আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিঙ্গাপুরের ট্রেন থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের ট্রেন

অযথা ঝগড়া বিবাদ ভাল লাগে না। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। সু শিক্ষা চাই সর্বত্র।
গত ১৮ জুন রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে চেপে বসি। সিঙ্গাপুর চাঙ্গি এয়ারপোর্টে পৌছি প্রায় ৪ ঘন্টা পর।

এর আগে অবশ্য বলে রাখি নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর থেকে মাইক্রোতে করে ঢাকা বিমানবন্দর পৌছতেও ৪ ঘন্টা লেগেছিল জ্যামের কারনে। ওখানকার এয়ারপোর্টে যখন পৌছি তখন সেই দেশের সময় ভোর ৬ টা (আমাদের দেশে তখন ভোর ৪টা)। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টের এক কোণে একটি ফাস্টফুডের দোকানে নাশতা সারি। এরপর ট্যাক্সিক্যাবে করে পৌছি আগে থেকে বুকিং করা গ্যালঙ ১৯ এর ব্রাইট স্টার হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাই বেলা ২ টা পর্যন্ত।

এর কিছুক্ষন পরে বেরিয়ে দুপুরর খাবার খেতে যাই মোস্তফা প্লাজায় একটি বাঙ্গালী হোটেলে। আলু ভর্তা, ঢেড়শ বাজি, মাছ, ডাল দিয়ে পেট ভরে ভাত খাই। হোটেল মালিকের বাড়ি ফতুল্লায় হওয়ায় খাতির যতœ করে বেশ। ট্যাক্সি ক্যাবে চলতে গিয়ে একটি ব্যাপার লক্ষ করলাম। আমাদের দেশে ট্যাক্সি ক্যাব মানে লক্কর ঝক্কর।

ওখানকার বিষয়টা ভিন্ন। মার্সিডিজসহ নানা উন্নত ব্রান্ডের আরামদায়ক গাড়িগুলোতে খুব সস্তায় চড়েছি। তবে আমার লেখার বিষয় ট্যাক্সি ক্যাব নয়, ওখানকার ট্রেন ব্যবস্থা নিয়ে। দু’দিন আগে ঢাকার কমলাপুর থেকে চাষাঢ়ায় আসা ট্রেন বিলম্ব করায় ভাংচুর করেছে ক্ষুব্দ যাত্রীরা। এ রুটে ট্রেন ব্যবস্তা সম্পর্কে কম বেশী সবাই জানে।

আমি নিজেও চড়েছি বহু বার। জ্যামের কারনে বাসের থেকে ট্রেন চলাচল অনেক ভাল। তবে ট্রেনে উঠলে মনে হয় অন্য কথা। বগিতে তিল পরিমান জায়গা থাকে না। যাত্রীরা একে অপরের গায়ে ঠ্যাস দিয়ে কোনমতে গন্তব্যস্থলে যায়।

বাড়ি থেকে ইস্ত্রি করা সুন্দর জামাটা চাষাঢ়া থেকে কমলাপুর ট্রেনে করে গেলেই যা তা অবস্থা হয়ে যায়। মনে হয় সদরঘাটের পুরনো কাপড়ের গাইটের ভিতর থেকে সবে মাত্র জামাটা বের করা হয়েছে। আর নারী যাত্রীদের অবস্থাতো ত্রাহি ত্রাহি। এ রুটে ট্রেনের তুলনায় যাত্রী অনেক বেশী। সবাই বিষয়টা বুঝলেও মান্ধাতা নিয়মে চলা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা বুঝে না।

তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ রুটে ট্রেন বাড়ে না। প্রতি ঈদের আগেই গ্রামমুখো মানুষের কাছে ট্রেন টিকেট যেন সোনার হরিণ। তা যোগাড় করতে গিয়ে কত বিড়ম্বনায় পোহাতে হয় তাদের। কয়েক বছর যাবত মোবাইল ম্যাসেজে কিছু টিকেট বিক্রি করলেও তা তুলনামূলকভাবে কমই। তাই কমলাপুর রেল স্টেশনে রাত কাটিয়েও কারো ভাগ্যে জুটে আবার কেউ খালি হাতে ফিরে টিকেট না পেয়ে।

পুরনো রেলওয়ে ব্যবস্থার এ চিত্রটিও বেশ পুরনো। সদ্য ভ্রমন করা সিঙ্গাপুরের ট্রেনের টিকেট ব্যবস্থা শতভাগ ডিজিটাল। ২১ জুলাই আমার সহযাত্রীরা মালেশিয়ায় গিয়েছে। সেদিন আমি একা। আগে থেকে ভিসা না নেওয়ায় আমি সেখানে যেতে পারি নাই।

দুপুর তখন ২ টা বাজে। আমি মোস্তফা প্লাজা পাশের সড়ক দিয়ে হাটছি। ছোট ভাই (দেড় যুগ ধরে সিঙ্গাপুর প্রবাসী) ফোন দিল ওর কাছে যেতে। মোস্তফা প্লাজার সামনে এঞ্জেলা মসজিদের ডান পাশে একটি মাঠের কোনে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে গেলাম। উদ্দেশ্য ট্রেনে যাব।

টিকেট কাউন্টারে গিয়ে প্রথমে থ বনে গেলাম। কোথাও কেউ নেই। কার কাছে টিকেট চাইব। কয়েকজনকে দেখলাম কিভাবে যেন টিকেট কেটে চলে যাচ্ছে। পাশের লোকটি বাঙ্গালী মনে হল।

তার কাছে জেনে টিকেট কাটলাম। কাউন্টারের নীচে একটি স্ক্রীন দেখলাম। সেখানে টাচ করা মাত্র বিভিন্ন অপশন চলে এল। ম্যাপ খুঁজে জানতে পারলাম আমার গন্তব্য যাত্র বুনলের ভাড়া সিঙ্গাপুরি টাকায় মাত্র ২ ডলার ২০ সেন্ট। একটু উপরে ছোট ফাঁকে ৫ ডলার ফেলতেই নীচে টিকেট ও বাকী টাকা বুঝে নিলাম।

মূল স্টেশনে ঢুকতে সেই টিকেট শো করলেই ছোট ছোট প্লাস্টিকের গেইট খুলে যায় আপনা আপনি। এরপর ট্রেনের সামনে যেতে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে বেশ খানিকটা দূরে গেলাম। অন্য সবার মত একটা বন্ধ গেইটের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। সারি সারি গেইটের সামনে আমার মত অপেক্ষমান শত শত যাত্রী। ৩/৪ মিনিট অপেক্ষা করার পর সামনের গেইট খুলে গেল।

কিছু যাত্রী নামার পর ট্রেনে উঠলাম। ৩০ সেকেন্ড পর এলাউন্স হল গেইট লাগানোর ও পরবর্তী স্টেশনের নাম উল্লেখ করা হল। তারপর দেখলাম শা করে ছুটে চলল ট্রেন। যেন কাল বৈশাখীর ঝড়। শীততাপ ট্রেনে বসে দেখতে লাগলাম অধিকাংশ বিদেশী যাত্রীর সুখী মুখগুলো।

কেউ নোটবুকে বাটন চেপে জরুরী কাজ সেরে নিচ্ছে। কেউ বয় ফ্রেন্ডের সাথে আলাপে মশগুল। কেউ আবার চুপটি করে বসে আছে আরামদায়ক ভঙ্গিতে। তাদেরকে টিকেট কাটতে স্টেশনে রাত পার করতে হয় না। টিকেট কালোবাজারিরা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ করতে হয় না সাংবাদিকদের কাছে।

নেই তেমন ভিড় ,তাই ইস্ত্রি করা জামা নষ্ট হবার টেনশন থাকে না। মাঝে উত্তম পার্ক নামে একটি স্টেশনে নেমে ট্রেন বদলাতে হল আমাকে। ট্রেনে বসে অনেকটা জেগেই স্বপ্ন দেখলাম। একদিন হয়ত আমার দেশেও এমন নির্বিগ্ন ট্রেন যাত্রা শুরু হবে। ইচ্ছে করলে এখনই আমরা তা করতে পারি।

যেমন পুরো টিকেট ব্যবস্থাই ইন্টারনেট, ব্যাংক একাউন্ট, বি-ক্যাশের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করলে অন্তত স্বচ্ছতা বজায় থাকত। এর পাশাপাশি ট্রেন রুট বাড়িয়ে দিয়ে জ্যাম সমস্যা যেমন দূর করা যেত তেমনি রাজস্ব আয় বাড়ত সরকারের। যেমন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতি আধ ঘন্টা অন্তর ট্রেন চললেও যাত্রীর অভাব হত না। ভাবতে ভাবতেই চলে এলাম বুনলে। সিঙ্গাপুরের প্রায় এক কোণে।

সেখানে ছোট ভাই ও এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম। ওরা নিয়ে গেল পৃথিবীর বিখ্যাত ফাস্ট ফুডের দোকান ম্যাগডোনালস এ। খাওয়া দাওয়া গল্প গুজুব করে ফেরার জন্য উঠলাম। দুই ভাইকে বিদায় দেওয়ার সময় মনটা খারাপ হয়ে গেল। ফেরার সময় বুনলে থেকে একই পদ্ধতিতে টিকেট কাটলাম আমার হোটেলের সামনে আলজুনিয়াদ স্টেশনের উদ্দেশ্যে।

ট্রেন থেকে নেমে যাবার পরও ভাইদের সাথে আড্ডা মারার সুখ স্মৃতি তাড়া করছিল আমাকে।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.