আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Adventure- নিঝুম দ্বীপ- শেষ পর্ব (রুট প্লান ও কস্টিং)

২য় পর্ব ১ম পর্ব শুরু হল বিশাল বিশাল ঢেউ এর খেলা, একের পর এক। আমাদের মাঝি শর্টকাট মারতে গিয়ে নদীর মাঝখান দিয়ে আমাদের কে জাহাজ-মাড়া এড়িয়াটা পার করে দিতে চাইছিল, আমরা পরলাম চরম বিপদে আসে-পাশে তীর তো দূরে থাক কোন নৌকা বা টলারের ছায়াও দেখতে পাচ্ছি না। সবাই ভয় পাচ্ছে…আর আমি যেন তখনও এডভেঞ্ছারের ঘোরে আছি… বিশাল আকারের বেশ কিছু ঢেউ এর কারনে আমাদের টলারটা প্রায় তিনফুট উঠে গেল তা শুধু যে উঠে গেল তা না ঢেউ এর গেপ এ পরে অনেক নিচে ডেবে গেল, এমনই আরো বিশাল কিছু ঢেউ পুরপুরি আমাদের টলারের উপর আছড়ে পরলো। এমন সময় আমাদের শাহিন ভাই (আগেই তার কথা বলেছি) চোখ বড় করে বিকট এক চিতকার দিলেন। শাহিন ভাই এর চিতকার শুনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।

আমি তখন ভয় পেতে শুরু করেছি…আমার ভয় পাবার দুটা কারন এক- শাহিন ভাই এ এরিয়া তে আগে অনেক বার এসেছেন তিনি এমন ভয় পাইতেছেন তার মানে এখনকার পরিস্থিতি আসলেই খারাপ। দুই- ঢেউ কমার কোন লক্ষন দেখছি না, আমি টলারের নিচে প্রচন্ড সংঘর্ষের আওয়াজ পাইতেছি, যেন কোন পাথরের সাথে টলারের নিচটার সংঘর্ষ হচ্ছে। আসলে এ সংঘর্ষ টা ঢেউ আর কাঠের টলারে নিচটার সংঘর্ষ। আমি শুনতে পেলাম পেছন থেকে কে যেন বলছে “এই বেটা কাদছিস কেন……? আল্লাহ আল্লাহ কর। “ পিছন ফিরে দেখলাম ছোট ভাই এর চোখ দিয়ে অঝর ঝড়ায় পানি পরছে।

ঠিক এ সময় আমার মাথায় তখন সবার নিরাপত্তার চাপ্ টা নেমে এলো। চারদিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখি ভয়ে সবার মুখ শুকিয়ে গেছে…… কারো কারো চোখ মুখে মৃত্যু ভয় স্পষ্ট। মাথা টা ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার, চিন্তাগুলা তখন লজিকের ছোয়া পেতে শুরু করেছে। ঠিক করলাম হাতিয়া না জাহাজ-মাড়া তে নামবো। টুর দেবার আগে যে কয়টা ব্লগ গুগোল নিঝুম দ্বীপ নিয়ে আমাকে এনে দিতে পেরেছে তার মাঝে জাহাজ-মাড়া নাম টা আছে, বাই রোড এ নিঝুম দ্বীপ যাবার রুট ওটা।

কিন্তু আমি টলারের এ মাথায় অন্য মাথায় আমাদের গাইড, সিনিয়্র ভাইরা মাঝির সাথে, টলারের আওয়াজে কোন কথা মাঝি বা গাইড কারু কাছে পৌছে না, তাই দাঁড়িয়ে গেলাম, বড় ভাইয়ারা তখন আমাকে বসে পরতে বললো, আমি চিতকার করে জাহাজ-মারা ঘাট এর কথা বলতে ই ওনারা জানালেন গাইড আর মাঝির সাথে কথা বলে এ রুটটাতেই যাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বিপদ টা হলো জাহাজ-মারা যেতে হলে স্রোত আর ঢেউ এর দিকে টার্ন নিতে হবে। যা খুবই বিপদজনক। চারদিকে তখন সুরা-কালাম আর আল্লাহর নাম জবছে সবাই। টার্ন টা যখন মাঝি নিলো টলার প্রায় উলটে যাচ্ছিল্ল, শাহিন ভাই এর শোধ নিলেন গাইড এর উপর তুবড়ি ছুটিয়ে।

এর প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর আমরা তীর এর দেখা পেলাম। তীর দেখার পর সবার মুখে খই ফুটলো, এক যোগে সবাই বলতে শুরু করলো। সবাই এখন তীরেই নেমে যেতে চায়। তারা হেটে যাবে…… গাইড অনেক বুঝিয়ে রাজি করাল জাহাজ-মারা বেশী দূরে না। আমি তখন দূরে দুটি টলার দেখতে পেলাম পপকন ফ্রাই মেশিনে যেন পপকন ফুঠছে, আল্লাহর রহমতে আমরা অবশেষে জাহাজ-মারা ঘাটে নামলাম।

ছোট ভাইদের একজন টলার থেকে নেমেই আমাকে জড়িয়ে ধরে দুকড়ে কেঁদে দিল “ভাই আমি তো সাতার পারি না। কিভাবে ওকে বুঝাবো সাতার এ চাম্পিয়ান হলেও ঐ ঢেউ এর সাথে লড়াই করে বেচে থাকা অসম্ভব। কার কাছে জেন শুনেছিলাম বিপদে পরলে পেট মোচর দিয়ে উঠে, তার প্রমান পেলাম, আমাদের দু-তিন জন কে দেখলাম বেল্ট খুলতে খুলতে বনের দিকে দৌড়াতে। যা হোক সাবাই ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে যাত্রা শুরু করলাম। এবারের চেলেঞ্জ ১২.৩০ এর পানামা লঞ্চ ধরা… ঘড়িতে তখন ১১ টা বাজে।

আপাত দৃষ্টি তে এটা প্রায় অসম্ভব। কারণ টলার আমাদের যেখানে নামিয়ে দিয়েছে সেখান থেকে বাসষ্টেন্ড দু থেকে তিন কিলো। ন তুন ঝামেলার নাম পরিবহন…২৪-২৫ জন কে বহন করার মত কোন কিছুই পেলাম না। একটা রিস্কা পেলাম…ওটাতে কিছু বেগ আর আমাদের একজন কে তুলে দিলাম। দেখলাম একটা সেলো ইঞ্জিন চালিত ছোট ট্রাক কাঠ আনলোড করছে ওটাকে পটিয়ে ১৫-১৬ জন কে তুলে দিলাম।

আমরা ৭-৮ জন নানা ভাবে জাহাজ মারা বাজারে পৌছালাম। ওখান থেকে বিশাল আকারের টেম্পু তে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাট যখন পৌছালাম তখন ঘড়ি তে ১২টার কিছু বেশি। রাস্তা ভাল থাকায় আমরা মত্র ৪০ মিনিটে জাহাজমারা বাজার থেকে হাতিয়ার মুরুদ্দি ঘাট এ পৌছাতে পেরেছিলাম। ও ভালকথা বিশাল আকারের টেম্পু যে কত বিশাল তা বুঝাতে বলি, আমরা ২৮ জন ওটাতে আমাদের বেগ সহ জাহাজ মারা থেকে তমুরুদ্দি ঘাট এসেছিলাম। দুপুর ১২.৩০ এর কিছু পরে আমাদের লঞ্চ পানামা ছেড়ে দিলো ঢাকার উদ্দেশে।

বিশাল বড় জারনি দুপুর ১২.৩০ এ ছেড়ে সদর ঘাট পৌছবে ভোর ৫ টার পরে। নিঝুম দ্বীপ যাবার সময় রাত থাকায় লঞ্চ এ যারা ঘুমিয়েছে তারা ঢাকায় আসার পথে মন ভরে নদী মাতিৃক আমাদের দেশটার নদী যে কি জিনিষ তা উপভোগ করলো। ঘুরুঞ্ছি ভাইদের জন্য…… রুট প্লান ১. সদরঘাট থেকে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ হাতিয়ার তমুরুদ্দি ২. তমুরুদ্দি থেকে টলার এ নিঝুম দ্বীপ। 3. ফিরতি পথে আবার হাতিয়ার তমুরুদ্দি ওখান থেকে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ ঢাকার সদর ঘাট আমার পছন্দের রুটঃ ১. সদরঘাট থেকে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ হাতিয়ার তমুরুদ্দি ২. তমুরুদ্দি থেকে টেম্পু বা মটর সাইকেল এ বন্দরটিলা ৩. বন্দরটিলা থেকে নদী পার হতে সময় লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। নদী পার হলেই নিঝুম দ্বীপ।

৪. হাটা পথে বা মটর সাইকেল এ নিঝুম দ্বীপ এর নামা বাজার। ৫ ফিরতি পথে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক দুপুর ১২। ৩০ এ ছেড়ে ঢাকা পৌছে ভোর ৬টায়, মানে প্রায় ১৮ ঘ্ন্টার জারনি, যারা বিশাল নদী দেখার লোভ সামলাতে পারবেন তারা হাতিয়ার বন্দর টিলা থেকে নলছড়ি যাবেন, ওখান থেকে সি-ট্রাক নোয়াখালির চেয়ারম্যান ঘাট। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে বাস বা সিএনজি তে নোয়াখালির সোনাপুর। সোনাপুর থেকে ঢাকার বাস।

গ্রুপ বড় হলে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ ফিরে আসা ই ভাল হবে। খরচঃ টিপু-৫/পানামা লঙ্কঃ ১। ডেকঃ ২৭০ টাকা। ২। সিংগেল কেবিনঃ ৯০০ টাকা।

৩। ডবল কেবিনঃ ১৮০০ টাকা। ৪। স্পেসিয়াল কেবিনঃ ২৫০০ টাকা নিঝুম দ্বীপ রিস্টোর্টঃ ১)এক্সিকিউটিভ রুমঃ ১৫০০ (দুজন থাকতে পারবে) ২)ডাবল রুমঃ ১৮০০-২০০০ ৩)১২ জনের ডরমিটরিয়ামঃ ৩০০০ ৫) ৫ জনের ডরমিটরিয়ামঃ ২০০০ এক্সট্রা ইনফোঃ টোটাল একোমোডেশেন ৮৪ (সেয়ারিং করে) টোটাল একোমোডেশেন ৪২ (সেয়ারিং ছাড়া) মসজিদ বডিং ঃ ১) বেড – ২০০-২৫০ টাকা ২) রুমঃ ৫০০ টাকা (দুজন থাকতে পারবে) এক্সট্রা ইনফোঃ ১)টোটাল একোমোডেশেন ২০-২৫(সেয়ারিং করে) ২)সেন্ট্রাল বাথ রুম। মানে পুরা বডিং এ একটা বাথ রুম ৩) একটা বা দু টা রুম এ এটাচ বাথ রুম আছে।

৪) পরিবেশ নট বেড টাইপ এর। টলার খরচঃ হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ মাথা পিছু ২০০-২৫০ আপ-ডাউন রির্সাভঃ ১০,০০০-১২,০০০ (বড় গুল) নিঝুম দ্বীপ এর আশে পাশে ঘুরা ঘুরি ১০০০-১৫০০ টাকা। খাবার খরচঃ *টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ মাছ/মাংশ ৮০ টাকা ভাত-ডাল ২০-৪০টাকা। *নিঝুম দ্বীপ এ খবার খরচ খুব বেশি না কি খেতে চান তা আগে জানিয়ে রাখুন দাম বলে নিবেন। *মোটা চাউলের ভাত না খেতে চাইলে আগে জানাতে হবে।

বিশেষ কিছু টিপসঃ ১) টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ জায়গা রাখতে সকালে লোক পাঠাতে হবে। ছোট গ্রুপ (৪-৫ জন) হলে দুপুর ১২-টার মাঝে গেলেও হবে। ২) গ্রুপ বড় হলে টিপু-৫/পানামা লঙ্ক এ আগের দিন বা দু দিন আগে খাবারের ওর্ডার দিলে ভাল খাবার পাবেন। দাম ১২০ টাকার বেশি না। ৩) টিপু-৫/পানামা লঙ্ক তিন তলায় ভ্রমন করুন।

হাতিয়া থেকে আসার সময় অবশ্যই তিন তলায় আসুন কারন নিচ তলায় আসার পথে মাছ এ ভড়ে যায় তাই মাছের গন্ধ থেকে বাচার উপায় হল তিন তলায় ভ্রমন। ডেক এ যাতায়াত করলে কেবিন সেকশন এর বাথ রুম ব্যবহার করুন। গ্রুপ বড় হলে টিপু-৫ এর তিন তলার ডেক আর কেবিন এর মাঝে একটা করিডোর আছে যা তালা দেয়া থাকে ঐ তালার চাবি টা অল্প কিছু টাকা খরচ করে মেনেঞ্জ করে ফেলুন। করিডোরটাও নিজেদের দখল এ রাখুন। ৪) হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ টলারে যাওয়ার চেয়ে বন্দর টিলা হয়ে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া সহজ ও আরামদায়ক।

হাতিয়া থেকে বন্দর টিলা টেম্পু বা হোন্ডা তে যেতে পারবেন। কিছু ফোন নাম্বারঃ পানামা-২ ঃ ০১৯২৪-০০৪৬০৮ টিপু-৫ ঃ ১৭১১৩৪৮৮১৩ অবকাশ ঢাকা অফিসঃ 8358485, ০১৮৪০২৫৭৯৫৩ অবকাশ নিঝুম দ্বীপ ( সবুজ )ঃ ০১৭৩৮২৩০৬৫৫ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।