয় শাহানা।
তারপর আগের মত উদাসীন ভাব নিয়ে বসে থাকে।
আড়চোখে শাহানার দিকে তাকায় জাহিদ।
বয়সের ভারে সৌন্দর্যের কিছুটা হানি ঘটলেও এখনও আকর্ষনীয় চেহারা মেয়েটির। লোভ জাগে জাহিদের মনে।
জাহিদের বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। স্বামীর উচ্ছৃংখল জীবন যাপনে অতীষ্ঠ হয়ে বছর পাচেক আগে জাহিদের স্ত্রী জাহিদকে ত্যাগ করে। এরপর থেকে জীবনযাপনে আরো বেশি অংসযত হয়ে উঠে জাহিদ।
দিনের অনেকটা সময় নেশা করে কাটায়। তার অনৈতিক জীবনযাপনে বেশ কয়জন অসত্ বন্ধুও জুটে যায় জাহিদের। তাদেরই একজন সোহেল।
মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি ওদের পাশ কাটিয়ে সাই সাই করে ছুটে যায়। একসময় নীরবতা অসহনীয় হয়ে উঠে জাহিদের।
"জান শাহানা আমি ভাল নেই। " জাহিদ কথাগুলো বলে
মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি ওদের পাশ কাটিয়ে সাই সাই করে ছুটে যায়। একসময় নীরবতা অসহনীয় হয়ে উঠে জাহিদের।
"জান শাহানা আমি ভাল নেই। "প্রথমেই নিরবতা ভাংগে জাহিদ।
"কেন?" এবার ছোট্ট করে প্রশ্ন করে শাহানা।
"তাতো তোমারই সবচাইতে ভাল জানার কথা। "
"তাই"
আবার কিছুক্ষনের জন্য নীরবতা নেমে আসে।
"আমার বন্ধু সোহেল স্বামী হিসাবে কেমন মানুষ?"
এবারও প্রথমে কথা বলে জাহিদ।
"কোনদিন ভেবে দেখিনি।
তা বন্ধু হিসাবে তাকে তোমার কেমন মনে হয়?" শাহানা উল্টো প্রশ্ন করে।
"শাহান অতীত তোমাকে কষ্ট দেয় না" প্রসংগ পাল্টায় জাহিদ।
"আমার কাছে জীবন যেখানে যেমন?"
"তারপরও ত বর্তমানের সাথে অতীতের দেনাপাওনার হিসাব মিলাতে হয়। "
শাহানা কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
"তোমরা মেয়েরা পানির মত, যে পাত্রেই ঢালা হয়না কেন ঐ পাত্রের আকার ধারন কর।
"
জাহিদের কন্ঠে অনুযোগের সুর।
শাহানা কথা বলার কোন আগ্রহ দেখায় না।
"আমি বেশি দিন বাচব না শাহানা। "
হঠাত করেই নাটকীয় ভংগিতে বলে উঠে জাহিদ।
"কেন খারাপ কোন অসুখ করেছে নাকি?" মৃদু হেসে বলে শাহানা।
"সত্যিই তাই। মদ খেতে খেতে লিভার পচিয়ে ফেলেছি, চিকিতসা দিয়ে হয়ত বড় জোর দু এক বছর বাচিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু বাচার কোন ইচ্ছে নেই আমার। "
এবার শংকিত হয়ে উঠে শাহানা।
"সত্যি বলছ?"
"তোমার হাত ছুয়ে বলছি।
" আচমকা শাহানার হাত জড়িয়ে ধরে জাহিদ।
আড়ষ্ঠ শাহানা কিছু বলার সুযোগ পায়না। বাক্যালাপের মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে দুজন।
"শাহানা তোমার কোলে মাথা রেখে মরতে পারলে মরে সুখ পেতাম"
শাহানা টের পায় অঘটন একটা ঘটতে যাচ্ছে।
তবুও করুনা হয় জাহিদের জন্য।
ভাবে বেচারার জীবনের এই পরিনতির জন্য হয়ত সেই দায়ী। বাক্যালাপের মধ্য দিয়ে পরষ্পর আরো ঘনিষ্ঠ হয় দুজন।
একসময় গাড়ির হেডলাইট নিভে যায়। পাপের অন্ধকারে ডুবে যায় দুজন।
পরের দিন সোহলের সাথে সাক্ষাত ঘটে জাহিদের।
"কিরে তোর নাকি বড় অসুখ করেছে?" প্রথমেই শুধায় সোহেল।
"ও কিছুনা তোর বৌয়ের সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা মাত্র। " হাসি খেলে যায় জাহিদের মুখে।
কিছুক্ষন একদৃষ্টে জাহিদের চেহারার পানে তাকিয়ে থাকে সোহেল।
তারপর কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, "আমি কিন্তু সত্য সত্যই বড় একটা অসুখে ভুগছি।
নির্ঘাত মৃত্যু। "
চমকে উঠে জাহিদ, তাকায় সোহেলের দিকে।
"আমি শরীরে এইচ আই ভি ভাইরাস বয়ে বেরাচ্ছি?"
হঠাত করেই মাথাটা শুন্য হয়ে যায় জাহিদের, তারপর প্রচন্ড একটা ভয় চেপে বসে মাথায়, মৃত্যু ভয়।
"ভাবি কি জানে?" কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কেপে উঠে জাহিদের।
"বেচারীকে জানানোর কোনো সুযোগ পাইনি, নিশ্চিত ওর শরীরেও সংক্রমন ঘটেছে, তাই ভাবছি বাচ্চা কাচ্চা নেবনা আর।
"
জাহিদের গলা শুকিয়ে আসে। চিন্তা শক্তি লোপ পেতে থাকে, মৃত্যুটাকে খুব কাছের মনে হয় তার।
"বাদ দে ওসব, শুধু শুধু মন খারাপ করা। কাল বাসায় আসিস, শাহানা তোকে নিজ হাতের রান্না করে খাওয়াবে বলেছে। " কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে সোহেল আবার হেসে বলে উঠে, "ভয় নেই ছোয়াছুয়িতে এইচ আইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয় না, সংক্রমন ঘটে রক্তের মাধ্যমে আর অবৈধ যৌন সংসর্গে।
সোহেলর হাসি তীক্ষ্ন ছুরির মত তার অন্তর্মুলে গিয়ে বেধে জাহিদের।
জাহিদ কোন কিছুই বলার শক্তি পায় না। কেবলই টের পায় পাপ তার মৃত্যু ডেকে এনেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।