আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচক্রে একজন মুক্ত স্বপ্নচারী।

^^^^^^^^^

. ((১)) ডাক নাম রিগ্যান, কতইবা বয়স? বার বা তের। এর মধ্যে পবিত্র কোরআনের বাইশ পারা হেফজ হয়ে গেছে তার, এর পরের কয়েক পারাই নাকি সবচেয়ে কঠিন আর হবু হাফেজরা এটুকু এসেই বেশিরভাগ ঝরে যায়। যদিও তার মায়ের দাবি মাদ্রাসার জেলখানা না হলে তার ছেলে কোনদিন এটুকু অর্জন করতে পারতনা। আর রিগ্যান প্রতিবার ছুটিতে (বছরে দুই বা তিনবার) জেলখানা ছাড়ার সময় ভাবে এইবারই তোমাকে শেষ দেখে নিলাম, আবার ছুটি শেষে মামা/চাচা'র হাতে তার হাত শক্ত করে ধরা অবস্থায় জেল খানায় ফেরৎ আসতে হয়। এই বয়সে দুই বার ব্যার্থ জেল পালানোর কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে তার নাম জেলার হুজুরদের মুখে মুখে।

যখন পড়া থাকেনা তখন সটান শুয়ে শুয়ে ভাবে কেমন করে জেল থেকে পালানো যায়। সেবার মামার বিয়ের ছুটি পেয়েছিল এক সপ্তাহর। এর মাঝে দুইবার ঝংকার সিনেমায় একই সিনেমা দেখে সে ভাবে প্রতি সপ্তায় রূপালী জগতের এসব হূরপরীদের দেখতে না পারলে তার জীবনটাই বৃথা। হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে তিনটা হেক্স-স ব্লেড কিনে নেয় পনের টাকায়। এরপর জেলে যাওয়ারদিন ব্লেডগুলো অর্ধেকে ভেংগে পাউরুটির ভেতর করে জেলে পাচার করে ফেলে।

এরপর প্রতিদিন একটু একটু করে কাটে জানালার গ্রিল আর কাটা অংশে সাবান লাগিয়ে দেয় যাতে কারো নজরে না আসে জিনিসটা। এভাবে এক রাতে তিনতলার তাদের জেলের জানালা কেটে কাপড় শুকাতে দেয়ার রশির সাহায্যে সতেরজন পালিয়ে যায়, শীতের রাতে এক একজন এক একদিকে দৌঁড়ায় যাতে হুজুররা জেনে গেলেও পালিয়ে যাওয়াদের ধরতে পাঠানো অন্য ছাত্ররা যাতে তাদের ধরতে না পারে। মাদ্রাসার পশ্চিমদিকে ধু-ধু বিল, সদ্য ধান কাটা শক্ত নাড়ার খোঁচা খেতে খেতে প্রাণপণ দৌঁড়ে একসময় বিলের মাঝখানে চাষীদের একটা ফসল তোলার অস্থাযী ঘরের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। মাঝে বিল থেকে চাষীদের বাড়িতে কাটা ধান নিয়ে যাওয়ার অনেক ঝামেলা বলেই এমন মৌসুমি ঘরগুলো বানিয়ে ধান তোলা হয়। দূরে শহরে যাওয়ার বড় রাস্তায় মাঝে মাঝে গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে।

প্রচন্ড ক্লান্তি আর প্রায় জমে যাওয়া হাত-পা গরম করতেই কৃষকেরা ঝেড়ে রাখা ঘরের স্তুপের মাঝে ডুব দেয় সে। রাতটা এখানে কাটিয়ে সকালেই শহরের দিকে যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। ((২)) কেপটাউনের পোর্টসাইড টাওয়ারের সাতান্ন তলায় তার স্টুডিও ফ্ল্যাট, কয়েকদিন হল এই শহরে এসছে। একটা ভারি চাকরি করার এই একটাই সুবিধা, তার চলার পথের সব অন্যরাই সাজিয়ে রাখে। কোম্পানীর প্রজেক্টের কাজে বেশ কিছুদিন তাকে এখানে থাকতে হতে পারে।

খারাপ না, সাগর পাহাড়ের মিতালি দেখতে দেখতে কফিতে বা কারো ঠোঁটে চুমুক দেওয়া। চুমুর কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল দুবাই থেকে তার পাশের সিটে ফ্লাই করা মেয়েটার কথা। কি নাম যেন? ও ইয়েলেনা। নামটা যদিও মনে ছিল, ইচ্ছে করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করল। রাশান, পঁচিশ তিরিশের মাঝামাঝি হবে হয়তো বয়স।

কি একটা সংস্থার দূত হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছে। যদিও রিগ্যান ফ্লাইটে একটু চুপসে থাকে, মেয়েটিই আগ বাড়িয়ে তার সাথে আলাপ জুড়েছিল। হয়তো বা একঘেঁয়েমি দূর করতে। ল্যান্ডিং এর আগে মোবাইল নাম্বার বিনিময়টাও হয়ে যায়। রিগ্যান সেদিনের অলস বিকেলটায় একজন সংগী খোঁজে ঐ অপরিচিত শহরে।

ডিনারের আমন্তণ জানিয়ে টেক্সট করেই ক্ষান্ত হয়নি ফোন করেও কনফার্ম হয়েছে ইয়েলেনা আসছে সেটা। রেস্টুরেন্টের মৃদু মিউজিক, হালকা খাবার আর কঠিন জলের পর্ব শেষ করে একসময় অপরিচিত শহরে দু'জন স্বল্পপরিচিত মানুষ অনুভব করে রাত হয়ে আসছে। কাঁচঘেরা ফ্ল্যাটে কোন আলো জ্বালানো নাই তবে আলোর অভাবও তারা অনুভব করছেনা, দুর্বার আকর্ষণের কাছে মৃদু আপত্তি একসময় প্রেমাতাল ধারায় বয়ে যায়। লতার মত জড়িয়ে থাকা ঘুমন্ত ইয়েলেনার সাদা শরীরে অসংখ্য বাদামি তিল, গালে, গলায়, বুকে। তিল গুণতে গুণতে একসময় রিগ্যানও ঘুমিয়ে পড়ে, অনেকটা ভেঁড়া গুনার মত করে।

((৩)) পাশ করেছে বছর খানেক হল, একটা চাকরি আর ক্ষেপ মারার টাকা মিলিয়ে ভালই আর হয়। আর সব পয়সা মনে হয় নিজের শখ পূর্ণ করার পেছনেই খরচ করে রিগ্যান। উইকএন্ড, নতুন কেনা টিভিটা নিয়েই বসেছে আজ। সন্ধ্যার পর কয়েকবার কারেন্ট যাওয়ার পর এখন আর যায়নি। অনেকগুলো ভিভিডি তে সেলফ পূর্ণ, যেগুলোর জেনরে আর রেটিং এর কোন ঠিক ঠিকানা নাই।

রুমের ভেতর কয়েলের ধোঁয়া আর মারু'র ধোঁয়ায় একাকার, মারু'টা ঠিক অভ্যাস হয়ে যায়নি। তবে মাঝে মাঝে নেয় যখন তার অন্যরকম কিছুর স্বাদ পেতে ইচ্ছে করে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে, এরই মাঝে দু'বার বাথরুমে গিয়ে এসেছে। কেমন যেন বিষণ্ণ একটা একাকীত্ব। সে একাই থাকে, এটা এনজয় করে।

কিন্তু কখনো কখনো একাকীত্ব তার মনটাকে বিষণ্নতায় ভরিয়ে দেয়। ইচ্ছে হয়, ইশ! যদি এমন সময় পাশে কেউ থাকত যাকে মন-শরীর দিয়ে ভালোবাসা যায়। সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে..... ((৪)) জীবনটা তার কচুরিপানার মত কেটে গেল, আগ এখানে তো কাল ওখানে। এখনো সে স্বপ্ন দেখে। একদিন নীল পাহাড়ের কোলে তার ছোট্ট ঘরে, সবুজের মাঝে বাঁচবে।

হয়তো তার সে জীবনে একজন স্ত্রী থাকবে, ছোট দু-একটা পিচ্চির মা থাকবে। তাকে কচুরিপানা হয়ে বাঁচতে হবেনা আর। তখন সুখগুলোকেই মনে হবে স্বপ্ন, অযথা স্বপ্নের পেছনে ছুটবেনা। আজ আর ঘুমায়নি, কপালে হাসপাতালের নার্সের ছোঁয়ায় চোখ মেলে রিগ্যান- "স্যার, আপনার ফোন। " বলেই নার্স বেডে'র সাথে লাগানো স্পিকার ফোনের সুইচে চাপ দেয়।

"হ্যালো? রিগ্যান?" "জ্বি, বলছি। " "আমি এক্সট্রিমলি স্যরি, সেদিন তোমাকে আমি আমার সব জানালে আজ হয়তো তুমি এমন রোগে ভুগতে না। আমার উচিত ছিল তোমাকে বাধা দেওয়া, কিন্তু তোমার পাগল করা আবেদনে আমার দীর্ঘ দিনের অভুক্ত শরীরটা আর পেরে উঠেনি, আ'ম স্যরি" ফোনের ঐ প্রান্তে কান্না জড়ানো কন্ঠে ইয়েলেনা বলে যায়, "আমি এইচআইভি পজেটিভ, একটা সংস্থার পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য আফ্রিকায় গিয়ে তোমার সাথে আমার সেদিনের ...... যার ফলে আজ তুমি এইডস এ আক্রান্ত" এর জবাবে রিগ্যান কিছুই যেন বলতে পারেনা, একসময় হাতের ইশারায় নার্স কে লাইনটা হ্যাংআপ করতে বলে চোখ বন্ধ করে। চোখের কোণে জমে থাকা জলকণাগুলো যেন নিজের অনিয়ন্ত্রিত জীবনটারই প্রতিচ্ছবি হয়ে গড়িয়ে পড়ে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.