h
ভিসার জন্য আবেদন করার মতন বিরক্তিকর কাজ বোধকরি আর নেই। জনাপাঁচেকের গ্রুপ যাচ্ছি সিঙ্গাপুরে, এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা সভায় মতবিনিময়ের জন্য, আমি ছাড়া আর কারু ভিসা লাগবেনা, কারন আমিই একমাত্র বাংলাদেশী, কি বিরক্তিকর! যাহোক- ভিসা নিতে গেলাম কোরিয়ার সিউলে, ওখানে চায়নিজ বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা ও থিয়েটারে ম্যুভি দেখে পরদিন ভিসা নিয়েই চলে গেলাম সরাসরি দঃকোরিয়ার ইনচন বিমানবন্দরে। আমার ভ্রমন সঙ্গী এক কোরিয়ান, একই গবেষণাগারের ছাত্র আমরা।
সিউল স্কোয়ার - সন্ধ্যেয় যেখানে আড্ডা মারছিলাম আর 'রক গানের উৎসব' উপভোগ করছিলাম।
সিউল সিটি (দক্ষিন কোরিয়া)
সিউলের ইনচন বিমান বন্দর।
এদিকে মালয়শিয়ান উড়োজাহাজ একঘন্টা দেরী করল ছাড়তে, মেজাজ চিড়বিড় করতে করতে বিমানের অভ্যন্তরের একটা ছবি তুলে নিলাম।
সাত ঘন্টার ভ্রমন শেষে পৌছুলাম সিঙ্গাপুরের 'চাঙ্গি বিমানবন্দরে'
সিঙ্গাপুরে আমার প্রচুর বুয়েটিয়ান বন্ধু-বান্ধব আছে, আশা করেছিলাম সময় খারাপ কাটবেনা, কাটেওনি, আশাতীত ভাবে ভালো কেটেছিলো, আফসোস ছিলো হাতে আরও কিছু সময় বেঁধে যে কেন নিয়ে এলাম না, তার জন্য। এদিকে বুয়েট থেকে আরেকটি ছোট ভ্রাতা এল, ০৩ ব্যাচের। ও আবার প্রভাষক-ও বটে। খবর দিলাম নানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শান্ত-কে, অনেকদিন পর দেখা...হই হই করে বেড়িয়ে পড়লাম সিঙ্গাপুর সিটি দেখতে।
নিচের ছবিতে, শান্ত, কোরিয়ান বন্ধু মিন কি ও আমি
এদিকে প্রভাষক মহোদয় মনিরের জয়নুল ভাষ্কর্য হইবার চরম ইচ্ছা জেগেছে স্পষ্টত-
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ডে উপলক্ষে বিমান মহড়া চলছিলো,
সে এক তুমুল বিতর্ক - বিষয় 'গরুর গাড়িতে করে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে আসার সহজ রাস্তা কোনটা'।
অবশেষে মনির দেখিয়ে দিলো কিভাবে গরুর গাড়িতে চরে সিঙ্গাপুরে আসতে হয়!
বেলা পড়ে যাচ্ছিলো, হাতে সময় কম-দ্রুত খাওয়া-দাওয়া সারলাম ম্যাক থেকে-
মেরলায়নের সামনে পোলাপান, আর আমি? ছবি তুলছিলামঃ
আতশবাজির মনোমুগ্ধকর খেলা,
মেরিনা বে - স্যান্ডস টাওয়ার
নাইট ফটোগ্রাফী করতে মন চাইলো, কিন্তু সাথে ট্রাইপড নিয়ে বের হইনি দেখে নিজের ওপর-ই রাগ লাগলো। তাহলে হয়তো আপনাদের আরও কিছু সুন্দর ছবি উপহার দিতে পারতাম।
সে রাতের বাদবাকি ছবি গুলো পাবেন পূর্ববর্তী এই ব্লগে ।
পরেরদিন আবার শহর ঘুরতে বের হলাম, এসেছি কনফারেন্সে যোগ দিতে, কিন্তু ওখানে যাবার নাম নিশানাও নেই।
সিঙ্গাপুরে খাবারের দাম বেশ সস্তা মনে হল আমার কাছে, হয়ত অনেকদিন কোরিয়ায় থাকার কারনে। আর খাবারের অনেক রকমভেদ আছে, যেমন আছে মানুষগুলোর। এরা মূলত চায়নিজ, দক্ষিন ভারতিয় ও মালয়। তাই তিন জাতীর চার ধরনের খাবার (জাঙ্ক ফুড সহ) ছাড়াও আরও হরেক রকম খাবারে বোঝাই, আর খাবার গুলো আবার হালাল-ও বটে, যা আমি কোরিয়াতে এসে পাইনি।
চায়নাটাউনের চায়নিজ খাবারের দোকানের পিকিং ডাক, বেশ ভালোই লেগেছিলো খেতে, পরের ছবিতে ড্রাগন ফল।
চায়নাটাউনের সামনে আমি।
এরপর গেলাম স্যান্টোসা আইল্যান্ডে, সত্যি বলতে কি- বীচটা অনেক সাজানো গোছানো, অনেক আয়োজন ও অনেক ট্যুরিস্টের ভীর, কিন্তু বীচটাকে আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি। কেমন যেন ময়লা মাখা পানি আর পুকুরের মতন ঢেউ। দুঃখ হল আমাদের কক্সবাজার আর সেইন্টমার্টিন নিয়ে, কত অবহেলায় ফেলে রেখেছি আমরা ওগুলোকে।
হারবার ফ্রন্টের দোরগোড়ায়।
স্যান্টোসা আইল্যান্ডের ফুডকোর্ট - এখানে আপনি যে কোন দেশের যে কোন স্বাদের খাবার পাবেন, খুব সস্তায়।
জিপলাইনিং, দারুন একটা এডভেঞ্চার, গতমাসে পাহাড়ের ওপর থেকে জিপ-লাইনিং ডেথ স্লাইড করেছি ৯ কোর্সের , সেই-রকম!
বীচের দৌড়-ঝাপ শেষ করে পরের দিন গেলাম নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বুয়েটের বড়ভাই ও ব্যাচমেইটদের সাথে কি যে আনন্দে কেটেছে সেটা আর বলার মতন না, জমে উঠেছিলো আমাদের আড্ডা। নানইয়াং এর ক্যাফেটিকে যেন আমাদের বুয়েটের সেন্ট্রাল ক্যাফে মনে হচ্ছিল বারবার।
সবাই মিলে তুললাম ছবি-
বাঁ থেকে-শরীফ, গৌতম দা, আরিফ ভাই, রাজিব, মনির (জনাব প্রভাষক), আরাফাত ভাই ও আমি (ছবি তুলেছে শান্ত)।
পরেরদিন গেলাম কনফারেন্সে (শেষ পর্যন্ত)। সেখানে গিয়ে আরেক বুয়েটিয়ান অনিরুদ্ধ দা-র সাথে দেখা। ঝটপট ছবি তুলে নিলাম-
আনিদা ও আমার মালয়শিয়ান গবেষণা সহযোগীর সাথে। কনফারেন্সে ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়াগণের জন্য। তাই এই গরমের মধ্যে পোষাক বদল করে পড়তে হল স্যুটকোট, মহা বিরক্তিকর -
বিশ্বাস করুন - এটা আমি নই, হাহা।
এর পর চলে গেলাম এন.এউ.এস বা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরে। যেতে যেতে হয়ে গেল সন্ধ্যে। মাত্র ২ ঘন্টা ছিলাম, তাই পরিচিত অনেকজনের সাথে দেখা করতে পারিনি। ওখানে শাওন ভাই, সুদিপা দিদি ও দাদা-র সাথে দেখা করেই চলে এসেছি-
এদিকে কিছু কেনাকাটাও করা হল বিখ্যাত মোস্তফা সেন্টার থেকে। জিনিস পত্রের এত কম দাম দেখে বাক্স বোঝাই করে নিয়ে যাবার লোভটা অনেক কষ্টে সামলালাম।
পরদিন বার্ড-পার্কে ঘুরতে গেলাম ল্যাব-মেইট রা মিলে। বার্ড-পার্কের পাখির ছবি নিয়ে পড়ে একটা পুর্ণাঙ্গ পোষ্ট দেব- এখন শুধু একটা পাখির ছবি দেই-
যাবার ঘন্টা বেজে এল। ফিরতি পথে সিঙ্গাপুর থেকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে আট ঘন্টা ট্র্যাঞ্জিট পার করতে হল, ম্যাকের সাথে আড্ডা ও নোটবুক দিয়ে ফেইসবুকিং করে।
ম্যাকের সাথে আড্ডা মারছি।
অবশেষে কোরিয়ান এয়ারে করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম।
শেষ হল আমার সিঙ্গাপুর ভ্রমন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।