আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিন্দির আগ্রাসন এবং আমাদের নিস্পৃহতা

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

বাংলাদেশী কোনো টিভি চ্যানেল ভারতের কোথাও দেখা না গেলেও এদেশ ভারতীয় চ্যানেলের সাংস্কৃতিক উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে। এক সময় ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিটিভির অনুষ্ঠানের টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচার দেখার জন্য ভারতীয় নাগরিকরা উদগ্রীব থাকতেন। এ অবস্থা এখন আর নেই। ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়াল, নাটক নেতিবাচকভাবে আঘাত করছে পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধে।

হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমাবাহিত সংস্কৃতি মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের অন্দরে ঢুকছে ভয়াবহভাবে। দর্শক প্রতি ১০০ মিনিটের মাত্র ৩০ মিনিট দেখেন বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল। বাকি ৭০ মিনিট দেখেন বিদেশী চ্যানেল। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় দেখেন ভারতীয় চ্যানেল। তারা বেছে নিচ্ছেন ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল, সিনেমা, গান আর রিয়েলিটি শোগুলো।

তারা অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুর চেয়ে বাহ্যিক চাকচিক্যে মুগ্ধ। চ্যানেলগুলোর দর্শক বাড়াতে নানা ফোরাম গঠন করা হচ্ছে। হিন্দি টিভি অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রদর্শিত ভারতের পণ্যগুলোর বিজ্ঞাপনে ভোক্তা তৈরি হচ্ছে এদেশে। সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের মধ্যে চলে হিন্দি ভাষায় আলাপচারিতা। দেশের মার্কেট ম্যানিকিন থেকে নগর, শহরের রাস্তার বিজ্ঞাপন বোর্ডে বলিউড নায়ক, নায়িকাদের ছবি শোভা পাচ্ছে।

রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা সময়কালে হিন্দি চ্যানেলগুলোর দর্শক সংখ্যা বেশি থাকে। এ সময় চ্যানেলগুলোতে সিরিয়াল, রিয়েলিটি শো দেখানো হয়। তবে সন্ধ্যার সংবাদের সময় বাংলাদেশী টিভির দর্শক সংখ্যা বেশি থাকে। হুবহু ভারতীয় অনুকরণ, হিন্দি সিরিয়ালে দেখা বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের যৌনাবেদনময়ীর সাজে সাজসজ্জাসহ নানাভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানে চলছে ভারতীয় সংস্কৃতি। তাছাড়া এসব চ্যানেলের সিনেমা, টিভি সিরিয়ালে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের প্রেম করার কৌশল, ভাষা বিন্যাস, পোশাকের স্টাইল, চুল-চেহারার বিন্যাস, বাবা মায়ের অবাধ্য হওয়া, আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

পরকীয়া প্রেম, সম্পত্তি দখল নিয়ে নানা উদ্ভট বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। হিন্দি সিরিয়ালগুলো মহিলা, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত গৃহিণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তাদের সময় কাটে এসব দেখে। অনেকের ঘুম আসে না সিরিয়াল না দেখলে। সেগুলো দেখার জন্য অনেক ঘরে ঝগড়া পর্যন্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে হিন্দি ভাষা অনেকের আলাপচারিতা চর্চার অংশ হয়ে উঠছে। জ্ঞানচর্চা, ব্যবসা, অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইংরেজি শেখার প্রয়োজনীয়তার মতো হিন্দির গুরুত্ব না থাকলেও এর চর্চা দিন দিন বাড়ছে। ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান আমলের উর্দুর মতো এখন এ জাতির ঘাড়ে হিন্দি চেপে বসছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশি নবীনেরা এখন হিন্দি বলায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.