পুরান ঢাকার মতোই অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার অপরিকল্পিত নগরাঞ্চলকে কয়েকটি এলাকায় (ব্লক) ভাগ করে। পর্যায়ক্রমে একেকটি এলাকা থেকে জনগণকে সরিয়ে ভেঙে ফেলা হয় অপরিকল্পিত সব ভবন। পরে সেখানে বস্তির স্থলে পরিকল্পিতভাবে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করে আবার জনগণের কাছেই তুলে দেয় সরকার। সময়মতো সিঙ্গাপুর সরকার এ উদ্যোগ নেওয়ায় সেখানে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে কালের কণ্ঠকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পুরান ঢাকা ও বেগুনবাড়ীর প্রাণহানি দুঃখজনক। কিন্তু সুষ্ঠু নগরায়ণ না হলে ভূমিকম্প, অগি্নকাণ্ড কিংবা ভবন ধসে এ ধরনের দুঃখজনক আরো ঘটনা ঘটতে পারে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে পুরান ঢাকা মানুষের মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। তিন-চার শ বছরের পুরনো জীর্ণ-শীর্ণ ভবনগুলোর ওপর তলা বাড়ানো হচ্ছে।
মাটির গুণাগুণ যাচাই করা হচ্ছে না। নেওয়া হচ্ছে না প্রকৌশলী ও স্থাপত্যবিদের মতামত। জনবসতির সঙ্গে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সহায়ক রাসায়নিক শিল্প, দাহ্য পদার্থ_সবই আছে সেখানে। সাহায্য ও উদ্ধারকর্মীদের যাওয়ার জন্য জায়গাও ফাঁকা রাখেনি কেউ। ফলে কিছুদিন পর পরই বড় ধরনের দুর্ঘটনার সঙ্গে প্রাণহানি ঘটছে বহু মানুষের।
ড. নজরুল ইসলাম আরো বলেন, শুরুতে অল্প লোকের বসবাসের জন্য ঢাকায় নগরায়ণ হয়েছিল। এখন জনচাপ বেড়েছে বহুগুণ। এত মানুষকে পুরান ঢাকায় আবাস গড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত হয়নি। পুরান ঢাকার নগর পুনর্গঠন করতে হবে। কিন্তু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সে ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
এ জন্য রাজউকের জনবল, সততা ও নিষ্ঠার অভাবকে দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. নজরুল।
রাজউকের আইনি ক্ষমতার অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দিলি্ল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সংস্থাটি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করছে যে কেউই তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। রাজউকের সে রকম ক্ষমতা নেই।
আদালতের স্থগিতাদেশেই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছে রাজউক। সুষ্ঠু নগরায়ণে সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সর্বোচ্চ সমন্বয় সাধন দরকার বলেও তিনি মত দেন।
সরকার গঠিত নগর উন্নয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ড. নজরুল ইসলাম। ওই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজউককে সহায়তার জন্যই ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির দেওয়া অনেক সুপারিশই বাস্তবায়িত হতো না।
আরো কয়েকজন নগর পরিকল্পনাবিদও রাজধানীর নগরায়ণের অব্যবস্থাপনা নিয়ে একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. সাহেদা রহমান বলেন, বিদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হয়। বাংলাদেশে ভবন বানাতে রাজউক পর্যন্ত যেতে হয় না। স্থপতিরও দরকার পড়ে না। সঠিক তদারকি করে না রাজউকের লোকজনও।
তিনি জানান, রাজউকের অধীনে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ (আইএবি) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল; কিন্তু রাজউকই তাতে রাজি হয়নি। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মজিবুর রহমান জনগণকে বুঝিয়ে অপরিকল্পিত ভবন উচ্ছেদ করে পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নগর বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন, পুরান ঢাকাসহ শহরের অলি-গলিতে সাধারণ লোকজন তলার ওপর তলা বানিয়ে ভবন উঁচু করছে। তিনিও পুরান ঢাকাসহ অপরিকল্পিত ভবনগুলো ভেঙে সেখানে পরিকল্পিতভাবে সুউচ্চ ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।