আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডঃ ইউনুস, আপনি যা করলে আপনাকে এই ভাবে অপমানিত হতে হতো না...



সত্তুরের দশকে যখন এদেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ১২০ মার্কিন ডলার ছিল, দেশ যখন দুর্ভিক্ষের আশংকায় ছিল সর্বদা আতঙ্কিত, অর্থনিতী ছিল স্থবির, দেশ ছিল ভয়াবহ বেকার সমস্যায় নিমজ্জিত, গ্রামের নারিরা ছিল অবরুদ্ধ, তখন এমন পরিস্থিতিতে, আপনি ডঃ মোঃ ইউনুস শুরু করেন গ্রামিন ব্যাংক নামক একটি আন্দোলন। এটি কোন প্রচলিত ব্যাংক ছিল না। এটি ছিল বিশ্ব অর্থনিতীর ইতিহাসে সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারনা। যদিও কৃষি ব্যাংক তখনও ছিল, তবে তা গ্রামের মানুষের মধ্যে তেমন কার্যকরী কোন ভ’মিকা কখনও রাখতে পারেনি। প্রচলিত সরকরি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতই কৃষি ব্যাংক মোটা অংকের জামানতের বিনিময়ে, শুধু প্রভাবশালি লোকদের মধ্যেই এর ঋণ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছিল।

অপরদিকে ক্ষুদ্রঋণ নামক একটি নতুন ধারনা নিয়ে গ্রামিন ব্যাংক গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। ধিরে ধিরে ঘুরতে শুরু করে বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনিতীর চাকা। অর্থহীন, কর্মহীন গ্রামের মানুষ অন্ধকারে খুঁজে পেল আলোরদিশা। ধিরে ধিাথে যুক্ত করা হোল বিভিন্ন অগ্রসর ও উন্নয়নমুখি কর্মসুচী। নারি-পুরুষ নির্বিশেষে সকল ঋণগ্রহিতাকে সফল ও সাবলম্বি করে গড়ে তোলার লক্ষে নেয়া হলো কঠোর কর্মসূচী।

রে গ্রামের নারিদেরকেও নিয়ে আসা হলো এর কার্যক্রমের আওতায়। ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রমের স এই কঠোর কর্মসূচী যেমন একদিকে লক্ষ লক্ষ সাধারণ বিনিয়োগকারির বিনিয়োগকে নিরাপত্তা দিয়েছে অপরদিকে কিছু সুবিধাবাদি, অলস ব্যক্তিকে অসুবিধায়ও ফেলেছে এ কথা অনস্বিকার্য। কু-সংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে গ্রামের নারিকে স্বাবলম্বি হবার পথ দেখিয়েছে, গ্রামিণ ব্যাংক। ধিরে ধিরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক-যুবতি পেয়েছে কর্ম-সংস্থানের সুযোগ।

ঋণ কার্যক্রমের বাইরেও গ্রামিণ ব্যাংক বাংলাদেশের সমাজে একটি আধুনিক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে অগ্রনি ভ’মিকা পালন করেছে। আর এই সব কিছুর পিছনে যে, মানুষটির প্রধান অবদান, মেধা, পরিকল্পনা, শ্রম, অনুরাগ মিশে আছে তিনি হচ্ছেন, আপনি, ডঃ মোঃ ইউনুস। আপনার এই আন্দোলন সারাবিশ্বে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক আন্দোলনের মর্যাদা পেয়েছে। আপনি এই অবহেলিত জাতিটিকে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির সম্মান এনে দিয়েছেন। সত্তুরের দশকে বলা চলে আমি শিশুই ছিলাম।

তখন থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শুধু আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠিত গ্রমিণ ব্যাংকের শুধু সুনামই শুনে এসেছি। নোবেল জয়ের পর হঠাৎ কি হোল জানিনা এক শিয়ালের ডাকে অন্য শিয়ালদের ডেকে ওঠার মতো কিছু লোক আপনার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই সবলোকেদের কাতারে নেতৃত্বদিচ্ছেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রি। নিজেকে একজন প্রগতিশীল মানুষহিসেবে যাহির করলেও কেন জানিনা তিনি আজকাল কথায় কথায় সুদখোর সুদখোর বলে অজানা কারো উদ্দেশে গালি দেন। সষ্পস্টতঃই বোঝা যায় তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই গাল পাড়েন।

”... কোন প্রকার অনুরাগ অথবা বিরাগের বসবর্তী না হইয়া ...” জাতিয় শপথ পাঠের পরও তার কন্ঠে নিয়তঃই বিবিধ বিরাগ ঝরে পড়তে দেখা যায় এই আমাদের দুর্ভাগ্য। আজকাল কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনিতীর বিকাশে গ্রামিণ ব্যাংকের নাকি তেমন কোন অবদানই নেই। এইসকল বাক্যবাগিশ ও কর্মবিমুখ লোকেরা হয়তো সত্তুর ও আশির দশকের অবস্থাকে ভুলেই গেছেন। তাঁরা কি জানেন, গ্রামীন ব্যাংক মেয়েদেরকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিল বলেই, পরবর্তীতে মেয়েরা গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করার সাহস পেয়েছে? আসুন দেখা যাক, আপনি, গ্রামিন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা না করে কি করলে এই সব লোকেরা তুষ্ট হতেন। - বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করে মাঝে মাঝে দেশে এসে দেশ বাসিকে নসিহত করে গেলে - ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আই, এম, এফ এ বড় পদে চাকরী করে নিরুপদ্রব জীবন কাটিয়ে দিলে - সরকারি দলের তোষামদি করে মন্ত্রির পদ বাগালে - সর্ব বিষয়ে নাক গলিয়ে জাতিকে নিরন্তর জ্ঞান বিতরন করলে যা মনে হচ্ছে, ডঃ ইউনুস, আপনি উপরোক্ত বড় বড় কাজগুলো না করে নোবেল বিজয়ের মতো একটা ক্ষুদ্র কাজ করে কিংবা গ্রামের নিরন্ন, কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি ভুলই করেছেন।

আসলে আমরা কেউ কেউ মনে করি, স্বাবলম্বিতা, স্বনির্ভরতা, বিজয়ি হওয়া, চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইত্যাদি আমাদের জন্য নয়, এগুলো, অন্যদের জন্য। আমাদের জন্য শুধু অন্যদের উন্নতি চেয়ে চেয়ে দেখা ও বড় বড় কথা বলাই নির্দিষ্ট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।