নিজেকে জানার চেষ্টা চলছে । কখনো জানতে পারলে বলবো । সে অনেক আগের কথা। কাহিনীর পটভূমি এই পৃথিবী থেকে বহুদূরের চন্দ্রলোক। তখন সেখানে ছিল এক শক্তিশালী রাজ্য, যে রাজ্যে কোনকিছুর কমতি ছিলনা।
রাজার ছিল ফুটফুটে একটি মেয়ে। অত্যন্ত রূপবতী মেয়েটি ছিল খুবই আদরের আর খুব লক্ষ্মী। সারাদিন সখীদের সাথে খেলাধুলা শেষে সে বসে পড়ত তার প্রিয় চরকাটি নিয়ে। সেখানে সে বুনত আলোর সুতো, যে সুতোর আভা দেখা যেত সুদূর পৃথিবী থেকেও। আর যেদিন একটি পুরো কাপড় বোনা শেষ হত, সেদিন লক্ষ্মী রাজকন্যাটি সেই কাপড় জড়িয়ে সারা রাত প্রাসাদের ছাদে আর বাগানে হেঁটে বেড়াত।
তখন পূর্ণিমার আলোয় জগত আলোকিত হয়ে উঠত।
এমনিভাবে সুখে শান্তিতে মিলিয়ে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। স্নেহপরায়ণ রাজা ভাবলেন মেয়েকে তো সারাজীবন রেখে দেয়া যাবেনা, বিয়ে দিতে হবে। মেয়ের অনুমতিক্রমে তিনি দূত পাঠালেন সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহে আর উপগ্রহে, একজন যোগ্য পাত্রের আশায়। কিন্তু বাকি রয়ে গেল একটি গ্রহ, পৃথিবী।
পৃথিবীর মানুষের মাঝে যুদ্ধ প্রবণতা আর কূটবুদ্ধির আধিক্যের কারণে চন্দ্রলোকের অধিবাসীরা অনেক আগে থেকেই পৃথিবীকে এড়িয়ে চলত। তারই ধারাবাহিকতায় পাত্র সন্ধানের তালিকা থেকে পৃথিবী বাদ পড়ে গেল।
কিন্তু চন্দ্রলোকের রাজা একটি হিসাব করেননি। পৃথিবীর এক পিশাচসিদ্ধ জাদুকর তার আজব এক যন্ত্রে চড়ে একবার চাঁদে গিয়েছিল। সেখানে সে রাজকন্যাকে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে রাজ্য সহ রাজকন্যা তার চাই।
তাই রাজকন্যার পাত্র খোঁজার সংবাদ পেয়ে সে আবার সেই আজব যন্ত্রে চড়ে রওনা হল চন্দ্রলোকে।
রাজা নিতান্ত অনিচ্ছার সাথে জাদুকরকে অভ্যর্থনা জানালেন এবং জানতে চাইলেন তার আগমনের উদ্দেশ্য। জাদুকর তখন বলল সে রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চায়। একথা শুনে রাজা ও সভাসদেরা আঁতকে উঠলেন। একি অবস্থা! এই বুড়ো হাবড়া জাদুকরটার সাথে অমন সুন্দরী আর লক্ষ্মী রাজকন্যার বিয়ে! কখনো না।
এদিকে রাজকন্যাও কেঁদে কেটে অস্থির। সে কিছুতেই এই বুড়ো জাদুকরকে বিয়ে করবেনা। তাই রাজা জানিয়ে দিলেন তাঁর সিদ্ধান্ত। এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবেনা। জাদুকর গেল ক্ষেপে।
সে অনেক হুমকি দেবার পরও রাজার সিদ্ধান্ত অনড়।
তখন জাদুকর তার আসল রূপ প্রকাশ করল, সে অভিশাপ দিল সমস্ত চন্দ্রবাসীর উপর, রাজা-রানীর উপর। লক্ষ গ্রহাণুর গুড়ো এসে নিমিষেই ঢেকে ফেলল চাঁদের পৃষ্ঠ। রাজা-রানী ও জনগণ পরিণত হল অর্ধমৃত পাথর খণ্ডে। লক্ষ লক্ষ বছরের তৈরি এক মায়াময় সভ্যতা পরিণত হল প্রাণহীন পাথরের স্তুপে।
উজ্জ্বল চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মত হয়ে রইল সেই সভ্যতা।
শুধু বেঁচে রইল হতবাক রাজকন্যা। জাদুকর তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করল ঘৃণাভরে।
ক্ষুব্ধ জাদুকর তখন ডাকল পশ্চিমা বায়ুকে, রংধনুর পঞ্চম বর্ণকে আর তার সাথে মৃত্যুমুখী জরাকে। এই তিন মিশ্রণে তৈরি হল ইতিহাসের ঘৃণ্যতম অভিশাপ।
সেই অভিশাপ বর্ষিত হল রাজকন্যার উপর। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ফুটফুটে রাজকন্যা পরিণত হল এক কদাকার বৃদ্ধায়। তখন জাদুকর বলল-
'আজন্ম এই অভিশাপ বয়ে বেড়াবি তুই। কদাকার ঘৃণ্য হয়ে থাকবি। তোর এবং তোর জাতির মুক্তি হবে সেদিন, যেদিন আমার মৃত্যু পরোয়ানা জারি হবে।
সেদিন চন্দ্রে আমার মুখচ্ছবি দেখা যাবে। তবে সেই আশা করে থাকিস না, কারণ আমার বিনাশ কেউ করতে পারবেনা। '
এই বলে জাদুকর চলে গেল। দুঃখী রাজকন্যা এখন বুড়ি, দুঃসহ একাকী অমরত্ব তার সঙ্গী। কি করবে সে এখন! অবশেষে ধ্বংসস্তূপের মাঝে সে খুঁজে পেল তার প্রিয় চরকাটিকে।
অবশেষে এই চরকাটিই হয়ে উঠল তাঁর নিঃসঙ্গতার মাঝে একমাত্র বন্ধু।
সে দিন-রাত চরকা কাটত, আর অপেক্ষা করত কবে চন্দ্রলোকের গায়ে সেই জালিম জাদুকরের মুখচ্ছবি দেখা যাবে। কবে হবে সেই ঘৃণ্য জাদুকরের জীবনাবসান। কবে সে মুক্তি পাবে এই ভয়াবহ কলঙ্কিত অভিশাপ থেকে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।