আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
ছোটবেলায়ই হিন্দির আগ্রাসনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের শিশুরা। ডোরেমন নামে যে কার্টুনকে ঘিরে হিন্দির এ আগ্রাসন, সেখানে কেবল ভাষা নয়, বিশ্বাসেরও বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাই এ নিয়ে পরিবার ও শিক্ষাঙ্গন পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
শিশু শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক শারমিন হক বলেন, এটি এখনই থামাতে হবে, নইলে সঙ্কট বাড়বে। অভিভাবকেরা বলছেন, বিকল্পও দরকার রয়েছে। তারা কোনোভাবেই চান না তাদের সন্তান হিন্দি ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে উঠুক।
ডোরেমনের কল্পকাহিনী গড়ে উঠেছে একটি রোবট বিড়ালকে ঘিরে। বিড়ালটি নোবিতা নামের এক ছেলেকে সাহায্য করার জন্য বিংশশতাব্দীতে এসে হাজির হয়।
১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম জাপানি এ কার্টুনটি কমিকস হিসেবে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে জাপানের সংস্কৃতি অন্যান্য দেশের কাছে তুলে ধরার জন্য, জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডোরেমনকে দেশটির প্রথম কার্টুন দূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা চিত্র আসলেই উদ্বেগজনক। চার থেকে ১০ বছরের শিশুরা পুরো দস্তুর হিন্দিতে কথা বলতে পারে। এটি হয়েছে তাদের প্রিয় কার্টুন ডোরেমন দেখে।
বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের অন্তত ছয়টি স্কুল ঘুরে এ চিত্র মিলেছে।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী রাইসা জানায়, ডোরেমন ছাড়া তার চলে না। বাসায় যতক্ষণ থাকে তার বেশির সময় কাটে ডোরেমন দেখে। তার মা এমন তথ্য উল্লেখ করে জানান, বিকল্প না থাকায় শিশুকে কোনো একটা বিষয়ে ব্যস্ত রাখার জন্য কার্টুনের এ আগ্রাসন তিনি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
একই স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়ামের মা বলেন, এতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
হিন্দি হয়ে যাচ্ছে শিশুর দ্বিতীয় ভাষা। বাসায় তো ও হিন্দি বলেই, স্কুলেও অনেক সময় শিক্ষকদের সাথে হিন্দিতে কথা বলে। এতে এক ধরনের সমস্যা তিনি উপলব্ধি করছেন, যাতে তার সন্তানের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাপানি কার্টুন ডোরেমন বাংলাদেশে প্রচারিত হয় ভারতীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হিন্দি ভাষায়। শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এ কার্টুনটি দেখে শিশুরা বাংলা ভাষার চেয়ে হিন্দি ভাষার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে বলে অভিভাবকেরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এ বিষয়টিকে উদ্বেগের সাথে দেখছেন।
জাপানি ভাষা থেকে হিন্দিতে ভাষান্তরিত ডোরেমেন ভারতীয় একটি হিন্দি চ্যানেলে প্রতিদিন দেখানো হয়। ক্যাবল কানেকশনের কল্যাণে এ কার্টুন বাংলাদেশের শহর ও মফস্বলের শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের চার থেকে ১২ বছর বয়সী এবং তারও ওপরের দিকের শিশুরা খুব সাবলীলভাবেই হিন্দিতে ডোরেমন কার্টুনের গান গাইতে পারে। শুধু গানই নয়, শহর এবং মফস্বলের অনেক শিশুই হিন্দিতে কথা বলতে পারে সাবলীলভাবে ।
লালমাটিয়ার এক অভিভাবক জিনিয়া মাসুদ বলেন, ‘এটা আমাদের একটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশুই এখন বাসায়, বন্ধুদের সাথে এমনকি স্কুলেও হিন্দি ভাষায় কথা বলে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিশুদেরও দ্বিতীয় ভাষা হয়ে উঠেছে হিন্দি। ’
শিশু শিা গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন হক বলেন, অভিভাবকদের এই আশঙ্কা অমূলক নয়। বরং ভবিষ্যতে এর ফলাফল আরো খারাপ হতে পারে।
বেড়ে ওঠার সময়ে একটি ভাষাই যথেষ্ট। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিশুরা স্কুলে ইংরেজি শিখছে। এরপর সে আবার কার্টুন দেখে হিন্দে ভাষা শিখছে । এর ফলে তার ভাষার বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
তার মতে, ভিন্ন সংস্কৃতির এ কার্টুনের প্রতি শিশুরা যদি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে, তা হলে তা সামাজিকভাবেও বিভিন্ন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে।
তা হলে অভিভাবকরা কেন তাদের সন্তানদের এ কার্টুন দেখতে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে ড. শারমিন বলেন, অভিভাবকেরাও অনেক সময় চান, শিশুরা কিছু একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। তাই তারা এতে বাধা দিচ্ছেন না।
তবে এ সমস্যার একটি বড় কারণ হিসেবে অভিভাবকেরা জানান, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে শিশুতোষ অনুষ্ঠানের স্বল্পতার কথা।
দেশে বর্তমানে সরকারি বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থাকার পরেও শিশুতোষ অনুষ্ঠানের এ স্বল্পতা কেন? এমন প্রশ্নে বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, ‘কেউ কেউ আগ্রহী। তবে এ েেত্র দ নির্মাতার অভাব ও বাজেট স্বল্পতায় অনেকেই শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মাণের ঝুঁকি নিতে চান না।
’
কিন্তু অনেক অভিভাবক বলেন, কার্টুনটি বাংলা বা ইংরেজিতে ভাষান্তরিত করে বাংলাদেশে প্রচার করা হোক। তবে সেটিও বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য লাভজনক হবে না বলে শামীম শাহেদের ধারণা।
তবে বাংলাদেশে দিগন্ত, বাংলাভিশন, বিটিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল শিশুদের জন্য কিছু অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার করে। অভিভাবকেরা বলেন, এসব অনুষ্ঠানের বেশির ভাগই শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারে না।
ডোরেমন কেবল ভাষা শিক্ষাই দিচ্ছে না, এখন শিশুদের মধ্যে ডোরেমন কার্টুনের বিভিন্ন উপকরণও আকৃষ্ট করছে।
গুলশানের সিটি করপোরেশন বিপণিবিতানের একটি স্টোরের ব্যবস্থাপক বলেন, অনেক অভিভাবক এসে ডোরেমন ব্যাগ চান, কেউ ডোরেমন পুতুলের সন্ধান করেন। আমরা সেটি রাখি এবং এর বিক্রি যথেষ্ট ভালো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।