আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপজ্জনক রাজনীতিবিমুখতা



সম্প্রতি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষ রাজনৈতিক দলের ওপরে আস্থা, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন। একটা আস্থাহীনতার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দলের ওপরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তারা রাজনীতিবিমুখ হতে শুরু করেছেন। এটি একটি দেশ, জাতি এবং রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর লক্ষণ। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে প্রতারিত হচ্ছে এমন উপলব্ধিতে পৌঁছেছে মানুষ।

বেশ কিছু তরুণ ‘হেইট পলিটিক্স’ নামে একটি ফেসবুক খুলেছে – যাতে অসংখ্য মন্তব্য এসেছে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এবং রাজনীতির বিরুদ্ধে। সমাজের ক্ষোভ এবং বিক্ষোভের একটি প্রকাশ ঘটেছে এই তরুণদের ফেসবুক খোলার মধ্য দিয়ে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তারা যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল তা গণমানুষের নানা কল্যাণ এবং উন্নয়নের কথামালায় ছিল পরিপূর্ণ। এই ইশতেহারে প্রধান পাঁচটি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের দ্রুত নিষ্পত্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা এবং সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিষিদ্ধ করা।

এ ব্যাপারে সর্বসম্মত একটি আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ, দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও ছিল এই অগ্রাধিকারের মধ্যে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে বাস্তব অবস্থাই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি কি। দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃংখলা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসের সীমাহীন সংকট এখন শহর বন্দর সর্বত্র। বিদ্যুৎ, পানির অভাবে এখন ঘেরাও, অবরোধ, বিক্ষোভ হচ্ছে। মানুষ এক কথায় দিশেহারা এবং উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।

তারা এ জন্য নির্বাচিত সরকারকে দায়ী করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক এবং সামরিক শাসনের পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনমনে এই আকাঙ্ক্ষা এবং আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল যে, রাষ্ট্র তাদের মৌলিক চাহিদা এবং অধিকারগুলোর ব্যাপারে আন্তরিক হবে, সংকট মিটবে, সুশাসনের পথ প্রশস্ত হবে। উন্নয়ন হবে জীবনমানের। স্বতঃসিদ্ধ একটি বিষয় হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের চুক্তিই হচ্ছে জনগণ তার অধিকারসমূহ রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে এবং রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপক হিসেবে সরকার জনগণের সে অধিকার এবং চাহিদাগুলো নিশ্চিত করবে। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে ক্রমাগতভাবে সরকার গঠনকারী রাজনৈতিক দলগুলো সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করছে।

এই অবস্থায় মানুষ যখন ত্যক্তবিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ হয় এবং অধিকতর ভালোর আশায় উন্মুখ হয়ে পড়ে তখন তার সুযোগ গ্রহণ করে করেছে অতীতে উচ্চাভিলাষী কিছু উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ শুধু রাজনীতির সুষ্ঠু বিকাশের জন্যেই ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর সেনাবাহিনীর জন্যেও। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মানুষ তথাকথিত দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পালাক্রমে একেকবার একেক দলকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছেন। জনগণের দিক থেকে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, দুঃশাসন কিংবা অপশাসনের হাত থেকে রক্ষা এবং আরো ভালো শাসনের প্রত্যাশায় তারা কখনোই এই দু’দলকে টানা দু’বার ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। এর কারণ একদল যখন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি তখন মানুষ আরেকটি দলকে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে এবং দেখেছে তাদের কিছু শিক্ষা হলো কিনা।

১৯৯১-এর পরে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত দুই দফা করে ক্ষমতায় এসেছে। এই দুটি দল নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করেছিল সেসব জনস্বার্থ সম্পৃক্ত অঙ্গীকার থেকে বার বার সরে গেছে। রাষ্ট্র কেন গঠিত হয়েছে, রাষ্ট্র কেন টিকে আছে এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের চুক্তির বিষয়গুলো কী কী ষষ্ঠদশ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সেসব নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো ‘সামাজিক চুক্তির’ তত্ত্ব দিয়ে তাতে পূর্ণতা এনেছেন। রুশো বলেছেন, যে সমাজে মানুষ তার মৌলিক চাহিদার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, সে সমাজের মানুষগুলো আইনের শাসন থেকেও বঞ্চিত হয়, বঞ্চিত হয় অধিকার থেকে।

পরবর্তীকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বললেন, সমঅধিকার না থাকলে সুযোগের সমঅধিকার থাকে না। রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য এই বিষয়গুলো খুবই জরুরি। মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক এই কথা বহুকাল আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের সংবিধান যারা প্রণয়ন করেছেন তারাও বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে মানুষের অধিকারগুলোর কথা বলেছেন। ওই সংবিধানেই মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণ সরকার গঠন করেন সত্য কিন্তু তাদের দেওয়া অঙ্গীকার তারা বারবার ভঙ্গ করছেন। আইন-শৃংখলার অবনিত, দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি, আশ্রয়হীনতা, গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের তীব্র সংকট, অর্থনৈতিক অনুন্নয়ন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্র, উত্তরাধিকারের রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে এক চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে দেশটি। অথচ ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি সরকারই নানা অঙ্গীকারের কথা বলেছিল, প্রত্যাশার কথা বলেছিল এবং উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। এ অবস্থায় মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে বিশ্বাস, আস্থা হারানোর পাশাপাশি – এদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়া যাবে এমনটা বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশ্বাস ভঙ্গের যাতনায় মানুষ এখন বিষণ্ণ, আতংকিত।

যারা মোটা দাগে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকে এক করে দেখেন সে সব সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। আগেই বলা হয়েছে, এটি একটি ভয়ংকর লক্ষণ রাষ্ট্রের জন্য। রাজনীতি কি তাহলে এখন ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে? এ প্রশ্নও করেছেন অনেকে। কয়েকটি হিসাবে দেখা যায়, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল ৪ শতাংশ। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২৪ শতাংশে।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ। এছাড়াও ওই ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, যারা পরবর্তীতে ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েছেন এবং সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের সংখ্যা ৬ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে এ সংখ্যা বেড়েছে। ২০০১-এ বেড়েছে আরো। ২০০৬-এ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এক জরিপে বলেছে, অষ্টম সংসদের পঞ্চদশ থেকে অষ্টদশ অধিবেশনে অধিকাংশ সময়ে অনুপস্থিত সরকারি এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের পেশা ব্যবসা।

তবে অব্যবসায়ী ‘রাজনীতিকদের’ আচরণও সমাজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা ছাড়াও রাজনীতির কিছু নেতিবাচক প্রবণতা সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এগুলোও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অধিক মাত্রায় অংশগ্রহণের একটি খারাপ দিক। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সার্বিক লুণ্ঠন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের রাজনীতিকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। মানুষ এখন রাজনীতিকে অর্থ তৈরির উপায় এবং মাধ্যম হিসেবে মনে করছেন।

রাজনীতি যে রাজনীতির অবস্থায় নেই সে উপলব্ধি মানুষের মধ্যে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ থেকেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস-সন্দেহ থেকে মানুষ এখন রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের যে অবিশ্বাস, সন্দেহ তাকে আমি মারাত্মক একটি প্রবণতা বলে মনে করি। কিন্তু রাজনীতিবিদরা এই চরম সত্য কথাটি বুঝতে পারেন না। ’ তিনি বলেন, সঠিক ধারায় রাজনীতি না চলার কারণে একটি বিশেষ ধরনের রাজনীতি বিমুখতা তৈরি হয়েছে।

প্রফেসর তালুকদার মনিরুজ্জামান মনে করেন, ‘রাজনীতিবিদদের মানুষ এখন খারাপ চোখে দেখে। রাজনৈতিক দলকে দুষ্ট চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলেই রাজনীতি তার সঠিক অবস্থানে ফিরে আসবে। ’ তিনি বলেন, রাজনীতিকরা ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা রাজনীতিক হয়ে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে গেছেন। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে মানুষ যখন রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছে তখনই সামরিক শাসন এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমনটির সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তালুকদার মনিরুজ্জামান।

তিনি মনে করেন, রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আর তা যদি না হয় তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়ংকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবরার চৌধুরী মনে করেন, ‘মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রতারিত হচ্ছে বলে মনে করেন। বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিকে সমার্থক করে ফেলে। এই রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা এমনভাবে জন্ম নিয়েছে যে, দেশের প্রতি তাদের মমত্ববোধ কমে যাচ্ছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে রাজনীতিবিদরা দেশের নেতা হওয়ার বদলে দলের নেতা হতেই ভালোবাসেন। আর তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। ’ ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাছির হোসেন মনে করেন, সরকার নানা যুক্তি দেখালেও মানুষ ফলাফল দেখতে চায়। যদি ফলাফল দেখতে না পায় তাহলে প্রত্যাশা ভঙ্গ হয়, মানসিক অশান্তি বাড়ে। আর তখনই মানুষ ‘আল্লাহর উপরে সব কিছু ছেড়ে দেয়, যা কোনোক্রমেই ভালো লক্ষণ নয়।

’ বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক এবং নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জাহির আল আমিন বলেছেন, ‘আমি নিজে এই দেশে ভালো কিছু হবে বলে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আমি চাই না আমার ছেলেটি দেশে থাকুক। আমি আমার ছেলেকে বারবার বোঝাচ্ছি, যে সমাজে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, খারাপ লোক রাজনীতিতে প্রাধান্য পায় সে সমাজে বসবাস করা কঠিন। এ কারণেই মেধাবী ছেলেরা দেশ ছাড়ছেন। আর যারা দেশে পড়ে আছেন তারা হয়ে পড়ছেন রাজনীতিবিমুখ।

’ নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বলেছেন, ‘দুটো প্রধান দলের বিফলতা দিয়ে পুরো রাজনীতির বিফলতা মাপা উচিত হবে না। মানুষ বিশেষ দলের বিপক্ষে যাচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু এর বিকল্পও গড়ে উঠছে না। এটাই হচ্ছে দুঃখের কথা। ’ নিউমার্কেটের মুদি দোকানের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বললেন একটি ভিন্ন কথা।

তিনি বললেন, ‘এই দল’ ভালো করবে এমন আশায় একবার ভোট দেই, দেখি এরা খারাপ করছে। তখন আরেকটি দলকে খুঁজে বের করি। দেখি এই দলটিও খারাপ করছে। ভোট দিয়ে আমরা এখন বিপদে পড়ে গেছি। এখন সাধারণ মানুষও রাজনীতি বোঝে।

তারা রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। মানুষ এখন ত্যক্ত-বিরক্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিও, রাজনীতির উপরেও। ’ হেইট পলিটিক্স যে ফেইসবুক খুলেছে বেশ কিছু তরুণ তার একজন মোস্তফা মনোয়ার তপু। ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশের যে দলই ক্ষমতায় যায় তারা নিজের কথাই চিন্তা করে।

জনগণের কথা চিন্তা করে না। পরিবার এবং আশপাশের মানুষগুলোই তাদের কাছে আপন। তারা ভুলে যান রাজনীতি সবার জন্য, তাদের পরিবার এবং আশপাশের মানুষের আখের গোছানোর জন্য নয়। মানুষ এখন রাজনৈতিক দল বিমুখ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিমুখ হয়ে গেছে। এর জন্য রাজনীতির শুদ্ধতা প্রয়োজন।

রাজনীতিতে শুদ্ধতা না এলে মানুষ আরো রাজনীতিবিমুখ হয়ে যাবে। ’ একই কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র নিত্যানন্দ পাল, চারুকলার ছাত্রী জাফরিন সুলতানার কণ্ঠেও। নিত্যানন্দ পাল বললেন, ‘রাষ্ট্র যদি রাজনীতিবিদদের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বাংলাদেশ তার উদাহরণ। আমাদের রাজনীতিবিদরা বুঝে গেছেন যে, তারা পাঁচ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আর এ কারণেই তারা পাঁচ বছরকে লুটপাটের একটি উৎকৃষ্ট সময় বলে মনে করেন।

’ জাফরিন সুলতানা বললেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতার দলগুলোর যে ‘চেহারা’র সৃষ্টি হয়েছে তাতে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে রাজনীতিবিমুখ হয়ে গেছেন। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। এটা রাজনীতিবিদ এবং তাদের আন্তর্জাতিক বন্ধুদেরই পরিকল্পনার ফসল। ’ এ তো গেল দেশের কথা। লন্ডন প্রবাসী ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বললেন, ‘বারবার স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার চিন্তা করি।

কিন্তু যখন দেখি রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য এবং এই কারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আইন-শৃংখলার অবনতি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংকট তখনই দেশে আসার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলি। ’ মানুষ যে রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ঢাকায় আসা উত্তরবঙ্গের রিকশাচালক মোকাররম আলী। তিনি এখন বলছেন, ‘সবকিছুই নিয়তি’। বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরে এই যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং রাজনীতিবিমুখতা তা রাষ্ট্র এবং সমাজের জন্য ভয়ংকর এবং মারাত্মক একটি রাজনৈতিক উপসর্গ। যদি রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের মনের কথাটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন তাহলে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে বাধ্য।

আর উপলব্ধিহীনতাই জন্ম দিতে পারে, ডেকে আনতে পারে কোনো অরাজনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই অগণতান্ত্রিক, ফের অরাজনৈতিক এবং সংবিধান লংঘনকারী কোনো ব্যবস্থা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। ইতিবাচক ও গণমুখী রাজনৈতিক তৎপরতায় মধ্য দিয়েই মানুষকে আবার রাজনীতির দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক সংকটের সমাধান শুধু রাজনীতি দিয়েই সম্ভব, অন্য কোনো পথে নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.